somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূর্য ও ক্রিকেট ম্যানেজারের আদ্যোপ্যান্ত

২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর আজ নাহি কেউ পাবে পার, নিজের বানানো একটা লাইন বেসুরো গলায় গেয়ে চলেছে সূর্য। কি আর করবে ঘুম থেকে উঠেই চোখ বন্ধ করে টয়লেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া মাত্রই ভিজে কাক হয়ে গেছে। এখন দুপুর গড়িয়ে যাবার অবস্থা বর্ষা কমার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। বর্ষার আকাশের কোন একটা জায়গায় ছিদ্র হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে সূর্যের। জ্ঞানীকে উদ্দেশ্য করে সূর্য বলল মামা দূরবীনটা নিয়ে একটু দেখবা কোন জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। জ্ঞানী ও এক নালা ভাঙ্গা আর্মি দূরবীনটা নিয়ে বলল আকাশের উপরে বন্যা হয়ে গেছে তাই বরুন দেব স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে বলে হাতের মহাভারত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল থামবেনারে আজ আর থামবে না। এদিকে নিচে গেস্টরুমে ফুটবল ও ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় মানে কমন সেটের মত ব্যাপার যারা ক্রিকেট খেলে তাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ফুটবল খেলে আবার যারা ফুটবলার তাদের মাঝেও কিছু ক্রিকেটার আছে। অন্য কোন দেশ এর বিশ্ববিদ্যালয় হলে ফুটবল ক্রিকেট দলের সদস্যরা আলাদা আলাদা হত কিন্তু বাংলাদেশে একটু অন্যরকম দেখা যায়।
সূর্য একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে বলল ইন্টারনেটে খোজ নিয়ে দেখলাম ২০০৮ সালের ৫ মে বৃষ্টি হবে বলে কোন পুর্বাভাস আছে কিনা। জ্ঞানী বলল তা কি পেলে মামা, এই কথা শুনে সূর্য বলল লেখা আছে বরুন দেব স্লুইস গেট খুলে দিয়ে ইন্দ্রের পার্টিতে যেয়ে মাতাল হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এই কথা শুনে দাদা বলল আচ্ছা সব দোষ বুঝি বরুনের অন্য কোন ধর্মের দেবতা বুঝি নেই?
জ্ঞানীর মোবাইলে কল এল নিচে যেতে হবে। সূর্যের খুব একটা ইচ্ছা নেই অন্তত এবারের ক্রিকেটে এবং ফুটবলে এর মানে এই নয় সূর্যের খেলাধূলায় আগ্রহ নেই। টিভিতে বসে লা লীগা, ইংলিশ লীগ, সিরিয়ে, সব কিছু ওর দেখা চাই সমান অবস্থা ক্রিকেট লনটেনিস বাস্কেটবলে। ওদের বিভাগের একটা দূর্নাম আছে আর তা হল ওরা সহজ সহজ ম্যাচে তো হেরে যায় এবং এ পর্যন্ত ফাইনাল তো দূরের কথা গ্রুপ পর্বের বাধাই পার হতে পারেনি। গতবার ও চেয়ে চেয়ে দেখেছিল কিভাবে ওদের দল শেষ ওভারে দুই রান তুলতে পারেনি। ফুটবলের অবস্থা তো আরো লেজেগোবরে মাঠে নামে ষাড়ের মত এক একটা পান্ডা কিন্তু না আছে কোন টেননিক না আছে বলের নিয়ন্ত্রন করার দক্ষতা। এই তো মাত্র শেষ হওয়া ইন্টারডিসিপ্লিন ফুটবল কাপের গ্রুপ পর্বের তিন নম্বর ম্যাচে দলের সবাই মাথা পিছু সবাই এক গোল করে খেয়েছিল।
