(২য় পর্ব পড়ুন এখানে )
আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে, ভর্তির আবেদনের প্রথম শর্ত, স্নাতক/স্নাতকোত্তর এ সিজিপিএ সর্বনিম্ন ৩.০। তবে একটি কথা জানিয়ে রাখা ভালো, পিছনের দিকের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ২.৫ সিজিপিএধারীদেরকেও আবেদন এর সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই যারা এখনো স্নাতক শ্রেনীর শেষ দিকে আছেন, তাদেরকে বলবো চেষ্টা করুন সর্বনিম্ন সিজিপিএ ৩.০ রাখতে, তাহলে মাঝারী থেকে ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সুযোগ পাবেন।
প্রথম পর্বে আমি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ভর্তি প্রক্রিয়ায় ৫ টি ধাপের উল্লেখ করেছিলাম, যার প্রথমটি হচ্ছে Graduate Records Examination (GRE) এবং TOEFL/IELTS পরীক্ষা দিয়ে নেয়া। এবার আসুন GRE এবং TOEFL/IELTS সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
প্রথমেই জেনে নেই Graduate Records Examination বা GRE সম্পর্কে। GRE হলো একটি প্রমিত পরীক্ষা যা বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের একটি আবশ্যিক শর্ত। এই পরীক্ষার মাধ্যমে একজন ভর্তিচ্ছু ছাত্র/ছাত্রীর শাব্দিক যুক্তি প্রদান (verbal reasoning), মাত্রিক যুক্তি প্রদান (Quantitative reasoning) এবং বিশ্লেষণাত্মক লেখার (Analytical writing) দক্ষতা যাচাই করা হয়। এই পরীক্ষাটি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের সাথে জড়িত নয়, বরং একদমই মৌলিক বিষয় তথা ইংরেজী এবং গণিত নির্ভর। যেহেতু আমাদের দেশের মতো আমেরিকায় কোনো ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় নাহ, তাই GRE পরীক্ষার নম্বর দিয়েই কিছু ছাত্র/ছাত্রীদেরকে আলাদা করে নেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে GRE এর গুরুত্ব বিভিন্নরকম। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে তা শুধুই আনুষ্ঠানিকতা আর কোথাও তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টাই সত্যি! একটা কথা জেনে রাখা ভালো বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই একটা সর্বনিম্ন GRE নম্বর দেখে ছাত্র/ছাত্রী প্রাথমিক নির্বাচন করলেও তারা তাদের ওয়েবসাইট এ কখনোই তা উল্লেখ করেনা। আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ করে দিলেও, তার সাথে একটা কথা উল্লেখ করে দেয় যে, "উল্লিখিত নম্বরই মানদন্ড নয়"।
GRE নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই একটি এবং শুধুমাত্র একটিই ভয় কাজ করে, আমি পারবো তো?! আমার মনেও ছিলো। কিন্তু এই ভয়কে যদি জয় না করতে পারেন তাহলে মাঝারী থেকে ভালো মানের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন বা ইচ্ছা যাই থাকুক না কেনো, বাদ দিয়ে দিতে হবে। আর যদি ভয়কে জয় করতে পারেন তাহলে সময় নষ্ট না করে শুরু করে দিন প্রস্তুতি।
প্রস্তুতিতে নিজেকে যথেষ্ঠ সময় দিন, কমপক্ষে ৬ মাস। শুরুতেই পরীক্ষার ধরন ভালো করে বুঝে নিন। এক্ষেত্রে আগে পরীক্ষা দিয়েছেন এমন কারো কাছ থেকে সহায়তা নিন, বুঝতে সহজ হবে। অনেকেই আপনাকে বুদ্ধি দিবে, এই বই কিনুন, ওই বই কিনুন। আমি বলি নাহ। শুরুতেই বই কিনে পড়া শুরু করে না দিয়ে পরীক্ষার ধরন আগে বুঝে নিন, এরপর নিজের অবস্থা বুঝুন, বুঝুন আপনার প্রস্তুতি নিতে কত সময় লাগবে। ঠিক করুন আপনি কবে নাগাদ পরীক্ষা দিতে চান। সেই মোতাবেক পরিকল্পনা করুন। বই কিনুন, অনুশীলন করুন। অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। GRE এর প্রস্তুতিতে প্রয়োজনে কোনো কোচিং সেন্টার এর সাহায্য নিন।
আমি কাউকে কোনো বই বা ওয়েবসাইট এর ব্যাপারে সুপারিশ করবোনা। আমি নিজে Magoosh ও TCY online এর উপর ভিত্তি করেই প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে এইসব অনলাইন-ভিত্তিক অনুশীলন অনেক ব্যয়সাপেক্ষ, কারন আপনি যখন নীলক্ষেত থেকে কম দামে অনেক বই পাচ্ছেন কেনই বা আপনি ডলার খরচ করবেন! আমি তো আমেরিকাতে থেকেই GRE এর প্রস্তুতি নিয়েছি তাই আমি নীলক্ষেত এর পূর্ণ সদব্যবহার করতে পারিনি!
