
সবার প্রথম আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। তিনি সুস্থ রেখেছেন । আমাদের যাত্রা শুরু ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে । অনেক ব্লগ ভিডিও ও আর্টিকেল দেখে আমরা দুনিয়া খ্যাত জান্নাত যাওয়ার প্ল্যান করতে থাকি কিভাবে কম সময়ে কাশ্মীর ঘুরে আসা যায় এবং সব কিছু মন ভরে দেখে আসা যায় । আমাদের টিমে মেম্বার ছিল ৫ জন কিন্তু ছুটি জনিত কারনে ২ জন যেতে পারেনি। তখন অন্য আরেকটি টিম আমাদের সাথে যোগ হয়ে ৮ জন হয়ে যাই। সব কিছু মিলে টিম তৈরি ।
ইন্ডিয়া যাওয়ার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই ভিসা নিতে হবে । যেহেতু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই জন্য ভিসা করার প্রয়োজনীয় সব তথ্য তুলে ধরা দরকার । এই টিউন যারা নতুন তাদের জন্য কাজে আসবে। পুরাতন মানুষ গুলোর জন্য ভ্রমণ প্ল্যান কাজে দিবে যদি স্বল্প সময় কাশ্মীর ভ্রমনের প্ল্যান তৈরি করতে চান ।
আমরা টিমে ৫ জন ছিলাম ভিসার জন্য ইন্ডিয়া ভিসা অ্যাপ্লিকেশান সেন্টারের ওয়েব সাইটে আবেদন করি তার জন্য অবশ্যই ৬ মাস মেয়াদসহ পাসপোর্ট প্রয়োজন । পাসপোর্ট মেয়াদ ৬ মাসের কম হলে ভিসা পাওয়ার সম্ভবনা ০% জিরো পার্সেন্ট ।
এখন আসি আপনি টুরিস্ট ভিসা নিলে কি কি ডকুমেন্ট সাথে রাখবেনঃ
টুরিস্ট ভিসাঃ
১। অনলাইনে আবেদন পত্র
২। জাতীয় পরিচয় পত্র/ জম্মনিবন্ধন
৩। ব্যাংক স্টেটমেন্ট / ডলার এন্ড্রসমেন্ট (১ মাসের বেশি সময় নয়) / ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড বা ট্রাভেল কার্ড এন্ড্রসমেন্ট
৪। আপনার পেশাগত প্রমান পত্র (আইডি)ফটোকপি। ছাত্র হলে ভ্যালিড স্টুডেন্ট আইডি ফটোকপি।
৫। সকল ধরনের পুরাতন পাসপোর্ট
৬। যে বাসায় থাকেন তার যেকোন বিলের ফটোকপি ( বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাস) অবশ্যই আবেদনের ঠিকানার সাথে যেন মিল থাকে।
৭। NOC যদি প্রাইভেট চাকরিজীবী আর GO/দাপ্তরিক ছাড়পত্র অরিজিনাল (ফটোকপি করে রাখবেন ইমিগ্রাশনে চাইবে)।
যেহেতু টুরিস্ট নিয়ে টিউন হবে এই জন্য অন্য ভিসা নিয়ে আলোচনা করার দরকার নেই। কারো জানা না থাকলে কমেন্ট করবেন উত্তর দিতে চেষ্টা করব। এটা গেল ভিসার জন্য দরকারি বিষয় কিন্তু আবার ইন্ডিয়া ভিসা না হওয়ার পিছনে অনেক কারন রয়েছে সেগুলো আলোচনা করা দরকার।কারন আমাদের মাঝে অনেকে ভিসা রিজেক্ট হন কিন্তু কেন সেটা তারা জানেন না। এই জন্য নিচের বিষয় গুলো মনে রাখলে হবে।
ইন্ডিয়া ভিসা রিজেক্ট হওয়ার কারন গুলো IVAC লিফলেটে প্রকাশ করেছে। এখন আমরা মিলিয়ে নেই কেন আমাদের ভিসা রিজেক্ট হয়ে থাকে।
১. আবেদনকারীর ফর্মে কোন ভুল তথ্য পূরণ করলে।
২. কোন ডকুমেন্ট জাল / নকল সংযুক্ত করলে।
৩. পাসপোর্ট এবং ভোটার আইডি বা জম্ম নিবন্ধনের সাথে কোন গড়মিল থাকলে।
৪. ভ্রমন ভিসা নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট সময় ওভার থাকলে।