এসব দেখে সূর্য মনে মনে ভেবে রেখেছিল যদি দলের আর বিভাগের দুর্নাম ঘোচাতে হয় তাহলে ওকেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং খেলোয়াড়ের ধরন খোল নলচে বদলে ফেলতে হবে। ভাল খেলোয়াড় যে নেই তা নয় প্রকটিস এর সময় ও অনেক ভাল খেলোয়াড় দেখেছে কিন্তু ওই যে তেল মালিশ আর চাটুকারিতা সবখানে বর্তমান। আউল বাউল ম্যানেজার আর সিনিয়রদের যারা ম্যানেজ করে তারাই খেলোয়াড় সেজে মাঠে নামে আর বিশ্রী এক একটা কাজ করে উঠে আসে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ও চেয়েছিল এবার দলের ম্যানেজার হতে। ম্যানেজার হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার কারন সেখানে টাকা পয়সার একটা হিসাবে নিকাশ আছে। যে ব্যক্তি দলের ম্যানেজার হয় সে বিভাগ থেকে বেশ ভাল রকমের একটা অংক পাই এছাড়া সিনিয়ররা খেলাধুলার মৌসুমে অনুদান দিয়ে থাকে মোট কথা পয়সা পাতির ছড়াছড়ি আছে বলে অনেক মানুষ এই পদ নিতে উঠে পড়ে লাগে। সূর্যের সব থেকে বড় যোগ্যতা হল ওর হার না মানা মনোভাব সেই সাথে সততা। এমন অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে যেখানে কাজ করতে যেয়ে নিজের পকেটের টাকা চলে গেছে কিন্তু ও অনুষ্ঠান সফল করে তুলেছে।

ম্যানেজার পদের জন্য মানুষ বাছাই করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। সূর্য আবেদন করেছিল সবার আগে। মোট প্রার্থী হয়েছিল পনের জন এর মাঝে গত দুই বার এর হারা ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার, সাবেক খেলোয়াড়, সাবেক কোচ এবং ওদের সিনিয়র ব্যাচের কিছু ছেলে মেয়ে। সূর্য একটা প্যানেল করে প্রচারনা চালিয়েছিল। কিন্তু ওর মুখে চুনকালি দিয়ে ওর উপরের ব্যাচের এক বড় ভাই হয়ে গেল ম্যানেজার। সূর্য হাতে গোনা দুই তিন জনের সমর্থন পেয়েছিল। জ্ঞানী স্বান্তনা দিয়ে বলেছিল শোন যেখানে জ্ঞানের মূল্য নেই সেখানে ভাল কিছু করা চাঁদে যাবার চেয়ে কঠিন। যদি বদলাতে চাস তাহলে বাইরে থেকে প্রচন্ড্র ধাক্কা দে দেখবি কাঠামো হুড়মুড় করে সব ভেঙ্গে পড়বে কেউ না থাকলে আমি থাকব তোর পাশে। এটা ছিল সূর্যের অন্যতম পরাজয়। কিন্তু জ্ঞানীকে বাদ দিয়ে বর্তমান ম্যানেজার কামাল কিছু করতে চাই না। বয়সে ও ক্লাসে বড় হলেও কামাল জ্ঞানীকে কেন যেন ভয় পাই। আর সূর্য গায়ে কাদামাটি মেখে মানে সকল অপমান লুকিয়ে মিটিং সিটিং এ উপস্থিত হয়।
