somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক বোতল মদের কাহিনী

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০ স্কয়ার ফিটের একটা রুম সামনে পিছনে বারান্দা ভিতরে ৪ টি সিঙ্গেল খাট, ২ টা সিলিং ফ্যান, ভিতরে ৩ টা আয়না, চারটি কম্পিউটার এবং সেই সাথে নানা প্রকার যন্ত্রপাতি। রুমের নাম মাট বাবার আস্তানা। কে যে কবে এই রুমের নাম মাটি বাবার আস্তানা করেছিল তা মুঘল সম্রাজ্যের ইতিহাসের মত কঠিন। অন্য রুমে যেখানে নিয়মিত ভাবে রুমমেট বদল হয় সেখানে মাটি বাবার আস্তানায় চার জন একসাথে ওঠে এবং নামার সময় চার জন এক সাথে নেমে যায়। নতুন একদল মানুষ মাটি বাবার আস্তানায় ওঠার সময় একদলা এটেল মাটি এনে মাটি বাবার রেখে যাওয়া নুহু নবীর আমলের মাটির সাথে মিশিয়ে রাখা হয়। এটাই নাকি নিয়ম, এছাড়া রুমে কোন তালা থাকবে না, সব সময় মানুষ থাকবে, গান বাজনা হবে, সাহিত্য চর্চা হবে আর ও কত কি। যা হোক এই রুমের পরিচয়।
রুমের স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে কেবল আলো পরিচিত সূর্যের সাথে অন্য তিনজন হল আবিদ, সুদীপ্ত ও সৌরভ। আলোর অনুরোধেই সূর্য ওর দলবল নিয়ে মাটি বাবার আস্তানায় এসেছে। সূর্যের সাথে আলোর রয়েছে জনম জনমের সম্পর্ক, সূর্যের থেকেই আলোর উৎপত্তি অন্তত পৃথিবীর জন্য। মর্ত্যলোকের সূর্য আর আলোর মধ্যকার সম্পর্ক যথেষ্ট শক্তিশালী আর তার ভিত্তি হল শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। আলো সুর্যের চেয়ে বছর খানেকের বড় তাতে কোন সমস্যা হয়নি। সূর্য মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে যে তার রুমের ও একটা নাম দরকার আর তা যত দ্রুত সম্ভব।

রুমের মধ্যে কে কাকে কি বলছে তা বুঝে ওঠাই দায় কারন ২০০ স্কয়ার ফিটের একটা রুম এর মাঝে ১৬ জন বসে আড্ডা দিচ্ছে কেউ বা গিটার বাজাচ্ছে কেউ তবলা এর সাথে যোগ হয়েছে দুইটা পার্সোনাল কম্পিউটার ও একটা সাবউফার, তাহলে বোঝ কি চলছে রুমের ভিতর। সোজা ভাষায় বললে নরক গুলজার হয়ে চলেছে রুমের মধ্যে। সবাই যে প্রকৃত অর্থে আড্ডা দিচ্ছিলো ব্যাপারটা এমন নয় কেউ মোবাইলে নিজের বন্ধুদের সাথে কথা বলছে কেউ ছবি আকছে ইত্যাদি। রুমের মধ্যে অক্সিজেন এর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান বেশি। এই হল রুমের পরিবেশ দম নেওয়ার জন্য দুটো খরগোশ হাসফাস করছে দেখে ট্যাংরা বললো মানুষ বাচে না সেখানে আবার খরগোশ। এই বলে খরগোশ দুটোকে রুমের বাইওরে রেখে এল। রুমের মধ্যে নানাবিধ আলোচনা চলছে সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে সাহিত্য কিছুই বাদ যাচ্ছে না তবে সব কিছু ছাপিয়ে যেটা মূখ্য হয়ে উঠেছে তা হল কিভাবে এক বোতল মদ এর ব্যবস্থা করা যায় এবং তার সাহায্যে সবাই মাতাল হতে পারে।

