somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“ছাত্রলীগ ও চাপাতি হতে সাবধান” বাক্যটি যেন প্রবচনে পরিণত না হয়

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিলার গ্রুপের অন্যতম সদস্য রফিকুল ইসলাম শাকিলকে গত শনিবার ( ১৫/১২/২০১২) বরগুনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটি এক্সাইটেড হওয়ার মতোই একটি খবর। তবে এই এক্সাইটনেস এর মাঝে ছোট্ট একটি খবর সবার নজর এড়িয়ে গেছে এবং এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। শাকিলের গ্রেফতারের খবর শুনে তার পিতা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ মারা যান।

এটাই পিতৃত্বের চিরন্তন ধর্ম। পুত্র যতোই বিপথে চলে যাক, তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাগুলো যতোই ব্যর্থতার মুখ দেখুক না কেন, পিতা কখনই তার সন্তানের দুরবস্থা সহ্য করতে পারেন না। স্কুলে পড়ার সময়ে কবি গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ কবিতার বিষয়বস্তু এখনও মনে দাগ কাটে। কবির বর্ণনানুসারে অসুস্থ পুত্র হুমায়ূনের জীবন বাঁচাতে পিতা বাবর স্রষ্টার কাছে তাঁর জীবন সঁপে দেয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। স্রষ্টা তাঁর প্রার্থনা গ্রহণ করেন। বাবর মৃত্যুবরণ করেন, পুত্র হুমায়ূন নতুন জীবন লাভ করে। যদি আপনি বিজ্ঞান বা যুক্তি খুঁজেন তবে হয়তো এ কাহিনীটি অসার প্রমাণিত হবে। কিন্তু আমি এই অসারতার মাঝেও চিরন্তন একটি ‘সারবস্তু’ খুঁজে পাই আর তা হচ্ছে পিতার চিরন্তর সন্তান-প্রেম।

এই বাংলাদেশে আমার বাবা সহ এমন পিতার অভাব নেই যারা পুত্রের কল্যাণার্থে প্রয়োজনে নিজের জীবনটি পর্যন্ত অকাতরে বিলিয়ে দিতে পারেন। আমি নিশ্চিত ছেলেবেলায় শাকিল যখন তার বাবার হাত ধরে স্কুলে যেত তখন সে বা তার বাবা কেউই ভাবেনি বড় হয়ে সে একজন খুনী হবে। খুনী বা সন্ত্রাসী সে তখনই হল যখন সে সর্বোচ্চ বিদ্যা অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তথাকথিত ছাত্র রাজনীতির নামে স্টেট স্পন্সরড একটি সংগঠনের ছায়ায় আশ্রয় নিল। এই সংগঠন শাকিলকে চাপাতি শাকিলে পরিণত করেছে, তাকে বুঝিয়েছে খুন করলেও রাষ্ট্র তাকে প্রশ্রয় দিবে। প্রশ্রয়তো এতোদিন দিয়ে আসছিলই। প্রশ্রয়ের এই ধারাবাহিকতা বিশ্বজিৎ এর হত্যার পরেও অব্যাহত ছিল। বিশ্বজিৎ এর লাশ যখন মর্গে পড়েছিল তখন তাঁর খুনীরা ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতির জন্মদিনের উৎসবে ফুর্তিতে মত্ত ছিল। সভাপতি সাহেব খুনীদের কেক খাওয়াচ্ছিলেন, খুনীরা খাওয়াচ্ছিলেন তাকে। কর্তৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও তাদের আড়ালের চেষ্টা হয়েছিল।

এতদিনের ক্রমবর্ধমান আস্কারার ধারাবাহিকতাই শাকিলদের এতো বেপরোয়া করেছে। কাজেই আজকে শাকিলদের এই অপকর্মে দায়ী তারা একা নয়। দায়ী ঐ সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব, দায়ী এ সংগঠনটির পিতৃ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু আমি নিশ্চিত তাঁরা কখনই এই দায় এর ফলভোগ করবে না। ফলভোগ করে বা করবে নিরীহ বিশ্বজিৎরা, ফলভোগ করে বা করবে শাকিলদের বাবারা।

যেমনটা বলেছি কর্তৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে খুনীদের আড়ালের চেষ্টা করা হয়েছিল। এমন আড়াল বা আস্কারা দেয়ার চেষ্টাটা অবশ্য গত চার বছরের অভিজ্ঞতায় বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। ঘটনার পরই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বললেন, এটা ছাত্রলীগের নয় শিবিরের কাজ। যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বক্তব্যকে সত্য ধরেও নেই তবে এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপদার্থতাকে চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। স্বাধীনতার চার দশক পরে সরকারে যখন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি তখন ঐ একাত্তরের হায়েনাদের অনুসারীরা রাজধানীতে প্রকাশ্য রাজপথে মানুষ মারছে আর পুলিশ তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে এমন ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ঐ পদটাতে থাকার অধিকার তার মতো অপদার্থের নেই। খোদ রাজধানীতে আদালত ও ডিসি অফিসের কাছাকাছি জায়গাতে স্বাধীনতা বিরোধীরা এমন জঘন্য কাজটি করেছে (পুলিশের উপস্থিতিতে) এ কথাটি বলার আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের লজ্জা হয়েছিল কিনা জানিনা তবে এমন কথা শুনতে আমার মতো সাধারণ মানুষের লজ্জা লেগেছিল, লজ্জা লাগে।

‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ জনগণের প্রাণের দাবি। বিচারকার্যে সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের প্রায় শতভাগ মানুষের একাত্মতা বা সমর্থন আছে। কিন্তু এই একাত্মতা সরকারকে তার অন্যান্য কাজ তথা সুশাসন বা ন্যায়বিচারের দায়দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়না। আজকে ছাত্রলীগ যদি শিবির দমন করতে গিয়ে কোন কর্মে জড়িত হতো তাহলে তা নির্দ্বিধায় সমর্থনের পর্যায়ে থাকত। কিন্তু ছাত্রলীগের এই আগ্রাসী আচরণে জামাত বা শিবিরের কতোটা ক্ষতি হয়েছে? আমার দৃষ্টিতে বাস্তব কোন ক্ষতি হয়নি। এই চার বছরে জামাত বা শিবিরের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরো ফুলে-ফেঁপে ওঠেছে। ছাত্রলীগ এ বিষয়ে কোন কর্মসূচির মাধ্যমে সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর আনেনি বা আনার কোন প্রচেষ্টাও নেয়নি। বরঞ্চ বলা যায় ছাত্রলীগের এই আগ্রাসী আচরণে (জবর দখল, টেণ্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি) বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ, সাধারণ ব্যবসায়ী, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী। কিন্তু সরকার এই সংগঠনটির অপকর্ম রোধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। বরং বলা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আড়াল করেছে, আস্কারা দিয়েছে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। গত জুলাই মাসে পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী সগর্বে ঘোষণা করেন, আমাদের নিজেদের টাকাতেই পদ্মাসেতু করব। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরের দিনই সারাদেশে শুরু হল ছাত্রলীগের গণচাঁদাবাজির মহোৎসব। আর সেই মহোৎসবের প্রথমদিনেই বলি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল হাসান (সোহেল রানা)। চাঁদার টাকা সংরক্ষণের জের ধরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে তিনি নিহত হন। দেশের মানুষ আজও জানেনা চাঁদাবাজির ঐ মহোৎসবে ছাত্রলীগ কত টাকা তুলেছিল আর কি পরিমাণ টাকা সংশ্লিষ্ট একাউন্টে জমা হয়েছিল। এটা কোনদিন জানাও হবে না।

অথচ এই ছাত্রলীগের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অতীত ঐতিহ্য। ১৯৬২, ৬৬, ৬৯এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই সংগঠনটির ভূমিকা অপরিসীম। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্বে এই সংগঠনের ভূতপূর্ব নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল। এসব এখন সুদূর অতীতস্মৃতি। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারক এখন ব্যবসায়ী, আমলা আর দুর্বৃত্তরা। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারক এখন মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মাহবুব-উল হানিফ বা কামরুল ইসলামের মতো ভূঁইফোড় নেতারা যাদের কোন অতীত নেই, সম্ভবতো ভবিষ্যতও নেই। এমন নেতৃত্বের অধীনে ছাত্রলীগের উৎকর্ষ সাধিত হবে বা তাঁরা ছাত্রলীগের সুনাম নিয়ে ভাববেন এমনটা আশা করার যুক্তিসংগত কোন কারণ নেই। এক্ষেত্রে তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকতে পারে ছাত্রলীগের ব্যবহার বা চুষণের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার।

ছেলেবেলায় যখন কোন কলেজ বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ দিয়ে হেঁটে যেতাম তখন দেয়ালে “কুকুর ও শিবির হতে সাবধান” এই লেখাটি প্রায়ই দেখতে পেতাম। আজ পরিণত বয়সে শিবিরের প্রতি যে ঘৃণা প্রতিমুহূর্তে বহন করে চলছি তাতে ঐ দেয়াললিখনটির অবশ্যই বিরাট ভূমিকা আছে। ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকাণ্ডে ভয় হয় অচিরেই হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে “ছাত্রলীগ ও চাপাতি হতে সাবধান” এমন দেয়াল লিখনও দেখা যেতে এবং ভুক্তভোগীদের সমর্থন সাপেক্ষে সেটা হয়তো এক সময়ে প্রবচনেও পরিণত হতে পারে। যদি তেমনটাই হয় তবে সংগঠনটির অতীত ঐতিহ্য বিবেচনায় এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি নিজেও ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। আমি জানিনা ছাত্রলীগের ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের আজকের বা গত চার বছরের কর্মকাণ্ডে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ বা লজ্জিত কিনা। সব অর্জনই তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। তবে সংশোধন বা প্রায়শ্চিত্ত করার সময় কখনই শেষ হয়ে যায় না। মাননীয় নেত্রী, দয়া করে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটির দিকে নজর দিন। একে রক্ষা করুন।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×