somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

***শেষ বিকেলের ভাবনা*** (ছোট গল্প)

০১ লা মে, ২০১৪ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটি গ্রীষ্মের শেষ বিকেলের কথা; মাসুম দাড়িয়ে আছে খোলা ছাদের রেলিংয়ের ধারে। তখন পাখিরা ঐ দিনের জন্য শেষ বারের মত ডেকে নিচ্ছে, রোদের তেজ কমে এসেছে, মাঝে মাঝে কাঁকের কর্কশ শব্দ ওর ভাবনায় ছেদ ফেলছে। আসলে আজ কেন জানি তার উদ্দেশ্যহীন অভিপ্রায়ে শেষ বিকেলের শহুরে রূপ দেখতে ইচ্ছে জেগেছে।

.

বিল্ডিংয়ের নিচের রাস্তায় মোটামুটি ব্যস্ততা আছে। কেউ ঘরে ফিরছে, কেউবা দুপুরের পর বিশ্রাম নিয়ে খোশগল্প করার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছে। কেউ বোরখা পড়েছে, কেউবা সেলোয়ার/থ্রিপিস, কেউ পাঞ্জাবি, কেউ শার্ট-প্যান্ট আবার কেউবা টিশার্ট-জিন্স। এই শেষ বিকেলের মিষ্টি রোদ মেখে সবাই কোন না কোন উদ্দেশ্য নিয়ে চলছে।

.

ইট-পাথরের এই স্বার্থপর শহরের বুকে কেউ কারো খোঁজ রাখেনা আবার অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায় কারো খোঁজ রাখার সময় কারো কাছেই নেই। সবাই নিজ নিজ কর্ম সাধনে তৎপর। আচ্ছা হাশরের সময়ও নাকি এমনই হবে? ভাবুক মনে এই প্রশ্ন উঁকি দিতেই শিউরে উঠলো মাসুম আর মনে হলো পৃথিবীর এই রঙ্গমঞ্চে সবাই শেষ পরিণতির কথা ভুলতে বসেছে! নয়তো এমন হবার ছিলো না। কেউ পেটপুরে খেয়ে খাবার অপচয় করে বিলাসের মহড়া দেয় আবার কেউ ডাস্টবিন হতে খাবার সংগ্রহের জন্য কুকুরের সাথে প্রতিযোগিতা দেয়। একদিকে মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত অন্য দিকে কেউবা সোহাগ ও শখের বসে কুকুর পোষে যে কুকুর বস্তির বা রাস্তার উলঙ্গ বনী আদম থেকেও সুখী জীবন যাপন করে। সে ভেবে দেখলো দিনে দিনে মানুষ নিজেরাই নিজেরদের মর্যাদাকে কুকুরের সমতুল্য করে তুলেছে। যে ডাস্টবিন হতে খাবার সংগ্রহে কুকুরের সাথে প্রতিযোগিতা দিচ্ছে সে যেমন আবার যে কুকুরকে বিছানায় স্থান দিয়েছে সেও তেমন কুকুরের পর্যায়ে নেমেছে। শুধু পার্থক্য এখানে যে প্রথমজন বাধ্য হয়েছে আর অপরজন শখের বসে নেমেছে। তাই দুজনের দায় অবশ্যই সমান নয়। হায়, আশরাফুল মখলুকাত তোরাই পারিস স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে আতরাফুল মখলুকাতের স্তরে নেমে যেতে! এই পতনের দায় পুরো মানবজাতির। (এই ভাবনা থেকে সৃষ্ট একটা দীর্ঘশ্বাস মাসুমের অন্তরকে ব্যাথিত করে তুলল)

.

