(৪র্থ পর্ব পড়ুন এখানে )
এবার আসি আবেদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন প্রসঙ্গে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারন সঠিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে পারলে আপনার ভর্তির সম্ভাবনা যেমন বাড়বে তেমনি আপনার টাকাও বাঁচবে কিছু।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আপনাকে তাই খুবই সতর্কতার সাথে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে এই কাজটি করতে হবে। এই কাজটি GRE-TOEFL/IELTS এর পরেই করে থাকে বেশিরভাগ মানুষ। আমি বলি GRE-TOEFL/IELTS দেয়ার আগে একদিন কি দুইদিন একটু দেখে নিয়ে একটা প্রাথমিক তালিকা করে ফেলা উচিত। কারন আপনি ৫ টা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অতিরিক্ত ফি ছাড়াই আপনার পরীক্ষার নম্বর পাঠাতে পারবেন, আর প্রাথমিক একটা তালিকা হাতে থাকলে আপনি আপনার পছন্দের তালিকা থেকেই ৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে পারবেন।
এবার একটু জেনে নেই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সিজিপিএ, GRE-TOEFL/IELTS নম্বর, ফান্ডিং, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত ইত্যাদি। এছাড়াও আরো কিছু বিষয় আছে যা পরবর্তী আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলে আসবে।
আপনার তো নিশ্চয়ই একটি ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে? তাহলে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনাকেই আগে পাখির চোখ করে আলোচনা শুরু করা যাক। একটু পরিষ্কার করি, এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে আমরা ছোটবেলায় যেমন বলতাম আমি ডাক্তার হতে চাই, আমি ইঞ্জিনিয়ার, আমি বিজ্ঞানী (এইটা কেও কখনো বলছি বলে মনে হয়না! কিন্তু আমি আবার এই লাইন এর কিনা!! আবার ভাববেন নাহ আমি স্টিফেন হকিং টাইপ কেও হইতে চাই!!! ) হতে চাই - এসব নয়। এতোদিনে আপনি আপনার এই ধরনের লক্ষ্যে পৌছে গেছেন। আমি যা বলছি তা হচ্ছে আরো নির্দিষ্ট। ধরে নেই, আপনি বিজ্ঞানী হতে চান এবং আপনি ইতিমধ্যেই ছোটখাটো কিছু গবেষনা করে ফেলেছেন এবং কিছু গবেষনাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে আপনার কি করা উচিত? অন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ছাত্র/ছাত্রীরা একটু মিলিয়ে নেবেন। আমি ভাই বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের তো, আমার অন্যদের বিষয়ে ধারনা কম, তাই এই অনুরোধটা আর কি!
আসুন জেনে নেই তাহলে আপনাদের যাদের গবেষনার অভিজ্ঞতা আছে তারা কি কি বিষয় খেয়াল করবেন। একটা জিনিস আমি দেখেছি, অনেকেই তার গবেষনার পূর্ব অভিজ্ঞতাকে শুধু অভিজ্ঞতা হিসেবেই দেখাতে চান, অর্থাৎ ওই গবেষনার সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চান নাহ। আমি বলি আপনি পূর্ব গবেষনার সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে যদি পিএইচডি করতে চান তাহলে কিন্তু আপনার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ পাওয়া খুব সহজ হয়ে যায়। তাই আপনি প্রথমেই দেখুন কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আপনার গবেষনা সম্পর্কিত গবেষনা হচ্ছে। এইরকম একটা তালিকা করুন। এই তালিকাটি আপনি আপনার GRE-TOEFL/IELTS পরীক্ষার আগেই করুন।
