somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো আদর মন্দ আদর ২

০৯ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়দিন ধরে ছোট্ট রিয়া মসজিদের হুজুরের কাছে আরবি পড়তে যেতে চাচ্ছে না। মেয়ের বেয়াদবি দেখে রওনক আরার মেজাজ বিগড়ে যায়। জোর করে রিয়ার মাথায় স্কার্ফ বেঁধে পরিপাটি করে মসজিদে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু রিয়া সেদিন বাসায় ফেরে ভয়ানক এক কাণ্ড ঘটিয়ে। হুজুরের দাড়ি ধরে টান মেরে, মুখে খামছি দিয়ে দিয়েছে। ‘’এইটুকু বয়সেই আল্লাহ খোদার প্রতি কোন ভয় নেই মনে!’’ হুজুরের নালিশ শুনে বাসায় এসে মেয়েকে আচ্ছামত পেটালো রওনক। কিন্তু প্রত্যেক ক্রিয়ারই যে রয়েছে একটি সমান ও বিপরীতমুখি প্রতিক্রিয়া! নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি পদার্থবিজ্ঞানের সীমানা ছাড়িয়ে জীবনের সব ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, সেটা বরাবরের মত রওনকের কাছে অজানা থেকে গেলো।


মসজিদে অল্প বয়সী বাচ্চাদের পড়ানোর পরে প্রায়ই একজন না একজনকে পড়া না পারার অপরাধে হুজুর বেশিক্ষণ থাকতে বলতেন। রিয়াকেও এভাবে কয়েকদিন রেখে দিয়েছিলেন, একা। আর সে সুযোগে ওর গায়ে ইচ্ছেমত হাত বোলানো থেকে শুরু করে প্যান্টের ভেতরেও হাত ঢুকিয়ে দিতেন ঐ হুজুর। কথাগুলো রিয়া কাউকে বলতে পারে নি। সেদিন হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে দাড়ি টেনে, খামছি দিয়ে বসল হুজুরের মুখে।

কিছু বিকৃত রুচির মানুষ(!)দের দ্বারা এভাবেই অনেক ছোট শিশু নিগ্রহের (abuse) শিকার হয়। খুব কাছের আত্নীয়, পরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারা শিশুরা নানাভাবে নিগৃহীত হয়ে থাকে। শুধু মেয়ে শিশুই নয়, ছেলে শিশুরাও অনেক সময় এমন নিগ্রহের শিকার হয়ে থাকে। বিকৃত রুচির লোকেরা তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য শিশুদের বেছে নেয় তার প্রধান কারণ ওরা দূর্বল। ওদেরকে সহজে ভয় বা লোভ দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখা যায়। অসচেতনতার কারণে বড়রা ছোটদের অভিযোগ বা সমস্যাকে তেমন আমলে নেয় না। তাই একটি শিশু একবার নিগৃহীত হলে, তার বারবার নিগৃহীত হবার ঝুঁকি থেকে যায়। আবার অনেক শিশু বোঝেই না যে সে নিগৃহিত হচ্ছে। বড় হবার পরে যখন সে বুঝতে শেখে, তখন সে বিরাট ধাক্কা খায়। ঘটে যাওয়া ঘটনাটি তার মনে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন, বিষন্নতা, নতুন কিছুতে উৎসাহ না পাওয়া, অপরাধপ্রবনতা, হীনমন্যতা, মাদকাসক্তি, সমকামীতা, আত্নহত্যা প্রবনতা, আত্নবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি।

