আসসালামু আলাইকুম বাংলাদেশ,
এই তো আর কিছুমুহূর্ত .. নতুনকে বরণ করতে পহেলা বৈশাখ নতুন বাংলা বর্ষের আগমণ বার্তা নিয়ে আসছে ঘরে ঘরে তবে এবার আর ঢাকঢোল বাজবে না তোমার ঘরে ঘরে, হয়তবা প্রতিটি মানুষের মনের উঠোনেও !
পুরনো সব ভুলে জয়গান গেয়ে অভ্যস্ত সবসময়ই আমরা। প্রতিবারই নতুনত্বের গান গেয়ে উঠে দাড়াই বারংবার! ভুলে যাই আমরা সকল অতীত ব্যাথা... অন্যায় অত্যাচার.. কৃত্রিম বা প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ ...ভুলে যাই চকবাজার, বনানীর সেই আগুনের ভয়াবহতা.. ভুলে যাই ঢাকা ভার্সিটি,রাজু ভাস্কর্য.. ঢাকা জাদুকর এর সামনে সুশীল ও কোন সচেতন নাগরিকদের কোন কিছুর বিরুদ্ধে আমরণ অনশণ যাত্রা, ভুলে যাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় কিছু সাধারণের মানব বন্ধন..ভুলে যাই প্রিয়জন হারানোয় কোন পরিবারের দুঃখ ব্যাথা.. ভুলে যাই বনানীর সেই আগুন ঘটনার মত কোন দুর্যোগকালে সাধারণ কোন মানুষ জসিম বা সোহেল রানাদের বিরত্ব গাথা..ভুলে যাই নাইম নাটকের মত শাক দিয়ে মাছ ঢাকা কোন বিনোদনের কথা..ভুলে যাই অলিতে গলিতে.. বদ্ধ ঘরে নরপিশাচদের ধর্ষণ থেকে গণধর্ষণের মিছিল, ভুলে যাই আমজনতার কাধে মহামূল্যবান পেয়াজ-লবণের বীরদর্পে মাথা উচিয়ে টিকে থাকা.. যেমনটা সবসময়ই ভুলে গিয়েছি মেধাবী আবরারদের হারিয়ে যাওয়ার কথা, ভুলে গিয়েছি মৃত্যুযাত্রী নুসরাতের প্রতিবাদ,তার মৃত্যু..ও সিরাজের মত নরপিশাচের বিচার নিয়ে রঙ তামাশার কথা..!! আরো কত কি যে ভুলে গিয়েছি, তাও ভুলে যাই.. ধুরছাই !!!!!!
আসলে আমরা পুরাতন কে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে খুব সহজেই নতুনকে বরণ করে নিতে অভ্যস্ত.. এতে আসলে হতাশার কিছু নেই। তাই প্রিয় বাংলাদেশ তুমি মন খারাপ করো না।
পুরনো কে ঢাকতে নতুন নতুন আলকাতরার প্রলেপে জীবন তুলি রাংগাতে আমরা বাংলাদেশি মানুষ খুবই অভ্যস্ত !
আমরা বাংলাদেশীরা আসলে দুদিন পর পর নিত্য নতুন তৈরী হওয়া নাটকে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। যার ফলে প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ বা মহামারীকেও এখন আমরা বুড়ো আংগুল দেখাতে সাহস পাচ্ছি.. এসব যেন আমাদের জাতীয় খাবার ডাল-ভাত, রোজই তো মুঠো পুরে খাই!
দেখা যাবে, মহামারীতে চাল চোরদের এই হারামিপনার মত ঘটে যাওয়া ঘটনা এসব তো ধুরছাই.. পুরা করোনাভাইরাসটাকেই কোন একসময় খেয়ে দেয়ে ফেলে দিয়েছি ডাল ভাতের সাথে সাথে কোন এক সকালে পান্তা ইলিশ.. কাচা মরিচ আর পেয়াজের ঝাঝে।
কি করবো,কষ্ট লাগে যখন দেখি এসব ঘটনা আমাদের কিচ্ছু করতে পারেনা..কিভাবে যে এসব অতিসহজে ভুলে যাই! ..আমরা কেবল মশালাদার ঘটনা গুলোকেই বরণ করতে পারি, যা দিয়ে কেবল টিকটক জাতীয় মসলাদার খাবার বানানো যায়, ফেসবুকে লাইভে রুপ দেখানো যায়..!!
কেবল পারিনা গ্রহণ করতে ঘটে যাওয়া কোন দুর্যোগ থেকে কোন ভালো কিছুর শিক্ষাটুকু নিতে। এই যে ধরুণ, যেমন কক্সবাজারের সৈকত ঘেসে ডলফিন হেসে খেলে বেড়াচ্ছে.. এই যে ধরুণ আজ পত্রিকায় দেখলাম ঢাকার বাতাস বিশুদ্ধ হচ্ছে.. এইসব নতুনকে কেবল আমরা গ্রহণ করতে পারিনা। কারণ এগুলোতে ম্যাজিক মসলার টেস্ট নাই..
আল্লাহর রহমতে মনে প্রাণে চাই, বর্তমান মহামারী সমগ্র পৃথিবী থেকে দূর হয়ে যাক, হেসে উঠুক বিশুদ্ধ বাতাসে প্রতিটি প্রাণ।
কিন্তু এখন দেখার প্রতীক্ষা.. আমরা পারবো কিনা বিশুদ্ধ বাতাসে উড়ে বেড়াতে, জানিনা পারবো কিনা এখন যেভাবে প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে অলংকৃত করছে, সেটাকে বরণ করে নিয়ে আগামীর পথ চলতে.. প্রকৃতিকে তার রুপে সাজিয়ে রেখে প্রকৃতির মাঝে নিজেদের বিলিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত ভালোলাগায় উদযাপন করে বেচে থাকার পরিপূর্ণ স্বাদ নিতে !!
আসুন এই নতুন বর্ষে মনে মনে অংগীকার বদ্ধ হই..। অন্ততপক্ষে আমাদের সন্তান ও আগত প্রিয়জনদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা মনে করে যেন দৃঢ়তার সাথে বলি..আল্লাহ পাক যদি আমাদের নেক হায়াত দান করেন, ইনশাআল্লাহ আমরা এবার পারব..
সর্বশেষে প্রিয় বাংলাদেশ.. মহান আল্লাহতালার নিকট করজোড়ে দোয়া কামনা করি, আল্লাহ যেন তোমাকে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ-মহামারী ও তোমার কিছু কৃত্রিম দুর্যোগকারী হাত থেকে তোমাকে রক্ষা করেন।
আমাদের মত পাপীদেরকেও হেদায়েত দান করে সকলকে রক্ষা করেন, হেফাজতে রাখেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, রক্ষাকর্তা, দয়ালু ও মহান।
শুভ নববর্ষ বাংলাদেশ।
ইতি,
একজন সন্তান,
একজন অভিভাবক,
একজন বোন,
একজন ভাই,
একজন সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২৩