somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পড়লাম 'জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা' - মুগ্ধ, অভিভুত, গর্বিত আমাদের পুর্বপুরুষদের জন্য

১৯ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা', বইটার নাম আগে অনেকবারই শুনেছিলাম। পড়া হয়ে উঠেনি। নিউমার্কেটে নাকের সামনে দেখে কিনলাম। বইটার নাম শুনে কেন জানি মনে হয়েছিল মোটাসোটা বই হবে। মাত্র ৯৩ পৃষ্ঠার বই। মোটামোটি এক নি:শ্বাসে শেষ করলাম। বইটা পড়ে আমি মুগ্ধ, অভিভুত, গর্বিত আমাদের পুর্বপুরুষদের জন্য, সেই সাথে লজ্জিত তাদের প্রাপ্যসম্মান না দেয়ার জন্য।

এইচবিওতে 'ব্যান্ড অব ব্রাদার' সিনেমার ট্রেইলারে বলত "কিছু সাধারন মানুষের কাহিনী, যারা দেশের জন্য অসাধারন কাজ করেছে।" বইটা পড়ে সেই কথাটাই মনে পড়ল। 'জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা' বইটা "আমাদের দেশের কিছু সাধারন মানুষের কাহিনী, যারা দেশের জন্য অসাধারন কাজ করেছে ১৯৭১ এ"।

কি বলা যায় বইটা সম্পর্কে? বইটা খেটে খাওয়া, সাধারন, নাম না জানা, অল্পশিক্ষিত নিচুতলার মানুষের দেশপ্রেম, সাহসিকতা আর ত্যাগের গল্প। সাহসের কস্টিপাথরে পরীক্ষিত, বুকের তাজা রক্তে প্রমান করা দেশপ্রেম। আমাদের পুর্বপুরুষদের যৌবনের গল্প। সাধারন মানুষের দেশের জন্য আসাধারন হয়ে ওঠার গল্প। আমাদের নাম না জানা ভুলে যাওয়া পুরুষদের, হাতের লাঙ্গল বা মাথার বোঝা নামিয়ে, অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার গল্প। তাদের জয়ী হবার গল্প। এবং সবশেষে তাদের পিছিয়ে পড়ার গল্প।

কি ঘটনা বলা আছে বইটাতে? মিরাজের মায়ের এসএমজি হাতে যুদ্ধ করার গল্প। নেত্রকোনার নাম না জানা মাঝব্য়সি মহিলা ও তার মেয়ের গল্প, যাদের ঘরে বর্ষার ঝড়ের রাতে, মাদুরে খাবার সাজানো থাকে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। শীর্নদেহ বোকাসোকা হরির গল্প, যে সদ্যমৃত সদ্যপ্রসুত স্ত্রী ও সদ্যমৃত শিশুকে ফেলে, আধাঘন্টা পরেই মুক্তিযোদ্ধাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় শ্রীমঙ্গল। মুরাদনগরের নাম না জানা বুড়ির গল্প, যে এম্বুশের মাঝে, শাড়িতে ঢেকে ভাপ উঠা গরম ভাত নিযে আসে । মাঠে নিয়ে লম্বা ছুরি দিয়ে জবাই করা নাম না জানা পন্চাশোর্ধ গহস্থের গল্প, যে কিছুতেই বুঝতে পারেনি, ''পোলাপাইন গুলারে চারটা ভাত খেতে দেয়া"র মধ্যে কি অন্যায় থাকতে পারে? কবর দেয়া পাকিস্তানিদের লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার গল্প, কোন জ্যান্ত বা মৃত পাকিস্তানি রাখবানা এই মাটিতে, এই সহজ যুক্তিতে। হাই এর গল্প, যে সতীর্থ এখলাসকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বুকপেতে নেয় শত্রুর রাইফেলের গুলি। যুদ্ধের মাঠে বিশালদেহী পাকিস্তানি সৈন্যের মধ্যযুগীয় দন্দ্বযুদ্ধের চ্যালেন্জ গ্রহন করা 'তাগড়া'র গল্প। (ভালোকথা, আমি বললাম গল্প, আর আপনি যেন মনে করেন না এগুলো বানানো গল্প। এগুলো সত্যি ঘটনা, আপনার এই মুহুর্তে এই লেখাটা পড়ার মতই সত্যি!)

কাদের কথা বলা হয়েচে বইটাতে? ভুরুঙ্গামারীর ইমান আলী, মাদারটেকের তৈয়র আলি, কোম্পানিগন্জের গনি, নাম ভুলে যাওয়া ছেলেটা, চাপিতলার অহিদ কেরানী, চম্পকনগরের তাজুল, মুকুন্দপুরের এলু, রাখাইন মেয়ে প্রিনছা, নৌকার মাঝি মোকছেদ। চিনলেন কি কাউকে? অবশ্য চেনারও কথা না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বইটা পড়ার কিছুক্ষন পরেই বইটার চরিত্রগুলোর নাম আপনার মনে থাকবে না, যেমন মধ্যবিত্তের মনে থাকে না রিকসাভাড়া দেয়ার পর রিকসাওয়ালার নাম, বা দুরে বেড়াতে যেয়ে হঠাৎ পরিচিত হওয়া কোন চরিত্রের নাম।

বইটার একদম শেষের লাইনটা পড়ে একটু চমকে উঠতে পারেন। ঐটুকুই। 'জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা' বইটা পড়ে দেখতে পারেন। ঘুরে আসতে পারেন ১৯৭১ থেকে। পরিচিত হতে পারেন কিছু অসাধারন চরিত্রের সাথে। তারপর নিশ্চিন্তে ভুলে যেতে পারেন। ভয় নেই, তামাটে চাষাভুষো সাধারন মানুষগুলো, শার্টপ্যান্ট পরা আপনাকে, কোনদিন জিজ্ঞেশ করতে আসবেনা, "আমাদের এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন কেন"?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ১০:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×