somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেখে এলাম রহস্যময় পাথুরে বৃত্ত স্টোনহেঞ্জ

১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহীদুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে
২০০৮ সালে প্রথম যুক্তরাজ্য সফর করি। মাত্র এক সপ্তাহ ছিলাম। তিনদিন পোর্টসমাউথ এবং তিনদিন লন্ডন সিটি দেখতে গিয়েই সপ্তাহ শেষ। স্টোনহেঞ্জ দেখার কথা কখনো মাথায় আসেনি। কম্পিউটারের ওয়ালপেপারেই সীমাবদ্ধ ছিল স্টোনহেঞ্জ। কিন্তু আমাদের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার ক্ষমতার শেষ মেয়াদে যখন স্টোনহেঞ্জ দেখতে গেলেন, এরপর থেকে মাথায় মাথায় চেপে বসে স্টোনহেঞ্জ দেখার শখ। তারপরও পরিকল্পনা করার তিন বছর সিুযোগটি যখন এলো তা হাতছাড়া করিনি।

৩০ জুলাই ২০১৯ লন্ডন পৌঁছে পরদিন দুপুরে ট্যুর প্যাকেজে চলে গেলাম স্টোনহেঞ্জ। কাছাকাছি যেতেই বাসের জানালায় উঁকি মারছিলাম তখন দেখবো সেই কাঙিক্ষত স্টোনহেঞ্জ। সব আয়োজন শেষে কাছে গিয়ে দেখলাম আর মনে মনে বলছিলাম, সত্যিই এটি অপার বিস্ময়।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে যতটুকু জেনেছি, তা হলো- স্টোনহেঞ্জ এক বিভ্রান্তিকর পাথুরে বলয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এই স্টোনহেঞ্জ এর রহস্য নিয়ে এক প্রকার বিভ্রান্তির মধ্যেই আছেন। ধারনা করা হয়, প্রাগৈতিহাসিক এই স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করতে নব্যপ্রস্তরযুগীয় নির্মাতাদের প্রায় ১৫০০ বছর লেগেছিলো। এর অবস্থান ইংল্যান্ডের দক্ষিণ অংশে। প্রায় ১০০টি বৃহদাকার খাড়া পাথরের গোলাকার বিন্যাস এই স্টোনহেঞ্জ। যদিও অনেক আধুনিক পন্ডিতই এখন একমত যে এই অদ্ভুত পাথুরে স্মৃতিস্তম্ভ এককালে হয়তো কোন সমাধিস্থল ছিলো, তবুও তারা এখনো নিশ্চিত নয় যে অন্য কোন কারনে তারা এই স্টোনহেঞ্জ তেরি করেছিলো কিনা আর কিভাবে কোন আধুনিক প্রযুক্তি, এমনি চাকা ছাড়াও এই বৃহদাকার স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করা হয়েছিলো। স্টোনহেঞ্জ আরো বেশি বিভ্রান্তিকর এর নির্মাণ কৌশলের দিক থেকে। কারন বৃত্তাকার এই স্মৃতিস্তম্ভটির বাইরের দিকের পাথরগুলো স্থানীয় হলেও ভিতরের বলয়ের পাথরগুলো ওয়েলস থেকে আনা, যা স্টোনহেঞ্জের অবস্থান থেকে প্রায় ২০০ মাইল দূরে।

স্টোনহেঞ্জ এর নির্মাণকৌশল
প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন ইংল্যান্ডের এই ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করা হয়েছিলো কয়েকটি ধাপে যার শুরু ৫০০০ বছর পূর্বে। প্রথমত, নব্যপ্রস্তরযুগীয় ব্রিটিশরা স্টোনহেঞ্জ তৈরিতে আদিম সরঞ্জাম ব্যবহার করেছিলো – খুব সম্ভবত হরিণের শিং দিয়ে তৈরিকৃত। এগুলো সম্ভবত বৃহদাকার পাথরগুলোর জন্য পরিখা খননে ব্যবহার করা হয়েছে। এই পর্যায়ে স্থানীয় বড় বড় পাথরগুলো ব্যবহার করা হয়।

সম্ভবত কয়েকশত বছর পর, স্টোনহেঞ্জের নির্মাতারা আনুমানিক ৮০ টি বিদেশি ব্লুস্টোন পাথর দণ্ডায়মান করে রাখে এবং এর দ্বারা বৃত্তাকার বা ঘোড়ার খুরের আকৃতি দিতে চেষ্টা করে। সেই ব্লুস্টোন পাথর গুলোর মধ্যে এখনো ৪৩ টি আছে।

