একটু বড় হতে আনন্দের আরেকটা উৎস পাওয়া গেল। তা হলো শবে বরাত ও শবে মেরাজের রাত। মসজিদে সারারাত বন্ধু-বান্ধবদের সাথে থাকার মজাই আলাদা। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এটা আমার বাসায় গ্রহনযোগ্যতা পেল না। তাই মূল নামাযের পর আব্বার সাথে চলে আসতে হত আর পরের দিন খেলার মাঠে পোলাপানের কাছে কি কি মজা হয়েছে সারারাত তার ফিরিস্তি শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হত। এভাবেই চলছিল।
এসএসসি পরীক্ষার আগে কে যেন বলেছিল কোরআনে আছে "তোমরা যখনই বিপদে পড়বে, তখন এবাদতের মাধ্যমে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে"। কথাটা আমার বেশ পছন্দ হলো। টেস্টে টিটিপি (টেনে টুনে পাস) করায় বিশাল বিপদে ছিলাম। বাসা থেকে ছিল প্রচন্ড চাপ। তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া শুরু করে দিলাম। নামায পড়ার কল্যানে হোক বা নিজের চেষ্টার বদৌলতে হোক চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকে সে যাত্রা আমি রক্ষা পেয়েছিলাম। পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই হয়েছিল।
এ ঘটনার পর পরই সৃষ্টিকর্তার উপর আমার ভক্তি-শ্রদ্ধা হাজারগুন বেড়ে গেল। জুম্মার নামায তো বাদ দিতামই না। উপরন্তু আরও এডিশনাল নামায পড়া শুরু করলাম। আমার এই রূপ দেখে বাসার সবাই উল্টো ধারণা পোষন করা শুরু করল। তাদের ধারণা হলো আমার পরীক্ষা খুবই খারাপ হয়েছে। যার কারণে আমার এই দশা। মনে আছে যেদিন রেজাল্ট হয় সেদিন আম্মা বার বার বলছিলেন রেজাল্ট নিয়ে যেন সরাসরি বাসায় আসি। যা হবার হবে। কেউ কিছু বলবে না। রেজাল্ট নিয়ে অন্য কোথাও যাবার প্ল্যান আমার ছিল না কোন কালেই। যদিও আমার দুই বোন বরাবরই আমাকে বলত আমার রেজাল্ট নিয়ে নাকি রিকশায় আসা যাবে না, ট্রাকে আনা লাগবে।
এসএসসির আশাতীত ভালো রেজাল্ট আমার ধর্মজীবনে বেশ পজিটিভ একটা প্রভাব ফেলে। এরপর নামাযহীন অবস্হায় জীবনে আর কোন পরীক্ষা দেই নি। তাছাড়া ধর্মবিষয়ক পড়াশুনা যতটুকু আমি করেছি তার সিংহভাগ এসএসসির পর থেকে কলেজে ক্লাস হওয়া পর্যন্ত।
মানুষ সম্ভবত রেজাল্ট ওররিয়েন্টেড প্রাণী। আমার ক্ষেত্রে কথাটি আরও বেশি খাটে। আর একারণেই আমি যেকোন কাজ চেষ্টা করে কাছাকাছি যেতে না পরলে ছেড়ে দিই। "একবার না পারিলে দেখ শতবার" আমার অভিধানে নেই। আমার অভিধানে আছে "যার হয় না একবারে, তার হয় না হাজারবারে"।
(চলতে পারে)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৭ ভোর ৬:২৯