somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমকামিতা বিষয়ক কিছু খুটিনাটি প্রশ্ন যার উত্তর আমজনতার জানা প্রয়োজন

৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ লেখাটি পূর্বের একটি লেখার সাথে সংশ্লিষ্ট। ধারাবাহিকতার স্বার্থে লেখাটি এখানে।

(Click This Link)


উপরের পোস্টে আমি আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে বিবেচনায় রেখে সমকামিতার অনধিকার-কে মানবিধাকের লংঘন বলা যাবে কিনা তানিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। আলোচনাক্রমে জানলাম কিছু লোকের ক্ষেত্রে সমকামিতা একটা ন্যাচারাল বিষয়। এতে অভ্যস্তরা নাকি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোন আকর্ষণ অনুভব করেন না। অনুভুতিটা কেবল সমলিঙ্গের কারো প্রতি জাগ্রত হয়। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, এ বিষয়টা আমার জানা ছিলনা। এখন আপাতত এ তথ্যটি স্বীকার করে নিয়ে যারা সমকামিতার অধিকার-কে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাঁদের কাছে কিছু খুটিনাটি জিজ্ঞাস্য আছে। আমার মনে হয় আমজনতার কাছে সমকামিতার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এগুলো আলোচনার প্রয়োজন আছে।
--------------------------------------------------------------------------------

১। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের কথা নাহয় বাদই দিলাম, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও সমকামিতার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। দু'একটা ব্যতিক্রম কখনও উদাহরণ হতে পারেনা। অথচ এই দেশগুলোই মানবতার গান গায়, প্রগতির ধ্বজা ধরে, সারা বিশ্বে কোথাও মানবাধিকার লংঘিত হতে দেখলে ঝাপিয়ে পড়ে। মানবাধিকার নামক শব্দটা আমরা তাঁদের কাছ থেকে শিখেছি। এখন মানবতার এই ধ্বজাধারীরা কেন সমকামিদের অধিকার-কে স্বীকৃতি দিচ্ছেনা? তাঁরা কি বুঝতে পারতেছেনা এই লোকগুলোর যৌনতার অধিকার আছে এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাঁদের কোন আকর্ষণ নেই?

আমি জানতে চাচ্ছি সমকামিতার অনধিকার বিষয়ে তাদের যুক্তিটা কি?

২। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে যারা সমকামিতার স্বীকৃতি দিয়েছেন তাঁরা কি এটার স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, সমকামিরা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোন আকর্ষণ অনুভব করেনা এবং সমলিঙ্গের কেউ না হলে তাঁদের যৌনচাহিদা মিটবেনা?

অর্থাৎ এখানে ব্যক্তির বিশেষ যৌনাকাংখার চাহিদা-কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে? নাকি বিজ্ঞান বা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে?

আমাদের দেশের সাপেক্ষে এ তথ্যটি জানা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করি।

৩। উপরের পোস্টের (লিংক সংযুক্ত) ২৩ নং মন্তব্যে মন্তব্যকারী একস্থানে বলেছেন, এদেশে সমকামীদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আবার আরেক স্থানে তিনি বলেছেন সংখ্যাটা ৬ থেকে ১২ মিলিয়ন যা দেশের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় মাইনরিটি জনসংখ্যার চাইতেও বেশি। এখন ধরে নিলাম নগন্য সংখ্যাটা ওনি ওনার নিজস্ব পর্যবেক্ষণের আলোকে বলছেন আর ৬ থেকে ১২ থেকে মিলিয়ন সংখ্যাটা পরিসংখ্যানের আলোকে। আপাতত ৬ থেকে ১২ মিলিয়ন সংখ্যাটা নিয়ে আলোচনা করি। নগণ্য হলে জানার বিষয়টা ভিন্নমুখী হতে পারে।


পাশ্চাত্যের চেয়ে আমরা অন্তত যে বিষয়টাতে এগিয়ে আছি বলে দাবি করতে পারি তা হচ্ছে আমাদের পরিবার প্রথা। পরিবার হচ্ছে ব্যক্তির নিরাপত্তার সুদৃঢ় আশ্রয়। অবশ্য যৌবনের দিনগুলোতে আপনার মনে হতে পারে আপনার পারিবারিক নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বৃদ্ধ বা শিশুদের জন্য এই পারিবারিক নিরাপত্তার কোন বিকল্প নেই। অন্তত রাষ্ট্রীয় অবস্থা এতো শক্তিশালী হয়নি যে আপনি সরকারি খরচে অনেক বেবি কেয়ার সেন্টার বা বৃদ্ধনিবাস গড়ে তুলবেন।