এই তালিকা করতে গিয়ে অনেকেই আবার বুঝতে পারেন না এত এত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে কোথায় আপনার আগ্রহের বিষয়ে গবেষনা হয় তা কিভাবে বের করবেন। সহজ বুদ্ধি দেই আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। আমি যখন আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন আমার ম্যালেরিয়া জীবানু ও ম্যালেরিয়ার মশার উপর প্রায় ৫ বছরের গবেষনার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। আমি আমেরিকার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষনা হচ্ছে তা খোঁজ করার জন্যে প্রথমেই গুগল এ 'Malaria USA University' ও 'Mosquito USA University' এই দুইটি কীওয়ার্ড দিয়ে অনুসন্ধান করি। তাতে মাত্র ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসে। এই ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাওয়ার পর আমি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এ গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের নামের তালিকা এবং তাদের গবেষনার বিষয় নিয়ে জানার চেষ্টা করি। এখানে একটা জিনিস বলে রাখি, আমি কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট বিভাগ দিয়ে শুধু খোঁজ করি নি, যেই বিভাগই হোক না কেন আমি তা গুরুত্ব দেই নি। অনেকেই বায়োকেমিস্ট্রি বা মাইক্রোবায়োলজি ছাড়া অন্য কোনো বিভাগই হয়তো দেখতেন না আমার জায়গায় থাকলে। কিন্তু এটা একটা বড় ধরনের বোকামির পর্যায়ে পড়ে। এটা না করাই ভালো। আরো অনেক নামের বিভাগেই হয়তো আপনার আগ্রহের বিষয়ের গবেষনা হচ্ছে, আপনি খামোখা আপনার ভর্তির সুযোগ কমাবেন কেনো?
শিক্ষকদের গবেষনার বিষয়বস্তু দেখবেন কেনো? কারন দিনশেষে একজন নির্দিষ্ট শিক্ষকের সাথেই আপনার কাজ করতে হবে। আবার প্রশ্ন করতে পারেন, ম্যালেরিয়া (উদাহরন) নিয়ে কাজ করছেন যিনি তার গবেষনার বিষয়বস্তুই তো ম্যালেরিয়া, আবার আলাদা করে দেখার কি দরকার! দেখবেন কারন ম্যালেরিয়া নিজেই একটা বইয়ের মতো যার মধ্যে অনেকগুলো অধ্যায় আছে, আর একেকজন শিক্ষক একেকটি অধ্যায় নিয়েই কাজ করেন। আপনি নিশ্চয়ই যেকোনো একটি অধ্যায় নিয়েই পিএইচডি করবেন, অন্তত আমি তাই করবো। শিক্ষকদের গবেষনার বিষয়বস্তু দেখার সাথে সাথে একটা জিনিস দেখতে হবে অবশ্যই, সেটি হচ্ছে যে শিক্ষকের প্রোফাইল আপনি পড়ছেন তিনি টেন্যুরড কিনা। টেন্যুরড বলতে সহজভাবে বোঝায় শিক্ষক ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী একজন শিক্ষক। নন-টেন্যুরড শিক্ষকদের দিকে আপনার তাকানোর কোনো দরকার নাই! এবার গুগল স্কলার (Google Scholar ) বা পাবমেড (PubMed ) এ একেকজন শিক্ষকের নাম দিয়ে অনুসন্ধান করুন তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত গবেষনাপত্রের জন্য। যত বেশি সাম্প্রতিক, ওই শিক্ষকের কাছে ফান্ডিং থাকার সম্ভাবনা তত বেশি। আর যার ফান্ডিং বেশি তিনি ছাত্র/ছাত্রী নেয়ার জন্যে আগ্রহীও থাকেন বেশী।
এখন এই শিক্ষকদের একটি তালিকা করতে হবে যেখানে তাদের গবেষনার বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ (এক বা দুই লাইন) এবং ইমেইল অ্যাড্রেস থাকবে। এক কাজটা করার আগে একটু এই ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসুন। এখানে গিয়ে আপনি প্রথমে যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম পেয়েছেন তাদের র্যাঙ্কিং দেখুন। দেখে তাদের একটা তালিকা করে ফেলুন এবং এই তালিকায় আবার তিনটি ভাগ করুন- Ambitious, Moderate এবং Safe (এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো আগামী পর্বে)। বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা হয়ে গেলে, একইভাবে শিক্ষকদের তালিকাটি সাজিয়ে ফেলুন। এরপর শুরু করতে হবে একেক জন শিক্ষককে ইমেইল করা।
(চলবে...।)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:০১