somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিঃ আমার অভিজ্ঞতা । পর্ব ৫ ।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(৪র্থ পর্ব পড়ুন এখানে )

এবার আসি আবেদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন প্রসঙ্গে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারন সঠিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে পারলে আপনার ভর্তির সম্ভাবনা যেমন বাড়বে তেমনি আপনার টাকাও বাঁচবে কিছু।

বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আপনাকে তাই খুবই সতর্কতার সাথে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে এই কাজটি করতে হবে। এই কাজটি GRE-TOEFL/IELTS এর পরেই করে থাকে বেশিরভাগ মানুষ। আমি বলি GRE-TOEFL/IELTS দেয়ার আগে একদিন কি দুইদিন একটু দেখে নিয়ে একটা প্রাথমিক তালিকা করে ফেলা উচিত। কারন আপনি ৫ টা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অতিরিক্ত ফি ছাড়াই আপনার পরীক্ষার নম্বর পাঠাতে পারবেন, আর প্রাথমিক একটা তালিকা হাতে থাকলে আপনি আপনার পছন্দের তালিকা থেকেই ৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে পারবেন।

এবার একটু জেনে নেই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সিজিপিএ, GRE-TOEFL/IELTS নম্বর, ফান্ডিং, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত ইত্যাদি। এছাড়াও আরো কিছু বিষয় আছে যা পরবর্তী আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলে আসবে।

আপনার তো নিশ্চয়ই একটি ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে? তাহলে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনাকেই আগে পাখির চোখ করে আলোচনা শুরু করা যাক। একটু পরিষ্কার করি, এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে আমরা ছোটবেলায় যেমন বলতাম আমি ডাক্তার হতে চাই, আমি ইঞ্জিনিয়ার, আমি বিজ্ঞানী (এইটা কেও কখনো বলছি বলে মনে হয়না! কিন্তু আমি আবার এই লাইন এর কিনা!! :P আবার ভাববেন নাহ আমি স্টিফেন হকিং টাইপ কেও হইতে চাই!!! ) হতে চাই - এসব নয়। এতোদিনে আপনি আপনার এই ধরনের লক্ষ্যে পৌছে গেছেন। আমি যা বলছি তা হচ্ছে আরো নির্দিষ্ট। ধরে নেই, আপনি বিজ্ঞানী হতে চান এবং আপনি ইতিমধ্যেই ছোটখাটো কিছু গবেষনা করে ফেলেছেন এবং কিছু গবেষনাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে আপনার কি করা উচিত? অন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ছাত্র/ছাত্রীরা একটু মিলিয়ে নেবেন। আমি ভাই বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের তো, আমার অন্যদের বিষয়ে ধারনা কম, তাই এই অনুরোধটা আর কি!

আসুন জেনে নেই তাহলে আপনাদের যাদের গবেষনার অভিজ্ঞতা আছে তারা কি কি বিষয় খেয়াল করবেন। একটা জিনিস আমি দেখেছি, অনেকেই তার গবেষনার পূর্ব অভিজ্ঞতাকে শুধু অভিজ্ঞতা হিসেবেই দেখাতে চান, অর্থাৎ ওই গবেষনার সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চান নাহ। আমি বলি আপনি পূর্ব গবেষনার সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে যদি পিএইচডি করতে চান তাহলে কিন্তু আপনার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ পাওয়া খুব সহজ হয়ে যায়। তাই আপনি প্রথমেই দেখুন কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আপনার গবেষনা সম্পর্কিত গবেষনা হচ্ছে। এইরকম একটা তালিকা করুন। এই তালিকাটি আপনি আপনার GRE-TOEFL/IELTS পরীক্ষার আগেই করুন।

