সোহাগ এর একটা বিচিত্র স্বভাব আছে ওর নাকি শুধু প্রেমপত্র লিখতে ইচ্ছে করে, প্রেমপত্র লিখবে ভাল কথা কিন্ত আসল ব্যাপার হল যখন ই সে পরীক্ষার হলে যায় তখন ই নাকি ওর মাঝে ভাব এর উদয় হয় ।অন্য কোন সময় বহু চেষ্টা করে ও লিখতে পারে না।কিছু দিন আগে আমাদের সোহাগ ঘোষণা দিল যে করে ই হোক পাশের বাড়ির তমা কে চিঠি লিখবে, অনেক চিন্তা করল অনেক ভাবা ভাবসে কিন্ত কাজ এর কাজ কিছু ই হয় না।কিছু দিন পর ও আমার কাছে আসল আর বলল দোস্ত আমারে একটা চিঠি লিখে দে না। আমি বললাম অসম্ভব, পরে ও যখন গ্রিল খওয়াতে চাইল আমি সাত পাকে বাধা পরে গেলাম। লিখতে বসলাম, চিঠি ভাবসি নিজের মত করে লিখব উপায় নাই সোহাগ আমার কোন লাইন ই পছন্দ করে না,এক লাইন লিখলে বলে আগের লাইন এর সাথে নাকি খাপ ছাড়া লাগতাসে। আমি রেগে বললাম” তুই যদি এতো বেশী বুঝস তাইলে নিজের টা নিজে লেখ। পরে ও বিরানির অফার করে আমাকে ঠাণ্ডা করল।রাত ভর জেগে লিখা শেষ করলাম , সকালে দেখি সোহাগ হাজির নিজ হস্তে কবিতা লিখে নিয়ে আসছে। এখন ঐ কবিতা আমি চিঠির শেষে যোগ করে দিলাম। ভাবলাম বড় বাঁচা বেঁচে গেসি ওর হাত থেকে।কিন্ত কোথায় কি ও যে কথা বলল তা শুনে আমার চক্ষু তাল গাছে। বলে “ বাপ্পি তুই এক কাজ কর আমার এই চিঠি টা তুই তমা কে দিয়ে আস” আমি বললাম তোর চিঠি তুই দে। ও নানা ভাবে আমাকে পটানর চেষ্টা করল। আমি আমার লোভ সামাল দিলাম।আমার চেহারা দেখতে বোকার মত ঠিক আছে কিন্ত আমি অত বোকা তো না যে এই কাজ করমু।
আমার দাদা গ্রাম এর মেম্বার ,খুব ই ভাল মানুষ, হাসি ছাড়া কথা বলেন না , কিন্ত প্রেম বিষয়ক কোন কিছু টের পেলে তার মাথা ঠিক থাকে না, আমার এক কাকা পাশের গ্রাম এর কোন মেয়েকে নাকি I love পর্যন্ত বলসে you বলার আগে ই পালায় আসছে মেয়ের সামনে থেকে, মেয়ে এই কথা তার বাবার কাছে বলসে আর মেয়ের বাবা bbc এর কাজ করে আমার দাদা সহ পুরা গ্রাম করসে, পরে দাদা কাকা রে তিন দিন খেতে দেয় নি, এক দিন কানে ধরে দার করিয়ে রাখসে, কাকা অনেক ভাল ছেলে ছিল, তখন তিনি বুয়েট এ ২য় বর্ষে পড়েন তবু দাদার কথা একটু ও নড়চড় হয় নাই।
আবার সোহাগ এর কথায় ফিরে আসি সোহাগ নাকি তার কাজে সফল হইসে। তমার কাছে চিঠি ঠিক ভাবে দিয়ে আসছে। আমি বললাম তুই নিজে দিসস??? ও বলে না হাসান কে দিয়ে বলসি তমার কাছে এই চিঠি দিতে। আমার মাথায় হাত ওয়ার্ল্ড এর ১০ টা বেকুব খুজে বের করে কেও যদি বই লিখে তাতে ১ থেকে ১০ শুধু হাসান এর নাম ই থাকবে । আমি তাড়াতাড়ি সোহাগ কে বললাম তোর মামার বাড়ি কই যেন??? ও বলে তালতলা। আমি বলি এক ঘণ্টার মধ্যে ভাগ নাইলে তোর খবর আছে। আমার কথা সোহাগ কোন দিন ও শুনত না আজ ও শুনে নি। আমি ঘুমাতে গেলাম সকালে একটু দেরি করে ঘুম থেকে উথে দেখি আমাদের বাড়ির সামনে অনেক পিচ্চি পোলাপান ভিড় করসে , এক পিচ্চির কাছ থেকে যা জানলাম টা হল “ সোহাগ ভাই তমা আপা রে চিঠি দিসে ঐ চিঠি তমা আপা বাবা পেয়ে গেসেন এখন সোহাগ ভাই রে আপনাদের কাচারি ঘর এ আটকাই রাখসে “ তবে পরে যা জানতে পারলাম টা আরও ভয়াবহ, সোহাগ নাকি অস্বীকার করসে যে ও এই চিঠি লিখে নাই এই কথা শুনে আমার মাথায় হাত।এই চিঠি তো আমি লিখে দিসি, এখন ওরে ভাল ভাবে মাইর দিলে ই ও আমার কথা বলে দিবে, আমার এর চিন্তা না করে আমার মামার বাড়ি পালিয়ে গেলাম।
৭ দিন পর আমার ছোট কাকা মামার বাড়ি হাজির ওনার কাছ থেকে যা জানলাম টা হল , আমি নাকি এই চিঠি লিখসি, চিঠি দেখার পর আমার দাদা নাকি আমার লেখা দেখে ই বুঝে ফেলছেন। আজ ই যদি আমি বাড়ি না যাই, তাইলে কাল দাদা ই নাকি আমারে ধরে বাড়ি নিয়ে যাবেন, আমি বললাম কাকা আপনি ঘুমান আমি আপনার সাথে বিকালে বাড়ি যামু। কাকা ঘুমতে গেল আমি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে ফুফির বাড়ি চলে গেলাম ।মার কান্না কাটিতে বাবা ৩ দিন পরে এসে আমারে কোন কিছু করা হবে না বলে নিয়ে গেল। গিয়ে শুনি দাদাও নাকি আমার জন্য কেঁদেছেন । আমি মনে মনে নিজে কে অনাক বড় মনে করলাম। এর সিধান্ত নিলাম এই চিঠি তো অন্নের জন্য লিখসি এখন নিজের জন্য ই আরেক টা লিখব ।
আমার প্রেমিকা প্রতি দিন ই বলে আমি তুমাকে কত গুলা চিঠি দিসি আর তুমি আমাকে একটা ও লিখ নাই, আমি বলি টাইম পাই না, ও রাগে, আমি হাসতে থাকি। তাকে আমি কি করে বুঝাই চিঠি লিখে এক বার আমি টানা ৩ ঘণ্টা নীল ডাওন করে সূর্যি মামার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।তাই যখন ই চিঠির কথা মনে পরে আমি ও শুধু সূর্য দেখি আর দাদার মুখ কাল করা তাকানো দেখি।