৫. আবেদন পত্র এবং বিদ্যুৎ বিলের ঠিকানা গরমিল থাকলে।
৬. পুরানো ছবি দিয়ে অথবা ২" × ২" ছবি ছাড়া আবেদন করলে।
৭. NOC এবং ডলার এনডোর্সমেন্ট নকল দিলে ।
৮. পেশাগত তথ্য ভুল দিলে (কলম -G)
৯. পুরানো সকল পাসপোর্ট সংযুক্ত না করলে।
কোন দেশ চাইবে না অন্য কারো দ্বারা তার দেশের নিরাপত্তা নষ্ট হোক । তাদের প্রোটকল গুলো সঠিক । আমরা যদি কোন ভুল তথ্য না দেই তাহলে অবশ্যই ভিসা পাওয়ার অধিকার রাখি । যদি সব ভিসা দেওয়া ও না দেওয়া ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের রয়েছে।
এই গেল ভিসা নিয়ে পর্ব, আর ভিসা বিষয় নিয়ে কথা বাড়াবো না। আসুন এখন আমরা প্ল্যান করি কিভাবে স্বল্প সময়ে কাশ্মীর ঘুরে আসা যায়।
কাশ্মীর যেতে চাইলে আপনাকে অনেক গুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে তার মধ্য অন্যতম সময় ও খরচ । আপনি যদি সময় কম দিতে চান তাহলে আপনার খরচ বাড়বে আর যদি হাতে অনেক সময় থাকে তাহলে খরচ কম হবে । আমি দুই ধরনের প্ল্যান শেয়ার করব যাতে করে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয় । প্রথম প্ল্যান হবে খরচ বেশি কিন্তু সময় কম। এই জন্য আপনাকে অনেক আগে থেকে প্ল্যান করলে একটু খরচ কম হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কারন এই প্ল্যানে যোগ হবে বিমান। অর্থাৎ আপনাকে এয়ারে প্ল্যান করতে হবে । সেক্ষেত্রে আগে প্ল্যান করলে টিকেট আগে কাটতে হবে এই জন্য আপনার অনেক কম টাকায় টিকেট পাবেন।
যারা প্রাইভেট চাকরি করেন তাদের ১ সপ্তাহের বেশি সময় বের করা অনেক কঠিন। এই জন্য প্রথম প্ল্যান আপনাদের জন্য । আর যারা ফ্রিলান্সার (আমার মত) , ছাত্র বা টোটোকোম্পানির ম্যানেজার(পজিটিভ অর্থে) তাদের জন্য প্ল্যান দ্বিতীয়। এই প্ল্যানের মধ্যে বাকি প্ল্যান এর বিষয় গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।
প্রথম দিনঃ আমাদের মত করে শেয়ার করা সাথে কিছু সাজেশন থাকবে।
আপনি বাংলাদেশ থেকে ডিরেক্ট ফ্লাইটে দিল্লী এবং দিল্লী থেকে শ্রীনগর চলে যেতে পারেন। এতে একটু সময় বাঁচবে কিন্তু খরচ বৃদ্ধি হবে । ডিরেক্ট কোন ফ্লাইট শ্রীনগর(কাশ্মীর) যায় না সব গুলো কানেক্টিং ফ্লাইট। এর থেকে একটু কম খরচ হবে যদি আমাদের মত প্ল্যান করেন । অর্থাৎ বিমানে যাবেন এবং কম খরচে। আপনি ইন্ডিয়া ডোমেস্টিক ফ্লাইটে যেতে পারেন। প্রথম দিন সকালে ট্রেনে কোলকাতা এবং রাতের ফ্লাইটে দিল্লী এবং সেখান থেকে শ্রীনগর। আর অন্যভাবে আপনি আগের দিন রাতে বাসে করে বেনাপোল এবং সকালে ইমিগ্রেশন শেষ করে পেট্রোপোল থেকে অটো করে বনগাঁ ষ্টেশন সেখানে থেকে ট্রেনে দমদম এবং সেখানে থেকে মেট্রো করে পার্ক স্ট্রিট যাবেন (যেখানে বাঙ্গালীর) আড্ডাখানা নিউমার্কেট এরিয়া।
কেন যাবেন আপনার যাওয়ার কথা বিমানবন্দর কিন্তু পার্ক স্ট্রিট কেন?
