somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তি সমবায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা ১৫ নভেম্বর ২০০৭-এর প্রচ আঘাতে যখন দিশেহারা, তখন কৃষকদের পাশে এসে কৃষি পুনর্বাসনে সহায়তা প্রদানে
এগিয়ে এসেছে ময়মনসিংহের কমিউনিস্ট পার্টির কমরেডগণসহ প্রগতিশীল চেতনায় সমৃদ্ধ ব্যক্তি, সংগঠন তথা ময়মনসিংহবাসী। আমরা
তাদেরকে হৃদয়ের উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। তারা সিডর আক্রান্ত কৃষকদেরকে পাওয়ার টিলার প্রদান করেছেন যাতে তাদের জমি চাষ
সহজতর হয়। এই পাওয়ার টিলারটি পাওয়ার পর স্থানীয় কমিউনিস্টরা ও কৃষকরা মিলে গঠন করেছেন ‘মুক্তি সমবায় সমিতি’। এই সমবায় সমিতি গলাচিপা উপজেলাধীন চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন ও পটুয়াখালী সদর উপজেলাধীন ইউনিয়নসমূহের কৃষকদের নিয়ে গঠিত। এটি একটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাভিত্তিক সমবায়। এতে এলাকার প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র কৃষক, মাঝারি কৃষক ও অন্যান্য কৃষকরাও সদস্য হতে পারবেন।
সমবায়টি পরিচালিত হচ্ছে দুই স্তরের নেতৃত্বের মাধ্যমে। উচ্চতম স্তরে রয়েছেন একটি উপদেষ্টাম লী যাতে জনগণের প্রতি বিশ্বস্ত বহু অগ্নী
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ এবং অকমিউনিস্ট কিন্তু এলাকার মান্য-গণ্য, সৎ ব্যক্তিবর্গ, সদস্য হিসাবে থাকছেন। কিন্তু কৃষিবিদ ও
কৃষক প্রতিনিধিও এই উচ্চতম কমিটির অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। দ্বিতীয় স্তরে সমবায়ের কৃষক সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই দুই স্তরের নেতৃত্বে সমবায়ের সকল কাজ পরিচালিত হবে। সমবায়ের ঘোষণায় এও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই পাওয়ার টিলার ব্যবহৃত হবে সর্বপ্রথম প্রান্তিক ও গরিব কৃষক সদস্যদের জমি চাষের জন্য। এরপর ধারাবাহিকভাবে অধিকতর ধনী কৃষক সদস্যরা তা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। বর্তমানে চাষের জন্য যে চলতি ব্যয় সেটুকু ভাড়া হিসাবে আদায় করা হবে। তবে গরিব ও প্রান্তিক চাষীদের জন্য প্রয়োজনে কনসেশনাল রেটে ভাড়া দেয়ার প্রচেষ্টা থাকবে। বাকিতে চাষ করে পরে ফসল উঠলে শোধ করার সুযোগ থাকবে। তবে একবার ‘ডিফল্টার’ হলে পরবর্তী বছর আর তিনি সেবা পাবেন না। সমবায়ভুক্ত পরিবারগুলোর জমি চাষের পর বাড়তি সময় হাতে থাকলে পাওয়ার টিলারটি বাণিজ্যিকভাবে অন্যত্র ভাড়া খাটানো হবে। এখান থেকে লব্ধ নিট আয়কে তিনভাগে ভাগ করা হবে। এক ভাগ সমবায়ের মালিক সদস্যদের ডিভিডেন্ড হিসাবে বিতরণ করা হবে। এক ভাগ পরিচালনা কমিটি এবং টিলারের চালক পাবেন। আরেক ভাগ সমবায়ের সঞ্চয় হিসাবে জমা হবে যা পরবর্তীতে নতুন নতুন বিনিয়োগে ব্যবহার করা যাবে। ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে এই সমগ্র প্রকল্পটিকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করাই হবে প্রধান কর্তব্য। আস্তে আস্তে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এলাকার ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের ন্যায্য মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বিষয়টিও এই সমবায় সমিতির কাজের আওতার মধ্যে ধীরে ধীরে নিয়ে আসা হবে। উল্লেখ্য যে, প্রতিবছর সমবায়ের সাধারণ সভায় সকল সদস্যদের সামনে এই সমিতির আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছ হিসাব তুলে ধরা এবং সমস্ত অর্থ একটি স্থানীয় ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করার প্রতিশ্রুতিও এই সমবায় সমিতির ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা এই সমগ্র উদ্যোগটিকে একটি নবদিগন্তের সূচনা হিসাবে অভিনন্দিত করছি। অক্টোবর বিপ্লবের পর মহামতি লেনিন সমাজতন্ত্রের
একটি অভিনব সংজ্ঞা দিয়েছিলেন। তার বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘সমবায় প্রসঙ্গে (অন কো-অপারেশন)-এ তিনি লিখেছিলেন যে :
সমাজতন্ত্র= সমবায়+সোভিয়েত ক্ষমতা।

বস্তুত সমাজতন্ত্রের প্রাথমিক পর্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানার পাশাপাশি সর্বত্রই গঠিত হয়েছে সমবায়ী মালিকানা। বিশেষত কৃষিখাতে ‘সমবায়’
একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি যা প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে ‘সমাজতন্ত্র’ নিজেকে সংহত করতে সক্ষম হয়েছে এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও সুষম বণ্টন
সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে রাষ্ট্রক্ষমতায় সমবায়ের বৈরী শক্তি অধিষ্ঠিত থাকলে এ ধরনের উদ্যোগে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরনের উদ্যোগের আরেকটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এর নেতৃত্বের চরিত্র প্রায় ক্ষেত্রেই হাত বদল হয়ে ধনীদের বা দুর্নীতিবাজ কায়েমি স্বার্থের হাতে চলে যায়। তখন ‘সমবায় খামার’ কুলাকদের ক্লাবে পরিণত হতে পারে!আমরা মুক্তি সমবায়ের নবউদ্যোগকে অভিনন্দিত করার পাশাপাশি এই সতর্ক বাণী উচ্চারণ করবো, যেন ভবিষ্যতে এটি রাষ্ট্রের বৈরিতা বা নেতৃত্বের ব্যর্থতার ফলে তা সঙ্কটগ্রস্ত না হয়, সেজন্য এর কমিউনিস্ট উদ্যোক্তারা সতর্ক থাকবেন। আর যদি এটা সফল মডেলে পরিণত হয় তাহলে সারা দেশকে তা নতুন আলোর ঝিলিক দেখাতে সক্ষম হবে!
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×