ইংরেজি ভাষায় রয়েছে অসংখ্য বিদেশি ভাষার শব্দ। কালের আবর্তে বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের কাছ থেকে এসব শব্দ ইংরেজিতে ঢুকেছে। সেসব শব্দের উৎপত্তি নিয়েও আছে নানান উপকথা, মজারু ঘটনা। হয়তো জানি, হয়তো জানি না! সেরকম কিছু শব্দ নিয়ে গুতোগুতি করার চেষ্টা করবো।
১. Quarantine
Quarantine অর্থ রোধ প্রতিরোধের জন্য মানুষ বা পশুকে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা/সময়কাল।
ফ্রেঞ্চ quarante (কারান্ত) মানে হলো চল্লিশ। ১৩৪৮ সালের দিকে ইউরোপে মারাত্মক মড়ক দেখা দেয়। ধারণা করা হয় চীন ও এশিয়ার কিছু অংশের ইঁদুর থেকে এ প্লেগ সংক্রামিত হয় এবং ইউরোপীয় বণিকদের মাধ্যমে তা ভয়াবহরকমে ছড়ায়। এসময় শুধু ইউরোপের প্রায় ৩০% লোকের মৃত্যু ঘটে।
মড়কের প্রকোপ কমানোর জন্য ইটালির ভেনিস বন্দরে এশিয়া থেকে যাওয়া জাহাজগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখা হতো। জাহাজগুলোকে সমুদ্র্র বন্দরের দূরবর্তী কোথাও চল্লিশদিন অবস্থান করতে হতো। এই চল্লিশদিনের সময়সীমাকে বলা হতো Quarantine। পরবর্তীতে ইটালি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে এই পর্যবেক্ষণের রীতি চালু হয়। এখনও মোটামুটি একই অর্থে এটি ব্যবহার হয়, তবে চল্লিশদিনের বাধ্যবাধকতা আর নেই।
২. Maverick
টেক্সাসের স্যামুয়েল অগাস্টিন ম্যাভেরিক পেশায় ছিলেন আইনজীবি। অলস আর খামখেয়ালি। একবার তার এক দেনাদার ৪০০ টি গরু দিয়ে তার পুরানা ঋণ শোধ করে। কিন্তু এসবে কোন আগ্রহ ছিল না ম্যাভেরিকের।
সেসময় পশুর মালিকেরা শনাক্ত করার জন্য লোহা পুড়িয়ে নিজেদের পশুদের গায়ে ছাপ দিয়ে রাখতো। কিন্তু ম্যাভেরিকের গরুগুলো ছিল লাগামহীন, কোন সীল ছাপ্পড় ছাড়া। তার প্রতিবেশিরা কোন চিহ্নছাড়া গরু দেখলেই বুঝে যেতেন এটা ম্যাভেরিকের গরু। তার বেশ কিছুদিন পর ম্যাভেরিক তার সবকটি গরু বিক্রি করে দেন; কিন্তু লাগামছাড়া, চিহ্নছাড়া কোন গরুকে এরপর থেকে ‘ম্যাভেরিকের গরু’ ছাড়া আর কোন নামে ডাকা হতো না।
এখনও মালিকবিহীন গবাদি পশুকে Maverick বলা হয়। অনেকসময় গোঁড়ামিমুক্ত মানুষ বোঝাতেও ম্যাভেরিকের নাম ব্যবহার করা হয়।
৩. Lunatic বা চন্দ্রবাতিকগ্রস্থ ব্যক্তি
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই চাঁদকে নিয়ে নানারকম মিথ চালু আছে। সেরকম একটাই হলো বাতিকগ্রস্থ হওয়া।
গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল এরকম একটি মতবাদ দাঁড়া করান যে, মস্তিষ্ক হলো মানব শরীরের সবচেয়ে আর্দ্র অংশ এবং একারণে তা পূর্ণিমার সময় চাঁদ দ্বারা প্রভাবিত হয়; যেমন প্রভাবিত হয় জোয়ার-ভাটা।
পূর্ণিমার রাতে উইয়ারউলফ বা ভ্যাম্পায়ারের উথানের মতো অসংলগ্ন হয়ে মানুষের পাগলামি বা উন্মাদনা করা অতি পুরানো রূপকথা। এর কোন সঠিক ভিত্তি বা যুক্তি না থাকলেও মানুষ অন্ধভাবে বিশ্বাস করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। সেখান থেকেই উৎপত্তি হয় lunatic শব্দের। পাগল বা উন্মাদ ব্যক্তি বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ল্যাটিন luna অর্থ চাঁদ, আবার রোমান মিথোলজিতে চাঁদের দেবীর নাম luna.