কারন আপনি যদি রাতের ফ্লাইটে টিকেট কাটেন তাহলে সারাদিন কোথায় কি করবেন ! এই জন্য বেটার আপনি নিউমার্কেট এরিয়া গিয়ে আপনার সাথে থাকা টাকা বা ডলার কনভার্ট করেন অথবা ব্যাংকের বুথ থেকে নগদ রুপি উত্তোলন করেন। এই এরিয়াতে বেশি রেট পাবেন। অন্য কোথাও এর চেয়ে বেশি পাবেন না।
সারা দিন নিউমার্কেট বা ভিক্টোরিয়া ঘুরে আপনি সন্ধ্যায় চলে যাবেন বিমান বন্দরে । আর যদি আপনি ট্রেনে যান তাহলে আপনি বিকেল ৪/৫ মধ্যে ইমিগ্রেশন শেষ করে দ্রুত চিতপুর(কোলকাতা) ট্রেন ষ্টেশন থেকে ৫ মিনিট হেটে বেলগাছি মেট্রো ধরে আপনি চলে যাবেন পার্ক স্ট্রিট এরিয়া (নিউ মার্কেট) । যত দ্রুত সম্ভব কারন্সি কনভার্ট করে খাওয়া শেষ করে এয়ারপোর্ট রওনা দিন। আপনাকে মিনিমাম ২ ঘণ্টা আগে ওয়েবচেক করতে হবে এবং ব্যাগেজ থাকলে বুকিং দিয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে সিকিউরিটি গেট পাস করে বডিং জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন। এখানে অনেক গুলো ইস্যু আছে যারা আগে বিমানে গিয়েছেন তারা জানেন কিন্তু যারা নতুন তারা শিখে নিন। আপনি ডোমেস্টিক বিমানে বুকিং ১৫ কেজি এবং হ্যান্ড ব্যাগে ৭ কেজি বহন করতে পারবেন। আর সিকিউরিটি চেক মানে আপনার ব্যাগে সব কিছু যেমন ল্যাপটপ, ক্যামেরা, প্যান্টের বেল, কোন পাওয়ার ব্যাংক থাকলে সব বের করে আপনার মানিব্যাক, মোবাইল সহ তাদের দেওয়া ট্রেতে রেখে স্ক্যানে দিবেন। ভুলেও কোন আগ্নেয়াস্ত্র সাথে রাখবেন না এবং গ্যাস লাইট বা ম্যাচ জাতীয় ।
অনেকে সিগারেট জন্য লাইট নিয়ে যান সেটা কিন্তু ভুলেও নিবেন না। লাগলে আপনার গন্তব্য পৌঁছে কিনে নিবেন। এই গেল বিমান বন্দরের ঘটনা । এখন আসি আপনি কিভাবে ফ্লাইটে টিকেট নিবেন।
প্রথমে বলে নেওয়া ভালো আপনার প্ল্যান আমার মত হতে হবে এই রকম নয়। আপনি আমার প্ল্যান নিয়ে একটা প্ল্যান করবেন।
