somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাতা আবিষ্কার

২৯ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক বছর আগের কথা। সবাই মিলে গ্রামের বাড়ী যাচ্ছি। গ্রামের রাস্তায় তখনো ইট বিছানো হয়নি। আষাঢ় মাসে রাস্তার বুকে হাটু সমান কাঁদা। পান্থজন লুঙ্গি দুই ভাঁজ করে কোমরে জড়িছে পথ চলছে। কৃষক গরু গুলোকে মাঠ থেকে ঘরে ফিরিয়ে নিচ্ছে।সন্ধ্যার কিছু আগে গ্রামের ঘাটে নামলাম । ছাতা মাথায় দিয়ে মাইলখানেক পথ যেতে হবে। গোলজার কাকা লঞ্চঘাঁটে এসেছেন আমাদের এগিয়ে নিতে। ব্যাগগুলো তিনি জোরকরে নিয়ে নিলেন। আমরা ছাতা সামলে কাদায় পা টিপে পথ চলছি।পা পিছলে গেলে কাঁদায় পড়ে আলুর দম হয়ে যেতে হবে। গ্রামদেশে বৃষ্টির দিনে টিপ ছাতার চাইতে কাঠের বাটের ছাতার উপযোগীতা বেশী। দুটো ছেলে মানকচু পাতার মাথায় দিয়ে বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করছে। কাদায় অনভ্যস্ত ভঙ্গিতে আমরা পথ চলছি। ছেলে দুটো কৌতুক মেশানো চোখে আমাদের দেখছে। কাক ভেজা হয়ে দাদাবাড়ি পৌছালাম। আমার ছাতাটা বাতাসে উল্টে গেছে। শিক ভেঙ্গে গেছে একটা। দাদাজানের ছাতা নিয়ে পুকুরঘাটে গেলাম পা ধুতে।


বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য আদিম মানুষ কবে ছাতা হিসেবে কলা পাতা কি কচুর পাতা ছিড়ে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করেছে অথবা প্রখর সূর্যালোকে ঘাসের তৈরী ক্যানপি টুপি বানিয়ে মাথায় পরেছে তার কথা আজ বলা সম্ভব নয়। ইতিহাসের সূত্র ধরে এগোলে দেখা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ সালে মিশরে ছাতা ব্যবহার করা হত। উজ্জ্বল চামড়া মানুষের আভিজাত্যের চিহ্ন হিসেবে ধরা হত। সাদা চামড়া যাতে আতপ তাপে বাদামী না হয়ে যায় সেজন্য ছাতা ব্যবহার করত তারা। আশেরিয়ায় শুধু মাত্র সম্রাটের ছাতা ব্যবহারের অধিকার ছিলো। সম্রাটদের মাথায় যে ছাতা ধরে রাখা হত তাকে বলা হয় প্যারাসল। আমরা বাঙালীরা আমব্রেলা মানেই ছাতা বলি, ইংরেজরা সূর্যের হাত থেকে ছায়া পেতে যে ছাতা ব্যবহার করে তাকে প্যারাসল এবং বৃষ্টির হাত থেকে ব্যবহৃত ছাতাকে আমব্রেলা বলে। পৃথিবীর অনেক স্থানেই ছাতাকে আভিজাত্যের প্রতীক ধরা হত। বার্মার আভা নগরে প্রাপ্ত প্রাচীন পুঁথিতে সম্রাট কে বর্ণনা করা হয়েছে “কিং অফ দ্যা হোয়াইট এলিফ্যান্ট” এবং “লর্ড অফ টুয়েন্টি ফোর প্যারাসল”। আফ্রিকার অনেক স্থানে এখনো ছাতাকে সামাজিক পদমর্যাদা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সূর্যের প্রখর উত্তাপ থেকেবাঁচতে মানুষ গুহার ভেতরে, গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিত। তারপর সে ছাতা বানানো শিখল। পৃত্থিবীর প্রথম ছাতা খুব সম্ভবত পাতা দিয়ে তৈরী ক্যানপি টুপি। বাংলা ছাতা শব্দটি এসেছে ছত্র থেকে। ইংরেজী আমব্রেলা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দআম্ব্রা থেকে। আম্ব্রা অর্থ ছায়া। প্রাচীন গ্রীক শব্দ আম্ব্রোস থেকে এসেছে আম্ব্রা।

ছাতার আরেকটি নাম হলো বর্ষাতি। যদিও ব্যবহারিক জীবনে এই নাম ব্যবহার করা হয় না। বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় একই জিনিসের বিভিন্ন নাম প্রচলিত থাকলেও ছাতা কিন্তু সব জায়গায় ছাতা নামে পরিচিত। ছাতার বেশ কয়েকটি ইংরেজী নাম আছে। আমব্রেল্লা, প্যারাসল, ব্রোলি, প্যারাপ্লুয়ি, রেইন শেড, সান শেড, গ্যাম্প, বাম্বারশট, আম্ব্রলি। গ্রামীন বাঙালী সমাজে অবশ্য ছাতাকে ছাতি বলা হয়।

মূর্তিপূজারীদের দেবতাদের ছাতা ব্যবহার করতে দেখা যায়। প্রাচীন মিশরের দেবতাদেরও ছাতা ব্যবহারের কথা জানা যায়। দেবতা অসিরিসের ছাতা ছিলো। ভারতবর্ষে হিন্দুদের দেবতা বিষ্ণু তার পঞ্চইন্দ্রিয় ব্যবহার করে নরক থেকে বরুনের বৃষ্টিদায়ী ছাতা ফিরিয়ে আনেন। গ্রীক এবং রোমানদের দেবতা দায়ুনিসিস এবং বাচ্চুস সম্পর্কে একই ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। তারা বৃষ্টির দেবতা ছিলেন। গ্রীকদের হাতেই ছাতার বিস্তৃতি ঘটে। গ্রীকে দায়ুনিসিয়াসের পূজা হত। উৎসবের সময় দেবতার মাথায় একটা প্যারাসল ধরা হত। শীঘ্রই অন্য দেবতাদের মাথায়ও প্যারাসল ধরা হলো। এরপর এথেন্সের রমনীরাও ছাতা ব্যবহার শুরু করে। মেয়েদের ব্যবহার্য সামগ্রীর ভিতরে ছাতা অপরিহার্য অংশ হয়ে যায়।

আমার জন্মের দুইশো বছর আগে ১৭৮৬ সালে বাটের সাথে শিক লাগানো বৃত্তাকার ছাতার প্যাটেন্ট অর্জন করেন জন বিয়ালে। উনবিংশ শতাব্দীতে এই ছাতার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জেন্টলম্যানেদের হাতে কালো সিল্ক বা সুতোর কাপড়ের ছাতা ফ্যাশানের অংশ হয়ে উঠেছিল।

একবিংশ শতাব্দীর মানুষ আমরা। ছাতা এখনো আমাদের অপরিহার্য অংশ।

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×