somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহীদুল ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোনালিসা
শহীদুল ইসলাম
একদিন প্যারিসের রাস্তায় আমি অবরোধ ডাকবো,
ল্যুভ জাদুঘরের সামনে করবো আমরণ অনশন,
হৃদয়ের ক্যানভাসে যে ছবি এঁকেছি তার স্বীকৃতি চাই।
ষোলশ শতাব্দীর নিষ্প্রভ কোনো তৈলচিত্রের মোহে নয়,
আমি একবিংশ শতাব্দীর লাস্যময়ী মোনালিসার কথা বলছি,
যে হাসতে শেখায়, ভালবাসতে, আবার বাঁচতে শেখায়।
-
পূর্বাভাস
শহীদুল ইসলাম
মনে আছে সেদিন তুমি আমায় ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়ে
৭ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছিলে। বলেছিলে
আজ অঝোর ধারায় বৃষ্টিও নামবে। তাইতো আজ
আমি প্রস্তুত। জলোচ্ছ্বাসে আজ ভাসাবো তরী, অথৈ
জলে কাটবো সাঁতার। আমার গন্তব্য হবে হাডসন ও
ইস্ট রিভার হয়ে আটলান্টিক মহাসাগর। এরপর পথ হারিয়ে
মিশবো গিয়ে বঙ্গোপসাগরে। সেখানেই তোমার সঙ্গে
আমার একদিন হয়তো দেখা হবে। শুনেছি হাডসন তীরের
মানুষেরা আটলান্টিক হয়ে বঙ্গোপসাগরেই নোঙর
ফেলে। আমিও তোমার অপেক্ষায় রইলাম।
-
শুদ্ধতা
শহীদুল ইসলাম
আমার মত কেউ কখনো তোমায় ভালবাসবে না, মনের
গহীন কোণে ঘুম পাড়িয়ে নির্ঘুমে রাত কাটাবে না। তপ্ত রোদে
ছায়া হয়ে কেউ তোমায় কাছে টানবে না, দীঘির জলে
সাঁতার কেটে শাপলা শালুকও তুলে আনবে না। তোমার
দীঘল কালো কেশ নিয়ে কেউ গল্প-কবিতা লিখবে না, হাসিমাখা
মুখখানিতে মোনালিসাকেও আর কেউ খুঁজবে না। তোমার
কাজল কালো দুটি চোখে কেউ তুলির আঁচড় রাখবে না, আমার
মত কেউ কখনো শুধু তোমায় 'ভাল লাগা' নিয়ে বাঁচবে না।
মোহ নাকি মোহনা
-
তুমি
শহীদুল ইসলাম
কেন এমন হয় বলতে পারো? পৃথিবীর
সব ভাল লাগা কেনো তোমাকে ঘিরে?
সকাল থেকে সন্ধ্যা, সব ভাবনায় কেনো
শুধুই তুমি? তুমি বললে এ আমার ক্ষণিকের
মোহ, কিন্তু আমি বলি মোহনা, যেখানে মিশেছে
সব বন্দনা। আমি সব স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জণবর্ণ এক
করেও আমার ভাল লাগার একটি শব্দ খুঁজে
পাইনি। বরং লক্ষ কোটি ভাল লাগার পংক্তি লিখেছি,
ডায়েরির একটি পাতাও আর অবশিষ্ট নেই। তবু
এ ভাল লাগার সঙ্গে অন্তমিল খুঁজে পাইনি কখনো,
ঠিক যেমনটি তুমি খুঁজছো? কিন্তু পাওনি, পাবেও না।
-
স্বর্ণালী বিকাল
শহীদুল ইসলাম
রৌদ্র করোজ্জ্বল স্বর্ণালী বিকাল আমায় এখন আর ¯পর্শ করে না,
আজো করেনি। বরাবরের মত বিষণœ বিকাল ছিল আজ, তবু