তৃতীয় ধাপ সংঘটিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সালে। এই ধাপে স্টোনহেঞ্জের বাইরের বলয় বসানো হয় যা তৈরি করা হয় সারসেন বেলেপাথরের ফলক দিয়ে। এ পর্যায়ে তিনটি পাথর দিয়ে তৈরি আইকনিক কম্বিনেশন গুলোও তৈরি করা হয়। বর্তমানে ৫০ টির মতো সারসেন বেলেপাথর দেখা যায, ধারনা হয় পূর্বে হয়তো আরো কিছু বেশি ছিলো। রেডিওকার্বন ডেটিং এর মাধ্যমে ধারনা পাওয়া যায় যে, স্টোনহেঞ্জের এই নির্মান কাজ খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ সাল পর্যন্ত চলেছিলো।

কে নির্মাণ করলো এই স্টোনহেঞ্জ?
স্টোনহেঞ্জের নির্মাতা সম্পর্কে বিভিন্ন সবসময়ই বিভিন্ন পৌরণিক ও কাল্পনিক কাহিনী বর্ণিত আছে যদিও এর পুরোটাই প্রাচীন ভুল ধারনা। তবে দ্বাদশ শতকের লেখক জিওফ্রে তার বই “মনমাউথ” এ কিং আর্থার এবং তার কাল্পনিক কাহিনী, তখনকার অনেকেই বিশ্বাস করে নিয়েছিলো। তার মতে এই স্টোনহেঞ্জ তৈরি করেন যাদুকর মারলিন। অনেকের মতে স্টোনহেঞ্জ একটি কবরস্থান। আবার স্টোনহেঞ্জ নিয়ে আইরিস-ব্রিটিশ যুদ্ধের কথাও অনেকে বলেছেন।

আচ্ছা, স্টোনহেঞ্জের নির্মাতা সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে? স্টোনহেঞ্জ সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদরা একমত হয়েছেন যে স্টোনহেঞ্জ কেউ একা তৈরি করেনি এবং এক কালেও তৈরি হয়নি। এটি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধাপে ধাপে, বিভিন্ন কালের মানুষ এর দ্বারা। আর এই তথ্যের সত্যতা প্রমানের জন্য ঐখানে বিভিন্ন আদিম সরঞ্জামাদি, হাড় ইত্যাদি পাওয়া গেছে।

বর্তমানে স্টোনহেঞ্জ
বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত এব পরিচিত একটি স্থান হলো ইংল্যান্ডের এই স্টোনহেঞ্জ। বর্তমানে প্রতিবছর ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই স্টোনহেঞ্জ দেখতে ইংল্যান্ড আসেন। ১৯৮৬ সালে ইউনেস্কো স্টোনহেঞ্জকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভূক্ত করে। বেশ কয়েকবারই এই দৃষ্টিনন্দন স্থানটিকে পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এর কিছু পাথরে কনক্রিট দেওয়া হয়েছে যাতে পাথর ধসে না পড়ে। ইংল্যান্ড সরকার স্টোনহেঞ্জ পর্যটনকে আরো সহজতর করার চেষ্টা করছে এবং আশেপাশের আরো বিভিন্ন স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন এবং উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে স্টোনহেঞ্জের কাছাকাছি টুরিস্টদের চলাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাই দর্শনার্থীদের একটি নির্দিষ্ট দুরত্ব থেকে দেখতে হয় এই নব্যপ্রস্তরযুগীয় বিস্ময়, স্টোনহেঞ্জ।

তথ্যসূত্র: ফ্যাক্টসবিডি।

[img|https://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/dutimoy/dutimoy-1565851791-2f0914a_xlarge.jpg
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৬:১৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন হাদিসই যদি মানতে হবে তবে আল্লাহ ফিকাহ মানতে বললেন কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৬




সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ধর্ম অবমাননার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৯


ঢাকায় এসে প্রথম যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেটা ছিল মিরপুরের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। লটারির যুগ তখনো আসেনি, এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। ছোট্ট বয়সে বুঝিনি যে স্কুলের টিচাররা কোন মতাদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×