প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন সেটা আপনি নিজেই ঠিক করে নিন। পরীক্ষার আগে আগে চেষ্টা করুন কিছু Mock Test দিতে। আপনার আত্নবিশ্বাস শেষ মূহুর্তে আরেকবার ঝালাই করে নিন। পরীক্ষা দিয়ে ফেলুন! ব্যস ঝামেলা শেষ!!
এবার আসুন TOEFL অথবা IELTS এ। এই পরীক্ষাটি আমাদের মতো যেসব দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মাতৃভাষা ইংরেজী নয়, তাদের অবশ্যই দিতে হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার ইংরেজীতে কথা বলা, পড়া, শোনা এবং লিখার দক্ষতা যাচাই করা হয়ে থাকে।TOEFL সকল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহন করে কিন্তু IELTS এখনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহীত হয় না, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহীত হয় না তার বেশিরভাগই হলো মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে TOEFL এবং IELTS এর সর্বনিম্ন নম্বর বিভিন্ন রকম। তবে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় TOEFL এর ক্ষেত্রে ৯০ বা তার বেশি (১২০ এর মধ্যে) এবং IELTS এর ক্ষেত্র ৬.৫ বা তার বেশী (৯ এর মধ্যে) গ্রহন করে। পিছনের দিককার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবশ্য এর চেয়েও কম নম্বরধারীদের আবেদন গ্রহন করে থাকে।
আপনার সুবিধা মতো যেকোনো একটা পরীক্ষা দিন ( কেও আবার দুটোই দিয়েন নাহ! তাহলে সময় এবং টাকা দুটোই বাঁচবে)। এই পরীক্ষাটি GRE এর তুলনায় কিছুটা সহজ। প্রস্তুতি একটু কমসময়েই সম্ভব। আমার মতে আপনি যদি GRE আগে দিয়ে নেন, তাহলে এই পরীক্ষা গুলো আপনার জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
সহজ হয়ে যাওয়ার কারণ দুইটা, এক. আপনার ইংরেজীর শব্দ ভান্ডার এর পরিধি বেড়ে যাওয়া, এবং দুই. আরেহ! GRE দিয়া ফেললাম! আর কিসের কি TOEFL/IELTS! প্রথম কারণটাকেই মাথায় রাখুন, দ্বিতীয়টা ভুলেও মাথায় আনবেন নাহ। তাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
প্রস্তুতি? একই পন্থা অবলম্বন করুন, যা আপনি করেছেন GRE প্রস্তুতির জন্য। কিন্তু এইসময় আপনার সময় অন্তত GRE প্রস্তুতির চেয়ে অর্ধেক লাগবে।
আমার মতে GRE এবং TOEFL/IELTS এর জন্যে সর্বনিম্ন ৯ মাস সময় রাখুন হাতে। এই সময়টা যথেষ্ঠ মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করুন। যত বেশী সম্ভব অনুশীলন করুন। একমাত্র অনুশীলনই পারবে আপনার কাঙ্খিত সাফল্য এনে দিতে।
চেষ্টা করুন, যে সেমিস্টার এর জন্য আবেদন করবেন তার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগের মাসেই এই পরীক্ষা গুলো দিয়ে ফেলতে, অর্থাৎ যদি আপনি ২০১৫ এর Fall সেমিস্টার এ আবেদন করতে চান তাহলে আগস্ট মাসের মধ্যেই এই দুটি পরীক্ষা দিয়ে ফেলুন। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় এই দুটি পরীক্ষা দিয়ে টেনশনমুক্ত থাকাই শ্রেয়।
সময় নষ্ট না করে পড়াশুনা শুরু কয়রে দিন!
আগামী পর্বে আমি দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।
(চলবে...।)
[একইসাথে ফেসবুকে পড়ুন এখানে]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