বিমানের টিকেট ডোমেস্টিক যদি করেন তাহলে কোলকাতা টু দিল্লী এবং দিল্লী টু শ্রীনগর (অর্থাৎ আপনি কোলকাতা টু শ্রীনগর দিবেন কিন্তু আপনাকে দিল্লী লেআউট দেখাবে ৩/৫/৭/১০/১২ ঘণ্টা। আপনি ৩/৫ ঘণ্টা লেআউট ফ্লাইট নিতে পারেন। এতে আপনার দিল্লী কোন রুম নিতে হবে না। রাতে কোলকাতা থেকে ২.১০ মিনিটে দিল্লী এবং দিল্লী টু শ্রীনগর ১.১৫ মিনিটে পৌঁছে যাবেন। আমাদের ফ্লাইট ছিল কোলকাতা টু দিল্লী ১১.৪৫ মিনিটে এবং ২ টার মধ্যে দিল্লী । এর পরের ফ্লাইট ছিল সকালে ৭.১৫ মিনিটে এই ৫ ঘণ্টা আমরা দিল্লী এয়ারপোর্ট মধ্যে বসে রেস্ট কেউ কেউ সিটে বসে ঘুমিয়েছে। তবে কোলকাতা থেকে যে ফ্লাইট যায় সেটা দিল্লী বিমানবন্দর টার্মিনাল ১ যাবে এবং আপনাকে শ্রীনগরের ফ্লাইট জন্য টার্মিনাল ২/৩ আসতে হবে। সেটা টিকেটে উল্লেখ থাকে । এক টার্মিনাল থেকে অন্যটা যেতে (হেটে) ১০/১৫ মিনিট লাগবে।
আপনার বেশি লেআউট হলে আপনি রুম নিতে পারেন। তবে খরচ এর কথা মনে রাখতে হবে। দিল্লীতে বাটপারে ভরপুর। দিল্লীর বাটপারের কাহিনী নিয়ে পোস্ট পাবেন সেখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করব।
আপনি কোলকাতা থেকে দিল্লীর গেলেন সেটা রাতের শেষের দিকে নিতে পারলে ভালো এবং দিল্লী থেকে সকালে ফ্লাইট নিবেন শ্রীনগর যাওয়ার জন্য। এতে আপনি শ্রীনগর যাওয়ার যে মনোমুদ্ধকর এক অন্য রকম দৃশ আবিস্কার করবেন। এত সুন্দর পরিবেশ যা গত রাতের সকল কষ্ট ভুলে যাবেন। আর যদি রাতে ফ্লাইট হয় তাহলে কিছু দেখতে পারবেন না। কাশ্মীর যে দুনিয়ার জান্নাত বলা হয় সেটা আপনি দেখতে পারবেন। দেখতে দেখতে আপনি কখন শ্রীনগর চলে আসবেন চিন্তা করতে পারবেন না।
সকাল ৯ টার মধ্যে আপনি শ্রীনগর পৌঁছে যাবেন। সেখান যাবার পর কিন্তু আপনার অন্য দিনের প্ল্যান চলে আসছে। কারন এটা ছিল প্রথম দিনের প্ল্যান। চলেন এখন আমরা পরের দিন অর্থাৎ দ্বিতীয় দিনের প্ল্যান নিয়ে আগাতে থাকি। তবে এই টিউন এখানে শেষ। দ্বিতীয় দিনের প্ল্যানসহ বিস্তারিত পরের পোস্টে পাবেন।
সতর্কতাঃ আপনি বাংলাদেশ থেকে বিমানে/স্থল বন্দর দিয়ে গেলে অবশ্যই টিকা কার্ড সাথে রাখবেন। আর NOC নিতে ভুলে যাবেন না ।যদিও এটা বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের জন্য প্রযোজ্য । ইন্ডিয়াতে কোথাও টিকা কার্ড দেখে না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




