somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Legal Aspects of International Crimes Tribunal Bangladesh 2 / যুদ্ধপরাধের বিচারঃ ২য় কিস্তি - বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন ১৯৭৩ ও রোম স্ট্যাটুস-এর বৈশিষ্ঠসমূহের তুলনামূলক পর্যালোচনা

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন ১৯৭৩ (ACT NO. XIX OF 1973)-এর ৩(২) অনুচ্ছেদ বা ধারায় ট্রাইবুনালে বিচার্য অপরাধের যে তালিকা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেঃ বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধেকৃত খুন, ধর্ষণসহ যাবতীয় মানবতা বিরোধী অপরাধ, আগ্রাসনজনিত শান্তি বিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন বিরোধী কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য অপরাধ ছাড়াও ঐসব অপরাধ সংগঠনে অপতৎপরতা উৎসাহ বা ষড়যন্ত্র বা ঐসব অপরাধ সংগঠনে তা নিরোধে ব্যর্থতা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন ১৯৭৩ কার্যকর হয় ২০ জুলাই ১৯৭৩ সালে। এই আইন পুনরায় সংশোধন করা হয় ৯ জুলাই ২০০৯ তারিখে। ঐ তারিখে জাতীয় সংসদে পাশ হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) (সংশোধনী) আইন, ২০০৯ (Act No. LV of 2009)। সংশোধনী আইনে মোট ১১টি সংশোধনী আনয়ন করা হয়। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীগুলো হচ্ছে ক. একজন জজ বা জজের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি অথবা যিনি সুপ্রীম কোর্টের জজ ছিলেন, তেমন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তি ট্রাইবুনালের বিচারক হতে পারবেন। এলডিপির কর্নেল ওলি বিচারক হবার যোগ্যতার ব্যাপারে জজের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তির (qualified to be a judge) ব্যাপারে প্রথমে আপত্তি উত্থাপন করলেও পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করেন (দেখুন ডেইলি স্টার July 10, 2009) । খ. সশস্ত্র বাহিনী বলতে আর্মি এ্যাক্ট ১৯৫২, এয়ার ফোর্স এ্যাক্ট ১৯৫৩ এবং নেভী অর্ডিন্যান্স ১৯৬১-এর অধীনে গঠিত বাহিনীকে বুঝানোর বিষয় স্পষ্ট করা হয়। গ. অভিযুক্তের শাস্তির বিরুদ্ধে আপীলে অধিকারের অনুরূপ সরকারকেও অভিযুক্তের খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আপীলের অধিকার দেয়া হয়। ঘ. এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) (২য় সংশোধনী) আইন ২০১২ (Act No. XLIII of 2012) দ্বারা আপীলের মেয়াদ ৬০ দিনের পরিবর্তে ৩০দিন করা হয়।
বাংলাদেশের যুদ্ধপরাধের বিচারের জন্যে প্রণীত এই আইনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ঠ সমূহ নিম্নরূপঃ
১. আইনের ৩(১) ধারায় আইন প্রনয়ণের তারিখের পূর্বের ঘটনাকেও এই আইনে বিচারের আওতায় আনয়ণ করা হয়।
২. আইনের ৫(২) ধারায় কোন অভিযুক্ত ব্যাক্তি তার নিজের দেশের আইন বা সরকারের আদেশ বা উর্ধতনের আদেশ পালন করতে গিয়ে বর্ণিত অপরাধ করে থাকলেও তাতে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে না, তবে দন্ডারোপের সময় বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে।
৩. আইনের ১৭(২) অনুযায়ী অভিযুক্ত আইনজীবি নিয়োগ করতে পারবে এবং (৩) উপধারামতে সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারবে।
৪. আইনের ১৯ (২) অনুযায়ী মৃত বা কোন সাক্ষীকে উপস্থিত করা দূরহ হলে ম্যাজিস্ট্রেট বা তদন্তকারীর নিকট প্রদত্ত তার জবানবন্দী উচিত মনে করলে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।
৫. আইনের ২০(২) ধারা মতে ট্রাইবুনাল সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড আরোপ করতে পারবে।
৬. বাদী ও আসামী উভয়পক্ষ ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীলাত ডিভিশনে আপীল করতে পারবে।
৭. দেশে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এবং ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন ট্রাইবুনালের জন্যে প্রয়োজ্য হবে না।
৮. রায়ের বিরুদ্ধে আপীল ব্যতীত ট্রাইবুনালের অন্যকোন আদেশের বিরুদ্ধে কোন আদালতে আপীল করা যাবে না।
