somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মা

২৩ শে মে, ২০১২ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা, তোমাকে কখনো মা বলে ডাকিনি। কিন্তু তুমিই আমার মা। ছোটকাল থেকে তোমাকেই মা বলে জেনেছি। সেই কবে তুমি আম্মা বলে ডাকা শিখিয়েছ মনে নেই। আমার কিন্তু তোমাকে মা বলে ডাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ঠিক পারি না। বাচ্চা যখন কথা বলা শেখে তখন তার প্রথম শেখা বুলি হল মা। আচ্ছা মা আমি কি তোমাকে প্রথমে মা বলে ডেকেছিলাম না আম্মা বলে। এটাও তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয় না। আমি জানি জিজ্ঞেস করলে তুমি হাসবে শুধু।

মনে আছে ইন্টারমডিয়েট পড়ার সময় আমার চিকেন পক্স হয়েছিল। আব্বু বসন্ত কে ভয় পেত। খুব একটা কাছে আসেনি। কিন্তু তোমার হাতের স্নেহের ছোঁয়া পেয়েছে বসন্তের প্রতিটি গুটি। সারা দিন রাত তুমি কি কষ্টটাই না করেছ। তখন বুঝতে পারিনি। এখন অনেক দূরে বসে ঠিকই বুঝতে পারি সেই দিনগুলোকে। আমি বসন্তের সময় প্রায় অচেতন অবস্থায় তোমাকে বারবার মা মা বলে ডেকেছিলাম। তুমি পরে পাশের বাসার কাকীর কাছে গল্প করেছিলে এত বড় ছেলের মুখে তুমি হঠাৎ মা ডাক শুনে লজ্জা পেয়েছ। মনে আছে মা সেই দিনের কথা গুলো।

ক্লাস ফাইভের কথা মনে পড়ে গেল মা। দুষ্টুমি করছিলাম। ছোট ভাইটাকে মেরেছিলাম। তুমি আমাকে ধরে আচ্ছা মত পিটানি দিলা। আমার কাছে সেটা ঘোরতর অনায্য মনে হল। দোষ তো ফিরোজের। আমাকে মারলে কেন। আমি তোমাকে বললাম, তুমি নিশ্চই আমার সৎ মা, তাই আমাকে যখন তখন মারো। আমার এই অর্থহীন কথা শুনে তুমি কি কান্নাটাই না কেঁদেছিলে। তোমার মনে আছে মা। জীবনের গলিপথে সেই কবেকার ফেলে আসা দিনের কথা ভেবে এখনো আমার পোড়া চোখে পানি চলে আসে মা। আমি আজকাল কার জমানার ছেলেদের মত এত আপডেট না। তোমার গলা জড়িয়ে ধরে স্যরি বলতে পারব না।

প্রথমে ভেবেছিলাম মা কে নিয়ে কি লিখব এত। তুমি আমার সাধারণ মা। সিনেমার মায়েদের মত ডায়ালগ মাখা আদুরে কথা তুমি কখনো বলনি। গল্পে পড়া মায়েদের মত বলার কোন কাহিনী নেই। তাই লিখতে চাইনি। মা দিবস এল। আবার চলেও গেল। ব্লগ সাইট গুলোতে মাকে নিয়ে লেখার ধুম পড়ে গেল। অনেকেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগল, “মা দিবস মানিনা। সারা বছর মা কে ভালবাসি।” মা দিবস পালন করলে সারা বছর মা কে ভালবাসা যাবে না এই থিওরী বোকাগুলো কোথায় পেয়েছে জানিনা। কতই তো দিবস আছে। নাচ দিবস, গাছ দিবস, এমন কি জাজ দিবস। তাহলে একটা দিন মায়ের নামে থাকলে মন্দ কি! আমি মা দিবস সমর্থন করি। মা কে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়। সারা বছরই হয়। কিন্তু সেগুলো থাকে বিক্ষিপ্ত। একটা দিবস থাকলে সেটাকে প্লাটফর্ম করে আমাদের ভাললাগার অনুভূতি গুলো শেয়ার করা যায়। এই যে সোনার বাংলা ব্লগ মা দিবস কে উপলক্ষ্য করে ব্লগারদের ভাল ভাল লেখাগুলোকে স্টিকি করছে। এটা নিশ্চই উত্তম উদ্যোগ। তুমি তো জানই না মা এই ব্লগ গুলো কি। মা তুমি কি জান তোমার ছেলে ছন্দ মিলিয়ে কবিতা লিখতে পারে, কাহিনী মিলিয়ে গল্প লিখতে পারে। তোমাকে বলা হয় নি মা। কেমন যেন লজ্জা লাগে। তুমি শুনে নিশ্চই হেসে বলতে, আমার কাছে লজ্জা কি তোর, আমি তোর মা না। তোমাকে নিয়ে কিছু লিখব বলে মাথার ভিতর বাটি চালান দিলাম। আমার সারাটা ভুবন জুড়েই তোমার উপস্থিতি। স্মৃতির পাতায় সাজানো হাজার হাজার ঘটনা। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখি। তুমি আমার অসাধারণ মা। তোমাকে ফোন করি। অন্যদের থেকে বেশী করি। রাজ্যের এর সব গল্প শুধু তোমার কাছেই করা যায়। এত আগ্রহী শ্রোতা আর কোথায় পাব মা! মা দিবসে তাই তোমাকে ফোন দিলাম। কথা হল। ফোন রেখে দিলাম। কিন্তু তোমাকে বলা হয় নি , ভালবাসি মা। তুমি কি বুঝতে পেরেছিলে এটা স্পেশাল কল ছিল। আমি জানি তুমি বুঝতে পেরেছিলে। কারণ সন্তানের নাড়ী নক্ষত্র তুমি ভাল করেই জানো।

