যারা বিশ্বাস করতে চান এবং যারা বিশ্বাস করেন না যে ভূত বলে কিছু আছে...তাদের জন্য এই পোস্টটি নয়। কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত সমালোচনা বা তর্কবিতর্ক তৈরী এর উদ্দেশ্য নয়। যারা তৃতীয় দলে তারা নিজ দায়িত্বে পড়বেন।
ভূত বিষয়ক কিছু লেখা এর উদ্দেশ্য নয়। আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা আমরা সচরাচর যুক্তির দ্বারা খন্ডন করতে পারি না। এমন কিছু ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে মাত্র।
উল্লেখ্যঃ ঘটনাটি আমার এক বন্ধুর কাছে শোনা। স্থান-কাল এবং পাত্র কাল্পনিক। কাহিনীটি একটি সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে লেখা।
২০০১ সাল। সময়টা আজ হতে প্রায় দশ বছর আগে। আমি তখন ক্লাস নাইন কি টেন এ পড়ি। আমরা তখন থাকতাম ফরিদপুরে। মফস্বল শহর ফরিদপুরের একটু বাইরের দিকে ছিল আমাদের বাসা। দোতলা বাসাটার সামনে অনেকটা খোলা জায়গা ছিল। বিকেল হলেই আমি আর আমার স্কুলের বন্ধুরা মিলে নেমে পড়তাম। এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো আর যত দুষ্টুমি। আমাদের বাসাটার পাচিল ঘিরে অনেকগুলো ডাব গাছ। পাচিলের ওপাশে ছিল একটা পরিত্যক্ত বাড়ি। আমাদের বন্ধুদের দুষ্টচক্রের হেডকোয়ার্টার ছিল সেটা। এর বাড়ির মুরগি, ওর গাছের ডাব আর এলাকার ফল গাছ থেকে যা হারানো যেত তার ধ্বংসাবশেষ সবই পাওয়া যেত বাড়ির ভেতর। বাড়িটার পেছনে ছিল একটা পুকুর। অনেক দিনের অব্যবহৃত হলেও পুকুরটা ছিল আশ্চর্য রকমের সুন্দর। তার টলমল জল আর পাড় ঘেঁষা হিজল গাছের ছায়া। মধ্যদুপুরেও শুনশান নীরবতা থাকতো সবসময় সেখানে। তখন বেশ যাচ্ছিল আমাদের দিনগুলো। স্কুল থেকে ফিরে এসেই বাইরে ঘোরাঘুরি আর সন্ধ্যেবেলা বাসায় ফিরে মায়ের বকুনি। আমার রুমটা ছিল দোতলায়। আমার রুমের সামনে খোলা ছাদ। তখন ইলেকট্রিসিটি খুব একটা সমস্যা করতো না। চাঁদনী রাতে ঘরের বাতি নিভিয়ে ছাদে বসতাম। দখিনের খোলা হাওয়ায় বেশ লাগতো। কিন্তু হিজল গাছে ঘেরা ঐ পুকুরের দিকে তাকালে কেমন যেন একটা শিহরণ বয়ে যেত। আমি কখনই খুব একটা ভীতু ছিলাম না। তারপরেও কেমন যেন একটা অনুভূতি।
সব চলছিল এমনই। হঠাৎ করেই আম্মু অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন। নানু দেশের বাড়ি থেকে একজন কাজের মেয়ে পাঠিয়ে দিলেন। সে বাসায় আসার পর আমাদের বাসাটায় কিছুটা সাড়াশব্দ পাওয়া যেত। সে সারাদিন এদিক সেদিক ছুটোছুটি করত, আম্মুর সাথে গল্প করত। আমি ছিলাম একা। আর কোন ভাইবোন ছিল না। প্রায় সারাদিনই থাকতাম বাসার বাইরে। আম্মুর জন্য অনেক সুবিধা হয়েছিল, সারাদিন তার পাশে একজন থাকত। আম্মু ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠলেন।
