আমার ভার্সিটি লাইফ প্রায় শেষ পর্যায়ে ,যখন কুয়েট এ ভর্তি হই তখন মনে হত এই জাহান্নাম থেকে কবে মুক্তি পাব??? এখন মনে হচ্ছে আর কিছু দিন এইখানে থাকলে মনে হয় খারাপ হত না । এমন কি জিনিস আমাকে এই খানে থাকতে বলছে??? স্যাররা ক্যামন পড়ায় সেটা আমি কখনও ই বলতে পারব না, আজ পর্যন্ত কোন ক্লাস এ একটা ওয়ার্ড মনোযোগ দিয়ে শুনছি কিনা আমার আজ ও মনে পড়ে না। ক্লাস নোট?? আমাদের একটা সেমিস্টার এ ৫ টা সাবজেক্ট আর আমি ২০ টাকা দিয়া ভুল করে একটা খাতা কিনছি ।পরে মনে হল এইডা তো লেইখা শেষ করতে পারুম না, তাই সাথে সাথে ৫ টাকা ফিরত নিয়া ১৫ টাকা দিয়ে আধা দিস্তার একটা খাতা কিনছি।সেমিস্টার প্রায় শেষ এখন ও খাতার অর্ধেক টা শেষ হয় নাই, ভাবসি বাড়ি নিয়ে যামু, পিচ্চি বোন আকাআকি করবে।
আমার বন্ধু নয়ন গত ৪ ইয়ার এ তেমন পড়া লেখা করতে পারে নি ।কি করে টাইম পাস করে এইটা আমি এখন ও জানি না , মাঝে মাঝে ক্লাস এ এক সাথে বসলে হাত দেখাই বলত “ দোস্ত আমার হাত এ আফরিন এর নাম লিখেদে “ ।আফরিন এর সাথে ওর প্রেম থাকলেও অনেক ঝামেলা প্রেমের মাঝে,এইটা ও নিজে ই বলছে।এতো সাংসারিক মন মানুসিকতা নিয়ে তো আর পড়াশোনা করা যায় না ।আমার বন্ধু মানুষ আমি না হয় মানলাম, অন্নেরা কি ভাবে তা আমার জানা নাই। এখন ও একটা বড় প্রবলেম এ পরসে , ওর নাকি এখন খুব পড়তে ইচ্ছে করে । করতে ই পারে ৪ ইয়ার এ পরীক্ষার আগে টেবিল এ বসে নি এখন টেবিল টা নতুন দেখে একটু পড়তে মন চাইছে।ম্যাথ পরীক্ষার আগে আমার কাছ থেকে দোয়া নিয়া গেসে যাতে পাস করে, দেখা যাক কি হয়?? পাস করলে কমু দোয়া করছি না করলে আমার কাছ থাইকা ভাল ভাবে দোয়া চায় নি তাই এই খারাপ অবস্থা।
বাংলার অক্টোপাস খ্যাত লিওন আমার রুমমেট,আগে আমারা নাম করনের সার্থকতা বিচার করি, অক্টোপাস পল তার প্রতিটা ভবিষ্যৎ বানী ঠিক করসে কিন্তু বাংলার অক্টোপাস বলে কথা, ওর যে একটা ও মিলত না তা নাড়ি না কাটা বাচ্চা ও বলে দিতে পারবে।ইতালি অ্যাটাকিং ফুটবল খেলে এটা ও মনে প্রানে বিশ্বাস করে। অ্যাটাকিং ফুটবল ইতালির মূল ধরন। যাই হোক পরে সব ভবিষ্যৎ বানী ভুল করে ফাইনাল ম্যাচ এর আগে তার বক্তব্য টা এই রকম “ ভাবসি স্পেন ভাল খেলবে কিন্ত হল্যান্ড এর জিতার সম্ভবনা অনেক বেশী”
পারভেজ এর দুই চোখের বিষ হল আঁতেল পোলাপান, যদিও সে প্রতিদিন যে টাইম পায় তার পুরাটা ই পড়া লেখায় মগ্ন থাকে।মাঝে মাঝে ও নিজে ই আঁতেল শব্দের বুঝা আমার উপর চাপায় দেয়। আমি গত ২ মাস টেবিল এ যাওয়ার টাইম পাইতাসি না , দেখি এক মাস পরে একটু পড়তে পারি কিনা??? ওর গান গাওয়ার খুব শখ , কিন্ত গলা ততটা সুবিধার না বলে ইচ্চছা আছে কিন্তু প্রতিভা নাই এই ফর্মুলার কাছে ধরা খাইসে।তবে ওর হাতের লেখা আমার দেখা যে কোন লেখার থেকে অনেক সুন্দর, আমি যদি কখন ও কোন প্রেম পত্র লিখি তাকে দিয়ে ই লেখাব ভাবসি।
বন্ধু নিয়া এইবার অফ গেলাম, ল্যাব এ যেতে হবে ।আমি কুয়েট লাইফ এর শেষ প্রান্তে,এখানের সব কিছু ই মনে পরার মত শুধু কিছু গুটি কয়েক স্বার্থপর ছাড়া, ঐ গল্প না হয় পরে করব। এক জন ভাল ইঙ্গিনিয়ার হবার অনেক বড় সুযোগ ছিল, আমি ঐ সম্ভাবনা নিজের হাতে মাটি দিয়েছি , হয়ত আমাকে এই জিনিস টা আজীবন পোড়াবে, কিন্ত এই পোড়া ক্ষত টা ভুলতে পারব হয়ত এই বন্ধু গুলার কারনে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:২০