রিয়াদস্থ “বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল - ইংলিশ সেকশন” প্রায় ১২০০ ছাত্র ছাত্রী নিয়ে অভিাবকহীন ভাবে চলছে আজ প্রায় এক বছর। এক বছর পূর্বে বিগত পরিচালনা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর পর’ই যথারীতি নতুন কমিটি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল ঠিক’ই। কিন্তু একটি অশুভ চক্রের চক্রান্ত আর সেই নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কতিপয় কর্মকর্তার অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারনে সেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। একটি বিশেষ কুচক্রী মহলের অসদ্বীচ্ছা বাস্তবায়নের ক্রীড়নক হিসেবে সেই সময় দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ভূমিকা পালন করেন এবং সর্বমোট ২৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২ জন’ই একটি বিশেষ ফোরাম এর হওয়ার কারনে তাদের কোন কারন ছাড়াই অবৈধ ভাবে নির্বাচনী প্যানেল থেকে ছেঁটে বাদ দেয়া হয়। অথচ নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারী ৪টি অভিভাবক ফোরাম এর মধ্যে এই ফোরাম এর একাই ছিল সর্বাধিক প্রার্থী ১২ জন, আর বাদ বাকী ৩ টি ফোরাম থেকে ছিল ১২ জন। তখন সচেতন অভিবাবকদের ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষীতে সৌদি সরকারের বৈদেশিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষনা করে।
অতি সম্প্রতি অভিভাকদের ঐকান্তিক দাবীর মুখে স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে কমিটির সদস্য হতে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে পূণরায় লিখিত আবেদন আহ্¦বান করা হয়েছে। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে এবারও পুরো প্রক্রিয়াটাকে রহস্যাবৃত করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে, না দূতাবাসের পছন্দসই লোকদেরকে দিয়ে অভিভাবকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের উপরে একটি সাজানো পরিচালনা কমিটি চাপিয়ে দেয়া হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই চিন্তিত এবং শংকিত। আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমাদানসহ সমস্ত প্রক্রিয়ার আলোকে দি¦তীয় সম্ভাবনাটাই বাস্তবায়িত হবে বলে বাহ্যিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন সংগ্রহটা কেবলমাত্র একটা আনুষ্ঠানিকতা বা আইওয়াশ। গতবারের সেই অশূভ শক্তি এবারও দূতাবাস প্রশাসনের ঘাঢ়ে ভর করেছে। তাদের সেই পুরোন চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্য সাধারন অভিভাবকদের ইচ্ছা ও দাবীকে উপেক্ষা করে এবারও দূতাবাস কর্তৃপক্ষ তাদের পৃষ্ঠপোশকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
আর যদি বাস্তবে তাই’ই হয়,তাহলে এবারও কমিটি গঠনের পুরো প্রক্রিয়াটা গতবারের মত সাধারন অভিভাবকদের প্রতিবাদের মুখে স্থানীয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপে ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারন সাধারন অভিভাবকরা অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৎ, যোগ্য, নিঃস্বার্থ ও উচ্চশীক্ষিত ব্যক্তিদের কে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসাবে দেখতে চায়। তারা চায় না অতীতের সেই অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ন, স্বার্থবাজ লোক বা তাদের দোসরদের, যাদের কাছে স্কুল স্বার্থের চেয়ে নিজের ব্যক্তি স্বার্থ প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। যারা অতীতে স্কুলের ফান্ড লুটপাট করে এবং নানা রকম অনৈতিক ও অরাজকতাপূর্ণ কর্মকান্ড সংঘটিত করে একদিকে যেমন স্কুলের সার্বিক অবস্থার ক্ষতি সাধন করেছিল, অন্যদিকে সোসাইটিতে বাংলাদেশীদের ভাবমূর্তী ও মারাত্মক ভাবে ক্ষুন্ন করেছিল।
এটা খুব’ই স্পষ্ট যে একটি কম্যুনিটি স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে সম্পুর্ন স্বেচ্ছাসেবা মূলক ও অলাভজনক পদে আসীন হওয়ার জন্য কারা কী স্বার্থে এবং কী কারনে সাধারন জনমত কে উপেক্ষা করে অবৈধ অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করতে চায়। কারন ওরা বোঝে যে অবাধ নির্বাচন হলে সাধারণ ও সচেতন অভিভাবকগণ কখনোই তাদের কে সমর্থন দেবে না। সবাই জানে এরা কারা। তাই তারা ক্ষমতাসীনদের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দূতাবাসের উপর কর্তৃত্ব খাটিয়ে সবাইকে বোকা বানিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দূতাবাস কর্তৃক গোপন সিলেক্শনের মাধ্যমে স্কুল পরিচালনা কমিটি’র সদস্য হতে চায়। তাদের এবং দূতাবাস কর্মকর্তাদের বুঝা উচিৎ এভাবে চক্রান্ত করে সিলেক্শনের মাধ্যমে কমিটি গঠন কারো জন্যই কল্যাণকর হবে না।
একদিকে বিগত কমিটি’র অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার কারনে স্কুল নানান সমস্যায় জর্জরিত আগে থেকেই। তার উপরে বিগত এক বছর যাবত কমিটিবিহীন স্কুলের আবাসন, শিক্ষক, শিক্ষা ও অন্যান্য কারিকুলাম সহ যাবতীয় সমস্য সেই দূরাবস্থাকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। দুঃসহ, অনুন্নত ও অনিশ্চিত করে তুলেছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজম্ম কোমলমতি ছেলে মেয়েদের মূল্যবান শিক্ষা জীবনকে। এমতাবস্থায় দুতাবাস কর্তৃপক্ষের যে কোন দায়িত্বহীন, দলীয়মনোভাবাপন্ন এবং জনবিরোধী সিদ্ধান্ত আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত কে আরো ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
অপরদিকে, সৌদিআরবে আমরা বাংলাদেশীরা দীর্ঘ দিন ধরে ইমেজ সংকটে ভুগছি চরম ভাবে, যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর যাবত বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা, স্পন্সরশীপ ট্রান্সফার সহ অতিব জরুরী আরো অনেক সুবিধা প্রদান বন্ধ রয়েছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানী সংক্রান্ত ব্যপারে স্বাক্ষরিত চুক্তি আমাদের মনে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে স্কুল কমিটি গঠন নিয়ে খোদ দূতাবাস কে ব্যবহার করে একটি মহলের অশুভ চক্রান্ত আমাদের চলমান ইমেজ সংকটে আরো একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে, যা কারুর’ই কাম্য হতে পারেনা।
অতএব বাংলাদেশ সরকার, রিয়াদস্থ দূতাবাস সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমরা সাধারন অভিভাবকদের আকুল আবেদন, আমাদের জাতির ভবিষ্যত ছেলেমেয়েদের শিক্ষা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন্ না। সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে অভিভাবকদের কে তাদের যোগ্য প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সৎ, দক্ষ ও নিঃস্বার্থ স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠনের সুযোগ করে দিন।
সচেতন ও সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষেঃ
এস. এম. আহমাদ
রিয়াদ - সৌদিআরব।