somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্ডিস নিয়ে ভ্রান্ত ধারনা

১০ ই মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্ডিস আমাদের দেশে খুবই পরিচিত রোগ । আমাদের অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন । আমরা সকলেই কম বেশি এই রোগ সমন্ধে জানি ।

কিন্তু আমার ধারণা আমাদের অনেকেরই এই জন্ডিস নিয়ে ভুল ধারণা আছে ।তাই আমি সেসকল ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আলোকপাত করতে চাই ।

জন্ডিস কি - লিভার বা যকৃতের ইনফ্লামেশন যার কারণে শরীরে অতিরিক্ত বিলিরুবিন জমে চামড়া চোখ ও প্রস্রাব হ্লুদবর্ণ ধারণ করে ।

ভ্রান্ত ধারনা ১ঃ অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে বা অতিরিক্ত গরমে বা রোদে কাজ করলে জন্ডিস হয় ।
আলোচনাঃ যদিও আমরা দেখি যারা রোদে বেশি পরিশ্রম করে বা যারা প্রচন্ড গরমে শহরে বেশি ঘুরাঘুরি করে স্পেশালি মার্কেটিং তাদের জন্ডিস বেশি হয় তারপরও আমি বলবো এটা ভুল । কারণ গরম বা পরিশ্রম জন্ডিস করে না ,মূল কারণটি হচ্ছে যখন কেঊ গরমে বেশি পরিশ্রম করে স্বভাবতই তার তৃষ্ণা লাগে বেশি । তাই তখন যদি সে যেখানে সেখানে থেকে পানি পান করে,এই পানি যদি বিশুদ্ধ না হয় তখনি তার জন্ডিস সহ আরো অনেক মারাত্নক পানিবাহিত রোগ হতে পারে যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় জন্ডিস ।

ভ্রান্ত ধারনা ২: জন্ডিস হলে বেশি বেশি পানি বিশেষত ঢাবের পানি খেতে হয় ।

আলোচনা: বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন,পানি শরীরের জন্য ভালো তাই বলে জন্ডিস হলে অতিরিক্ত পানি খাওয়ার আলাদা কোনো উপকার নাই । তবে জন্ডিস হলে আমাদের লিভার অসুস্থ থাকে তাই আমাদের খাদ্য হজম ও বিপাকে লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে তাই এই সময়ে সহকে হজম হয় এই রকম খাবার খাওয়া উচিৎ ।বিশেষত গরুর মাংস ও অন্যান্য চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া ভালো ।

ভ্রান্ত ধারনা ৩: বেশি বেশি গোসল করা উচিৎ ।

আলোচনা: আসলে জন্ডিসের সাথে গোসলের কোন সম্পর্ক নাই । একটি ঘটনা বলি, একবার এক জন্ডিসের রোগি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় বার বার গোসল করত, তার ধারনা ছিল বেশি গোসলের কারনেই তার জন্ডিস তারাতারি ভালো হচ্ছে ,হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার ১ সপ্তাহের মধ্যে আবার সে ভর্তি হলো ,তবে সেইবার জন্ডিস না ভর্তি হয়েছিল নিউমোনিয়া নিয়ে কারন বাসায় গিয়েও সে দিনে ৪/৫ বার গোসল করত


ভ্রান্ত ধারনা ৪: ডাক্তার নয় জন্ডিসের চিকিৎসা করে কবিরাজ ।

আলোচনা: আমাদের বাংলাদেশের সকল অন্ঞ্চলেই কিছু বিখ্যাত কবিরাজ আছে যাদের কাছে গেলে মৃতপ্রায় জন্ডিসের রোগি ভালো হয়ে যায় । জন্ডিস হলে তাদের শরণাপন্ন সবাই হয়ে থাকেন । আসলে এই সকল কবিরাজি চিকিৎসায় কি আদৌ কোনো লাভ হয় !!! আগেই বলেছি জন্ডিস হয় লিভারের অসুস্থতার জন্য , আর এর প্রধান এবং একমাত্র চিকিৎসাই হচ্ছে লিভারের বিশ্রাম । অনেকটা এমনি যে আপনার হাড়ে আঘাত পেলে বা হাড় ভেঙ্গে গেলে কি করা হয় ? শুধুমাত্র ব্যান্ডেজ করে বিশ্রামে রাখা হয় ,তখন হাড় নিজ থেকেই জোড়া লাগে । কিন্তু লিভারকে কিভাবে রেস্ট দিবেন সেইটাই প্রশ্ন । লিভার আমরা যা কিছু খাই তা হজম ও বিপাকে সাহায্য করে । সুতরাং আমরা যদি সহজপাচ্য খাবার কম খাই যেমন চর্বি , এ্যালকোহল ,বিভিন্ন ড্রাগ / মেডিসিন না খাই তাহলে লিভারের কাজ কমে যায় এবং সেই সাথে যদি আমরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেই তাহলেও লিভারের চাপ কমে যায় । তাই জন্ডিসের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে বেডরেস্ট বা বিশ্রাম । কবিরাজি ঔষুধের আসলে কোনো ভিত্তি নাই, অধিকন্তু ঐ সকল ঔষুধ আরও লিভারের ক্ষতি করার সম্ভবনা থাকে ।