এই তালিকা করতে গিয়ে অনেকেই আবার বুঝতে পারেন না এত এত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে কোথায় আপনার আগ্রহের বিষয়ে গবেষনা হয় তা কিভাবে বের করবেন। সহজ বুদ্ধি দেই আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। আমি যখন আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন আমার ম্যালেরিয়া জীবানু ও ম্যালেরিয়ার মশার উপর প্রায় ৫ বছরের গবেষনার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। আমি আমেরিকার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষনা হচ্ছে তা খোঁজ করার জন্যে প্রথমেই গুগল এ 'Malaria USA University' ও 'Mosquito USA University' এই দুইটি কীওয়ার্ড দিয়ে অনুসন্ধান করি। তাতে মাত্র ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসে। এই ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাওয়ার পর আমি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এ গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের নামের তালিকা এবং তাদের গবেষনার বিষয় নিয়ে জানার চেষ্টা করি। এখানে একটা জিনিস বলে রাখি, আমি কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট বিভাগ দিয়ে শুধু খোঁজ করি নি, যেই বিভাগই হোক না কেন আমি তা গুরুত্ব দেই নি। অনেকেই বায়োকেমিস্ট্রি বা মাইক্রোবায়োলজি ছাড়া অন্য কোনো বিভাগই হয়তো দেখতেন না আমার জায়গায় থাকলে। কিন্তু এটা একটা বড় ধরনের বোকামির পর্যায়ে পড়ে। এটা না করাই ভালো। আরো অনেক নামের বিভাগেই হয়তো আপনার আগ্রহের বিষয়ের গবেষনা হচ্ছে, আপনি খামোখা আপনার ভর্তির সুযোগ কমাবেন কেনো?

শিক্ষকদের গবেষনার বিষয়বস্তু দেখবেন কেনো? কারন দিনশেষে একজন নির্দিষ্ট শিক্ষকের সাথেই আপনার কাজ করতে হবে। আবার প্রশ্ন করতে পারেন, ম্যালেরিয়া (উদাহরন) নিয়ে কাজ করছেন যিনি তার গবেষনার বিষয়বস্তুই তো ম্যালেরিয়া, আবার আলাদা করে দেখার কি দরকার! দেখবেন কারন ম্যালেরিয়া নিজেই একটা বইয়ের মতো যার মধ্যে অনেকগুলো অধ্যায় আছে, আর একেকজন শিক্ষক একেকটি অধ্যায় নিয়েই কাজ করেন। আপনি নিশ্চয়ই যেকোনো একটি অধ্যায় নিয়েই পিএইচডি করবেন, অন্তত আমি তাই করবো। শিক্ষকদের গবেষনার বিষয়বস্তু দেখার সাথে সাথে একটা জিনিস দেখতে হবে অবশ্যই, সেটি হচ্ছে যে শিক্ষকের প্রোফাইল আপনি পড়ছেন তিনি টেন্যুরড কিনা। টেন্যুরড বলতে সহজভাবে বোঝায় শিক্ষক ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী একজন শিক্ষক। নন-টেন্যুরড শিক্ষকদের দিকে আপনার তাকানোর কোনো দরকার নাই! এবার গুগল স্কলার (Google Scholar ) বা পাবমেড (PubMed ) এ একেকজন শিক্ষকের নাম দিয়ে অনুসন্ধান করুন তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত গবেষনাপত্রের জন্য। যত বেশি সাম্প্রতিক, ওই শিক্ষকের কাছে ফান্ডিং থাকার সম্ভাবনা তত বেশি। আর যার ফান্ডিং বেশি তিনি ছাত্র/ছাত্রী নেয়ার জন্যে আগ্রহীও থাকেন বেশী।

এখন এই শিক্ষকদের একটি তালিকা করতে হবে যেখানে তাদের গবেষনার বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ (এক বা দুই লাইন) এবং ইমেইল অ্যাড্রেস থাকবে। এক কাজটা করার আগে একটু এই ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসুন। এখানে গিয়ে আপনি প্রথমে যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম পেয়েছেন তাদের র‍্যাঙ্কিং দেখুন। দেখে তাদের একটা তালিকা করে ফেলুন এবং এই তালিকায় আবার তিনটি ভাগ করুন- Ambitious, Moderate এবং Safe (এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো আগামী পর্বে)। বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা হয়ে গেলে, একইভাবে শিক্ষকদের তালিকাটি সাজিয়ে ফেলুন। এরপর শুরু করতে হবে একেক জন শিক্ষককে ইমেইল করা।


(চলবে...।)

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:০১
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×