সমস্যার অন্ত নেই একে তো মাসের ৩০ তারিখ প্রায় সবার পকেট ফাকা এর মাঝে মানুষ প্রায় ১ কুড়ি এক বোতল মালে কিভাবে হবে এই চিন্তায় হারুন হাকশির অজ্ঞান হবার দশা। সূর্য বলল সিগারেট বিড়ি সাড়া মাস বাকিতে পাওয়া যায়, তিন বেলা খাওয়া হলের ক্যান্টিন বা ডাইনিং এ সেরে ফেলা যায় কিন্তু সুরা সে তো অন্য হিসাব এ তো বাকিতে পাওয়া যায় না। জ্ঞানী বলল কেউ কেন বলছে না যে এই ধর এই পাঁচশত তাকা দিলাম বাকিটা ম্যানেজ করে নে। সূর্য খিক খিক করে হেসে বলল পকেটে ৫ পয়সা নেই আবার পাঁচশ এর দান খেয়াল আছে আজ মাসের কয় দিন।

আলো বলল কি যে করি আচ্ছা একটু ভেবে নেই এই বলে একটা বাসি সিগারেট ধরিয়ে মনের সুখে টান দিতে শুরু করল । সিগারেটে টান দিতে দিতে আলো ওর গ্রামের বাড়ির কথা বলা শুরু করল, ও বলল এটা সইয়েদপুর হলে নিমিষে হাজার টাকা যোগাড় করে ফেলা ওর জন্য কোন ব্যাপার হত না। আসলে ব্যাপারটা তার থেকেও বেশি কিছু। সূর্য একবার ঘটনাক্রমে ওদের বাড়ি বেড়িয়ে এসেছিল তখন দেখেছিল যে এলাকার সবাই আলোকে এক নামে চেনে। সিগারেট এ শেষ টান দিয়ে আলো বলল আমরা না হয় ভিনদেশী খুলনায় থাকি দিন আনি দিন খাই টাইপের কিন্তু খুলনার যারা আছে তারা তো অন্তত দুই টাকা দিতে পারে , আর যদি না দেয় তাহলে ওরা এখন চলে যাক বা আগামী তিন দিন আমাদের ৫ জন কে দুই বেলা করে দাওয়াত খাওয়াক। ব্যাপারটা খুব সোজা মনে হলেও ব্যাপারটা কিন্তু অত সোজা ছিল না কেননা অভিজ্ঞতা বলে স্থানীয় পোলাপানরা হলের ছেলেপেলেদের থেকেও কিপটে। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে যাবে। সূর্যদের কিছু বন্ধু আছে যারা সকালের বাসে আসে আবার বিকালের বাসে চলে যায়। কোন ভাবেই বাস মিস করা যাবে না কেননা তাহলে বাড়ি যেতে হলে রিকোশা ভাড়া দিতে হবে। ওরা দুপুরে এর থেকে এক প্লেট ভাত ওর থেকে একটু ভাজি এবং তার থেকে একটু গরু বা মুরগির মাংসের ঝোল চেয়ে খেয়ে পার করে দেবে। আর যারা সিগারেট খাই তারা অপেক্ষা করে কখন কেউ সিগারেট ধরাবে। যেই কেউ সিগারেট ধরাই আরা সাথে সাথে সিগারেট চেয়ে খেয়ে নেবে এভাবে দিনে ওরা ১০ টা সিগারেট খেয়ে নেবে বিনে পয়সায় আর রাতে যদি থেকে যায় তাহলে কোন না কোন বন্ধুর অতিথি হয়ে থেকে যাবে ।

অবশ্য এর বিপরীত ও আছে যারা সামর্থ্যের অতিরিক্ত খরচ করে গেছে প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত, এক্ষেত্রে খোকার নাম উল্লেখযোগ্য। এই যখন অবস্থা সেখানে খুলনার থেকে ২পাওয়াও যে কঠিন ব্যাপার সেটা কেউ না বুঝুক সূর্য ঠিকই বুঝে গিয়েছিল। যা হোক এভাবে ঘন্টাখানেক যাবার পর যখন কেউ ১ পয়সার কথা বলল না তখন সিগারেট শেষ করে রুম থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে গেল। আলো কয়েকবার পিছন থেকে বলল এই যাস না একটা ব্যবস্থা নিশ্চয় হবে। জ্ঞানী ভাল করে জানে যে কোন কাজ হবে না এই জন্য চুপচাপ করে বসে থাকল। বন্ধুরা জানে যে বাইরে যেয়ে ও আসলে এখন কাউকে পাবে না কারন আড্ডাবাজরা এখন সব রুমে বসে আছে ।