আপনাদের দাবির মুখে সরকার মানবাধিকার রক্ষার্থে যে ১২ মিলিয়ন বা এককোটির উপরের জনসংখ্যার সমকামী-কে বিবাহের অধিকার দিয়ে দিল বিশ বা পঁচিশ বছর পরে তাঁরা বৃদ্ধ হবেন। স্বাভাকিভাবে চলার অনুপযোগী হয়ে পড়বেন। সোজাকথায়, অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন। এখন পরিবার বিহীন এই বিপুল সংখ্যার বৃদ্ধদের কে দেখাশুনা করবে? আপনার রাষ্ট্র কি সেই বোঝা বহন করতে সক্ষম? যুদ্ধে নামার আগে কি কি পরিণতি আসতে পারে তার মোকাবেলারও প্রস্তুতি থাকা দরকার।

৪. বলা হচ্ছে আমাদের দেশের প্রায় ৬ থেকে ১২ মিলিয়ন লোক সমকামী। মাঝামাঝি সংখ্যা হিসেবে ধরলে প্রায় ১ কোটি লোক সমকামী। শতকরা হিসেবে প্রায় ১০%।

আমি এমন একজন লোককে জানি যে স্বাভাবিকভাবে বিবাহিত জীবনযাপন করছে, সন্তান আছে। কিন্তু আবার সমকামীতায়ও অভ্যস্ত। এটাকে কি আপনি অধিকার বলবেন? না বিকৃতি বলবেন? আপনার কি মনে হয়না যে সে ক্রাইম করছে?

এখন যে লোকটা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেনা তার সমকামিতার অধিকার থাকতে পারে। কিন্তু এই সংখ্যাটি কি সমাজের ১০%? সমাজের ১০% লোক যদি ন্যাচারাল সমকামী হতো তাহলে এ জীবনে এক না একজনের দেখা পেতাম। মানুষের সাথে মিশি, সেক্স নিয়ে আলাপও হয়। কিন্তু এ জীবনে আমি ন্যাচারাল কোন সমকামী দেখিনি, আমার আশেপাশের কেউ দেখেছেন বলেও শুনিনি। বন্ধুবান্ধবদের কেউ দেখেছে বলেও বলছেনা।

সমাজের দিকে তাকান। দেখবেন, সমাজের ৯৯.৯৯% বিয়ে করে, সন্তান হয়। বিয়ে করেনা এমন লোকের সংখ্যা হতে পারে .১%। এখন .১% ন্যাচারাল সমকামী এ কারণে বিয়ে করছেননা তাও বলা যাবেনা। পারিবারিক দায়ভার, প্রেমঘটিত সমস্যা, শারীরিক অক্ষমতা,যৌতুক দিতে অসমর্থ্য ইত্যাদি বিষয় বিয়ে না করার প্রধান কারণ। হয়তো এর মধ্যে ন্যাচারাল সমকামীও থাকতে পারেন। এখন সংখ্যাটাকে এভাবে ফুলিয়ে-ফাপিয়ে বলার কি দরকার?

আপনারা সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলছেন, হয়তো কাজও করছেন। এখন আপনারা কি ব্যক্তিজীবনে একজন ন্যাচারাল সমকামীর দেখা পেয়েছেন, যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেনা? আশা করি উত্তরটা তর্কের খাতিরে দিবেন না।

-------------------------------------------------------------------------------

এই প্রশ্নগুলো আমি আমার পোস্টেও করেছিলাম। সংশ্লিষ্টরা এখনও কোন জবাব দেননি। হয়তো আমাকে এতোটাই মুর্খ আর অর্বাচীন ভেবেছেন যে আমার সঙ্গে এটা আর কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে এই যে ,সমকামিতার বিষয়ে আমাদের সমাজের ৯৯.৯৯% মানুষ আমার মতোই মুর্খ ও অর্বাচীন। আপনি রাষ্ট্র বা সমাজে দু'উপায়ে পরিবর্তন আনতে পারেন, ১. বিপ্লব ও ২. সংস্কার। এখন বিপ্লবই ঘটান আর সংষ্কারই করেন এতে আপনার আমজনতাকে সংশ্লিষ্ট করতেই হবে। আমাদের মতো মুর্খদের আপনাকে বুঝাতে হবে যে, আপনি যা করতে যাচ্ছেন তা সব বিবেচনায় যৌক্তিক। আমি নিশ্চিত আপনি যদি তা না করতে পারেন তবে এটা আপনার ড্রয়িংরুমের গরম চায়ের কাপে ফুক দেওয়া আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:২২
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×