বর্ষা সমান গতিতে বর্ষিত হয়ে চলেছে জ্ঞানী সূর্য কে বলল মামা চল না একটু যাস বসে থাকিস নাটক দেখিস আর ভাল না লাগলে একটা বিড়ি ধরিয়ে টানিস। সারাদিন বর্ষাতে রুমে বসে থেকে উত্তম একটা প্রস্তাব পেয়ে ও বের হল। গেস্ট রুমে যেয়ে দেখে ম্যানেজার কামাইল্যা সবাই কে জ্ঞান দিয়ে উল্টিয়ে দিচ্ছে যদিও সে নিজে একজন জ্ঞানপাপী। এই কামাইল্যার টাকা পয়সা লেনদেনের হাত খুব খারাপ এটা সবাই জানে তারপরও বেশ কিছু সংখ্যক সিনিয়র ও জুনিয়র কাম্যাইলার যুক্তিহীন কথাই সায় দিয়ে যাচ্ছে। ম্যানেজার বলল সবাইকে প্রমান করতে হবে যে সবাই খেলার প্রতি নিবেদিত ঝড় জল যাই আসুন না কেন প্রাকটিস চলবেই। সূর্য মনে মনে বলল এ যেন আমাদের সংগ্রাম চলবেই চলবে। দুই এক জন প্রতিবাদ করে বলল এই বৃষ্টিতে কি কেউ মাঠে নামে। একথা শোনা মাত্র কামাল বলল দরকরা নেই এমন খেলোয়াড়ের যারা ম্যানেজারের উপর কথা বলে। অগত্য কিছু সংখ্যক ছেলে পিলে মাঠে নেমে গেল কামাল গেল রেইনকোর্ট পরে। হাস্যকরভাবে হাটু কাদা জলের মাঝে ক্যাচ প্যাকটিস করছে কামালের সেনাবাহিনী। কিছু উৎসাহী উঠতি খেলোয়াড় চোখে চশমা দিয়ে ক্যাচ ধরছে কিন্তু বিপত্তি বাধল অন্য জায়গায় একটা বল উঠে গেছে উপরে সেই বলের দিকে তাকিয়ে থাকতে যেয়ে আর চশমা মুছতে যেয়ে বল আর হাতে না পড়ে সোজা হিমাদ্রি নামের এক ওপেনারের নাকে এসে পড়ল আকাশে বাজ পড়ার শব্দের সাথে হিমাদ্রির গগন বিদারী চিৎকার পাত্তাই পেল না। সেদিনের মত প্রকটিস সেশন নামের গোয়ার্তুমির পালা শেষ হল। সন্ধ্যার কিছু আগে দিয়ে বর্ষা বন্ধ হল। চারিদিকে ব্যাঙের ডাক আর মানুষের পায়ের পচ পচ শব্দ চায়ের দোকানে উপচে পড়া ভিড় কেউ কেউ পারলে সারা দিনের চায়ের খোরাক মিটাতে যেয়ে একবসাতেই চার পাচ কাপ চা আর তিন চারটে করে সিগারেট মেরে দিচ্ছে। দাদা হচ্ছে সূর্যের বন্ধুদের মধ্য থেকে সব থেকে বিচক্ষণ ব্যক্তি। সূর্য কে বলল বন্ধু দেখ কিছু মানুষ আছে যারা উছলত খোজে কারনে অকারনে উছলত খুজে বের করে। সূর্যের কানে হঠাৎ ভেসে এল কামালের গলা মোবাইল ফোনে কোন এক বড় ভাইকে ফোন করে বলছে ভাই যা আছে তা দিয়ে প্রকটিস করা যায় না ব্যাট পচে গেছে প্যাডের ফিতা ছিড়ে গেছে হেলমেটের ভিতরে গন্ধ, গ্লাভস ছেড়া। কামাল বলে গেল ভাই আপনারা বড় ভাইয়েরা যদি এবারের খেলা উপলক্ষে যদি হাজার ত্রিশেক টাকার ব্যাবস্থা করে দেন তাহলে আমরা পেরে যায়। সূর্য সাথে সাথে বলল দাদা এজন্যই কামাল আজ বৃষ্টিতে সবাইকে নিয়ে খেলতে নেমেছিল। পানিতে ভিজে গত বছরের ক্রিকেট সারঞ্জাম যেগুলো অর্ধেক ভাল ছিল সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে নতুন কেনাকাটা মানে অনেক টাকা খরচ আর টাকা খরচ মানে পকেট ভারী হওয়া। দাদা আর সূর্য হো হো করে হেসে উঠে বলল কামাল ভাই তুমি তো কামাল করে দিলে কামাল কিছু না বুঝে থো তো মো তো খেয়ে বলল কিছু খাবি নে নে শরবত খা, মিষ্টি খা, চা খা। দাদ বলল তুমি অনেকদিন খাও না এখন তুমিই খাও ভাই আমরা খাব না। কামাল ভুতের মত মুখ করে তাকিয়ে থাকল। আরেফিন, ইরান, আংকেল, তোহা, জ্ঞানী, সানাউল