স্বপ্নেরা ছিল মেঝে ঢাকা। ভেবেছিলাম বৃষ্টি নামাবো, ঠিক তখনই
তুমি এলে দক্ষিণা হাওয়া হয়ে। মেঘেরা আর বৃষ্টি হয়ে ঝরেনি,
বরং স্বর্ণালী রোদ্দুর উঁকি দিল। তোমার কেশ ভেদ করে আলোর
নাচন মাতম করছিল চারপাশে, চার দেয়ালের বাইরে যখন এলাম,
তখন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, স্বর্ণালী বিকালটা অতীত হলো,
কিন্তু প্রিয়ার হাসিমাখা মুখ এখনো অমলিন, আলো ঝলমল।
-
মলিন আঁধার
শহীদুল ইসলাম
কদিন ধরে তোমার কথা ভেবে ভেবে ক্লান্ত আমি,
ঘুম নেই চোখে। ক্লান্ত শরীর আমার ঝিমিয়ে চলছি,
দূরের নিয়ন বাতির আলো পেছন থেকে আমার
গায়ে পড়ছিল। আর সেই আলোয় নিজের সঙ্গে
খেলা করছিলো আমারই ছায়া। রাস্তার বাঁক ঘুরতেই
ছায়াটি ডান থেকে বায়ে সরে গেলো। বুঝতে পারলাম,
বা দিকের উষ্ণ আলোর বিচ্ছুরণে এমনটি ঘটেছে।
কিছুদূর এগোতেই সামনের লাইট পোস্টের আলোয়
মুহূর্তে ফিকে হয়ে গেলো ছায়াটি। যে ছায়াটুকু আমার
একমাত্র সম্বল তাও কেড়ে নিতে চায় আলো। তাহলে
কেনো আলো হয়ে আসো তুমি, আঁধারে হারাও?-
-
তুমি হবে আমারই
শহীদুল ইসলাম
আমার অদম্য এই ভাল লাগার টানেই,
একদিন তুমি আমায় ঠিকই ভালবাসবে,
আমায় আষ্ঠেপৃষ্টে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে।
আমার আÍবিশ্বাস তোমায় গ্রাস করবে,
নিঃশ্বাসের ফণা তুলবো তোমার শ্যামবর্ণ চিবুকে,
দারুণ দংশিত হবে তোমার লাজুক অবয়ব।
আমার এই অতৃপ্তি হবে তোমার অনুশোচনা,
চন্দ্রালোকে ছায়া হবে তোমার নিত্যসঙ্গী,
তবু চৈত্রের খরতাপে তোমায় পুড়তে দেব না।
আমার অ¯পৃশ্য এই ভালবাসার জোরেই,
একদিন পথ হারিয়ে তুমি আমায় খুঁজবে,
দু’হাত শূন্যে বন্দনায় মত্ত হবে তুমি।
কষ্টের ভেলা ভাসাবো তোমার অশ্র“নদীতে,
তোমার শুদ্ধ নগ্নতা বিদীর্ণ করবে নিকষ আঁধার,
পূর্ণিমায় করবো øান আর বিলীন হবো অজানায়।
-
মায়াবী পলক
শহীদুল ইসলাম
তোমায় দেখি উত্তর ও দক্ষিণের জানালায়,
শিয়রে দাঁড়িয়ে তুমি, আছো স্বপনে-জাগরণে,
বারেক ফিরে চাই, তবু তুমি কোন অজানায়?
বিতৃষ্ণার জলে কাটছো সাাঁতার, কুলে আমি অনুপায়,
কত কাছে, আছো পাশে, তবু মায়াজালে তোমার মুখ,
বৃত্তের মাঝে বিমুগ্ধ তুমি, আছো যোজন সীমারেখায়।
মলয়ে তুমি প্রস্ফুটিত, ফুলদানিতেও শোভা পায়,
কামনার কাছে পরাজিত তুমি, মননে ভ্রান্তিবিলাস,
এই জীবনে সুখী কী তুমি এই নশ্বর মৃত্তিকায়?
তোমায় দেখি প্রাতঃরাশে, হাতে হাত ধরে পাশাপাশি,
অনুতাপের চার দেয়ালে আঁকো তুমি সুখের প্রতিচ্ছবি,
পরজনমেই থেকো আমার, শুধু একবার বলো-ভালবাসি?
