চট্টগ্রামের সুপ্রাচীন ইতিহাসের
ধারণা থাকলেও সেরকম কোন
নিদর্শন খুজে পাওয়া যায়নি।
সীতাকুন্ডের পাহাড়ী এলাকায়
প্রস্তরযুগের কিছু অস্ত্রের নমুনা
পাওয়া গেছে। প্রাচীন গ্রিক ও
মিশরীয় ভৌগলিকদের বর্ণনায়
চট্টগ্রামের কিছু স্থানের উল্লেখ
পাওযা যায়। ইতিহাসবেত্তা ড.
নলিনীকান্ত ভট্টাচার্য
প্লিনিরপেরিপ্লাসের ক্রিসকে
চট্টগ্রামের দ্বীপ সন্দীপ হিসাবে
চিহ্নিত করেছেন। আবর ল্যাসেনতো
পেন্টাপোলিসকেই চট্টগ্রাম মনে
করেন। [১]
পালবংশের শাসনামলে আরব পর্যটক ও
ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরকে সমন্দর
নামে চিনতো বলে জানা যায়।
ধর্মপালের শাসনামলে চট্টগ্রাম তার
অধীনে ছিল। [২]
দ্বিতীয় সহস্রাব্দে
দশম ও একাদশ শতকে দক্ষিণ পূর্ববঙ্গে ও
আরাকানে চন্দ্ররাজারা ছিল
চট্টগ্রামের শাসক। আরাকানের
চন্দ্রবংশীয় রাজা সু-লা-তাইং-
সন্দয়া ৯৫৩ সালে বাংলা
অভিযানে বের হন। কিন্তু কোন এক
অজ্ঞাত কারণে তিনি চট্টগ্রাম
অতিক্রম না করে সীতাকুণ্ডে একটা
স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। এর
শিলালিপিতে লেখা হয় চেৎ-ত-
গৌঙ্গ যার অর্থ হলো 'যুদ্ধ করা অনুচিৎ'।
আরাকানী পুঁথি থেকে জানা যায়
এরপর থেকে এই এলাকার নাম হয়
চেত্তগৌং । কালক্রমে চেত্তগৌং
থেকে চাটিগ্রাম, চাটগাঁ , চট্টগ্রাম ,
চিটাগাং নামের উৎপত্তি। [৩]
চট্টগ্রামসহ দক্ষিণ পূর্ববঙ্গ রাজা
শ্রীচন্দ্রের শাসনেই থেকে যায়।
একাদশ শতকে দাক্ষিনাত্যের
দিগ্বিজয়ভ রাজা রাগন্দ্র চোল এ
অঞ্চল দখল করেন।
এর পরের ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক
বিতর্ক রয়েছে। তবে ঔ সময়ে
চট্টগ্রামের প্রধান ধর্ম ছিল বৌদ্ধ ধর্ম।
তিব্বতীয় পূথি অনুসারে সে সময়
চট্টগ্রামে পন্ডিত বিহার নামে
একটি বিখ্যাত বিহার ছিল।
মুসলিম শাসনামল
চন্দ্রবংশের পর লালবংশ এবং এরপর
কয়েকজন রাজার কথা কিছু
ঐতিহাসিক উল্লেখ করলেও
ঐতিহাসিক শিহাবুদ্দিন তালিশের
মতে ১৩৩৮ সালে সুলতান ফকরুদ্দিন
মোবারক শাহ-এর চট্টগ্রাম বিজয়ের
আগ পর্যন্ত ইতিহাস অস্পস্ট। এ বিজয়ের
ফলে চট্টগ্রাম স্বাধীন সোনারগাঁও
রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ইবনে বতুতার বিবরণীতে চট্টগ্রাম
সেসময়ে ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম
আসেন বিখ্যাত মুর পরিব্রাজক ইবনে
বতুতা । তিনি লিখেছেন
- “বাংলাদেশের যে শহরে আমরা
প্রবেশ করলাম তা হল সোদকাওয়াঙ
(চট্টগ্রাম)। এটি মহাসমূদ্রের তীরে
অবস্থিত একটি বিরাট শহর, এরই কাছে
গঙ্গা নদী- যেখানে হিন্দুরা তীর্থ
করেন এবং যমুনা নদী একসঙ্গে
মিলেছে এবং সেখান থেকে
প্রবাহিত হয়ে তারা সমুদ্রে পড়েছে।
গঙ্গা নদীর তীরে অসংখ্য জাহাজ
ছিল, সেইগুলি দিয়ে তারা
লখনৌতির লোকেদের সঙ্গে যুদ্ধ
করে। ...আমি সোদওয়াঙ ত্যাগ করে
কামরু (কামরূপ) পর্বতমালার দিকে
রওনা হলাম।” ১৩৫২-৫৩ সালে ফকরুদ্দীন
মোবারক শাহ এর পুত্র ইখতিয়ার উদ্দিন
গাজী শাহকে হত্যা করে বাংলার
প্রথম স্বাধীন সুলতান ইলিয়াস শাহ
বাংলার মসনদ দখল করলে চট্টগ্রামও
তার করতলগত হয়। তার সময়ে চট্টগ্রাম
বাংলা প্রধান বন্দর হিসাবে
প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর হিন্দুরাজা
গণেশ ও তার বংশধররা চট্টগ্রাম শাসন
করে। এরপরে বাংলায় হাবমী বংশ
প্রতিষ্ঠা হয়।