৪. Elixir
মধ্যযুগে আরবে জাবির ইবন হাইয়ান রসায়ন শাস্ত্রের সূচনা করেন এবং তা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। সেময় এঅঞ্চলের গবেষকদের খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। তারা মনে করতেন সকল ধাতুই সালফার ও মার্কিউরির সমন্বয়ে তৈরি। তাদের এ মতবাদ স্পেন হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়।
তাদের কাছে সোনা ছিল সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু। তাই অন্য ধাতুর সমন্বয়ে সোনা তৈরিই ছিল গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। তারা আরো বিশ্বাস করতো সোনা-র থেকেও নিঁখুত আরেকটি ধাতু তৈরি করা সম্ভব যা দিয়ে অন্য সকল ধাতুকে সোনায় রূপান্তর করা যাবে। তারা কাল্পনিক এ ধাতুর নাম দেয় el iksir বা পরশ পাথর, যা ইউরোপে elixir বা Philosopher's stone নামে পরিচিতি লাভ করে।
আরব ছাড়াও ইউরোপের নানা জায়গায় এই ধাতু তৈরির জন্য গোপনে গবেষনা চলতে থাকে। এ গুপ্তবিদ্যার চর্চা বা অনুশীলনকে বলা হতো “আল কেমি”। যেখান থেকে পরবর্তীতে কেমিস্ট্রি শব্দের উৎপত্তি। কোন কোন দার্শনিক আবার মনে করতেন এটা দিয়ে সর্বরোগের চিকিৎসা করাও সম্ভব।
একসময় আল কেমীর চর্চা থেকে জাবির আবিষ্কার করেন অনেক কিছু। তিনি আবিষ্কার করেন কি করে তরলের মিশ্রন থেকে একটি তরলকে আলাদা করা যায়, যা ডিস্টিলেশন নামে পরিচিত, আবিষ্কার করেন একুয়া রেজিয়া নামে একটি মিশ্রন যা সোনাকে গলিয়ে দিতে সক্ষম এবং উদ্ভাবন করেন অগুনতি কেমিক্যাল সাবসট্যান্স – যা মরিচা প্রতিরোধ, স্বর্নের কারুকাজ, পোশাকের ওয়াটারপ্রুফ সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয়।
৫. Lethargy, Lethal
গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী মৃতদের রাজ্য হলো পাতালপুরী। পাতালপুরী শাসন করতেন দেবতা জিউসের ভাই হেডিস এবং তার নাম অনুসারে এর নামও ছিল হেডিস। এ পাতালপুরীতে প্রবেশ করতে পারতো একমাত্র মৃতরা। পাতালপুরীর প্রবেশমুখ পাহারাদার হিসেবে ছিল তিন মাথাওয়ালা ভয়ংকর কুকুর। যার নাম-সারবেরাস।
তো হেডিসের এই পাতালপুরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পাঁচটি নদী। এগুলো হল আকিরন (Acheron), কোকিটাস (Cocytus), লিথি (Lethe), ফ্লেগেথন (Phlegethon) ও স্টিক্স (Styx)। পাতালপুরীর বাসিন্দা মানে মৃতদের কাছে এক একটি নদীগুলো আবার বিশেষভাবে অর্থপূর্ণ। যেমন, আকিরন হলো বেদনার নদী, ফ্লেগেথন আগুনের নদী, কোকিটাস শোকের নদী, স্টিক্স হলো ঘৃনার নদী আর লিথি হলো বিস্মৃতির নদী।
পুরাণ অনুযায়ি লিথি নদীর পানি পান করলে স্মৃতি থেকে যাবতীয় অতীত হারিয়ে যায়। মৃতব্যক্তিরা হেডিসে প্রবেশ করে নদীর পানি পান করে তাদের জীবদ্দশার যাবতীয় দু:খ কষ্ট ভুলে যেত।
সেই বিশ্বাস থেকেই চিকিৎসকেরা কোন মানুষের অসাড়তা বা স্মৃতি বিস্মরণ দেখলে সে রোগকে lethargia নামে অবহিত করতেন। সেই থেকে এখনকার lethargy বা উদ্যমহীনতা। এর আরেকটি রূপ হলো lethal, যার অর্থ মারাত্মক বা প্রাণঘাতি।
(চলবে)
শিরোনাম: "শব্দ কল্প দ্রুম" নামে সুকুমার রায়ের একটি কবিতা আছে।
ছবি ও তথ্য সুত্র: উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




