somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

----ভূতব্লগ----

০৭ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা বিশ্বাস করতে চান এবং যারা বিশ্বাস করেন না যে ভূত বলে কিছু আছে...তাদের জন্য এই পোস্টটি নয়। কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত সমালোচনা বা তর্কবিতর্ক তৈরী এর উদ্দেশ্য নয়। যারা তৃতীয় দলে তারা নিজ দায়িত্বে পড়বেন।
ভূত বিষয়ক কিছু লেখাও এর উদ্দেশ্য নয়। আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা আমরা সচরাচর যুক্তির দ্বারা খন্ডন করতে পারি না। এমন কিছু ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে মাত্র।

উল্লেখ্যঃ গল্পের স্বার্থে স্থান-কাল-পাত্র কাল্পনিক করা হল।


আবেদ আর সোমার বিয়ে হয়েছে প্রায় দু'বছর। হানিমুনের পর আবেদের ব্যস্ততার কারনে ওদের আর কোথাও ঘুরতে যাওয়ার তেমন একটা সুযোগ হয়নি। এবার ঠিক করল ঘুরতে যাবে সোমার নানাবাড়ি। সোমা যখন অনেক ছোট তখন একবার গিয়েছিল। তারপর অনেকদিন যাওয়া হয়নি। এখন ওদের গ্রামের বাড়িতে কেউ থাকে না। ওদেরই এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় বাড়ির দেখাশোনা করেন। আর বাড়িতে থাকেন এক বৃদ্ধ যে প্রায় চল্লিশ বছর যাবৎ বাড়ির দেখাশোনা করছে। মামারা সবাই দেশের বাইরে থাকেন। সোমার মা মারা গেছেন প্রায় পাঁচ বছর আগে। গ্রামে তাদের অনেক পুরনো দিনের বাড়ি। আবেদ প্রথমে রাজি ছিল না। যেখানে এখন কেউ থাকেই না সেখানে যাওয়ার কোন মানে সে খুঁজে পায় না। তবুও শেষ পর্যন্ত সোমার চাপাচাপিতে রাজি হয়। তখন নভেম্বর মাস। শীত সবেমাত্র পড়তে শুরু করেছে। ওরাও ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে।


ওরা গ্রামের বাড়িতে পৌছায়। তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। সোমার নানাবাড়িটা অনেকটা পুরনো আমলের জমিদার বাড়ির মত। ওর নানা অনেক শখ করে এই বাড়িটা কিনেছিলেন এক হিন্দু লোকের কাছ থেকে। তারপর ওর মা আর মামারা বাড়িতে বড় হয়েছেন। নানা মারা যাবার পর আর মামারা দেশের বাইরে চলে যাবার পর থেকে প্রায় পরিতক্ত্যই আছে বাড়িটা। ওদের আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠার কথা থাকলেও সোমা ওই বাড়িতেই থাকবে বলে জেদ ধরে। ওদের আসার খবর আগে থেকেই জানানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী তেমন কোন প্রস্তুতি দেখলো না ওরা। সন্ধ্যে হয়ে গেছে অথচ এখনও বাড়িতে কোন আলো জ্বলছে না। বেশ খানিকক্ষণ ডাকাডাকির পর দেখা গেল বাড়ির পেছন দিকে একজনের পায়ের শব্ধ পাওয়া যাচ্ছে। হারিকেন হাতে বেরিয়ে এলেন একজন পৌঢ়। তার মুখে দাড়ি, পরনে ময়লা একটা ধুতি আর গেরুয়া রঙের একটা ফতুয়া। সোমার কেমন জানি গা ছমছম করে উঠল।
বৃদ্ধ ওদের সামনে এসে বললঃ আপনারা আসবেন খবর পেয়েছি। আসুন, আমার সাথে আসুন।
দোতলায় একটা রুম বেশ পরিপাটি করে সাজানো ওদের জন্য। রাতে খাবার জন্য নিচে আসে ওরা। খাবারের তালিকায় বাসা থেকে রান্না করে আনা ভাত আর মুরগী। বেশ আয়েশ করেই খাওয়া শেষ করে ওরা। বৃদ্ধ ওদের বলেন কোন দরকার পরলে তাকে ডাকতে। তিনি নিচতলায় বারান্দার শেষ মাথার রুমটায় থাকেন।
এই বৃদ্ধ সোমার নানা বাড়ি কেনার সময় থেকেই ছিলেন। অনেকদিন আগে যখন সোমা এসেছিল তখনও তাকে দেখেছিল। চুপচাপ মানুষ একজন। কথা বলতেন না খুব একটা। সে বাড়ির দেখাশোনা করত।

