গত পর্বে একটি সুলিখিত ইমেইল এর গুরুত্ব এবং কিভাবে ইমেইল করবেন তা লিখেছিলাম। এই ইমেইল চালাচালির সময় শিক্ষক আপনার কাছে আপনার সিভি/রেজুমে বা জীবন বৃত্তান্ত চাইবেন। তাই ইমেইল করার সময় আপনার জীবন বৃত্তান্ত হাতের কাছে প্রস্তুত থাকাটা খুবই জরুরী। তাছাড়া আপনি যখন আবেদন পত্র জমা দিবেন তখন আপনার জীবন বৃত্তান্তও লাগবে।
সিভি/রেজুমে এমন ভাবে তৈরী করতে হবে যাতে আপনার শিক্ষা, গবেষনা জীবনের বা তার সাথে সম্পর্কিত সব অর্জন অন্তর্ভূক্ত থাকে। তবে সব কিছু অন্তর্ভূক্ত করতে গিয়ে আবার অনেক লম্বা যাতে না হয়। আমার মতে ২-৪ পৃষ্ঠার মধ্যেই আপনার সিভি/রেজুমে সীমাবদ্ধ রাখুন। বেশি লম্বা সিভি/রেজুমে অনেক সময় বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়।
অনেকেই সিভি/রেজুমে লিখার আগে ফরম্যাট নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন। এর কাছ থেকে ওর কাছ থেকে অথবা ইন্টারনেট থেকে সিভি/রেজুমে এর ফরম্যাট নেন। তাতে কোনো দোষ নেই, কিন্তু একেবারে হুবহু একই রকম করবেন নাহ। নিজস্বতা রাখার চেষ্টা করুন। আপনার অর্জন আপনিই ভালোভাবে সাজাতে পারেন, অন্যের ফরম্যাট/ফ্রেমে নিজেকে বন্দী করবেন নাহ। সিভি/রেজুমে লিখুন স্ট্যান্ডার্ড ফন্টে (Times New Roman, Arial, Calibri), ১১-১২ সাইজ এ। স্পেস দিন ১.১৫-১.৫ pt । যে কোনো ধরনের রঙ্গীন ফন্ট এড়িয়ে চলুন। সাদাকালোর মাধ্যমেই আপনার জীবনের অর্জন ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলুন। গ্রামার এবং যতি চিহ্ন এর দিকে খেয়াল রাখুন। অপ্রয়োজনে কোন খানে বোল্ড/ইটালিক্স করা থেকে বিরত থাকুন। এবার আসুন দেখি একটা সিভি/রেজুমেতে কি কি থাকা উচিত। এখানে অনেকটাই আমার রেজুমের ফরম্যাট এ লিখার চেষ্টা করেছি, নিজের মত গুছিয়ে নিতে পারেন।
প্রথমেই আসি ছবির ব্যাপারে। অনেকেই পাসপোর্ট সাইজ এর একটা ছবি দিয়ে দেন নিজ নিজ সিভি/রেজুমেতে। কোনো দরকার নেই। আপনার চেহারা আপনার যোগ্যতাকে কোনো ভাবেই বাড়িয়ে তোলে নাহ। তাই ছবি আপনার সিভি/রেজুমে থেকে বাদ দিন।
শুরু করুন আপনার নাম এবং বর্তমান ঠিকানা দিয়ে, সাথে অবশ্যই আপনার সাথে যোগাযোগের ফোন নম্বর (+০৮৮ যোগ করতে ভুলবেন নাহ) এবং ইমেইল এড্রেস দিতে ভুলবেন নাহ। দয়া করে একটি মাত্র ফোন নম্বর দিন, আপনার ২-৩ টা নম্বর এর সব গুলো দিবেন নাহ।
আমার মতে, আপনার নাম ঠিকানার পর ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ নামে ছোট, ২-৪ লাইন এর একটি প্যারাগ্রাফ করুন। না করলেও কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু এই প্যারাটি আপনাকে প্রথমেই একজন ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড মানুষ হিসেবে আরেকজনের সামনে তুলে ধরে। আপনার ক্যারিয়ার এর লক্ষ্য অল্প কথায় লিখুন। এরপর আপনার একাডেমিক অর্জন লিখুন, অর্থাৎ আপনার আন্ডারগ্রাড (ব্যাচেলরস) এবং গ্রাড (মাস্টার্স, যদি করে থাকেন) এর সম্পর্কে লিখুন। আমরা অনেকেই এস.এস.সি, এইচ.এস.সির কথাও উল্লেখ করে দেই। কোনো প্রয়োজন নেই। সর্বোচ্চ ডিগ্রী থেকে নিম্নতম ডিগ্রী এই অনুক্রম এ সাজান।
