কিস্তি-২
তাই নাকি? বলো তো শুনি।
আপনি একটা বেহায়া। বিশ্ববেহায়া। অপদার্থ। উল্লুক। ভল্লুক। আর...
আর...
তেল্লাচোরা। আপনি একটা তেল্লাচোরা।
সেটা আবার কি জিনিস?
যে প্রাণীটাকে আমি সবচেয়ে ঘৃণা করি। এতই ঘৃণা করি যে নাগালে পেলে লাত্থি দিয়ে উল্টে দেই।
কেন, উল্টে দাও কেন?
আরে বেক্কল ব্যাটা উল্টে দিলেই তো ওইটার বাহাদুরি শেষ। আর সোজা হতে পারে না। হাত-পা ছড়িয়ে খালি তড়পায়। আমি তখন প্রাণ খুলে হাসি। খুব মজা পাই।
কিন্তু প্রাণীটা এখনও চিনলাম না।
তোমার মতো কাপুরুষের জন্য ওটা জরুরি নয়।
আরে বাহ! আপনি থেকে তুমি! বেশ সাহসী হয়ে উঠছো দেখছি। এই তো চাই।
সাহসের দেখেছিস কি? আর চাইছিস যখন, তখন একবার সামনে আয়। তোর জন্য কনিষ্ঠ আঙুলের একটা টিপই যথেষ্ট।
মাঝে মাঝে তুমি এমন ঐচ্ছিক ভাষায় কথা বলো যে, আগামাথা কিছুই বুঝি না। একটা টিপ যথেষ্ট মানে?
আরে ব্যাটা ছাড়পোকা মারতে কি কেউ দুই টিপ দেয়?
আরে বাহ! এ জন্যই তোমাকে আমার এত ভাল লাগে। তুমি যা উপমা দাও না! সত্যি, বিলকুল লা-জবাব! তবে হ্যাঁ, তুমি চাইলে ছাড়পোকা হতেও আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কারণ মারা পড়ার আগে অন্তত তোমার রক্তের স্বাদ তো পাবো।
অহনা হতভম্ব। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিছুটা হতাশও। একি রক্তে মাংসে গড়া মানুষ? নাকি রোবট। লাজ-লজ্জা বলে কিছুই নেই!
ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায় তার। মাথায় দাউ দাউ দাবাগ্নি। কি ভীষণ ঘৃণা, ক্রোধ, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। সকাল বেলার এমন মধুময় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার কষ্টে তার চোখে জল।
লোকটির সঙ্গে আর কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। লাইন চালু রেখে হাত থেকে বিছানার ওপর ছুড়ে মারে ফোনটি। মনে মনে বলে- নে ব্যাটা, এবার যত পারিস বক বক কর। দেখি তোর মোবাইলে কত ব্যালেন্স আছে।
সেল ফোনটার ওপর বিরক্তি কম নয় অহনার। এটা এখন চরম যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠেছে। বিশেষ করে এই লোকটা যেদিন থেকে তাকে যখন-তখন ফোন করছে। নাম্বারটা কোথায় পেল কে জানে? আর লোকটি বেছে বেছে এমন সময়ে ফোন করে যখন অহনা খুবই ব্যস্ত কিংবা যে সময়গুলো একান্তই তার। এই যেমন- সে যখন ঘুমুতে যায়। চোখটা যেই ঘুমে কাতর হয়ে আসে ঠিক তখনই রিং টোন বেজে ওঠে। আবার যে সময়টায় পড়াশোনা নিয়ে খুবই ব্যসত্ম অথবা শীলার কাছ থেকে নোটটা চেয়ে এনেছে, কালই ফেরত দিতে হবে। তাই মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে থেকে ওগুলো নিজের খাতায় টুকে নিচ্ছে, ব্যস বেজে ওঠলো ফোন। বেজেই চলেছে। বেজেই চলেছে। সে ধরছে না। ধরার প্রয়োজন মনে করছে না। আর তখন পাশের রুম থেকে মায়ের উচ্চকণ্ঠ- কিরে অহনা কে ফোন করেছে?