-
অনুভবে
শহীদুল ইসলাম
প্রিয়তমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বুঝে নিয়েছে ঠিকই,
ভালবাসার অন্তহীন সব সংজ্ঞাগুলো।
যা বলতে চাই, তা বলে দিয়েছি-
খুঁজে নিও তার মানে, বলবো না আর কখনো।
কষ্টগুলো জমাট বেঁধেছে ধূলোমাখা নীল খামে,
পড়ে দেখো, খুঁজো পাবে ডায়েরির কোনো ভাঁজে।
যা লিখতে চাই, তা লিখে দিয়েছি-
বুঝে নিও সহজে, লিখবো না আর কখনো।
চলতে গিয়ে থমকে গেছি, মিছে সব হাতছানি,
ক্লান্ত পথিক ঠিকানাবিহীন মরুপ্রান্তর চারদিক।
যে পথে হেটেছি, এখনো হাটছি-
জেনে নিও, এপথ øিগ্ধতা ছড়াবে না আর কখনো।
অতঃপর হতাশাগুলো উড়াল দেবে জলরাশি হয়ে,
স্বপ্নেরা মেলবে ডানা জোনাক জোছনার এক রাতে।
এই জনমে যতই থাকুক অস্তিত্বে অপৃর্ণতা,
দেখে নিও, পরজনমে তোমাতেই আমি সুখী।
-
প্রেমে সমর্পণ
শহীদুল ইসলাম
তুমি আমার বিশুদ্ধ প্রকৃতি, বিশুদ্ধ প্রেম,
নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে অন্তরজ্বালা মেটাই।
তোমার সবুজ বেষ্টনীর মাঝে খেলা করি,
হাসি-আনন্দে উপেক্ষা করি চৈত্রের খরতাপ।
তুমি নীল জলরাশি, খরস্রোতা বহমান,
আমি তৃষ্ণার্ত ভেলায় ভাসি, হাবুডুবু খাই।
তোমার তেপান্তর ফসলে ভরা, সাথে রক্তকরবি জবা,
আমি তোমার শিয়রে দাঁড়িয়ে, হয়ে কাকতাডুয়া।
তুমি আমার বিশুদ্ধ প্রকৃতি, বিশুদ্ধ ভালবাসা,
তোমার পাশে নির্মোহ আমি, করোনা নিরাশা।
-
নিস্তব্ধ শিহরণ
শহীদুল ইসলাম
তুমি চলে যাও, আবার ফিরে আসো। মনের জানালায়
অ¯পৃশ্য ভালবাসা উঁকি দেয়, তাও চেনা।
নীল প্রান্তরে নিঃসঙ্গ আমি, তোমার চলমান ¯পৃহা
আমি স্তব্ধ, আমি শিহরিত এ কিসের টান?
সব কষ্ট পেয়ে বসে আমায়, তবু তুমি আছো
এ আমার সান্ত্বনা, তোমাকেই খুঁজে ফিরি।
তুমি চলে যাও, পেছনে তাকাও আবার চলে যাও
আমি দাঁড়িয়ে, যেতে চাই, তবে এ কোন মায়াজাল?
বুকের মাঝে শ্বাশ্বত ধ্বণি, এসো ফিরে যেওনা
ধন্দে সাড়া দাও, আমি বুঝতে পারিনা
সোনালী রোদ্দুর কালো মেঘে ঢেকে যায়
তোমার ক্ষণিকের চাওয়া পূর্ণ হয়, কেন মায়াবী তুমি?
আকাশ মাটির সংমিশ্রনের মাঝে তুমি। জোৎøার আলোয়
আমি তোমাকে দেখি, তোমায় চিনতে পারিনা
ঘোর অমানিশায় পথের শেষপ্রান্তে যখন দাঁড়ালাম
তুমি বললে ভালবাসি, এ কোন ছলনায়?
-
তুমি হবে আমারই
শহীদুল ইসলাম
আমার অদম্য এই ভাল লাগার টানেই,
একদিন তুমি আমায় ঠিকই ভালবাসবে,
আমায় আষ্ঠেপৃষ্টে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে।
আমার আÍবিশ্বাস তোমায় গ্রাস করবে,
নিঃশ্বাসের ফণা তুলবো তোমার শ্যামবর্ণ চিবুকে,
দারুণ দংশিত হবে তোমার লাজুক অবয়ব।
আমার এই অতৃপ্তি হবে তোমার অনুশোচনা,
চন্দ্রালোকে ছায়া হবে তোমার নিত্যসঙ্গী,
তবু চৈত্রের খরতাপে তোমায় পুড়তে দেব না।
আমার অ¯পৃশ্য এই ভালবাসার জোরেই,
একদিন পথ হারিয়ে তুমি আমায় খুঁজবে,
দু’হাত শূন্যে বন্দনায় মত্ত হবে তুমি।
কষ্টের ভেলা ভাসাবো তোমার অশ্র“নদীতে,
তোমার শুদ্ধ নগ্নতা বিদীর্ণ করবে নিকষ আঁধার,
পূর্ণিমায় করবো øান আর বিলীন হবো অজানায়।
-
নিউইয়র্ক, শুক্রবার
এপ্রিল ২২, ২০১৬
রাত ২:২৮

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৫০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×