somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউটিউবকে নয়, বোরকাটা বরং মহান পয়গম্বরকে পরান

২১ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সদাশয় সরকার বাহাদুর গত ১৭/০৯/২০১২ তারিখ থেকে একটি মহৎ উদ্দেশ্যে এদেশে ইউটিউব বন্ধ রেখেছেন। মহৎ উদ্দেশ্যটি হচ্ছে মহান পয়গম্বরকে অবমাননার কারণে তার অনুগত উম্মতেরা যাতে আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উল্টো-পাল্টা কিছু না করে বসেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামে বিশ্বাসী ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক মহান পয়গম্বরের উম্মাদ অনুসারীদের মাথায় হাত বুলানোর বিষয়টি অবশ্য নতুন কোন ঘটনা নয়। প্রায়ই তারা এমনটা করেন বা বলা যেতে পারে এমনটা করার সুযোগ পান। কিছুদিন অন্তর অন্তরই শুনা যায় অমুক স্কুলের অমুক অমুসলিম মাস্টার বা অমুক অমুসলিম দোকানদার ইসলামের মহান পয়গম্বরকে অবমাননা করেছেন। আবেগে উদ্বেলিত মহান পয়গম্বরের উম্মতদের ভয়ে সেই অবমাননাকারী নিজের পেশা, আশ্রয় ছেড়ে অজানায় হারিয়ে যায়। আমাদের সদাশয় সরকার বাহাদুরের প্রশাসন এসব ঘটনার কোন তদন্ত বা সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই পয়গম্বর প্রেমীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন, তাদের মাথায় স্নেহের পরশ বুলান।

সরকারের সমালোচনা করেন এমন সুশীল মানুষের অভাব নেই এদেশে। টকশোগুলোতে গণতন্ত্রের কথা বলে মুখে ফেনা তুলেন, মুক্তচিন্তা বা বাক-স্বাধীনতার জন্য বিৃবতি দেন এমন বুদ্ধিজীবীরও কমতি নেই আমাদের। কিন্তু বাক-স্বাধীনতার ধ্বজাধারী এই সৈনিকেরাও ইউটিউব বন্ধের বিষয়ে একেবারেই নীরব। সম্ভবতো সরকারের মতো সুশীল বুদ্ধিজীবীরাও মহান পয়গম্বরের উম্মত্ত উম্মতদের রোষানলে পড়তে চান না।

কিন্তু এমনটা করে কি আমাদের সরকার নবীকে অবমাননার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন বা নবীর উম্মত্ত অনুসারীদের নিজের বশে রাখতে পারবেন? প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই যে, পৃথিবীতে যতদিন পলিটিক্যাল ইসলামের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন নবীর এই সমালোচনা (আমি এটাকে অবমাননা বলিনা) চলতেই থাকবে। আমি কার্ল মার্কস এর সমাজবাদে বিশ্বাসী, আপনি পশ্চিমের উদার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। আমাদের মধ্যে তর্ক বা পরস্পরের সমালোচনাটা চলতেই থাকবে। এটাই গণতন্ত্র, এটাই তার রীতি। কিন্তু পলিটিক্যাল ইসলাম বা এর ধ্বজাধারীরা কি এটা সহ্য করার সামর্থ্য রাখে? আপনি যখন ইসলামকে নিয়ে রাজনীতিতে নামবেন, সমাজবাদ বা পুঁজিবাদের প্রতিদ্বন্ধী হবেন, অন্য ধর্মের মানুষদের উপর নিজের প্রভাব চালানোর চেষ্টা করবেন তখন অন্যান্য মতবাদের অনুসারীদেরও অধিকার থাকবে আপনার সমালোচনা করার। এটাই গণতান্ত্রিক আচার। এই আচার চর্চার কারণে আপনি যে মতের কথা বলে রাজনীতি করছেন সে মতের প্রতিদ্বন্ধীদের নিকট হতে আপনার মতের চুল-চেরা বিশ্লেষণ বা বিরোধ আসতে থাকবে। স্বভাবতই এ বিরোধীতার কারণে নবীর বহু বিবাহ, দাসী গ্রহণ, বাল্য বিবাহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ইহুদী নিধন এবং অন্যান্য আইন-কানুনের সমালোচনা হবে। গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী এই সমালোচনা করাটা তাদের অধিকার। আপনি এই অধিকারটাকেই অবমাননা হিসেবে বিবেচনা করছেন। কিন্তু আপনি সেটা করতে পারেন না। যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এবং ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করতে চান তবে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা অর্থাৎ নবীর সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামতে হবে। যদি তা না পারেন তবে ইসলামের নামে রাজনীতি থেকে বিরত থাকুন। কিন্তু এখানে আপনি রাজনীতি থেকেও বিরত থাকছেন না আবার আপনার মতবাদের প্রতিষ্ঠাতার সমালোচনাও সহ্য করতে পারছেন না। কাজেই স্পষ্টতই সমস্যার সৃষ্টিকর্তা বা সমস্যাটা আপনি নিজেই।