আসল ঘটনাটা ঘটে এর পরে। একদিন সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরেছি। এসে দেখি বাসায় অনেক মানুষের ভীড়। দেখলাম আমাদের কাজের মেয়েটা রান্নাঘরের মাঝ বরাবর বসে আছে। তার চোখ লাল, মাথার চুল এলোমেলো। মাথানিচু করে বিরবির করে কি যেন বলছে। তার গলার স্বর সম্পূর্ণ অন্যরকম। তার ধারে কাছে কেউ যেতে সাহস করছে না। কেউ কাছে যেতে চাইলেই সে প্রায় তেড়ে আসছে এবং অদ্ভুত সব কথা বলছে। তার গলার স্বর সম্পূর্ণ ছেলেদের মত।
আম্মুর কাছে জানতে পারলাম গতকাল দুপুরে ইলেকট্রিসিটি না থাকায় বাসায় পানি ছিল না। সে গিয়েছিল পুকুর থেকে পানি আনতে। অনেক ক্ষণ পর সে ফিরে আসে। এসে কিছুটা এলোমেলো আচরণ করছিল। সে আম্মুকে বলে সে যখন পানি আনতে গিয়েছিল তখন পুকুরে পানির নিচে সে কিছু একটা ভাসতে দেখে। সেটা ভাসতে ভাসতে পুকুরের কিনারার দিকে আসলে সে দেখতে পায় একটা বাচ্চামেয়ে পানির নিচে ভাসছে। তার গায়ের রঙ পুরো সাদা, আর চোখ ছিল খোলা। সে তার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে ছিল। এরপর সে আরো অনেক এলোমেলো কথা বলতে থাকে। আম্মু খুব একটা গুরুত্ব দেননি তার কথার। কি দেখতে কি দেখেছে কে জানে। আবার বানিয়ে বানিয়েও বলতে পারে। রাতে তার অসম্ভব জ্বর আসে। আম্মু তার মাথায় পানি ঢেলে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসেন। আজকে হঠাৎ করেই দুপুর থেকে তার কোন খোঁজখবর নেই। তাকে খুঁজতে লোকজন পাঠানো হয়। তারা অনেক খোঁজাখুজি করে বিকেলের দিকে তাকে পান পুকুর পাড়ের একটা হিজল গাছের ডালে। বহুকষ্টে তাকে সেখান থেকে নামিয়ে আনা হয়। তারপর থেকেই এই অবস্থা।
রাতে এশার নামাযের পর এলাকার মসজিদের হুজুর কে ডেকে আনা হয়। তিনি এসে কিছুক্ষণ বসে থাকেন। তারপর কিছু দোয়া পড়ে পানিতে ফু দিয়ে পানিটা মেয়েটার মাথায় ছিটিয়ে দেন। হঠাৎ করেই মেয়েটা চিৎকার করতে থাকে এবং একটা পর্যায়ে লুটিয়ে পড়ে। ঠিক তখনই আমাদের ড্রইং রুমের একটা জানালার পর্দা নড়ে উঠে। ঠিক বাতাসে যেভাবে নড়ে। আমাদের কাছে মনে হল একটা বাতাসের প্রবাহ যেন জানালা দিয়ে বাইরে চলে গেল। আমাদের পাচিলঘেঁষা ডাবগাছগুলোর একটি হঠাৎ করেই ভীষণভাবে দুলে উঠে। বাসার ভেতরের সবাই একসাথে প্রায় চিৎকার করে উঠে।
মেয়েটা মেঝেতে অচেতন পড়ে থাকে। হঠাৎ এই ঘটনার রেশ সবাইকে স্তব্ধ করে দেয়। কিছুটা ঘোর কাটলে মা তাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেন।
এর পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত।
সেদিন সারারাত আমাদের বাসায় কেউ ঘুমায় নি। পরদিন খুব ভোরে ফজরের আযানের সময় আমাদের কাজের মেয়েটা মারা যায়। সকালে দেখা যায় শুধু ঐ একটি ডাবগাছের সবগুলো ডাল ভাঙা।
এরপর আমরা ঐ বাসাটা ছেড়ে নতুন একটা বাসায় উঠি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