রাতে খাওয়ার পর ওরা হাটতে বের হয়। বাড়ির পেছনের দিকটায় উঠানের মত একটা অংশ। তার মাঝে চারকোনা বেদীর মত। বুঝতে পারে এটা হিন্দু বাড়ি। আগে নিশ্চই এখানে তুলসী গাছ ছিল। তুলসী হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। সন্ধ্যায় তুলসীবেদীতে আলো জ্বালানো হয়। উঠানটা খুব একটা পরিষ্কার না। অযত্নে বেড়ে ওঠা কিছু গাছপালা আছে। পেছনের দিকে বাড়ির একটা বর্ধিত অংশে একটা রুম। দরজাটা ভেজানো। একসময় এটা পূজার ঘর ছিল। দরজাটা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। অনেক দিন হয় এখানে কোন পূজা হয় না। সোমার নানা বেঁচে ছিলেন যখন তখন এটা তালাবদ্ধ ছিল। ছোটকালে একবার যখন এসেছিল তখনও ছিল। এখন এর তালা কে খুলেছে কে জানে। আবেদের ঘুম পাচ্ছে। সোমা বৃদ্ধকে ডেকে ঘটনা জানতে চাইল। আবেদ বলল, কাল দিনেও জানতে পারবে। এখন চল যাই। ঘুমাবো, আর বাইরে কুয়াশা পড়ছে। অনিচ্ছা স্বত্তেও ঘুমাতে চলে সোমা।

রাত দু টা। হঠাৎ করেই ঘুম ভাঙে আবেদের। পাশে সোমা নেই। এত রাতে কোথায় গেল সে? তাড়াহুড়ো করে উঠে সে কোনমতে হারিকেনটার আগুন বাড়ায়। কয়েকবার ডেকেও কোন সাড়া না পেয়ে সে খুঁজতে নামে। কোথাও ই পাওয়া যাচ্ছে না ওকে। বাথরুম, খাবার রুম খুঁজে এলো আবেদ। বৃদ্ধকে ঘুম থেকে জাগায় সে। দু'জন মিলে খুঁজতে শুরু করে। অবশেষে সোমাকে খুঁজে পাওয়া যায় পূজার ঘরটায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে। রুমে নিয়ে আসা হয় তাকে।

মাথায় অনেকক্ষণ পানি ঢালার পর জ্ঞান ফেরে সোমার। তাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেও কিছু জানতে পারে না আবেদ। পরদিন সকালেই ঢাকায় ফিরে আসে সে সোমাকে নিয়ে। তারকাছে জানা যায়, আবেদ রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তার ঘুম না আসায় বারান্দায় এসে দাঁড়ায় সে। হঠাৎ করেই মনে হয় নিচতলায় একটা বাচ্চা মেয়ে যেন কথা বলছে। দেখার জন্য নিচে নেমে আসে সে। কাউকে পায় না সে। মনে হয় কে যেন পূজার ঘরের ভেতর কথা বলছে। ভয় পেলেও কি হচ্ছে দেখার জন্য এগিয়ে যায়। দরজা খোলাই ছিল। ভেতরে উকি দিয়ে সে একটা পাঁচ-ছয় বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখতে পায়। হঠাৎ করেই বাচ্চাটা ওর দিকে এগিয়ে আসে। ও দেখতে পায় বাচ্চাটার গলা কাটা। জামা থেকে টপটপ করে লাল রক্ত মাটিতে পড়ছে। এরপর আর কিছু মনে নেই ওর।

এরপর মাঝেমাঝেই রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠত সোমা। একপর্যায়ে রাতে ঘুমাতই না। আবোলতাবল কথা বলত। এরপর একজন সাইকিয়াট্রিস্টের অধীনে প্রায় দু'বছর চিকিৎসা করানো হয় তাকে।



পরিশেষঃ
আবেদ ওদের গ্রামের আত্মীয়দের কাছে খোঁজখবর করে জানতে পারে, যে বৃদ্ধ এর দেখাশোনা করতেন সে মারা গেছে প্রায় তিনবছর আগে। তারপর থেকে বাড়িটাতে কেউ ই থাকে না আর ওরা যে গ্রামে গিয়ে ওই বাড়িতে উঠেছিল এটাও তারা জানতেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:১৮
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×