অহনার উত্তর- বলতে পারছি না মা।
ধরস না কেন?
ব্যস্ত আছি।
তাই বইল্যা ফোন ধরবি না। এমনও তো হইতে পারে পারভেজ ফোন করছে। এতো রাতে ফোন! নিশ্চয়ই জরুরি।
ফোন রিসিভ করতেই অহনা বুঝতে পারে এটা সেই বেহায়া। বিশ্ববেহায়া। লাইন কেটে দেয়। মা আবার প্রশ্ন করেন কে-রে?
রং নম্বর মা।
পারভেজ ফোনটোন করে নাই?
করেছিল।
কি বললো।
ভাল আছে।
শুধু এই? আর কিছু বলে নাই? কবে আসবে-টাসবে।
আসবে। সময় হলেই আসবে।
এরপর মা একে একে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব খবর জানতে চান। এমন কি হাঁড়ির খবর পর্যন্ত। অহনা গাছাড়া ভাবে হুঁ-হ্যাঁ জবাব দেয়।
সেলটা বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে অহনা ঘুমুতে চেষ্টা করে। তন্দ্রাভাব যখন চলে আসে ঠিক তখনই সেলটা আবার বেজে ওঠে। একবার, দু’বার, তিনবার। মুহূর্তে যেন টর্নেডো বয়ে যায় অহনার রক্তে। ফোন রিসিভ করেই ঝাঁঝালো কণ্ঠ-
এই শালা, তুই কি মানুষ না জানোয়ার?
অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে- কিরে তোর কি হরমোন চেঞ্জ হয়ে গেলো নাকি? যদি তাই হয়, কথা দে আমাকে বিয়ে করবি।
ও... নীদ? এত সকালে কি ব্যাপার বল।
আগে তুই বল হয়েছে কি? তুই কি পুরুষে রূপান্তর হচ্ছিস? যদি তেমন কিছু হয় তবে আমি কিন্তু বুকড করে রাখছি। খবরদার আর কারও দিকে চোখ রেখেছিস তো চোখ উপড়ে ফেলবো।
কি যা-তা বলছিস!
যা-তা নয়, আজকাল হরহামেশাই এমনটা হচ্ছে। দু’দিন আগেও পত্রিকায় পড়লাম। সালমা নামের একটা মেয়ে পুরুষে রূপান্তরিত হয়েছে। এখন নাম রেখেছে সালাম। আর বিয়ে করেছে বাল্যবান্ধবী আসমাকে।
আরে না, ওসব কিছু না।
তবে যে শালা বললি...
আর বলিস না। ওই বেহায়াটা সাতসকালে জ্বালিয়ে মারলো।
তাই নাকি? আজও ফোন করেছিল?
তবে বলছি কি?
কি বললো?
ওই একই কথা। মনে হয় শালার অস্থি-মজ্জা মরা গরম্নর হাড্ডি দিয়ে তৈরি। লাজশরম, ঘৃণা কিচ্ছু নাই।
সত্যি, বেচারা তোর প্রেমে পড়েছে। একেই বলে- পুকুরেতে জল নেই পাতা কেন ভাসে, যার সাথে দেখা নেই সে কেন হাসে।
হ্যাঁ, না দেখেই এতদূর! দেখলে কি করবে?
এখন তো আধাজল খেয়ে নেমেছে, তখন সাঁতার কাটবে।
বাজে কথা রাখ, এখন বল এতো সকালে কেন ফোন করেছিস?
সকাল বলছিস কিরে! সোয়া ন’টা বাজে। দশটায় ক্লাস।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে অহনার। সর্বনাশ। কিছুতেই আজকের ক্লাস মিস করা যাবে না। ফোন রাখছি- এই সামান্য ভদ্রতাটুকুও ভুলে যায়। বিছানার ওপর সেল ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে ধড়ফরিয়ে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে।
বাকি অংশ আগামীকাল