পৃথিবীর আর কোথাও এমন নজির আছে কিনা আমার জানা নেই। সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার মতো আত্মঘাতি ব্ল্যাকরুট পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরোক্ষ মদদে প্রশ্ন ফাঁস! একটি জাতিসত্তার অস্তিত্ব ধ্বংসে রাষ্ট্রীয় হর্তাকর্তাদের ভূমিকা শুধু লজ্জাজনকই নয়; বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে ফালতু একটি দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা। এটা রাষ্ট্রবিনাশী অসত কর্মযজ্ঞ। বিকৃত মস্তিষ্কের অশালীন কর্মকা-। ওরা নতুন প্রজন্মকে গলা টিপে হত্যা করতে চায়। যোগ্য ও মেধাবীদের অধিকার বঞ্চিত করছে। যে ছাত্ররা খাওয়া-নাওয়া ছেড়ে, রাতদিন পড়াশুনা করে, সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখে, হাজারো স্বপ্ন বুনে তাদেরকে এভাবে ধ্বংস করে দেয়া আদৌ ঠিক না। চরম পর্যায়ের ঘৃণিত কাজ। এসবে একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে কতোটা নীচুতে নিয়ে যায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আফসোস! আমরা বাঙালি, বাঙলাদেশি।
ক’দিন ধরে পত্রপত্রিকায় দেখছি, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। সারাদেশে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। রাজপথে নেমেছ শিক্ষার্থীরা। ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রী আন্দোলন করছে। বিক্ষোভ করছে। মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। খুব একটা অবাক হইনি। আমাদের দেশে রীতিমত এটা হয়ে আসছে। নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ সরকার বরাবরই বিষয়টাকে ধামাচাঁপা দিয়ে আসছে। অস্বীকার করছে।
আমি অবাক হই এরকম ন্যক্কারজনক বিষয়টাকে সরকার কীভাবে প্রশ্রয় দেয়। সরকারের কাছে জানতে চাই, প্রশ্নপত্র যদি ফাঁস না হয়েই থাকে তাহলে কেনো প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মতো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের একজন সহকারী পরিচালকসহ কয়েকজনকে র্যাব আটক করলো?
হুবহু ফাঁস হওয়া প্রশ্ন যেখানে মিলে যাচ্ছে সেখানে সরকার কেনো কার্যকরী প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না? নীরব ভূমিকা পালন করার রহস্য কি? আইনের যথাযথ প্রয়োগ করছে না কেনো? উল্টো অস্বীকারের কথা বলছে। তদন্তের দোহাই দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেদিনই পদত্যাগ করা উচিত ছিলো।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে এ দাবি করা হয়েছে। শুধু তাই না, প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে কোনো কোনো গ্রুপ থেকে শীগগিরই যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে। মোবাইল অথবা ইনবক্সে যোগাযোগের পরামর্শও দেয়া হয়েছে। কারা করছে এসব? কার মদদে পঙ্গু করা হচ্ছে অসংখ্য মেধাবীদের। এদের পরিচয় কি? কতো টাকার বিনিময়ে হচ্ছে এসব? আমাদের জানা দরকার। সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়া কি এ পর্যন্ত আসা সম্ভব? আমরা জানতে চাই। শিক্ষাঙ্গণে দুর্নীতির তকমা লাগাতে চাই না। দুর্নীতিবাজ এবং শিক্ষিত শয়তানদের চিহ্নিত করা হোক। জনতার সামনে দাঁড় করানো হোক। জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
যদি সরকারের বিভিন্ন মহলের একাংশ জড়িত না থাকতো তাহলে তাদের পক্ষে কখনই প্রশ্নপত্র ফাঁস সম্ভব হতো না। আমরা জানি, পাবলিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইন আছে, যে আইন ১৯৮০ সালে বাস্তবায়িত হয়। সেই আইনে এই ধরনের অপরাধে যারা জড়িত তাদের কমপক্ষে ১০ বছরের সাজা দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আইনটি ১৯৯২ সালে সংশোধন করে সাজার মেয়াদ মাত্র ৪ বছর করা হয়েছে। আইনে এই ধরনের সাজার মেয়াদ কমানোর ফলে আসামীরা প্রশ্ন ফাঁস করতে বেশি সাহস পায়। সুতরাং এখনই যদি আইনের প্রয়োগ না হয়, আমি হলফ করে বলতে পারি আগামীতে আরো ঢিলেঢালা হবে। আরো সাহস পাবে।
দোহাই লাগে, আমাদের মেরুদ- ভেঙ্গে দিবেন না। শিক্ষার্থীদের পঙ্গু বানিয়ে জীবন নষ্ট করার মতো দুঃসাহস করবেন না। তারা শিক্ষাঙ্গণে কোনো প্রশ্নব্যবসায়ী দেখতে চায় না। শিক্ষা নিয়ে রমরমা ব্যবসা আর মোটা অংকের টাকা বিনিময় করে শিক্ষাবিদ হতে চায় না। এরা মেধাবী হয়ে বাঁচতে চায়। সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী হতে চায়। সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চায়। ফাঁশ প্রশ্নে পাশ করতে চায় না। দুর্নীতি শিখে বড়ো হতে চায় না।
প্লিজ সরকার, মেধা হত্যা করবেন না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর অন্ধকারে ঠেলে দিবেন না। তাদেরকে পবিত্র রাখুন। তারা বাঁচুক, মানুষের মতো মানুষ হয়ে ।