somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুমাতে চাইনে সুন্দর ভুবনে

২৩ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হারিয়ে যাওয়া এত কষ্ট তবে গুম হলে না জানি কত কষ্ট।
গুমাতে চাইনে সুন্দর ভুবনে, সবার মাঝে বাঁচিবার চাই।

ছোটবেলায় আমার খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু কিভাবে হারাবো বা কোথায় হারাবো জানিনা। বড় মামা থাকতেন চট্রগ্রামের আগ্রাবাদে। সিদ্ধান্ত নিলাম চট্রগ্রামে হারাবো। মায়ের কাছে পাওয়া টিফিনের টাকা থেকে একটু একটু করে জামাতে লাগলাম। প্রায় তিনমাসে সর্বসাকুল্যে ১৫০ টাকা জমলো। আমার জমানো ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, একটাকা ও পাঁচ টাকার খুচরা নোট গুলো মুদি দোকানে দিয়ে ১০০ টাকার ও ৫০ টাকার দু’টি কচকচে নোট নিলাম। এই প্রথম আমি একটা ১০০ টাকার নোটের গর্বিত মালিক। এর আগে কালে ভদ্রে ১০০ টাকার নোট গিফট হিসাবে পেলেও নিজের কাছে রাখার অধিকার পাইনি। মায়ের কাছে রাখতে হতো। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার আগে মা অথবা বাবা কেউই আমাকে প্রয়োজন ব্যতিত ২০ টাকার বেশী দেয়নি। এখন আমার কাছে ১৫০ টাকা। এখন আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা।

একদিন সকালে স্কুলে না গিয়ে ফেনী বিলোনিয়ার ট্রেনে করে গেলাম ফেনী রেল স্টেশনে। সেখান থেকে ২০ টাকায় লোকাল ট্রেনের টিকেট নিয়ে গেলাম চট্রগ্রাম রেল স্টেশনে। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর খুব খিদে পেল। হাফ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখি গড়ের মাঠ। এত কষ্টের জমানো টাকাটা হারিয়ে গেছে না চুরি হয়ে গেছে টেরই পেলাম না। পেটের খিদা, পকেটে নেই টাকা, মামা আগ্রাবাদে থাকে এর বেশী জানিনা। এখন আমি সত্যি হারিয়ে গেছি।

বেলা বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খিদে। খুব পানির পিপাসা। কি করি। মিনারেল ওয়াটার কেনার পয়সা আমার নাই। এতটুকুন বয়সে কখনও কারো কাছে কিছু চেয়ে খাইনি। আমার হারিয়ে যাবার সাধ মিটে গেল। এখন শুধু ভাবছি কখন মায়ের কাছে যাব। কাউন্টারে জিজ্ঞেস করলাম ফেনী স্টেশন ধরে এমন ট্রেন কখন আছে। খুব সম্ভবত মহানগর গোধূলী নামে একটি ট্রেন ছিল বিকাল সাড়ে তিনটায়। টিকেট কিনার পয়সা আমার নেই। বিনা টিকেটে চড়তে হবে।

যথাসময় ট্রেনে চড়ে বসলাম। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। আমাদের বগিতে টিটি উঠল। টিটি বিভিন্ন জনের টিকেট চেক করছে। আর আমার দু’হাটু এত জোরে কাঁপছে যে রেলগাড়ির ঝাঁকুনি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। কয়েক মিনিট পর টিটি আমার কাছে টিকেট চাইল। আমার সরল উত্তর টিকেট নেই।
টিটিঃ কার সাথে আইচছ?
আমিঃ একা।
টিটিঃ কি করছ?
আমিঃ পড়ি।
টিটিঃ কোন ক্লাসে পড়ছ?
আমিঃ ক্লাস সিক্সে।
টিটিঃ টাকা আছে? টাকা দে।
আমিঃ টাকা নাই।
অতঃপর টিটি আমার হাফ প্যান্টের পকেটে হাতড়িয়ে কিছু না পেয়ে এমন দু’টি গালি দিল যা আমার ১১ বছর বয়সে প্রথম শুনলাম।

ফেনী স্টেশনে নেমে স্টেশনের অদূরে চাপাকলের পানিতে তৃষ্ণা মেটালাম। বিপদ একাকী আসেনা। স্টেশন থেকে বের হবার সময় আবার ধরল টিকেটের জন্য। আবার সে নানা প্রশ্ন। শেষে পকেটে হাত। আবার গালাগালি। এবার মাত্রা এমন ছিল যে আমার গাঁ ঘিনঘিন করছে। কিছু না পেয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল।

রাত আটটায় বাড়ী পৌঁছে দেখি মা কান্নাকাটি করছে। বাবা ও বড় ভাইয়া আমাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। সারাদিনের ক্লান্তি, খিদে ও অবসাদ ভুলে একটু সুখ পেলাম এই ভেবে যে, আমি সত্যি সত্যি হারিয়ে গিয়েছিলাম।

এর পর থেকে কেউ হারিয়ে গেছে শুনলে খুব কষ্ট পেতাম। রেডিওতে হারানো খবর শুনলে নিজের কথা ভেবে খুব কষ্ট পেতাম। এখনও পাই। এখন উন্নত প্রযুক্তি ও যোগাযোগের যুগে কেউ আর হারায় না। রেডিওতে এখন হয়্ত হারানো খবর পড়া হয় না। পত্রপত্রিকায় জিনিস হারানোর বিজ্ঞপ্তি দেখলেও মানুষ হারানোর বিজ্ঞপ্তি দেখি না।

এখন মানুষ অপহরণের খবর দেখি। খুন হবার খবর দেখি। ধরিয়ে দেবার বিজ্ঞপ্তি দেখি। মানুষ গুম হবার খবর দেখি। অতি সম্প্রতি সালাহ উদ্দিন আহমেদের গুম হওয়া বা গুমিয়ে যাওয়ার পর জেগে উঠা রহস্যের কুল কিনারা নাই। উনি গুম হয়েছেন বা গুম করা হয়েছে বা গুমিয়েছেন। যে কোনটি হতে পারে। বাংলাদেশে ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতা পাবার জন্য রাজনৈতিক দল গুলো যে কোন কিছু করতে পারে। নিজের মাথা ফাটিয়ে প্রতিবেশীর জন্য মামলা করতে যেমন দেখছি, আবার দেখেছি প্রতিবেশীকে মেরে তার সম্পদ দখল নিতে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা বা পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া দু’টিই অপরাধ।

সালাহ উদ্দিন গুম হয়ছেন, গুমিয়েছেন বা গুম করা হয়েছে তিনটির যে কোনটি সত্য হতে পারে। যাহাই হোক না কেন উনি বেঁচে আছেন এটাই বড় সত্য। আমরা আমজনতা এই নোংরা রাজনীতির অবসান চাই। ক্ষমতা পাওয়া বা ক্ষমতায় থাকার জন্য এত ছলাকলা করার চেয়ে মানুষের মন জয় করা কি এতই কঠিন!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×