somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুলা সালামঃ এক জন অভিমানী মুক্তিযোদ্ধা

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লুলা সালামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার জাম্বারি নামক গ্রামে, আমি যখন গত ঈদ এ বাড়ি যাই তখন আমি তার কথা জানতে পারি। লুলা তার নামের আগের বিশেষণ,মাথায় নাকি খানিক টা সমস্যা আছে , আমি নিজেও দেখেছি মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে জোরে চিৎকার করে। এই রকম কিসিমের লোক দেখে আমার মত ছেলে মজা পাবে এটা স্বাভাবিক ,আমিও দাড়িয়ে দাড়িয়ে মজা নিলাম, আমার সাথে এক পিচ্চি ছিল ও সালামের গায়ে ঢিল মারার জন্য অনেক ক্ষণ ধরে চেষ্টা করছিল ঢিল খুজে পাচ্ছিল না , আমি কষ্ট করে একটা ঢিল খুজে দিলাম। আমার দাদা দুর থেকে এই জিনিস দেখসে , তার পর আমাকে এমন ধমক দিল যা আমি কখনও ই দাদার কাছ থেকে আশা করি নাই। আমি চুপ মেরে ঐ খান থেকে থেকে চলে আসলাম , দাদার সাথে আমার খুব ই ভাল সম্পর্ক, রাতে খাবার পর দাদা বলল “ তুমি যে কাজ টা আজকে করস তা খুব ই খারাপ “ আমি নির্লিপ্ত ভাবে জবব দিলাম “ জানি”দাদা রেগে যাচ্ছে দেখে আমি শান্ত করতে বললাম দাদা লুলা সালামের বাড়ি কোনটা? তখন দাদা বলে ঐ যে আমাদের গ্রাম এর বড়বাড়ি ওইটা ই তাদের বাড়ি, এখন ঐখানে অন্য লোকেরা থাকে, লুলা বাড়িতে থাকে না তাই তার দুর সম্পর্কের আত্মীয় থাকে।আমি তখন বললাম লুলার বাবা, মা কোথায়? এই প্রশ্ন টা করার সাথে সাথে দাদা এমন এক সত্যি গল্প বলা শুরু করল যা না শুনলে বুঝা ই যাবে না।

সালাম নামের একটা ছেলে ৫ ভাই ২ বোন , সালাম সবার বড় ছেলে তাই সবার আদর ও হয়ত বেশী পেত, তার দাদার অনেক সম্পত্তি ছিল ভারতবর্ষে , যখন ভারত পাকিস্থান আলাদা হয় তখন অনেক সম্পত্তি তাদের ভারতে পরে যায়, তবু সালামের দাদা এই বাংলায় থেকে যান।

তখন ৭১ এর মাঝ, গ্রামের অনেক লোক ই পাশের দেশ ভারত চলে গেসে, সালামের বাবা যাননি ,বয়সের ভারে বৃদ্ধ তবু অবলীলায় নাকি বলেন” আমার বাপের যে সম্পত্তি ভারতে পরছিল তা দিয়া পুরা গ্রাম ই তিন বার কিনা যাইত , যাই নাই কেন??? এই দেশের মায়ায়, এই মাটির গন্ধ না পেলে যে আমার ঘুম আসে না, আর এখন আমার দেশ বিপদে আছে, আমি এই সময় তারে ছেড়ে কি করে যাই?”

সালামের ছোট বোনের বিয়ে হবে , এম্নিতে ই বড়বাড়ি নামে সারা গ্রাম এক নাম এ তাদের বাড়ি কে চিনে, ঐ বাড়ির মেয়ের বিয়েতে সারা গ্রাম এর আগ্রহ তো থকবে এটা ই স্বাভাবিক।বর যে দিন আসে ঐ দিন রাতে থেকে যাবে কারণ অনেক দুর এর রাস্তা। আর দেশ আর পরিস্থিতি খারাপ, কি কারনে দেশের অবস্থা খারাপ টা সালামের ছোট বোন ততটা জানে না, নব বধুর চোখে শুধু ই নতুন করে জীবন সাজানোর স্বপ্ন।আর সেই রাতে ই সালাম তার বোনের কাছে যায় আর বলে দেশ টা কে কিছু হায়েনার কাছ থেকে রক্ষা করতে যাচ্ছি, ফিরে আসব তোর জন্য একটা স্বাধীন দেশ নিয়ে, বাবা মাকে কিছু বলিস না ,এই বলে সালাম তার বোনের কাছ থেকে বিদায় নেয়, বোনটার বয়স তখন বেশী হবার কথাও নয় ,ও কাউকে কিছু জানায় নি।

