somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক অদ্ভুত সত্য ! " বিদ্যা লাভে লোকসান, নাই অর্থ নাই মান ! "

০২ রা আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুদ্রার এপিঠ -

আপনি ছোটকাল থেকেই পাড়ায় খুব মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত। পঞ্চম, অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব চমৎকার রেজাল্ট করে ভর্তি হয়েছেন বুয়েটে, মেডিক্যালে কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নামকরা বিষয়ে। তো এলাকায় আপনাকে সবাই আলাদা সুনজরে দেখে।

একদিন আপনি পাড়ার মোড়ের বাদশাহ মিয়ার দোকানে বসে চা পান করছেন আর সিগারেট ফুঁকছেন। দোকানের সামনে দিয়ে আপনার পাশের বাড়ির চৌধুরী কলিমুদ্দিন মিয়া সাহেব হেঁটে চলে গেলেন, যাবার সময় বক্র নয়নে আপনার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলেন। অথবা মনে করুন- অন্য কোন দিন আপনি আপনার বান্ধবী সমেত একটি ত্রিচক্রযানে চড়ে কোন আইসক্রিম খেতে খেতে কোথাও যাত্রা করেছেন। পথিমধ্যে আমাদের কলিমুদ্দিন সাহেব আপনাকে এহেন অবস্থায় দেখে ফেলল এবং তৎক্ষণাৎ তার হাঁতে থাকা এক ডজন ডিমের ঠোঙা মাটিতে পড়ে পটল তুলল। আপনার বেশরম কর্মের সাজা ভোগ করল বারোখানা নির্দোষ মুরগী ডিম্ব।

এরপর উপরিউক্ত ঘটনা দুটি থেকে যে অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করলেন তা তিনি পরম যত্নে ছড়িয়ে দিবেন আপনার পাড়া প্রতিবেশীদের মাঝে। আসর নামাজের শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে মুরুব্বিয়ানেরা যখন পান চাবানোর নিমিত্তে কোথাও বসিবেন সেখানেও আপনি হবেন আলোচ্য বস্তু। আপনার এহেন বেয়াদবি এবং বেশরীয়ত কাজের কারনে আপানর সম্পর্কে উক্তি করবেন কেউ কেউ- “ সাত্তার সাহেবের পোলাটা পড়ালেখা শিখে করলটা কি? ছি ছি ছি! এই পড়াশোনার কি দরকার? ছেলেটা একদম নষ্ট হইয়া গেল! নাউজুবিল্লাহ !

এরপর থেকে আপনাকে দেখলেই এই লোকগুলো একটা বক্র চাহনি এবং বক্র হাসি উপহার দিবে, আপনার সালামের উত্তর দিতেও ইতস্তত করবে কেউ কেউ।

মুদ্রার ওপিঠ -

আপনারই সমবয়সী একটা ছেলে নাম ধরুন জগলু। আপনার পাশের বাড়িতেই থাকে। একসাথে বড় হয়েছেন। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এসেই সে পড়াশোনায় বর্ণনাতীত ক্লান্ত হয়ে ক্ষান্ত দিল। এরপর থেকে নিয়মিত টেম্পু স্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে তার আনাগোনা। টুকটাক শরীয়তী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে করতে শহরের কোন পাতি নেতা তথা রংবাজের সাথে পরিচয়। এভাবেই মেঘে মেঘে অনেক প্রহর পেড়িয়ে আজকে আমাদের জগলু একজন প্রথিতযশা রাজনৈতিক ব্যাক্তি। বাজারের মাছ বাজার, বাস স্ট্যান্ড, টেম্পু স্ট্যান্ড থেকে তার নিয়মিত রোজগারের ব্যবস্থা আছে, তা ও আবার ঘরে বসেই।

