somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

--অনীল--

২৭ শে মার্চ, ২০১১ ভোর ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমুদ্র এখানে নীল। নীলের স্বচ্ছতা কেটে চলছে একটি জলযান। সেন্ট মার্টিন পেছনে ফেলে টেকনাফ যার গন্তব্য। সেন্টমার্টিন থেকে ফিরছে অনীল। সাগরের উদ্দাম বাতাস চুল কেটে যাচ্ছে। খোলা আকাশ দূর দিগন্তে সমুদ্রে মিশেছে। নীল আকাশ, নীল সমুদ্র। অনীলের নীল জামার মত তার মনটাতেও নীলের ছোঁয়া। বেদনার নীল, নীলের বেদনা সব মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে। নিজের মাঝে লুকাবার একটা ব্যর্থচেষ্টাই করছে যেন সে। এভাবে ভালো লাগছে না আর। তাই তো নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়া। বিশাল পৃথিবী, উন্মুক্ত আকাশ আর রহস্যময় প্রকৃতির মাঝে একটুখানি আশ্রয় খোঁজা।

সী-গালের বীচে বসে আছে অনীল। অনেকক্ষণ। অপেক্ষা করছে। সৌমিক, ওর কলেজ জীবনের বন্ধু। পনের বছর পর আবার আজ ওদের দেখা হতে যাচ্ছে। পুরনো অতীতের মাঝেও কলেজ জীবনের অনেকগুলো স্মৃতি আজও নতুনের মতই ঝকঝকে আছে। রাত আটটার পর পৌছল সৌমিক। খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়ে বীচে হাটতে বের হল দু'জন। আকাশে মস্তবড় এক চাঁদ। চারদিকে কি চমৎকার জোছনা। ঢেউয়ের মাথায় যেন রুপার নুপূর পড়ে হাটছে কেউ। সৈকতে আছড়ে পড়ছে নিজের সর্বস্ব নিয়ে। সৌমিকের কত অভিযোগ...আর অনীলের শুধুই হাসি। মুচকি হেসে বন্ধুর অভিমান দূর করছে সে। অনীলটা সবসময়ই এমন। ভীষণ চাপা আর ভীষণ অভিমানী।

- অনীল
-- হুমম
- এভাবেই থাকবি সারাটা জীবন?
-- কিভাবে?
- এই যে এভাবে। যেমন আছিস এখন বা এতদিন যেমন ছিলি।
-- বেশ ভালোই তো যাচ্ছে।
- দেখ, অনেক দিন ধরেই তো তোকে আমি চিনি। একটা কথা বলবি? হঠাৎ এভাবে উধাউ হলি কেন?
-- (নীরবতা)
- আজ পনের বছর পর মনে পড়ল আমার কথা?
-- মনে তো সব সময়ই ছিল।
- তা তো দেখতেই পাচ্ছি কতটা ছিল।
--
- এতদিন পর তোর ফোন পেয়ে সবকিছু ফেলে ছুটে এসেছি। বলবি কিসের এত কষ্ট তোর? এখনও এতটা পোড়াচ্ছে তোকে?
-- (নীরবতা)
- চুপ করে আছিস কেন?
-- অনেক দিন পর খুব একা একা লাগছিল। তোদের সবাইকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। তাই তো দেশে চলে আসলাম।
- এতদিন তাহলে একা ছিলি না?
-- নাহ্ । আমার আমি তো ছিলাম আমার সাথে। হঠাৎ মনে হল আমার আমিকেও আমি আর খুঁজে পাচ্ছি না।

- এভাবে একাই কাটাবি সারাটা জীবন?
-- কেন শুধুশুধু ছন্নছাড়া জীবনের সাথে আরেকটা জীবন জড়াব?
- অনীল, আজকে আমাকে বলতো কি এমনটা হল যার জন্য এই নিঃসঙ্গ পথচলা?
-- তুই তো আমাকে বুঝতে চেষ্টা করিস। শোন আমি নিজেই নিজের ছায়ার পিছে ঘুরছি। ছায়া, সে তো আর সত্য নয়। সে শুধুই ছায়া। শুধু আলোতেই তার অস্তিত্ব। অন্ধকারে সে সত্য নয়। আলোতে যাকে ভালোলেগেছিল অন্ধকারে তাকে আর খুঁজে পাইনি। কারন সে ছিল শুধু্ই ছায়া। কলেজ জীবনের প্রথম দিকে সূর্যের আলোয় কারো ছায়া পড়েছিল আমার মনে। কিছুই বলিনি। শুধু তাকে দেখেই গেছি। আসলে বলতে পারিনি। সেই ভালোলাগাগুলো আস্তে আস্তে বিবর্ণ হল আর কষ্টের পাপড়ি গুলো ঝরে পড়ল। ফুলটি আর রইল না।

- তাকে কিছুই বলিস নি?
-- না।
- কেন? প্রত্যাখ্যাত হবার ভয়ে?
-- হয়তোবা।
- তারপর?
-- তারপর সবকিছু কিভাবে যেন বদলে গেল। সে চমৎকার চটপটে একটা মেয়ে। মেডিকেলের এক ফাংশানে আমার আবৃতি শুনে আমার সাথে নিজে থেকেই এসে কথা বলল। খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল আমাদের মাঝে। আমার ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে জীবনটাকে ছন্দে বাধলো সে। একদিন নিজে থেকেই জানাল, বন্ধুর চাইতেও বেশী কিছু সে আমাকে ভাবে। আমাকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন।
- তারপর?
--তারপর?? আমার তো মেঘ না চাইতেই জল। এতদিন যাকে মনে মনে এতবার বলেছি, ভালোবাসি তোমায়। চাই তোমায় আমার করে। আজ সে নিজে থেকেই আমার হয়ে আমার কাছে এসেছে।
- তাহলে সমস্যাটা কোথায় হল?
-- সমস্যাটা আসে আরো পরে। সে ছিল মুসলমান আর আমি হিন্দু। ধর্মনদীর দুইপাশে আমাদের বসবাস। সে নদী পার হবার কোন তরী আমার ছিল না। আমি নিরুপায়। সেও। জানাল বাসার অমতে সে পারবে না আমাকে গ্রহণ করতে।
- তুই কিছু বললি না? তুই তো যাসনি। সে কেন তোকে ভালোবাসার কথা বলল?
-- নিজের অনুভূতি প্রকাশে আমি দোষের কিছু দেখিনা।
- কিন্তু এটা কি প্রতারণা হল না?
-- না, হল না। নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার সবারই আছে। আমি কোন জোর খাটাতে চাই না এতে কখনই, তাতে আমার যত কষ্টই হোক।
- তারপর তুই দেবদাস হয়ে গেলি?
-- আসলে ব্যপারটা সেরকম না। হতাশার পর হতাশা আমাকে গ্রাস করল। আর আমি কেন জানি তখন মানুষের উপর থেকে, তাদের তৈরী প্রথার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। এভাবে তুই কখনই থাকতে পারবি না। তাই তো আমি পালালাম। জীবনের কাছ থেকে, পরিচিত পরিবেশ, চেনাজানা মুখগুলোর থেকে দূরে, অনেক দূরে.........


(এরপর অনীল আর সৌমেকের আরও অনেক কথোপকথন। এরপর তাদের আরো অনেক কথপোকথন। আর না হয় নাই লিখলাম। এরকম অনীল'দের গল্প অসমাপ্তই থাকে।)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১১ ভোর ৪:০২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×