এ ধর্মের অনুসারীদের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ধর্মীয় বিষয়ে এরা অতিরিক্ত সেন্সিটিভ। অতি অল্পতেই এরা উত্তেজিত হয় এবং উত্তেজনার বশে ক্ষতিটা কার করছে সেটা তারা নিজেরাও বুঝেনা। দেখা গেছে কথিত নবীর অবমাননার কারণে বিক্ষোভে পশ্চিমাদের চেয়ে নিজের বা নিজের দেশের ক্ষতিটাই তারা বেশি করেছে। পশ্চিমারাও বিষয়টা বুঝে। সে কারণেই আমার মনে হয় ইচ্ছাকৃতভাবে এই অবমাননার ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। এখানে অতিরিক্ত সেন্সিটিভ মুসলিমদের যেটা বুঝা উচিত অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে আপনি শত চেষ্টা করেও এসব কর্মকান্ড আটকাতে পারবেন না। সরকার ইউটিউব বন্ধ করেছেন। কিন্তু নবীর সমালোচনা কি বন্ধ আছে? ফেসবুক, ব্লগে প্রতিদিন অবিরত তার সমালোচনা হচ্ছে। আপনাকে এসব স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। যদি জবাব দেবার প্রয়োজন বা যোগ্যতা থাকে তবে গণতান্ত্রিক রীতির মাঝে থেকে এসবের জবাব দিন। গণতন্ত্র আপনাকে সে সুযোগ দিয়েছে। আর যদি জবাব দেবার প্রয়োজন বা যোগ্যতা না থাকে তবে নীরব থাকুন। এমন ধারার মধ্যে যদি নিজেকে আনতে পারেন তাহলে দেখবেন একসময়ে এগুলো আপনি থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে।

কাজেই এখানে ইউটিউব বন্ধ করার মাধ্যমে সরকার নবীকে অবমাননার হাত থেকে রক্ষার এবং তার উম্মতদের শান্ত রাখার যে প্রয়াস নিয়েছে সেটা কোন অবস্থায়ই দীর্ঘস্থায়ী বা যৌক্তিক সমাধান নয়। এটা অনেকটা কামুক পুরুষের দৃষ্টি থেকে নারীকে নিরাপদে রাখার জন্য তাকে বোরকায় আবদ্ধ রাখার মতো। চরিত্রের উপর নিয়ন্ত্রণহীন ব্যক্তির দৃষ্টির উপর নারীর পরিধেয় বোরকা কোন প্রতিবন্ধকতা আরোপ করতে পারেনা। কাজেই বোরকাটা সেই ব্যক্তির চোখে পরালেই ভাল রেজাল্ট দিবে যার দৃষ্টির উপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ঠিক তেমনি এখানে বোরকাটা ইউটিউবকে না পরিয়ে মহামান্য পয়গম্বরকেই পরানো উচিত। এক্ষেত্রে ইসলামকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা, এর অনুসারীদের মাঝে সহনশীলতা আনয়ন, ধর্ম-কে রাষ্ট্র কর্তৃক তোষামোদ বন্ধ করা বোরকার ভূমিকা রাখতে পারে।

সার্বিক বিবেচনায় তাই সরকারের প্রতি পরামর্শ থাকবে প্রতিনিয়ত নবীর আবেগী উম্মতদের মাথায় হাত না বুলিয়ে প্রকৃত সমাধানের দিকে নজর দেয়ার জন্য। এভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে মাথায় তুলতে থাকলে একটা সময়ে তাদের আর মাথা থেকে নামানো যাবেনা। সমস্যার সঠিক এবং চিরস্থায়ী সমাধানের নিমিত্ত ইউটিউবকে নয় বরং মহামান্য পয়গম্বরকে বোরকা পরানোর সাহস দেখানোর জন্য সদাশয় সরকার বাহাদুরের নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকল।

অবিলম্বে ইউটিউব সাইটটি এদেশে উম্মুক্ত করা হোক।
৩০টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×