বাইরে যেয়ে দোকানে বসে সিগারেট আর চা খেতে খেতে বলল আচ্ছা মমিন ভাই বাংলা মালে কি আসলে নেশা হয় না মনের খোরাক মেটে। মমিন ভাই সোজা সরল মানুষ হলের গেটের বাইরে ছোট্ট দোকান এরকম গোটা বিশেক দোকান আছে পাশাপাশি কিন্তু মমিন ভাইয়ের ভুবন ভোলানো হাসির কারনে দোকানে ভীড় লেগেই থাকে। ২৪ ঘন্টা সার্ভিস যাকে বলে আর কি? বিশ্বাস হল না, না হবার ই ব্যাপার । দোকানে আসলে কোন ঝাপ নেই মানে বন্ধ করার দরজা নেই । মমিন ভাই চলে গেলে, ভাবী আসে, ভাবী চলে গেলে বাচ্চা কাচ্চা আসে দোকান চলেই। ছেলেদের খাতা খোলা আছে যার যার মতো খেয়ে লিখে চলে যাচ্ছে , কেউবা নগত দিয়ে বাকির পরিমান কমিয়ে রাখছে, কেউ বা দুই টাকা কম লিখছে । মমিন ভাই আজব মানুষ তার কথা হল কম লিখলে আপনে দায়ী হবেন আমি না, আমি না হয় দুই টাকা লস করব। মমিন ভাই সূর্যের প্রশ্নের উত্তরে বলল ভাই নেশা হয় মনে, নেশা হয় পরানের মধ্যে গহীনে। কি করে বোঝামু আপনেরে এই ধরেন আপনি এক দলা মাটি খেয়ে মনে করলেন দামী ওষুধ খেয়ে ফেলেছেন বা এক গ্লাস শরবত খেলেন আর মনে করলেন মদ খেয়ে নিলেন এর পর নেশায় পড়ে গেলেন। মমিন ভাইয়ের কথা শুনে সূর্য বলল ভাই বুঝেছি নেশা মনে বোতল উৎসাহ মাত্র।