বাতাসে খবর ভাসে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে সে নাকি ‘কাউন্সিলর’ পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হয়তো অল্পদিনের মাঝেই দেয়ালে দেয়ালে চিকা মারা হবে ‘মতলবপুরের উন্নয়ন, জগলু ভাইয়ের দুই নয়ন’ – প্রচারেঃ এলাকার ‘সর্বস্তরের জনগণ’ ! অথবা নানা রঙ বে রঙের পোষ্টার শোভা বর্ধন করবে চারপাশের সবগুলি দেয়াল বা বৈদ্যুতিক খাম্বাগুলির। পোস্টারে জগলু ভাইয়ের হাসি মাখা নাকমুখ সমতল ছবি দেখে তার আসল পরিচয় বোঝা না গেলেও অর্বাচীন গ্রাফিক্স ডিজাইনার বা এডিটরের যোগ্যতার দৌড় সম্পর্কে ঠিক ধারনা পাওয়া যাবে। আজকাল তাই রাস্তাঘাটে যত সোনার বঙ্গসন্তানদের পোষ্টার চোখে পড়ে খেয়াল করে দেখবেন তাদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোর চেষ্টায় ছবি এমনই এডিট করা হয় যে নাক, মুখ, গালের আলাদা করে কোন অস্তিত্ব চোখে পড়ে না। সব এক লেভেলে নামিয়ে, ঘোলা করে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার মর্মান্তিক এক প্রয়াস চালানো হয় এবং এইসব উদ্ভট ছবি দেখে জগলুর মত সোনার সন্তানরা মনে করে তাদের বেশ শ্রীবৃদ্ধি করা গেলো!

এই সুশ্রী মুখগুলো দেখে আমরা আমজনতা প্রমোদ গুনতে আরম্ভ করি আর আমাদের শ্রদ্ধেয় চৌধুরী কলিমুদ্দিন মিয়া চাচা কি করেন? রাস্তায় বের হলে যদি জগলুর সাথে দেখা হয়ে যায় তবে নিজ থেকেই আগ বাড়িয়ে বলবেন- “ কি খবর বাবা শরীর স্বাস্থ্য ভাল? দেশের খবর টবর কি? আস এক কাপ চা খাইতে খাইতে আলাপ করি। আসলে তোমার মত একজন আশে পাশে আছ বলেই যা একটু ভরসা পাই আরকি! তোমার চাচী তো তোমার নাম বলতে অজ্ঞান। মাঝে মধ্যে সময় করে একটু আস না কেন বাসায়? তোমার চাচীরে দেইখা গেলা, তার হাতের একটু পায়েস খাইয়া গেলা ! ” ভুলে যাবেন না ইনি কিন্তু সেই কলিমুদ্দিন চাচা যার কাছে একটা সিগারেট ফুঁকার অপরাধে আপনি বখে যাওয়া পোলা, শিক্ষা জীবনে পুরোটা সময় সাফল্যের শীর্ষে থেকেও যার কাছে আপনি পড়ালেখা শিখে একটা বেয়াদব, বেশরম বৈ আর কিছুই হতে পারেন নি।

সার কথাঃ

যস্মিন দেশে যদাচার। এই দেশে জগলুরাই সম্মানিত ব্যক্তি। তার আছে প্রতিপত্তি, অর্থ বৈভব। এমনকি একটা বিপদে পড়ে আপনি থানায় যদি কোন জিডি করতেও যান পাত্তাই পাবেন না কিন্তু এই জগলুরা সেখানে পায় জামাই আদর। যেখানেই তারা মূল্যবান পদধুলি দেবে সেখানেই তাদের জন্যে তৎক্ষণাৎ চা নাস্তা চলে আসে, হাকিমপুরি জর্দা দেয়া খিলি পান চলে আসে আর আপনার জন্যে আসে অশ্বডিম্ব। বোধকরি বঙ্গদেশের আশু ভবিষ্যৎ অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই সত্যজিৎ রায় অনেকদিন আগেই সেলুলয়েডের ভাষায় বলে গেছেন –

“লেখাপড়া করে যে, অনাহারে মরে সে।
জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।
বিদ্যা লাভে লোকসান, নাই অর্থ নাই মান!”


এই দেশ সত্যজিৎ রায়ের কল্পনার ‘হীরক রাজার দেশ’কে ও ছাড়িয়ে গেছে। তাই ভুলে যান চিরচেনা সব নীতিবাক্য, ভাল মন্দের বিচারকলা। উপরের লাইন গুলো বেদবাক্য হিসেবে মেনে চলুন। অন্তত বাংলাদেশে আপনার সাফল্য ঠেকানোর সাধ্য কারো নেই।

বিঃ দ্রঃ লেখায় সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ ইচ্ছে প্রসূত।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:১৯
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×