ভারতের ঋণ আর কত রক্ত দিয়ে শোধ করতে হবে?
--------------------------------------------------------------------------------
সাইদ আরমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিলো। এটা ঐতিহাসিক সত্য। এরজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তার ঋণ কি রক্ত দিয়ে শোধ করতে হবে? তবে কি পরিমাণ রক্ত ওরা ঝড়াবে। যদি তা না হয় তবে কেন এভাবে হত্যা করা হবে? নির্যাতন করা হবে?
কথাগুলো ক্ষোভ আর দুঃখ নিয়ে বাংলানিউজকে বলছিলেন কুড়িগ্রামের ফুলপুর থানার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এন্তাজ আলী সরকার। শুক্রবার ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানের পর তিনি বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ক্ষোভের কথা জানান।
সম্প্রতি বিএসএফের গুলিতে নিহত ১৫ বছরের কিশোরী ফেনালী তার ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন।
ফেলানীর কথা উল্লেখ্য করে এন্তাজ আলী বলেন, বিএসএফ ফেলানীর লাশটি দিতেও টালবাহানা করছিলো। তার সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার আজও আমরা পাইনি।
এন্তাজ আলী বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী দিন দিন যেন বেশি মারমুখী হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় তাদের অত্যাচার নির্যাতন বাড়ছেই। ইদানিং মাঝে মধ্যে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। আবার ডেকে নিয়েও অত্যাচার করছে।
সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন যানতে চাইলে বলেন, যে মুহূর্তে কথা বলছি এই মুহূর্তেও হয়তো বিএসএফ কাউকে আটক রেখেছে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসার আগেও বিএসএফ এর হাত থেকে একজনকে ছাড়িয়ে রেখে এসেছি। তাকে ওরা এমন ভাবে মেরেছে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।
এন্তাজ আলী অভিযোগের সূরে বলেন, গুলি করে হত্যার খরব পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেলেও বিভিন্ন রকম নির্যাতনের খরব তো আর ছাপা হয় না।
তিনি বলেন, ধর্ষণের সঙ্গেও জড়িত বিএসএফ। ভারতে যাওয়ার সময় ধরা পড়া সুন্দরী নারীকে ধর্ষণের পাশাপাশি ওরা অনেক সময় সীমান্ত এলাকায় কাজ করতে যাওয়া নারীদের ডেকে নিয়েও ধর্ষণ করে।
এন্তাজ আলী সরকার বলেন, স্বামীকে নির্মম ভাবে মেরে স্ত্রীকেও ওরা ধর্ষণ করেছে। পরে ওই ব্যক্তি মারা গেছে। তিনি বলেন, বিএসএফ এর নির্যাতনে যারা আহত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে মারা যান তাদের হিসাব কেউ রাখে না।
বিডিআর (বিজিবি) এসব ব্যাপারে কি ভূমিকা পালন করে প্রশ্নে তিনি বলেন, গুলি করে হত্যা করলে লাশ এনে দেয়। এর বেশি কিছু নয়। আর বলে মেরে ফেলেছে এখন আর কি করা যাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নীবরই থাকে বলব। হত্যার কোনো বিচার এযাবৎ দেখিনি।
চোরাকারবারির সঙ্গে বিএসএফ জড়িত উল্লেখ করে এন্তাজ আলী বলেন, বিএসএফ-বিডিআর যোগসাজশেও অনেক সময় চোরাচালানে যুক্ত থাকে। আর এসব ভাগ বাটোরা তো সমস্যা হলে বিএসএফ পরে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে ক্ষোভ মিটাতে চেষ্টা করে।
বাংলাদেশিদের সীমান্তের ওপারে বেশি যাবার কারণ উল্লেখ্য করে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে যেতে হয়। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। যেতে হবেই। মানুষ যাবেই। তাছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় চাষবাস করতে, গরু চড়াতে, মাছ ধরতে মানুষ যায়। অনেক সময় জেলেদের ধরা মাছও ওরা নিয়ে যায়। মারধর করে।
ওপারে পার করে দিতে যে ঘাটগুলো রয়েছে সেগুলো কে নিয়ন্ত্রণ করে প্রশ্নে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা এসব চালায়। ওদের কিছু বলা যায় না।
স্বাধীন চলে ফেরায় সমস্যা হয় কি-না? উত্তরে এন্তাজ আলী, সন্ধ্যার পর আর বিডিআর সীমান্ত এলাকায় কাজ করতে দিতে চায়না। বলে নিরাপত্তা জনিত সমস্যা।
তিনি জানান, আমাদের দিকে যেন তাকানোর কেউ নেই। সরকাদের উদ্যোগও চোখে পড়ার মত নয়। এভাবে আর কতদিন ওরা আমাদের হত্যা করবে জানিনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১১