সূর্য সব সময় কিছু ব্যাকআপ রেখে দেয় এটা ওর ছোট বেলার অভ্যাস। ১০০ টাকা খরচের জন্য থাকলে ১০ টাকা আগেই কোন এক চিপায় লুকিয়ে রাখে। বাইরে এসেছে ঘন্টা খানেক পার হয়েছে মোবাইলে অসংখ্য মিস কল প্রতিটা মিস কলের উত্তরে একটা করে মেসেজ লিখে মমিন ভাইয়ের দোকান ছেড়ে এক হাটতে বের হল। কিছুক্ষন হাটার পর ঘড়িতে সময় দেখল সন্ধ্যা ৬ বেজে ৪৫ মিনিট। আলোকে মোবাইলে বলল তুই রুমে থাক আমি আসছি। আলোর রুমে ঢুকে সূর্য হতাশ হল। ও ভেবেছিল রুমে মানুষের ভীড় হয়ত একটু কমবে কিন্তু এসে দেখে আগেও ১৬ জন ছিল এখন রুমের মধ্যে ১৫ জন মানে যা তাই। বিনে পয়সায় এক পেগ খাবার লোভ আসলে কেউ ছাড়তে চাইছে না সে যত দেরী হোক বা যত মান-অপমান কথা বলা হোক না কেন। কিছু মানুষ আছে যাদের মান আকাশ সমান এক আধটু অপমান করলে তাদের কিছু হয় না। সূর্য ভনিতা না করে বলল আমি ৫০০ টাকা দেব কেউ দিলেও ভাল না দিলেও ভাল আজ আলোর দাওয়াতে ওর রুমে এসেছি দাওয়াতের মুখ রাখা বড় ব্যাপার। সূর্যের কথা শেষ হতে আলো ১০০ টাকা দিয়ে বলল মামা একডা লহ আমার কাছে আর নেই । জ্ঞানী, খোকা, ট্যাংরা ৫০ টাকা করে দিল বাকিরা মুখ বুঝে থাকল যদিও পকেট চেক করলে নূন্যতম ৫০০ টাকা করে পাওয়া যাবে। সর্বমোট ৭৫০ টাকা তুলতে পারল সূর্য। এই টাকায় কিছু হবে কিনা কে যানে তবে সূর্য যেখানে দায়িত্ব নিয়েছে সেখানে কিছু একটা হবে বলে সবার বিশ্বাস। সূর্য রুমের বাইরে চলে আসার পর রুমের মধ্যে থাকা তরু, সবুজ, কায়সার, হাসিব সহ খুলনার পোলাপানরা আলোকে বলল দেখ সূর্য কিন্তু কজটা খুব খারাপ করল। আমাদের এভাবে অপমান না করলেও পারত তাছাড়া আমরা আজ বেড়াতে এসেছি টাকা দেব কেন। আলো বলল তাহলে আড্ডা শেষ সবাই বের হই তাহলে। এই কথা শুনে সবুজ সহ বাকিরা খেকিয়ে উঠে বলল এত অপমান করে গেল দেখি কি মাল আনেন তিনি ভাল করে বললেই তো টাকা দিয়ে দিতাম। ওদের কথা শুনে আলো, জ্ঞানী, খোকা কোন উত্তর দিল না। আলো কেবল বলল আসলেই সূর্য খুব খারাপ করেছে তোরা বস মাল খেয়েয় যাবি আর মনে মনে বলছে শালা ছোটলোকের দল সব।

এদিকে সময় গড়িয়ে রাত আট টা বাজল সবাই রুমে বসে তাস খেলছে কয়েকজন বাদে সবাই যেয়ে জাম্পেশ খেয়ে দেয়ে এসেছে খাসী মুরগি আর কোক দিয়ে। সূর্য রুম থেকে বের হয়ে সোজা রেল স্টেশন এ এসে হাজির, এর পর কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে চলে গেল সোনাডাংগা বাস টার্মিনাল। বাস টার্মিনালে এসে পরিচিত কাউন্টার থেকে ৫০০ টাকা ধার নিয়ে আবার রেল স্টেশনে ফিরে এল। রাত নয় টার দিকে এক দালালকে পেল যে মদ বিক্রি এর সাথে জড়িত এবং অনেক আগে থেকেই ক্যম্পাসে বোতল সাপ্লাই দিয়ে থাকে সূর্য অবশ্য এবার ই প্রথম টুনু ভাইকে কাজে লাগাচ্ছে। টুনু ভাই এক শত টাকা চার্জ নিয়ে নিল আগেই এর পর এ গলি সে গলি ঘুরিয়ে বিশ ত্রিশ মিনিট পার করে বলল ভাইজান আজ শুক্রবার বন্ধের দিন ফরেন মাল পাইবেন না আবার দেশী কেরু ও শ্যাষ ওহন বাংলা মদ ই ভরসা। এই কথা শোনা মাত্র সূর্য বলে দিল বাড়া আগে কইবেন না আছে কই বোতল ঝাইড়া কাশেন। সূর্য দ্রুত টুনু মিয়ার সাথে ময়নার মার ঠেকে গিয়ে বলল ময়নার মা কয় বোতল আছে? ময়নার মা বলল রাত নয়টা বাজে ওহন দেহি খাড়ান মিয়া বাই। ময়নার মা ভাড়ার ঘর থেকে এসে বলল মামা ৪ লিটার আছে দুই তিন জনের দারুন হইব বহেন আমি ঝাপ আটকাইয়া দেই আপনেরা কাম শেষ করেন। মাইয়া লাগবো কিনা ড্যান্স করনের জন্য বইলেন আমার হাতে ব্যবস্থা আছে। সূর্য বুঝল বেশি ক্ষন থাকলে খবর আছে এর মাঝে ও নিজেই তিন গ্লাস খেয়ে ফেলেছে এখন ওর চোখে ময়নার মা কেও দারুন লাগছে। নিজেকে দ্রুত সামলে নিল। টুনু মিয়াকে একটা অটো আনতে বলে আলোকে ফোন দিয়ে বলল এই শালার পো রুমে কয়জন আছে আর গ্লাস ঘটি বাটি আছে? চানাচুর মুড়ি না থকলে ব্যবস্থা কর পারলে সবজি আর গরুর চাপের ব্যবস্থা কর।