এসে কামালের পাশে দাঁড়িয়ে বলল ভাই হিমাদ্রির নাক গেছে তবে আজ কিন্তু দারুন প্রাকটিস হয়েছে এখন চলো আমাদের নাস্তা করাও। ওরা হল কামালের আগামী স্কোয়াডের ক্রিকেটার। আরেফিন, ইরান আংকেল সূর্যের ব্যাচের তোহা ও সানাউল ওদের এক ব্যাচ উপরের। জ্ঞানী শরীর ফিটা রাখার জন্য প্রাকটিস করে। পাঁচ ফিট চার ইঞ্চি লম্বা ষাট কেজির ও কম ওজন সে আবার ডায়েট করে, ব্যায়াম করে, সাথে খেলাধুলা তো আছেই।
সূর্যকে ওর জুনিয়র মানে সার্বক্ষনিক সাগরেদ হবিট এসে খবর দিল ভাই টাকা পয়সা যা আসবে তা কামালের একার পেটে যাবে না। সিনিয়র খেলোয়াড সহ অনান্যরা ভাগ পাবে। হবিট বলল ভাই এমন কিছু করেন যাতে ঐতিহাসিক মজাও লুটে নেওয়া যায় আবার আমাদের অপমানের একটা বদলা নেওয়া যায়। কিছুদিন পর আকাশ ভাল হলে ম্যানেজার তার দল নিয়ে মাঠে নেমে পড়ল। প্রাকটিসের থেকে গালগল্প আর তেলবাজিই বেশি হতে লাগল। আরেফিন গত দুবছরে পাঁচটা সিরিজে বিশ রান তুলেছে কিনা সন্দেহ আর এর মধ্যে হিট উইকেট দু বার, স্লিপে ক্যাচ একবার বাকি দুবার বোল্ড হয়েছে। ইরান ও কম যায় না চার ম্যাচে তের রান তিনবার বোল্ড ও এক বার রান আউট। তোহা আর সানাউল ও একই অবস্থা। এই হল টপ অর্ডারের নামকরা সব ব্যাটসমানদের ক্যারিয়ার এর সারাংশ। ব্যতিক্রম হল হিমাদ্রি সে যদি দু অভার টিকে যায় তাহলে বুঝতে হবে অন্তত পঞ্চাশ করে আসবে সর্বশেষ তিন ম্যাচের গড় রান পয়ষট্টি। হিমাদ্রি সহ আর দুই তিন জনের উপর ভর করে দল এক দেড়শ রান করে থাকে। সূর্যের কানে এখবর এল এবার নাকি আনফিট এর কথা বলে হিমাদ্রি এর জায়গায় এক বুড়ো ঘোড়াকে জায়গা দেওয়ার তালে আছে কিছু মানুষ।
হবিট নিজেও ক্রিকেট টিম এর সদস্য সে ইউকেট কিপিং এর সাথে সাথে ভাল ব্যাটসম্যান। ওর মুখে পুরো স্কোয়াড এর এর খবর শুনে খুব হতাশ হল। হবিট বলল ভাই আমি এবার খেলছিনা আমি আনফিট অন্তত লজ্জাজনক হারের ইতিহাস আর হতে চাই না। হবিট আরো বলল ভাই ব্যাটিংয়ে না হয় কিছুটা জায়গা আছে কিন্তু বোলিংয়ে পুরাই গেছে যাদের স্টাইক বোলার হিসাবে নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে দুজনের ওভার শেষ করতে প্রতিনিয়ত তিন চারটা বল বেশি লাগে লাইন লেংথ এর কথা না হয় দূরে রাখলে, এক মাত্র সজীব আর রহমত এর হিসাব আলাদা, মান সন্মান কিছু বাচলে এদের কারনেই বাচে ,আনে পুরো ম্যাচে এক দুইটা উইকেট এরাই পাই নিয়মিত আর স্টাইক বোলাররা যে দুই এক জন কে আউট করে তারা আসলে ভুল করে আউট হয়ে যায়।