এরপর উল্লেখ করুন আপনার গবেষণা/চাকরীর অভিজ্ঞতা। শুধু আপনার পদবী এবং কর্মকাল উল্লেখ না করে সাথে আপনার প্রধান প্রধান দায়িত্ব কি কি ছিলো তা উল্লেখ করুন, অল্পকথায়। সর্ব সাম্প্রতিক গবেষণা/চাকরী সবার প্রথমে দিন। গ্রাড/আন্ডারগ্রাড পর্যায়ে থিসিস করে থাকলে, তাও আপনার অভিজ্ঞতার অন্তর্ভূক্ত হবে, তা আমি আগের পর্বগুলোতেই উল্লেখ করেছি। সিভি/রেজুমে এর অভিজ্ঞতা অংশে থিসিস এর কথা অবশ্যই উল্লেখ করুন। আপনার গবেষণা/চাকরীর সাথে সম্পর্কিত অন্য কোনো অভিজ্ঞতা থাকে এই অংশেই উল্লেখ করুন।
এরপর লিখুন আপনার বিষয়ভিত্তিক দক্ষতার কথা। যাদের গবেষণার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে তারা ল্যাবরেটরী টেকনিক গুলো বুলেট আকারে, আর যাদের চাকরীর অভিজ্ঞতা আছে তারা আপনার উচ্চশিক্ষার সাথে সম্পর্কিত দক্ষতা (Skill) গুলো বুলেট আকারে উল্লেখ করুন। আমি অনেককেই দেখেছি যারা যেসব টেকনিক জানেন না তাও সিভি/রেজুমেতে উল্লেখ করেন। এই কাজটি ভুলেও করবেন না। সৎ থাকুন। একটি বা দুটি টেকনিক কম জানলে কোনো ক্ষতি নেই, কারন আপনি উচ্চশিক্ষা নিতেই যাচ্ছেন শিখতে, তাই মিথ্যা এড়িয়ে চলুন। আপনার যদি কোনো বিষয়ে ট্রেনিং থেকে থাকে তাহলে দক্ষতার পর উল্লেখ করতে পারেন। এটি খুব জরুরী কিছু নয়।
যদি কোনো গবেষণাপত্র প্রকাশ করে থাকেন তাহলে উল্লেখ করুন এই পর্যায়ে এসে। পোস্টার/কনফারেন্স প্রসিডিংস থাকলে তাও উল্লেখ করুন। সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন কোনটি গবেষণাপত্র আর কোনটি পোস্টার/কনফারেন্স প্রসিডিংস। পোস্টার/কনফারেন্স প্রসিডিংস এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেট লিঙ্ক থাকলে দেয়ার চেষ্টা করুন।
এরপর আপনার এক্সট্রা কারিকুলার কোনো এক্টিভিটি থাকলে উল্লেখ করুন। ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিসিয়েন্সিও দিয়ে দিতে পারেন। অনেকেই ইন্টারপারসোনাল স্কিলস নামে একটি প্যারা করেন। করতে পারেন তবে বেশি কিছু লিখবেন নাহ। কম্পিউটার স্কিলস উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি নাহ, কারন এখনকার সময়ে সবাই-ই কমবেশি কম্পিউটার বিষয়ে জানেন।
এবার লিখুন আপনার রেফারেন্স পারসন দের নাম। ৪ জন সর্বোচ্চ। কারো নাম ব্যবহার করার আগে অবশ্যই তাকে জিজ্ঞেস করুন। রেফারেন্স পারসন এর নাম শুদ্ধভাবে লিখুন। সাথে অবশ্যই যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর এবং ইমেইল এড্রেস দিন।
খেয়াল করুন, আমি কোনো খানেই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অর্থাৎ আপনার বাবা, মা, জন্মতারিখ এসবের কথা উল্লেখ করিনি। এগুলো পুরোপুরি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য। এসব আমেরিকানরা জানতে চায় নাহ। তাই উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
অনেকেই একদম শেষে, উপরের উল্লিখিত তথ্য সত্য বলে শপথ করে স্বাক্ষর করেন। এই কাজটি করার কোনো দরকার নেই। কারন যারা পড়ছেন তারা আপনার সকল তথ্য সত্য জেনেই পড়ছেন। নতুন করে আপনার শপথ করারই বা কি প্রয়োজন??
সুন্দর ভাবে সিভি/রেজুমে তৈরী করুন। সিভি/রেজুমে তৈরী করার সময় মাথায় রাখুন, এটি আপনার প্রতিচ্ছবি। সত্য তথ্য দিন। আপনার সিভি/রেজুমে আপনাকে একজন অপরিচিত মানুষের সামনে আপনাকে তুলে ধরবে, তাই সিভি/রেজুমেতে আওবার তথ্য সুন্দর সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করুন।
(চলবে......।)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০১