সুর্যের ফোন এর খবর রুমে যেতেই সবাই চাঙ্গা হয়ে গেল। পোলাপান যে যার মত বাইরে যেয়ে সিগারেট কিনে নিয়ে আসল। জ্ঞানী আর খোকা ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারল না কিভাবে এত আয়োজন করছে শালার পো এই সামান্য টাকায়। যা হোক ওরা ভেবে সিদ্ধান্ত নিল যে মালই আনুক অল্প খেতে হবে ফ্রি পেয়ে বেশি খেয়ে বিপদে পড়া চলবে নর কারন আজ সারাদিন সূর্যের মেজাজ খুব খারাপ দেখেছে তাই যখন মালের আয়োজন করছে একার মত করে তখন বেশি খাওয়ার চিন্তা করার মানে হয় না। খুলনার বন্ধুরা এবং কিপটার বাপ মা রা ভেবেছে আমরা মুফতে খেয়ে যাব দু চারটা সিগারেট খরচ এ এমন আর কি।

সূর্য দুই লিটারের দুটা পেপসির বোতল কিনে পেপসি টুনু মিয়াকে দিয়ে বোতল খালি করে বাংলা মদ পেপসির বোতলের মধ্যে ভরে ক্যাম্পাসের মধ্যে নিয়ে এসে ওর নিজের রুমের মধ্যে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল। মনের মাধুরী মিশিয়ে দশ বারোটা ঘুমের ঔষুধ পিষে নিল এর পর আধা আধি ভাগ করে দুই বোতলে ভরে ঝাকিয়ে মিশিয়ে নিল। কাজ এখনো শেষ হয়নি একটা সিগারেট টানতে টানতে মাটি বাবার আস্তানায় যেয়ে বলল সবাই খুব সুশৃঙ্খল ভাবে বসে হাতে কাপ নিয়ে বসে থাক আমি আসছি, আমরা মোট ষোল জন চার লিটার ইন্ডিয়ান মদ মানে ষোল পোয়া মদ এক এক জনের ভাগে এক পোয়া মানে পুরা এক গ্লাস করে। কারো কম পড়ার সুযোগ নেই আর সবাইকে পুরো এক গ্লাস করে খেতে হবে ফেলে নষ্ট করা চলবে না কারন আমার আট্টাশো টাকা খরচ হয়ে গেছে এপর্যন্ত। সবাই এক বাক্যে সব কিছু মেনে নিয়ে রুম গোছাতে লেগে গেল।