৯. এই আইনের অধীনে সরল বিশ্বাসে গৃহীত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।
উল্লেখ্য যে নূরেনবার্গ ও টোকিও ট্রায়ালের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধপরাধের বিচারের জন্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন ১৯৭৩ প্রনয়ণ করে। এর ২০ বছর পর ১৯৯৩ সালে বেলজিয়াম বিশ্বের যেকোন স্থানে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের জন্যে নিজদেশে বিচারের জন্যে আইন প্রনয়ণ করে। এ আইনে দুজন রোয়ান্ডান নার্সকে দোষী সাব্যস্থ করে দন্ডদান করা হয়। কিন্তু বেলজিয়াম কর্তৃক আন্তর্জাতিক ফৌজাদরি অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক বিচারাদালত ২০০২ সালে অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের ২৩ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম স্ট্যাটুস রেটিফাই বা অনুসমর্থন করেছে। রোম স্টাটুস বিশ্বে যুদ্ধপরাধের সর্বশেষ ও জাতিসংঘ সমর্থিত আইন। বাংলাদেশ এই আইন সমর্থন করায় ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনের বৈশিষ্ঠসমূহের সাথে রোম স্ট্যাটুসের তুলনামূলক আলোচনা উভয় আইনকে বুঝতে সহায়ক হবে।
রোম স্ট্যাটুস-এর বৈশিষ্ঠসমূহঃ
১. রোম স্ট্যাটুস-এর ১১(১) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে কেবল রোম স্ট্যাটুসের আইন বলবৎ হওয়ার দিন ও তারপরে সংগঠিত অপরাধের বিচার করা যাবে। বাংলাদেশের আইনে আইন প্রণয়নের আগে ও পরে সংগঠিত অপরাধের বিচারের ক্ষমতা অর্পন করা হয়েছে ট্রাইবুনালের উপর। এ বিষয়ে স্ট্যাটুসের ২৪(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে স্ট্যাটুস বলবৎ হওয়ার আগে করা কোন কাজের জন্যে কাউকে দায়ী করা যাবে না।
২. স্ট্যাটুসের ৬৬ (১) অনুচ্ছেদে আদালত কর্তৃক দোষী ঘোষণার পূর্বে সকল অভিযুক্তকে নির্দোষ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং ৬৬(২) অনুচ্ছেদে কোন ব্যাক্তিকে দোষী প্রমানের দায় বাদীপক্ষের উপর ন্যাস্ত করা হয়েছে।
৩. স্ট্যাটুস-এর ৬৭ (১) বি অনু্চ্ছেদে আসামীপক্ষকে তাদের ডিফেন্স প্রস্তুতীর জন্যে পর্যাপ্ত সময় প্রদান সহ নিজের পছন্দকৃত বিশ্বস্ত আইনজীবির সাথে বাধাহীন যোগাযোগের অধিকার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের আইনে আইনজীবি নির্বাচনে অধিকার দিলেও তা বাস্তবে অবাধ হয়নি। বাংলাদেশের বার কাউন্সিল আইনে বিদেশী আইনজীবির বাংলাদেশে আইনপেশায় অংশ নেয়ায় আরোপিত বাধাজনিত কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত আসামীরা বাংলাদেশের বাইরে থেকে কোন আইনজীবি নিয়োগ দিতে সমর্থ হয়নি। (এ বিষয় নিয়ে পরবর্তী পর্বে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে।)
৪.স্ট্যাটুস-এর ৭৭(১) এ অনুচ্ছেদে ক্ষেত্রমত সর্বাধিক ৩০ বছরের জেল এবং বি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্ষেত্রমত যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান করা হয়। স্ট্যাটুস-এ গণহত্যার মত অপরাধের জন্যেও মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হয়নি। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের আইনে মৃতূদন্ডের বিধান আছে।
৫. স্ট্যাটুস-এর ৮২ অনুচ্ছেদে রায় ব্যতীত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, আদেশের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে আপীলের অধিকার প্রদান করা হয়। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের আইনে আপীলের অধিকার দেয়া হয় কেবল রায়ের বিরুদ্ধে, ট্রাইবুনালের অন্যান্য আদেশের বিরুদ্ধে আপীলের অধিকার দেয়া হয়নি।
এছাড়া বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আইন একটি দেশের জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাশকৃত এবং বাংলাদেশে বলবৎযোগ্য। পক্ষান্তরে রোমান স্ট্যাটুস একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিদ্বারা বলবৎকৃত এবং এই চুক্তি স্বাক্ষরকারীদেশ সমূহের উপর আরোপযোগ্য।

পূর্ব সুত্রঃ ১. যুদ্ধপরাধের বিচারঃ ১ম কিস্তি যুদ্ধপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক আইনের বিবর্তন
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×