somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প | ১৩৩৩

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এখন কী নিয়ে লেখা যায়?
কবিতা?
কবিতা নিয়ে কী কথা লিখবো? আমি তো কবি নই।
কবিতা নিয়ে লিখবে সেজন্য কবি হওয়া তো জরুরী না।
তাহলে কী জরুরী?

নিজের সাথে কথোপকথন হঠাৎ থমকে গেল। কেও বেল টিপেছে। আমি খাতা কলম ফেলে দরোজা খুলতে উঠলাম।
স্বভাবের এ দিকটা খানিক স্বাভাবিক আমার। দরোজা খোলার আগে কে এসেছে ওপাশে জানতে চাই। এই মুহূর্তে গলা খানিক উচ্চমার্গ্যে তুলে জিজ্ঞেস করলাম- কে?
ওপাশ থেকে খুব নরম স্বরে কেউ জবাব দিল- আমি।
আমিটা কে ভাই?
ওপাশ থেকে সেই নরম স্বরের পুনরাবৃত্তি হল। আমি, আমি মিলু।

সামান্য ভাবনায় পড়লাম। মিলু? মিলু কে? এই নামের কাওকে কি চিনি? নাহ, মনে পড়ছেনা তো!
গলা চড়িয়েই বললাম, দুঃখিত ভাই। আপনাকে চিনতে পারছিনা। ভুল বাসায় এসেছেন।
ওপাশ থেকে সেই নরম স্বর এবার খানিকটা গম্ভির হল- আমি ভুল বাসায় আসিনি রতন।

অবাক হয়ে দরোজা খুললাম ।


শাদা খদ্দরের পাঞ্জাবী-পাজামা পরা লোকটাকে কি আমি চিনি? এত চেনা কেন লাগছে? এ মুহুর্তে আমার ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে লোকটি। হাতে চায়ের কাপ। ভেবে বসার কারণ নেই, আমি খুব অতিথিপরায়ন একজন মানুষ। অনাহূত অচেনা অতিথি ঘরে প্রবেশ করেই আমার সোফায় এসে বসেছেন। বিনয়ের তোয়াক্কা না করেই বলে উঠেছেন- আমায় চা খাওয়াতে পারেন এক কাপ?
চা ফ্লাস্কে ভরাই ছিল। এক কাপ ঢেলে তার হাতে দিতে আমার তেমন সমস্যা হয়নি।
তিনি ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছেন চায়ের কাপে। চোখের দৃষ্টি নিচের দিকে।

হঠাৎ চমকে উঠলাম। আমার সামনে যেই ব্যাক্তিটি বসা তাকে আমি চিনি! আশ্চর্য্য এও সম্ভব? আমি সারাদিনের বেশির ভাগ সময় যার জগতে ডুবে থাকি, আমার চেতনা জুড়ে যে মানুষটির সৃষ্টি নাড়া দিতে থাকে নিশিদিন!
জীবনানন্দ!


অবাক ভাবটা বেশিক্ষন থাকেনি। জীবনানন্দ আমার সামনে বসে আছেন, যেন এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তার চোখ দুটো আসলেই বড়ো গভীর। শোভনার চোখ কি এই চোখের চেয়ে বেশি সুন্দর ছিল? তিনি বলে উঠলেন- তুমি অবাক হলে নাকি রতন?
অবাক হয়েছি। এটা সম্ভব? আপনি আমার রুমে বসে আছেন!
জীবন বাবু বললেন এটা অসম্ভব না। অসম্ভব হলে আমি তোমার সামনে বসে আছি কিভাবে?
আচ্ছা, সেটাইতো।
আমি কেন এসেছি জানতে চাওনা?
হ্যাঁ, জানতে তো চাই। ইভেন আমি খানিক আগে কবিতা নিয়ে লিখতে বসেছিলাম। সেখানে নির্ঘাৎ আপনার কবিতার লাইনেরা ঢুকে পড়তো।
জীবনানন্দ বিমর্ষ কন্ঠে বললেন – আর কবিতা! ওসব আর আসেনা আজকাল।
কবিতা আসেনা? আপনার?
হুঁ। বাস্তবিক আসেনা।
বড়ো মানুষেরা হেঁয়ালি পছন্দ করেন। আমি তাই এড়িয়ে গিয়ে বললাম- আপনি বলতে চাইছিলেন, আমার কাছে কী একটা কাজে এসেছিলেন।
ও আচ্ছা, কী কারণে এসেছিলাম? তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুনা। তুমি তো কবিতা নিয়ে লিখতে চাচ্ছিলে। ধূসর পান্ডুলিপির একটা কবিতা আছেনা?
কোনটা?
১৩৩৩।
কবি সাহেব,ওটা আমার খুব প্রিয় কবিতা।
সেটা কথা না। বলছিলাম, কবিতাটা আমায় একটু শোনাবে? ২য় স্তবকটা?


জীবনানন্দ এসেছিলেন। চা খেয়ে আবার চলেও গেলেন। আবার কবিতা নিয়ে লিখতে বসেছি। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। মীরার ফোন। হঠাৎ কী মনে হল! আমি ফোনটা ধরলাম না। মীরা কেন আজও আমাকে ফোন করে!
আমি রাইটিং প্যাডের দিকে তাকালাম। কবিতা নিয়ে কিছু লেখা হয়নি সেখানে। লিখেছি ১৩৩৩।
আমারে চাওনা তুমি আজ আর জানি
তোমার শরীর ছানি
মিটায় পিপাসা
কে সে আজ!- আমি এই সমুদ্রের পারে
বসে আছি একা আজ- ঐ দূর নক্ষত্রের কাছে
আজ আর প্রশ্ন নাই- মাঝরাতে ঘুম লেগে আছে
চক্ষে তার- এলোমেলো রয়েছে আকাশ!


কাল আবার জীবনানন্দ আসবে,আমি জানি। মীরাও কি আবার ফোন করবে? ওর ফোনটা আমি আর কোনদিন ধরবোনা।
যে ভালবাসা ১৩৩৩ এ মিটে গেছে,আজ সে শুধুই ধুসর পান্ডুলিপি হয়ে থাক।


---------------
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×