সালাম এক সময় ফিরে আসে তার হাতে স্বাধীন দেশ এর পতাকা, মুখে আনন্দের আভা, সে তার ছোট বোন কে যে স্বাধীন দেশ আনার কথা দিয়েছিল তা পূরণ করতে পারার আনন্দ।তার পায়ে একটা গুলি লেগেছে তাই একটু খুরিয়ে হাটে , ঐ গুলি বের করা হয়নি, তবু বাড়ির দিকে গেল তার বোন, বাবা , মাকে খুজতে। কিন্ত এ কি??? তার বাড়ির উঠানে বড়বড় ঘাস , তার বাবা তো এই বাড়ি ছেড়ে কখন ও যাবার কথা না।আচমকা তার মনে বাজ পরে, কিছু সময় দাড়িরে হটাত সালাম অঝোরে কাঁদতে থাকে ,বিধাতাকে অনেক নিষ্ঠুর মনে হয় তার কাছে।

কি ঘটেছিল যে সালামের এমন পরিনিতি??? যে দিন সালাম বাড়ি থেকে বের হয় ঠিক ঐ দিন ই তার বাড়িতে পাকিস্থানিরা হানা দেয় তার ছোট ৫ ভাই , ১ বোন, বোনের জামাই, বাবা , মা কে ধরে নিজে যায় পাশের গ্রামে, একটা ঘরে বন্ধী করে রাখে। পাশের গ্রাম থেকে ও কয়েক জন কে ধরে আনে, সবাই কে এক ঘরে বন্ধী করে। বিকট শব্ধে জেগে ওঠে ঘুমিয়ে থাকা রাতের আধার, বিধাতার মন হয়ত জাগে নি, ৩১ জন লোক কে এক সাথে মারা হয় একটা করে বন্ধী করে।এর মধ্যে সালামের পরিবারের ৯ জন।

সালাম নামের মানুষটা অনেক অভিমানী, রাগ করে নিজের ভিটা মাটি অন্নের তুলে দিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়, ৪-৫ বছর পর ফিরেও আসে গ্রামে ,তবে আগের সালাম আর নাই, কারো সাথে কথা বলে না, নিজের বাড়ি নাই, ঘর নাই, রাতের বেলা স্কুল এর বারান্দায় ঘুমায়।পায়ের ক্ষতটা রয়ে ই গেসে, খুড়িয়ে হাটা অনেক তা বেড়েছে, স্কুল এর ছেলেরা সকালে তাকে দেখে , কথা বলতে যায়, ও রেগে যায়, একবার নাকি স্কুল এর পাশে প্রসাব করছিল তাই এখন তাকে ঐ খানে ও থাকতে দেয়া হয় না, এখন বেশির ভাগ রাত ই রাস্তায় কাটায়, মাঝে মাঝে ভিক্ষা করে , পাগল বলে মানুষ দুর দুর করে আর মজা করে তাদের পিচ্চি ছেলে মেয়েকে দেখায় “ ঐ দেখ লুলা সালাম যায়”

লুলা সালাম এক জন মুক্তিযোদ্ধা, যে তার দেশের জন্য সব দিয়ে দিয়েছে, হারিয়েছে তার পরিবারের সবাই কে , ও যে মুক্তিযোদ্ধা এটা কেও জানে না, যুদ্ধের সময় যে গুলিটা ওর পায়ে লাগে তার কারে সে এখন ও খুড়িয়ে হাটে তাই আমাদের দেশ তাকে একটা পরিচিতি দিয়েছে লুলা, আমারা তরুণ সমাজ। আমরা চাই যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার তাড়াতাড়ি হোক, কিন্ত তা তো চাই না, একটা লোক না খেয়ে পথে পরে থাকবে, লোকে তাকে পাগল বলে গালাগালি দিবে??? আচ্ছা যারা যুদ্ধ অপরাধী তাদের তো জেলখানায় তিন বেলা খাবার দেয়া হয়, তাই আমার মনে প্রায় ই প্রশ্ন জাগে ইশ সালাম যদি যুদ্ধ অপরাধী হত তাহলে নিশ্চয় না খেয়ে পাগল উপাধি নিয়ে বাঁচতে হত না???

আমি রাজনীতি বুঝি না, এই সম্পর্কে কিছু জানি ও না, তবে আমার মন বলে, আমাদের দেশের কর্তারা যুদ্ধ অপরাধী যুদ্ধ অপরাধী করে আর কত দিন আমাদের আশা দিয়ে ক্ষমতায় যাবেন???? আরে আমারা কি বিচার করব?? আমারা এমন জাতি যারা স্বাধীনতার ৪০ বছর যায় আর আমরা আমাদের আসল মুক্তি যোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে পারলাম না, যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে, আমাদের ওপর অভিমান করে অনেক সালাম ই যে মুখ থুবড়ে কাঁদে।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×