somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলম্বাস নয়, আমেরিকার আবিষ্কারক লাইফ এরিকসন -২য় এবং শেষ পর্ব

২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকার মিনেসোটায় অবস্থিত লাইফের স্ট্যাচু


প্রথম সমূদ্র যাত্রা

২৪ বছর বয়সে লাইফ প্রথম সমূদ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দান করে এবং এ যাত্রায় সে নরওয়ের রাজা উলাভের (King Olav) জন্য উপহার নিয়ে যায়। যাত্রা পূর্বের সংশ্লিষ্ট নানা প্রস্তুতি লাইফকে দারূণ উদ্দীপ্ত করে। লাইফের এই সমূদ্র যাত্রায় সংগী হয় থিরকার এবং আরো ১৪ জন সহনাবিক।

যাত্রার শুরুতে বাতাসের বেগ তাদের অনুকূলে থাকলেও দ্বিতী্য় দিন থেকে তা স্থবির হয়ে আসে। দুদিনর স্থলে পাঁচ দিনেও তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। সহযোগী নাবিকদের তীরে জাহাজ ভেড়ানোর ইচ্ছেকে উপেক্ষা করে লাইফ জাহাজ চালিয়ে নেয়। যাত্রার অতিরিক্ত দিন তাকে অপ্রতূল খাদ্যের আশংকায় আশংকিত করে। অবশেষে তারা স্কটল্যান্ডের পশ্চিম তীরবর্তী হেব্রীডিজ (Hebrides) দ্বীপে উপনীত হয় এবং তাদের বোধগম্য হয় যে তারা তাদের গন্তব্য থেকে অনেক বেশী দক্ষিনে চলে এসেছে।

তাদের হেব্রীডিজ পৌছানোর দিন থেকেই শুরু হ্য় ঝড়ো আবহাওয়া যার কারনে তাদেরকরে সেখানে মাসখানেক অবস্থান করতে হ্য়। আবহাওয়া যাত্রার অনুকূলে আসলে তারা নরওয়ের উদ্দেশ্যে পাল তোলে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই নরওয়ে পৌঁছায়।

রাজ সাক্ষাত

নরওয়ে পৌঁছানোর পর অনেকেই তাঁর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য সাক্ষাত করে এবং অবশেষে রাজা উলাভের দরবারে তার আগমন ঘটে। তার পিতা এরিকের সাথে রাজা উলাভের পূর্বপরিচয়ের কথা এখানেই লাইফ জানতে পারে। উলাভের অনুরোধেই লাইফ নরওয়েতে বসবাস শুরু করে।

ভাইকিং দেব-দেবীর প্রতি দূর্বল বিশ্বাস এবং রাজার অনুপ্রেরনায় এ সময় লাইফ খ্রীস্টধর্মে দীক্ষিত হয়। নিজভূম গ্রীনল্যান্ডে (Greenland) প্রত্যাবর্তনকালে সে সাথে গুটিকয়েক পাদ্রী নিয়ে যায় সেখানে খ্রীস্টধর্ম প্রচারের জন্য।

নব ধরায় গমন

গ্রীনল্যন্ডে প্রত্যাবর্তনের পর লাইফ নতুন অভিযানের জন্য প্রায়শই অস্থির হয়ে উঠে। সে সিদ্ধান্ত নেয় বিয়রনের কাছে শোনা সুদূর পশ্চিমের ঐ ভূমি খুঁজে বের করার। বিয়রনের জাহাজ কিনে তার নির্দেশনামত থিরকার এবং আরো ক'জন সহনাবিক নিয়ে পাল তোলে লাইফ। গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল ধরে জাহাজ চালনার পর তারা পশ্চিমে আরো ৬০০ মাইল জাহাজ চালনা করে এবং আবিষ্কার করে পাথর এবং হিমবাহপূর্ণ এক ভূমি।

