somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনজীবী কেইকিউসি স্টিফেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আইন আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক

১৪ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনজীবী কেইকিউসি স্টিফেন

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আইন আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক


যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে মানবাধিকার চরমভাবে পদদলিত করা হচ্ছে0
0উভয়পক্ষের সম্মতিতে নিরপেক্ষ বিচারক থাকতে হবে0
0বিচারক আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে0
0যেটা হচ্ছে সেটা আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া বলার সুযোগ নেই0

যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুগস্লাভিয়া এবং রোয়ান্ডার আইনজীবী স্টিফেন কেই কিউসি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং যুদ্ধাপরাধ আইনকে বাংলাদেশের সংবিধান, ফৌজদারী দণ্ডবিধি ও আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলতে পারবে না এটা কোন নিরপেক্ষ আইন এবং নিরপেক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়া। বিচারের নামে মানবাধিকারকে চরমভাবে পদদলিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের সভা, সমাবেশ, সংগঠন ও রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানে করতে হলে সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করতে হবে, এ ক্ষেত্রে বিচারক হতে হবে উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিকমানের নিরপেক্ষ বিচারকও সেখানে থাকতে হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে যা হতে যাচ্ছে, সেটা আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া বলার সুযোগ নেই। স্টিফেন কেই কিউসি গতকাল বুধবার হোটেল সোনার গাঁ-এ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বার এসোসিয়েশন আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন। ‘মানবাধিকার : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত' শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। আরো বক্তব্য রাখেন বসনিয়া হারজেগোভেনিয়ার যুদ্ধাপরাধ আইনের কার্যনির্বাহী প্রধান (হেড অব প্রসিকিউশন) ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষজ্ঞ টবিক্যাডমেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুপ্রীমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা।
আরো বক্তব্য রাখেন, সাবেক এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, সিনিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার একে নজরুল ইসলাম, মানবাধিকার নেত্রী ও সুপ্র্রীমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সহকারী সম্পাদক ফাহিমা নাসরিন মুন্নী।
সেমিনারে দেশের প্রখ্যাত স্বনামধন্য আইনজীবীগণ স্টিফেন কেই এর কাছে যুদ্ধাপরাধ আইন ও ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দেন।
স্টিফেন কেই কিউসি বলেন, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধান জাতিসংঘ ও মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু ৭৩ সালে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে তার বিকৃতি ঘটে। এতে মানুষের বেশ কিছু মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়। তিনি বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যাল দ্বারা যারা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত তারা মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। সংবিধানের প্রথম সংশোধনী যুদ্ধাপরাধের যাবতীয় প্রক্রিয়াকে আদালতের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত করে। ফলে বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। কিন্তু অনুচ্ছেদ ৪৭-এর এ দ্বারা যারা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত তারা উচ্চ আদালতের আশ্রয় লাভ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখন আমি দেখতে পাচ্ছি এই আইন দ্বারা এমন লোকদের বন্দী করা হয়েছে যারা এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত নন। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিকে এমন কোন অপরাধের জন্য সাজা দেয়া যাবে না যা কিনা তৎকালীন সময়ে কোন আইন দ্বারা ওই অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়নি। আন্তর্জাতিক আইনে এটাও নিশ্চিত করা হয়েছে যে দোষ প্রমাণ করার আগে তাকে নির্দোষ হিসেবে গণ্য করতে হবে। যুদ্ধাপরাধ অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। কিন্তু বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অভিযুক্তদের শাস্তি দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকারগুলো নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।
স্টিফেন কেই কিউসি আরো বলেন, এই ট্যাইব্যুানাল গঠনে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে এমন আইন যা কিনা আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধ হিসেবে গণ্য যে আইন বাংলাদেশে সংবিধান ও আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনের সাথে বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইন (ট্রাইব্যুনাল) সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এই ট্রাইব্যুনালের আইনে আমরা কোন আন্তর্জাতিক মান খুঁজে পাই না। সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে এই আইনটি কিভাবে সুবিচার নিশ্চিত করবে? বিচার করতে হলে ট্রাইব্যুনালকে তার কার্যক্র্রম দ্বারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। বিচারকদের নিরপেক্ষতার ব্যাপারে ইতোমধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযুক্তরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। এই ট্রাইব্যুনালের জবাবদিহিতা কিভাবে নিশ্চিত হবে তারও কোন জবাব নেই।
টবি ক্যাডমেন বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাদের নিয়ে করা হয়েছে তারা অপেশাদার এবং আন্তর্জাতিক আইন ও বিচার সম্পর্কে তাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই কেবল বিচারকার্য শুরু করতে পারে। কিন্তু এখানে বিচার শুরু হয়েছে অথচ অভিযোগই গঠন করা হয়নি। বাংলাদেশ যে সমস্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনভেনশনে সই করেছে, যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সভাপতির বক্তব্যে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে মসকরা করা হচ্ছে। বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দলন করার ব্যবস্থা চলছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। আমরা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে যারা হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, ও অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধ করেছে তাদের বিচার সবাই চায়। তবে এইসব অপরাধ যারা প্রত্যক্ষভাবে করেছে আগে সেই পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে হবে। আসল অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে সহযোগিদের বিচার করার প্রশ্নই আসে না। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকারই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়েছিল।
তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনমূলক বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রতিনিয়তই ঘটছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলে সে কোন বিচার পাচ্ছে না। আর সরকারের লোক হলে সে খুনির আসামি হলেও ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে, ক্ষমা পেয়ে যাচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এভাবে মানবাধিকার লংঘিত হলে এদেশের ভবিষ্যৎ মানবতা পদদলিতই হতে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৯:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×