View this link
গোলাম রাব্বানী
সারা দেশের ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী ভোটার সংখ্যার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত ভোটার সংখ্যার মিল নেই। ইসির মাঠকর্মকর্তাদের পাঠানো ভোটার সংখ্যার সঙ্গে কমিশনের তথ্যভাণ্ডারের ভোটার সংখ্যায় প্রায় ৫ লাখ ভোটারের গরমিল দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কশিমনের তথ্যভাণ্ডারের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে ভোটার সংখ্যা ৯ কোটি ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ২২৪ জন। আর মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৯ কোটি ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৯ জন। দুই ধরনের তথ্যের পর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে। কমিশন বলছে, তথ্যভাণ্ডারের তথ্যই ঠিক। মাঠপর্যায়ের তথ্য ভুলও হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক গতকাল বলেন, নির্বাচন কমিশনের ডাটা বেইজই সঠিক। মাঠ পর্যায়ের তথ্যে ভুলও হতে পারে। জেলা বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য ভুল। কোনোভাবেই তথ্যভাণ্ডার নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তথ্যভাণ্ডারের মোট ভোটার সংখ্যার সঙ্গে মাঠের তথ্যের গরমিলের বিষয়টি অবগত নন বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াও ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ভোটার তালিকায় গণ্ডগোল রয়েছে। নতুন তালিকায় কারও নামের বানান, পিতার নাম, কারও স্বামীর নাম, জন্ম তারিখ ভুল রয়েছে। নতুন এ ভুল তালিকা দিয়ে নির্বাচন হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়া।
ইসি সচিবালয়কে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের তথ্য দিয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত সারসংক্ষেপে বলা হয়, সারা দেশের ৯ কোটির বেশি ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৬১ লাখ ১১ হাজার ৫৪৭ জন ও মহিলা ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭৭ জন। ২০১২-১৩ সালে হালনাগাদের সময় ৭০ লাখ ১৭ হাজার ৫২১ জন নতুন ভোটার হয়েছে। এ সময় ৭ লাখ ৪১ হাজার ৬৯ জন মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ভোটার স্থানান্তর হয় ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৪ জন। হালনাগাদের আগে ভোটার সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪০০ জন। অন্যদিকে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে ভোটার সংখ্যা অনুপাতে ভোটকেন্দ্রের তালিকা চায় ইসি সচিবালয়। ইতোমধ্যে ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ৩০০ আসনের ৩৬ হাজার ৯৫৪টি ভোটকেন্দ্রের তথ্য পাঠিয়েছে ইসিতে। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্য একীভূত করে ৩০০ আসনে ৯ কোটি ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৯ জন ভোটার সংখ্যা হয়েছে। এতে পুরুষ ৪ কোটি ৬১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯০ জন ও মহিলা ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬১ হাজার ৭৮০ জন ভোটার। এর আগে গত ৩ জুলাই ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যস্ত সংসদীয় আসনের সীমানা গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। নতুন সীমানার নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটার সংখ্যা ইসি সচিবালয়কে দিয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এতে ৩০০ সংসদীয় আসনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮৯ জন ভোটার সংখ্যা রয়েছে। ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা) মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ভোটার হালনাগাদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। মৃতদের বাদ দিয়ে স্থানান্তর ও ভোটারযোগ্যরা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। কোনোভাবেই ভোটার সংখ্যা নিয়ে বড় পরিসরের তারতম্য হওয়ার সুযোগ নেই। মাঠপর্যায়ের তথ্য পর্যালোচনার বিষয়ে এ কর্মকর্তা জানান, নতুন সীমানা হয়েছে কোথাও কোথাও। তথ্যভাণ্ডারের তথ্যই চূড়ান্ত ও সঠিক। জেলা থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্যগুলো পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কোনো ভুল রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
ভোটার তালিকা নিয়ে কোনো আপস নয় : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ভোটার তালিকায় ভুলভ্রান্তির সুযোগ নেই। ভোটার তালিকা নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার অভিযোগকে নাকচ করে দিয়ে সিইসি বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করব না। শতভাগ নির্ভুল তালিকা দিয়েই আগামী দশম সংসদ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সিইসি বলেন, নামের বানান ও জন্ম তারিখ নিয়ে কোনো ভুল থাকলে তা প্রতিনিয়ত সংশোধন করা হচ্ছে। ভোটার নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি। ভোটার তালিকা নিয়ে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার অভিযোগের বিষয়ে কাজী রকিব জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাচাইয়ের পর তালিকায় ভুলভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। ভোটার তালিকায় গণ্ডগোল রয়েছে। নতুন তালিকায় কারও নামের বানান, পিতার নাম, কারও স্বামীর নাম, জন্ম তারিখ ভুল রয়েছে। নতুন এ তালিকা দিয়ে নির্বাচন হতে পারে না বলে গত মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়া। কমিশন বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে সিইসি জানান, ভুল যদি কিছু থাকে তা সংশোধন করা হবে। নামের বানান, জন্ম তারিখ-এসব ভুল থাকলে সংশোধন করা হবে। একটি স্বাধীন সংস্থা এটা চেক করে দেখেছে তারা ৯৯.৯৮ শতাংশ সঠিক পেয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান ভোটার তালিকায় দ্বৈত বা ভুয়া ভোটার থাকারও কোনো সুযোগ নেই। আমাদের তথ্যভাণ্ডারে এএফআইএস ম্যাচিং করে ভ্যারিফাই করেছি, অনেকগুলো ডুপ্লিকেট পেয়েছি। তাদের বাদ দিয়ে দিয়েছি। অন্যরকম ভুলও থাকতে পারে। ভুল সংশোধন করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা নিয়েই দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে ৯ কোটিরও বেশি ভোটারের তালিকা মুদ্রণের কাজ চলছে। অবশ্য ভোট দেওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো দরকার পড়ে না।
- See more at: Click This Link