সূর্য নিচে এসে চার টা ভ্যানিলা আইসক্রীম, দুইটা সফেদা কিনে রুমে ফিরেই সফেদা রস করে দুই বোতলে দেওয়া মাত্রই বাংলা মদের কটু গন্ধ কোথায় চলে গেল তার ইয়াত্তা নেই এর পর দুইটা করে ভ্যানিলা দুই বোতলে মিশিয়ে ঝাকিয়ে নিল এর পর নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে কি তৈরি হয়েছে। মাটি বাবার আস্তানায় এসে সূর্য দেখল সবাই বাবু সেজে বসে আছে রুমে কোন শব্দ নেই পিন পতন নীরাবতা, এক ফোটা ময়লা নেই সিগারেটের মোথা পড়ে নেই কোথাও, এসব দেখে ও মনে মনে ভাবল কি জাদু মদেরে বাবা সবাই কাঁত। বোতলের মুখ খুললেই মিষ্টি একটা গন্ধ বের হয়ে সকলের নাক জুড়িয়ে দিল। পনের বছর ধরে নিয়মিত মদখোর পর্যন্ত বলে ফেললো এমন সুন্দর মিষ্টি গন্ধোয়ালা মদ পাইনি এখনো। আলো রুমে ঢুকলো ওর স্পেশাল সবজি ও বরফ কুচি নিয়ে। সূর্য সবাইকে হাফ গ্লাস করে দিয়ে দিল সাথে বরফ কুচি সবাই ধীরে ধীরে শেষ করল। এর পর এক প্রস্থ করে সিগারেট হয়ে গেল সাথে সজি চলল দুই কিস্তি করে। রুমের দাওয়াতিদের অবস্থা ছিল দেখার মত। ঘুমের ট্যাবলেট/ সফেদা/ ভ্যানিলা ফ্লেভারের বাংলা মদ সাথে কুষ্টিয়ার সবজি খেয়ে চোখ বড় বড় লাল হয়ে বের হয়ে আসার যোগাড়। ঘুমের ভারে মাথা ঘুরছে সবার এখনো হাফ গ্লাসা করে বাকি সবার। অনেকেই আর হাফ গ্লাস করে নিতে চাচ্ছে না কিন্তু সূর্য নাছোড় বান্দা সবাইকে নিতেই হবে। সূর্য কিন্তু চোখের আড়ালে মদ চালান করে দিয়েছে অন্যখানে। সব্জিতে সূর্যের না নেই তাই ও সব কিছু উপভোজ করছে। জ্ঞানী বলল আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা বুঝতে পারছি তা হল সূর্য কে কেন্দ্র করে বাকি সব নক্ষত্র ঘুরে চলেছে হা হা হা হা । সুর্য বলল মামা আর এক পেগ নাও জ্ঞানী বলল অনেক হয়েছে বাপ তুই নে আমি আর খোকা যেটুকু খাব না সেটুকু ওদের কে দিয়ে দেব। আলো নতুন করে সবাইকে বরফ দিয়ে গ্লাস প্রস্তুত করে মদ ঢেলে দিল কেউ কেউ উগরে ফেলে দিল কেউবা কষ্ট করে খেয়ে ফেললো। জ্ঞানী, খোকা আর ওর সাগরেদ কে নিয়ে সূর্য মুক্তবলাকাতে মানে ওদের নিজের রুমে তখন ভর চারটা। রুমে ফিরেই আগে থেকে রেখে দেওয়া তেতুলের আচার সবাইকে খাইয়ে দিল এতে করে ওদের নেশা ও ঘুমের রেশ কিছুটা কাটলে সবাই মিলে গোসল করে এসে ফ্রেস হয়ে সিগারেট ধরালো এর পর সূর্য আসল ঘটনা খুলে বলল। জ্ঞানী, খোকা ও সিমরান আসল কথা জানার পর বলল তাইতো কই নেশার চেয়ে ঘুমের ধমক যেন বেশি ছিল তাইতো কই আমাদের মিয়া ভাই কেন এত আদর করে খাওয়ালো

মাটিবাবার দাওয়াতিরা সহ আলোদের ঘুম ভাংলো শনিবার সন্ধ্যায় বলতে গেলে ওরা টানা আঠারো ঘন্টা ঘুমিয়েছে। সবাই পরে উঠে এক কথা শালা কি মাল খেলাম যে খাওয়ার সাথে সাথেই নেই হয়ে গেলাম বাবারে বাবা এমন মিষ্টি রাগী মাল বাপের জন্মে খাইনি।
আলো অবশ্য অনেক দিন পর জেনেছিল ঘটনা মজার ব্যাপার হল এ ঘটনা জানার পর আলো বলেছিল মামা মিক্সারটা কিন্তু দারুন ছিল ফর্মুলা টা দে বানাই খাই। এ ঘটনার পর কিছুদিন সূর্যের নাম ফর্মূলা সূর্য হয়ে গিয়েছিল।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১২
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×