মেজ দাদীর কাছে শোনা গল্পটা মনে পড়ে গেল। গৃহস্থ বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিলে অল্প বয়সে। তোমার কোলজুড়ে এলাম আমি। সারাবাড়ির কাজ তোমাকেই সামলাতে হত। আমাকে কোলে নিয়ে তুমি একেকদিন দুপুরে খেতে বসতে। আমি তোমার কাপড় নষ্ট করে ফেলতাম। তুমি রাগ করতে না। আমাকে আছড়ে মাতিতে ফেলে দাওনি। বরং খাওয়া ফেলে উঠে গিয়ে আমাকে পরিষ্কার করে আনতে। রাতে হিল্লিতে (দোলনাতে) দোল দিয়ে ঘুম পাড়াতে। ছোটবেলা থেকে আমি তোমার খুব ন্যাওটা ছিলাম। তোমার আঁচল ধরে পিছে পিছে ঘুরতাম সারা বাড়ী। তোমার আঁচলের নিচেই ছিল আমার স্বর্গরাজ্য। নাজনীন আপার মা কি বলত মনে আছে? “এরকম মা নেওটা ছেলে আমি জন্মেও দেখিনি।” ফিরোজের কথাই ধরো না! ও যখন ছোট ছিল তখন ও নিজেকে আব্বুর দলে আর আমাকে তোমার দলে দাবি করত। বাসার টিভিসেট টা ওর আর রেডিও টা আমার ভাগে ফেলত।

আব্বুকে অনেক ভয় পেতাম। তাই সব দাবী করতাম তোমার কাছে। এতটা বড় হয়েছি- কিন্তু অবাক ব্যাপার দেখ মা, এখনো সব দাবী, সব কথা তোমার কাছে বলি। আব্বুকে বলতে পারি না। মনে আছে মা সেই ঘটনাটা! বাসায় মেহমান এসেছে। আব্বু ইলিশ মাছ এনেছে। আমি তোমার কাছে ইলিশ মাছের মাথা দাবী করলাম। তুমি বললে ফিরোজ আগেই চেয়ে ফেলেছে। পরের বার আনলে আমি খাব। কিন্তু আমি মানতে পারলাম না। রাগ করে না খেয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলাম। আমার পৃথিবীটা খুব ছোট ছিল। বেশী দূরে যাওয়ার সাহস ছিল না। তুমি হয়তো জানতে সেটা। তাই খোঁজাখুজি করে পাড়া মাথায় তোলনি। সন্ধ্যার আগেই বাড়ী ফিরে এলাম। এসে দেখি তুমিও না খেয়ে বসে আছ আমার জন্য। মা শুধু তুমিই তো আমার জন্য না খেয়ে বসেছিলে। পৃথিবীর আর কেউ কি এভাবে বসে থাকত পাগলা ছেলেটার জন্য।

তুমি নতুন আইন করলে। আস্ত মাথা কাউকে খেতে দেয়া হবে না। মাঝখান থেকে কেটে দুইভাগ করা হবে। ছুটি ছাটার বন্ধে বাড়ী আসি। ফ্রিজে সব জিনিস দুই ভাগ করে পুটলি বেঁধে রাখ তুমি। আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য। সারা মাস ধরে তুমি গোছাও ছেলেরা বাড়ি এলে কি খেতে দেবে তাই। আর যতখন থাকি তুমি একটা না একটা কিছু বানাতে ব্যস্ত থাক। হয়ত খেয়ে কুলিয়ে উঠতে পারি না। ছেলেদের নিয়ে তুমি খুব গল্প করো, গর্ব করো। কিন্তু মিথ্যা বল না আর বানিয়ে বলতে পারো না বলে পাড়ার মা দের কাছে প্রায়ই তুমি হেরে যাও। এই ব্যাপারটায় আমার খুব হাসি পায়। কিন্তু আমি কিছু বলিনা। কারণ আমি জানি, তোমার জগতের পুরোটাই জুড়ে আছি আমরা দুটি ভাই।

মা তোমাকে নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করেছি আমি। আবেগের সবটুকু ভাষার অক্ষরে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি বলে মনে হয় না। তবু মনের ভিতর এই আশা পোষন করি, আমার মা কে নিয়ে লেখা কথাগুলো যেন সবার পছন্দ হয়। পাখির ডানার মত তোমার আঁচল এতটি বছর আমাদের আগলে রেখেছে। শক্ত হাতে তোমার আঁচল যেন সারাটি জীবন ধরে রাখতে পারি মা।

আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন সবাই।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×