জাহাজ ভিড়ানোর পর হতাশাপূর্ণ হয়ে তারা আবিষ্কার করে যে ভূমিটি আদতে একটি বিশাল এবং মস্রিন পাথর খন্ড। লাইফ এই ভূমির নামকরণ করে হেল্যুল্যান্ড (Helluland) যার অর্থ হল সমতল পাথরের উপর ভূমি এবং এই হেল্যুল্যান্ডই আজকের বাফিন দ্বীপ (Baffin Island) যা কানাডার বৃহত্তম দ্বীপ এবং বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দ্বীপ। তারপর তারা আরো দক্ষিনে জাহাজ চালিয়ে নেয় এবং নতুন আরেকটি দ্বীপ আবিষ্কার করে। তীরে নেমেই তারা দেখতে পায় যে এটি সমতল এবং গাছপালা পরিবেষ্টিত একটি দ্বীপ। লাইফ এ দ্বীপকে মার্কল্যান্ড (Markland") নাম প্রদান করে যা বর্তমান কানাডার পশ্চিম তীর ঘেঁষে অবস্থিত মনে করা হ্য়।



লাইফের সমূদ্র যাত্রার মানচিত্র

অতঃপর লাইফ এবং তার দল দক্ষিন-পূর্ব দিকে আরো দু'দিন জাহাজ চালনা করতে থাকে এবং এমন একটি দ্বীপে উপনীত হ্য় যা মূলভূমি সংলগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে তারা ঘাঁটি বাঁধে। দ্বীপটির উপযোগীতা লক্ষ্য করে সেখানে তারা একটি শীতাশ্রম নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়। দ্বীপটির বিশেষ কিছু দিক তাদের অভিভূত করে যেমন বৃহদাকার স্যামন মাছ, বনজ সম্পদের পরিপূর্নতা ইত্যাদি।

প্রয়োজনী্য় আবাসন বিনির্মানের পর থিরকার সহ একটি ছোট দলকে লাইফ দ্বীপটি পর্যবেক্ষনের জন্য পাঠায়। এরকম একটি পর্যবেক্ষন দিন শেষে থিরকার ফিরে না আসায় লাইফ আরো কিছু লোক পাঠায় তাদের খোঁজার জন্য। সকলের ফিরে আসার পর আনন্দের আতিশয্যে লাইফ জার্মান ভাষায় তোতলাতে শুরু করে এবং সকলকে অবহিত করে যে সে এই ভূমিতে আঙ্গুর ফল খুঁজে পেয়েছে। আঙ্গুর এবং প্রয়োজনী্য় জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে তারা সেখানে শীতের জন্য বসবাস করতে শুরু করল। তারা লক্ষ্য করল যে এখানকার শীত কিছুটা ভিন্ন যেমন তুষার অনাবৃত ঘাস এবং রাত-দিনের প্রায় সমান ব্যাপ্তি।

বসন্তের আগমনে তারা ভূমিটি ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। এ সময় লাইফ এই ভূমির নামকরণ করেন ভিনল্যান্ড (Vinland)। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় Vin শব্দের মানে হল Wine।


ম্যাসাচুসেটস এর ক্যামব্রিজে চার্লস নদীর তীরে স্থাপিত ফলক যেখান (ভিনল্যান্ড) লাইফ তার বাড়ি নির্মাণ করেছিল

লাইফের এই ভিনল্যান্ডই আজকের L'Anse aux Meadows যা কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডে (Newfoundland) অবস্থিত।


বিস্ময়করভাবে শুধু লাইফ, তাঁর পরিবার এবং স্বল্প সংখ্যক কিছু লোক ছাড়া আর কেউ ভিনল্যান্ডে ফিরে আসেনি এবং এই স্বল্প সংখ্যক অধিবাসী পরে কোন একসময় আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের দ্বারা নিহত হয়। এবং এই কারনেই লাইফের আবিষ্কৃত এই নতুন পৃথিবী অজানার অন্ধকারে থেকে যায় সমগ্র ইউরোপজুড়ে। শুধু নর্স (Norse) সাগাগুলোই লাইফ সম্পর্কিত এসব তথ্যের স্বাক্ষ্য হিসেবে রয়ে যায়।


লাইফের সম্মানে ১৯৮৬ সালে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত ডাকটিকেট

প্রথম পদার্পনকারী ইউরোপিয়ান লাইফ এরিকসনের প্রতি সম্মানার্থেই প্রতি বছর ৯ই অক্টোবর আমেরিকায় পালিত হয় লাইফ এরিকসন ডে (Leif Erikson Day)।


সূত্র : নরওয়েজিয়ান উইকিপিডিয়া, ইংরেজী উইকিপিডিয়া এবং আমার পঠিত আরো কিছু বই।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:০৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×