ভ্রান্ত ধারনা ৫:জন্ডিসের ডাক্তারি চিকিৎসার কোনো দরকার নাই ।

আলোচনা: সচরাচর আমাদের যে জন্ডিস হয়ে থাকে দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে তা হচ্ছে হেপাটাইটিস ই ।এই হেপাটাইটিস ই আসলে আমাদের শরীরের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে ভালো হয় শুধু দরকার রেস্ট ।কিন্তু এজন্য কি আপনার ডাক্তারেরে শরণাপর্ণ হবেন না,আসলে আমাদের ধারণা শুধু প্রেসক্রিপশনে কিছু ঔষুধ লেখাই ডাক্তারের কাজ ।আসলে চিকিৎসা মানে কিন্তু শুধু ঔষুধ না, আপনি তো জানেন না যে আসলেই আপনার জন্ডিসের কারন হেপাটাইটিস ই ভাইরাস, জন্ডিসের তো আরও অনেক কারণ আছে সে কারণ গুলো পরীক্ষানিরিক্ষার মাধ্যমে সঠিক ডায়াগনসিস করা খুবই জরুরি । এখন যদি কারন হয় হেপাটাইসিস ই তাহলে তো ভালো ,আপনি শুধু রেস্ট করবেন আর যদি এর সাথে আরো কিছু লক্ষন থাকে যেমন বমি, জর, পানিশূন্যতা ইত্যাদির সাপোর্টিভ চিকিৎসা ও পরামর্শ একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারই দিতে পারেন ।আর যদি জন্ডিসের কারন যদি হয় হেপাটাটিস বি/সি ,পিত্তথলির পাথর বা ইনফেকশন, লিভারের ক্যানসার ইত্যাদি সেক্ষেত্রে কি চিকিৎসা নিতে হবে সেটা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতেই হবে ।

]ভ্রান্ত ধারনা ৬: কবিরাজি চিকিৎসা নিলে জন্ডিস অবশ্যই(১০০% নিশ্চয়তা) ভালো হবে ???
আলোচনা : অনেক ভালো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও অনেক জন্ডিসের রোগি মারা যায় সত্য, তখন অনেকে ভেবে থাকতে পারেন যে সে যদি কবিরাজের শরণাপর্ণ হত তাহলে হয়ত বেঁচে যেত ।এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল । আগেই বলেছি যে অধিকাংশ জন্ডিসের কারণ হেপাটাইটিস ই যা এমনি এমনি ভালো ,ফলে জন্ডিসের চিকিৎসা করে কবিরাজদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে যেন ঝরে বক মরে কবিরাজের ক্যারামতি বাড়ে । কিন্তু এমন কিছু জন্ডিস আছে যা ডাক্তার বলেন আর কবিরাজ বলেন কারও কিছু করার থাকে না আল্লাহই একমাত্র ভরসা । যেমন হেপাটাইটিস বি/সি, লিভার সিরোসিস, লিভারের ক্যান্সার ইত্যাদি । এই সকল ক্ষেত্রে যদি রোগি কবিরাজের কাছে না যেয়ে ডাক্তারের কাছে সময়মত আসত তাহলে হয়ত প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার অনেক উপায় থাকে ,কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই রোগিরা বিভিন্ন কবিরাজদের কাছে ঘোরাঘোরি করে অবশেষে এমন সময়ে ডাক্তারের কাছে আসেন যখন হয়ত আর কিছুই করার থাকে না । এর কারন হচ্ছে আমরা ডাক্তাররা যখন বুঝি যে কোনো রোগের আর চিকিৎসার অপসন নাই তখন কিন্তু রোগি বা তার আত্নীয়কে ব্যাপারটা খুলে বলি কিন্তু আমাদের দেশের কোনো কবিরাজ বলেন আর হোমিওপ্যাথি বা হারবাল যাই বলেন না কেন উনারা কিন্তু কোনো দিন স্বীকার করেন বা যে তাদের পক্ষে এই রোগ চিকিৎসা করা সম্ভব না ।তাদের স্বপ্ন পাওয়া ঔষুধ সর্বরোগের মহাঔষুধ ।মরণ ব্যাধি এইডস বা ক্যান্সারেরও তারা ১০০% নিশ্চয়তা দিয়ে চিকিৎসা করেন এবং রোগির জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন। ফলে তাদের এই মিথ্যা আস্বাসে বিশ্বাস করে রোগের প্রাথমিক স্টেজ পার করে জটিলতা নিয়ে সর্বশেষে আসেন ডাক্তারের কাছে । তখন আল্লাহই তার একমাত্র ভরসা ।










চলবে......................।




সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১০ ভোর ৪:১৮
১২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×