Click This Link
সরকারের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি বৈদেশিক কল আদান-প্রদানের (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল—ভিওআইপি) অবৈধ ব্যবসা। এই ব্যবসা এখন চলছে অত্যাধুনিক ‘রেডিওলিংক’ প্রযুক্তির মাধ্যমে।
‘কল রেস্ট্রিকটেড’, ‘আননোন কল’, ‘ফরেন কল’, ‘নাম্বার রেস্ট্রিকটেড’ বা ৯৯৯০০০৯৯৯০৯৯৯, ০০৯৯০১৫৫৯৯৬৫১, ৯৯৮৭৮৯৬৭০৯৭৬৫ বা ভুয়া বিদেশি নম্বর বা বিভিন্ন দেশের কোড নম্বরের সঙ্গে ইচ্ছামতো নম্বর বসিয়ে এসব অবৈধ বৈদেশিক কল সংযোগ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে কোনো কল বৈধ পথে এলে টেলিফোন নম্বরটির আগে অবশ্যই যোগ চিহ্ন থাকবে। কিন্তু রেডিওলিংকের মাধ্যমে অবৈধ পথে আসা কলগুলোতে যোগ চিহ্ন পাওয়া যাবে না। সরকারকে ফাঁকি দিতে উন্নতমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই প্রযুক্তিকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী।
ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থা বিডি ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, রেডিওলিংকের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বেশি হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায়। ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে স্বল্পমূল্যে ব্যান্ডউইডথ কিনে ১/২ বা আরও বেশি ই-ওয়ান ভয়েস কানেক্টিভিটি ব্যবহার করে অবৈধ পথে বৈদেশিক কল আদান-প্রদান করছেন।
সুমন আহমেদ জানান, একটি ই-ওয়ানে একসঙ্গে ৩০টি টেলিফোন লাইন সংযুক্ত করা যায়। এসব যন্ত্রে ল্যান্ডফোনসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সংযোগ ব্যবহার করা হয়। তবে সম্প্রতি ভিওআইপি অভিযান এবং বিটিআরসিতে সিম ডিটেকশন বক্স বসানোর কারণে নম্বর ছাড়া কল রেস্ট্রিকটেড, আননোন কল, ফরেন কল, নাম্বার রেস্ট্রিকটেড নামে বেশি কল আদান-প্রদান করা হচ্ছে। খুবই উন্নতমানের সফটওয়্যার দিয়ে এসব বৈদেশিক কলে প্রেরকের ফোন নম্বর প্রদর্শনে বাধা দেওয়া হয়।
তথ্যপ্রযুক্তির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে রেডিওলিংকের মাধ্যমে পাঠানো বৈদেশিক কল আটকানো কোনোভাবেই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষে সম্ভব নয়। উন্নত প্রযুক্তির কাছে মার খাচ্ছে বিটিআরসি। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। তাঁরা বলেন, প্রতিদিন প্রযুক্তির উন্নতি ঘটছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হলে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্তবর্তী একাধিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জানিয়েছেন, ভাড়া নেওয়া ব্যান্ডউইডথ দিয়ে ইন্টারনেটের বদলে ভয়েস ব্যবহারের কারণে তাঁরা অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যান্ডউইডথ ফেরত নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই একই গ্রাহক কোনোভাবে ব্যান্ডউইডথ সংগ্রহ করে রেডিওলিংকের মাধ্যমে আবারও ভয়েস ব্যবসা করছেন। তাঁরা জানান, রাজধানীতেও হাই ফ্রিকোয়েন্সি রেডিওলিংক ব্যবহার করে ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা করছেন অনেকে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আখতারুজ্জামান মঞ্জু বলেন, ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। খালি ৫-১০ হাজার লাইসেন্স দিয়ে ভিওআইপি ব্যবসা করতে দিলে অবৈধ পথে কল আদান-প্রদান কমবে না। কেউ না কেউ ঠিকই করবে, কারণ এটি একটি প্রযুক্তি।
অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেট বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। তাই ইন্টারনেট এখন ‘লোকাল’ বিষয়। এক সময় বাংলাদেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ফোন করলে তা হতো ‘এনডব্লিউডি’ (নেশনওয়াইড ডায়ালিং) কল। কলরেট ছিল ভিন্ন। এখন সারা দেশেই এক রেট। সব ‘লোকাল কল’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। একইভাবে ভিওআইপিকে বৈধ-অবৈধ চিহ্নিত না করে তা সবার জন্যে ‘লোকাল কল’ করতে হবে। প্রতি কলে বিদ্যমান রেটের ওপর ১০-২০ পয়সা বেশি ধার্য করে বা ভ্যাট বা কর আরোপ করতে পারে সরকার। এনডব্লিউডির মতো বৈদেশিক কল যখন লোকাল কলে পরিণত হবে, তখন স্বাভাবিকভাবে ভিওআইপি নিয়ে কোনো অবৈধ ব্যবসা সম্ভব হবে না। সরকারের রাজস্বও অনেক বাড়বে। বিটিআরসিকেও অবৈধ কল চিহ্নিত বা বৈধ পথের কল পর্যবেক্ষণ বা অভিযান চালাতে হবে না। আখতারুজ্জামান মঞ্জু জানান, ইতিমধ্যে এ প্রস্তাবটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব সুনীল কান্তি বোস বলেন, ভিওআইপি উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লং ডিস্টেন্স সার্ভিসেস (আইএলডিটিএস) নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণীতে ও বিভিন্ন দামে ভিওআইপি করার জন্য একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।