কেমন লাগছে এখন? কেমন লাগছে এখন? কেমন লাগছে এখন...? সেই তখন থেকে কথাটা মাথার মধ্যে বেজে যাচ্ছে। শব্দগুলো এক এক সময় খুব জোরে হচ্ছে, আবার এক সময় যেন খুব দূর থেকে ভেসে আসছে—মগজের গভীর থেকে গভীরতর অংশ থেকে—কে-ম-ন লা-গ-ছে এ-খ-ন? তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছ শুরু হয়েছে মাথায়; পুরো শরীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে, ধীরে ধীরে। পা থেকে মাথা অব্দি রক্তের সাথে তা যেন আবার ফিরে আসছে, আবার যাচ্ছে। আমি হাত-পা-আঙুল কিছুই নাড়াতে পারছি না; আমার নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে ডান হাঁটুটা কেটে ফেলি, আঁচড়ে রগগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলি কিংবা রোলারের নিচে দেহটাকে এলিয়ে দিই। আমার জ্ঞান আছে কিন্তু চোখ খুলতে পারছি না। খুব চেষ্টা করছি, কিন্তু চোখ দুটো যেন ঐ দূরে, মহাশূন্যের অন্ধকারে, আমার নাগালের খুব বাইরে। কে যেন ক্রমাগত আমার শরীর মাড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তার পায়ের চাপে আমার মাথার করোটি যেন ঠাস করে ফেটে গেল। আমার মগজ গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে; বাতাসের ছোঁয়ায় অনেকটা স্বস্তি পেলাম। আমাকে যে মাড়িয়ে দিয়ে গেল তাকে অশেষ ধন্যবাদ জানালাম। আমি উঠে দাঁড়ালাম, মগজের শেষ অংশটিও এবার পড়ে গেল মাটিতে। কীসের সাথে যেন ধাক্কা খেলাম আর সাথে সাথে মটমট করে শব্দ হতে লাগল। আমার হাঁটুদুটো অবলীলায় খুলে পড়ে গেল। আবার আছড়ে পড়লাম মাটিতে। হাত দিয়ে বুকটাকে স্পর্শ করলাম, মচমচ করে চামড়া আর বুকের কয়েকটি হাড় হাতে চলে এল। হাড়ের গুঁতোয় হঠাৎ করে ফুসফুসটা চুপসে যেতে লাগল। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার, দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি হাতদুটো দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। সামনেই পানির শব্দ, নিশ্চই কোনো ঝরনা হবে। আমি তাড়াতাড়ি এগুতে লাগলাম। একটু পানি খেতে পারলে আমি বেঁচে উঠব, সবকিছু ফিরে পাব। আমি দুহাত ভরে পানি নিলাম, মুখের কাছে আনলাম। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। ঠোঁট লাগাতে যাব ঠিক এমন সময় পানির ভারে আমার হাতদুটো শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। চিৎকার করে উঠলাম কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দও বেরুল না। মুখ থুবড়ে পড়ে গেলাম একটা বড় পাথরের ওপর। পাথরের ধাক্কায় আমার হৃৎপিণ্ডটা পানিতে ছিটকে পড়ল—শরীর থেকে মুক্ত হয়ে আমি ভেসে যাচ্ছি, ভেসে যাচ্ছি, ভেসে যাচ্ছি...।
রচনাকাল: ২০০০
প্রকাশকাল: ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৮