শিশুদের এসব ব্যাপারে সাবধান করিয়ে দিতে হবে, নিগ্রহের ঘটনা যেন না ঘটে। এমন ঘটনা ঘটে যাবার পরে তাকে এ ব্যাপারে সাবধান করিয়ে তেমন কোন লাভ তো নেই। আপনার সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন স্পর্শ সম্পর্কে ধারণা দেবার চেষ্টা করুন। সবার সব আদর যে ভাল নয়, সেটাও তাকে বুঝিয়ে বলুন। যেসব স্পর্শে সবার ভালবাসা প্রকাশ পায়, যেমন জড়িয়ে ধরা, গালে চুমু খাওয়া, হ্যান্ডসেক করা, আলতো চাপড় ইত্যাদি ভালো স্পর্শ বা আদর। কিন্ত যেসব আদরে শিশুটি অস্বস্তিবোধ করবে, ব্যথা পাবে, যেসব স্পর্শে ভয় পাবে, নার্ভাস হবে, গোপন অংগে স্পর্শ অনুভব করা সেগুলো মন্দ আদর। অচেনা বা অল্প পরিচিত লোকদের কোলে উঠা যে সব সময় ঠিক নয়, তা সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে। আপনার সন্তানকে এটা বুঝিয়ে দিন, কে তাকে আদর করতে পারবে, আর কে পারবে না, সেটা শুধু সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্য কেউ নয়। কারো স্পর্শ খারাপ লাগলে বা অস্বস্তিতে ভুগলে সে যেন সোজা মানা করে দেয় এই বলে, ‘’আমাকে স্পর্শ করবেন না, আমার ভাল লাগছে না’’। আর এমন কিছু ঘটলে তা যেন সে কিছুতেই গোপন না রাখে। যেন সে অতি সত্বর তার বাবা-মা, শিক্ষক বা বড় কেউ যাকে সে বিশ্বাস করে এমন কাউকে জানায়। সাধারণত লোভ, ভয় দেখিয়ে, জোর করে বা প্রতিজ্ঞা করিয়ে শিশুদের নিগৃহীত করা হয়ে থাকে, সে ব্যাপারগুলোও তাকে বুঝিয়ে বলুন। আর এ কথাগুলো সন্তানকে একদিনেই গিলিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন না। প্রতিদিন একটু একটু করে তাকে সচেতন করুন। তার বয়স উপযোগী করে কথাগুলো বলুন।

এত কিছুর পরেও যদি আপনার নিজের বা আপনার পরিচিত অন্য কোন শিশু কারো দ্বারা নিগৃহীত হয়ে যায়, তবে ধৈর্য হারাবেন না। শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। শিশুকে মানসিকভাবে সমর্থন দিন। তার মনে সাহস যোগান। তাকে দূরে ঠেলে দেবেন না। এ সময়ে আপনার ভালবাসার তার অনেক বেশি প্রয়োজন। কেউ তাকে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে বলেই, সে যে খারাপ হয়ে যায় নি, তার কোন দোষ নেই, এটা শিশুটিকে বুঝতে দিন। কেউ তাকে দোষারোপ করলে আপনি যেমন সেটা মেনে নেবেন না, তেমনি নিগৃহীত শিশুটিকেও তা মেনে নিতে দেবেন না। কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ সৃষ্টি করবেন না। শিশুর গোপনীয়তা রক্ষা করে চলতে হবে এ সময়টিতে। জোর করে, চাপ দিয়ে, বারবার প্রশ্ন করে তাকে ব্যতিব্যস্ত করে কথা বের করা উচিত নয়। আর আপনার শিশুটি ঐ অপরাধীর মুখোমুখি যেন না হতে পারে, এদিকে খেয়াল রাখুন।

আজকাল প্রায়ই পত্রিকায় দেখা যায়, শিশুরা নানাভাবে নিগৃত হচ্ছে। এমন ঘটনা যতগুলো ঘটে তার মধ্যে ক’টাই বা পত্রিকায় খবর হয়ে আসে? অনেক সময় অভিভাবকেরা জেনে, বুঝেও রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার কারণে তথাকথিত মান সম্মান বাঁচানোর জন্য, অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেন না। অপরাধী যেই হোক, আপনার যত আপন লোকই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তা না হলে, সুযোগ পেলে আবার সে আপনার সন্তানের দিকে নোংরা হাত বাড়িয়ে দেবে, একবার নয়, বারবার। আর সে সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন আপনি নিজেই।


আগের পর্বঃ
Click This Link
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×