এই ভাবনার অকুল সাগর হতে তাকে টেনে তুলল একটি আর্তচিৎকার "সুরভী বুঝতে চেষ্টা কর তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না"। মুহূর্তেই মাসুমের অনুসন্ধানী চোখ এক অতি আধুনিক মেয়ের দিকে পড়ল যার দিকে সদ্য সাবেক হওয়া এক প্রেমিক দুচোখের পানি এক করে তার প্রেমের আকুলতা প্রমানে ব্যস্ত। অথচ পাষাণ মেয়েটি কোন কথাই শুনছে না; রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করা পথিকেরা এদের কথা শুনছে আর কৌতূহলী দৃষ্টিতে দেখছে। কিছুক্ষন পর ছেলেটি মেয়েটির সামনেই পকেট হতে একটি ব্লেড বের করে নিজের হাতে এলোপাথাড়ি কাটাকাটি করতে লাগলো; মনে হল মেয়েটির মন গলবে কিন্তু না- "নাটক বাদ দাও, রিয়েল লাইফে এসব সস্তা আবেগের দাম নেই" উচ্চ স্বরে এই বলেই মেয়েটি ফেরার পথ ধরল; সদ্য সাবেক প্রেমিক দৌড়ে গিয়ে বার বার মেয়েটির পথ আগলে ধরতে লাগলো যদিও তার রক্ত রাস্তায় রাস্তায় হয়ে যাচ্ছিল তবু এই রক্ত তার বা ঐ পাষাণীর মনে কোন প্রভাব ফেলেনি বলেই মনে হল কিন্তু মেয়েটির সাথে থাকা বান্ধবী ছেলেটির শেষ কথাগুলো শুনতে চাইছিল তাই সেও তার বান্ধবীকে হাঁটা থেকে নিবৃত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালালো। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে নাছোড়বান্দা প্রেমিকের গালে মেয়েটি কষে চড় দিলো! এতেই ছেলেটি উপায়ন্তুর না পেয়ে ব্যস্ত সড়কের দিকে দৌড়ে গেলো এবং সড়কের মাঝ বরাবর দৌড়াতে লাগলো; এতে সে তিন থেকে চারটি সিএনজি সাথে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে গেলো। এই পড়ে যাওয়াও মেয়েটির কঠিন মন গলাতে ব্যর্থ হলো- সে নিজ পথে হেঁটে দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেলো। ঐ দিকে ছেলেটির পড়ে থাকা দেহটি ঘিরে অনেক মানুষের ভীড় জমেছে ব্যস্ত রাস্তার মাঝেই; শেষ পর্যন্ত দুজন মানুষ ওকে রাস্তা থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো।

.

এই দৃশ্যের পর মাসুমের ভাবুক মনে একটি দীর্ঘ হতাশার চর সৃষ্টি হল তখন তার ভাবনা গুলো সকল শক্তি দিয়ে এই প্রেম প্রেম জুয়া খেলাকে ধিক্কার দিচ্ছিল। হয়তো এই মেয়েটি আর কখনই ছেলেটির খোঁজ নেবেনা। হয়ত এই মেয়েটি এক সময় তার সাথে আহ্লাদের সুরে অনেক কথা বলত এবং সারাক্ষণ তার খোঁজ নিয়ে নিয়ে তার মনে এই প্রেমের ঢেউ এনেছে। যে ঢেউ এই ছেলেটিকে আজ এমন আত্মঘাতী কর্মের দিকে দিয়ে গেছে। ছেলেটি যদি বেঁচে যায় তাকে আত্মঘাতী কর্মের চিহ্ন ও ক্ষতি দুটোই সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে আর মারা গেলে তো অনন্ত বিফলতা।

.

ভাবনার মাঝে কখন যেন শেষ বিকেলের রোদও হারিয়ে গেলো নেমে এলো সন্ধার ছায়া... এমনি সময়ে মোয়াজ্জিনের সেই চিরচেনা আহবান "আল্লাহু আকবর" রবে চৌদ্দশত বছরের পুরনো মায়াবি সেই বেলালী আজান; হুম মাগরিবের নামাজের সময় হয়েছে বলে মাসুম বুঝতে পারলো তাই সকল ভাবনার সাথে সে আড়ি দিয়ে দিলো।

.

আবারও ঐ ভাবনা...

ছেলেটির জন্য মাসুমের একটুও দুঃখ হচ্ছিল না কারণ ছেলেটির করা এই পাগলামি বারবারই তার কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছিল। এই শহরের বুকে হাজারো পাগলের ভীড়-পাষাণীর ভীড় যেমন আছে তেমনি মাসুমের মত ভাবুকের সংখ্যাও কম নয় আর এমন পোড় খাওয়া ভাবুকদের মন অনেক শক্ত হয় তাই তার মনে অনেক আঘাতেও দুঃখবোধ জন্ম নেয়না হয়তো সেও পাষাণ হয়ে গেছে বা পাগলের জন্য তার স্বার্থপর মনে কোন দুঃখ জন্ম নেয়না; নেবেই বা কেন? যে নিজের জন্য বিপদ বেছে নিয়েছে তার জন্য কেন আমি দুঃখ পাবো? আমি মাসুমের দুঃখবোধ কি এতই বাছ-বিচারহীন!!!

.

পরক্ষনেই মনে মনে মাসুম তার সরল ভাবনায় অস্ফুট স্বরে বলতে লাগলো...

সহানুভূতি ও দুঃখ বোধ সবই তোলা রইল তাদের জন্য যারা জীবন সংগ্রামে নিত্য হোঁচট খেয়েও সত্যের পথে অবিচল-যারা বাঁধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে চলে বিচ্যুতিহীন অবিরল। তারাই তার আত্মার সাথী বলে সে স্বীকৃতি দেয় আর প্রতিজ্ঞা করে যারা নিজের দুঃখ নিজেই টেনে আনে তাদের জন্য ভেবে আর সময় নষ্ট করবে না।

আসলেই এই ক্ষুদ্র জীবনে বিপুল সমস্যার ভীরে এত ভাবনার সময় কোথায়!?

১০.০৪.১৪
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×