হবিট আর সূর্য চিন্তা করে দেখল ওরা আসলে ক্ষমতাহীন তাই ওদের কথা কেউ শুনবে না তাই ওরা সরাসরি ম্যানেজারের সাথে কথা বলবে সেই সাথে কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়ের সাথে যাতে অন্তত শোচনীয় লজ্জাস্কর সব পরাজয় এড়ানো যায়। এদিকে ম্যানেনেজার কামাল ও আরেফিন মিলে নতুন ক্রিকেট সেট কিনে নিয়ে এসেছে যদিও মানের দিক থেকে গতবারের চেয়ে খারাপ। খেলা মানে টাকা পয়সা চুরি চামারি ছাড়া যে কিছু নয় সেটা এরা এবার প্রমান করেই ছাড়বে মনে হচ্ছে। ১৫ মে ২০০৮, সূর্য, হবিট, রাঘু, জিসান ও শোভন মিলে ম্যানেজার কামাল, আরেফিন, হিমাদ্রি, ইরান এবং তোহা কে ডেকে পাঠিয়েছে গেস্ট রুমে। সবাই উপস্থিত হলে সূর্য কোন কোন রকম ভনিতা ছাড়াই বলল দেখ কামাল ভাই টাকা পয়সা নিয়ে আমাদের কোন খেদ নেই কিন্তু যে সব পেলেকাট ধুক্কু পেলেয়ার নিয়ে দল গড়া হচ্ছে তা নিয়ে আমাদের ঘোর আপত্তি আছে। তুমি সব কিছু বিচার বিবেচনা করে যারা ভাল আছে তাদের সুযোগ দাও। হিমাদ্রি বলল হ্যা ভাই ঠি বলেছেন আরো কিছু ভাল খেলোয়াড় আছে তাদের নিলে ভালো হত। সূর্য আরেফিন ও ইরান কে বলল অনেক হয়েছে এবার তোরা থাম ক্রিকেটার সেজে মাঠে নামলে প্রেম হবে নানে বা নতুন করে নতুন মেয়েদের সাথে খাতির করা যাবেনানে এসব বাদ দে, ক্রিকেট খেলতে হয় ক্রিকেটার সেজে লাভ নেই। তোরা তো খেলোয়াড়ি জীবনে রান ই করতে পারিসনি তাহলে কেন শুধু শুধু দূর্নাম কুড়াবি, বাদ দে ভাই এবার ভাল জুনিয়রদের সুযোগ দে। হবিট বলল ভাই আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি সুন্দরী মেয়ে মানে জুনিয়র মেয়েদের সাথে প্রেম করাই দিব। কে শোনে কার কথা গুলি খাওয়া বাঘের মত হুংকার দিয়ে বলল তোদের জন্য তো আমরা আমাদের ক্যারিয়ারকে জলাঞ্জলী দিতে পারিনা। আর কে কে খেলবে সে সিদ্ধান্ত নেবে ম্যানেজার কোচ ও দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক আর এমনিও তো তোরা খেলার বাল ও বুঝিস না তাহলে কেন এসেছিস এখানে? তোহা ও সানাউল ভাই বলল দেখ ভাই ভাই সম্পর্ক আছে ওটাকে ঐখানে রাখ আর যা পারিস না সেটা নিয়ে কথা বলতে আসবি না। বলতে গেলে এক রকম তাড়িয়েই দিল। সূর্য এন্ড কোং কিন্তু দমবার পাত্র না। ভাবতে বসে গেল কিভাবে এদের জব্দ করা যায় আবার একটা ক্লাইমেক্স ও তৈরি হয়।
এর পর কিছুদিন প্রাকটিস চলল নিয়মিত ভাবে। ক্যাচ নিতে যেয়ে কারো নাক যাচ্ছে কেউ বা এক ওভার বল করার পর দুই ঘন্টা বিশ্রাম নিচ্ছে বা ব্যাটসম্যান কাট করতে যেয়ে বোল্ড হয়ে যাচ্ছে। যাই হোক কিছু জুনিয়র খেলোয়াড় কিন্তু আশা যোগাচ্ছে। বিভাগ থেকে টাকাও তুলে নিয়ে এসেছে কামাল মিয়া বোঝা যাচ্ছে তার পোশাকের পরিবর্তনে। নতুন জামা, প্যান্ট, তবে মোবাইলটা এখনো পরিবর্তন করে পারেনি পাছে সবাই বলে ম্যানেজার টাকা চুরি করে মোবাইল কিনেছে এই কথা বলে বেড়াই। একই জিনিস দেখা গেল তোহা ও আরেফিন এর চালচলনে। ক্রিকেটের জার্সিও চলে আসল সাথে ক্যাপ এবং অনান্য সামগ্রী। ভাল ভাল জিনিস দিয়ে হবেটা কি ভিতরে তো মাল নেই।
সূর্য রুমে ফিরে দাদাকে ওর পরিকল্পনার কথা জানলো কিন্তু দাদা চিরকালই ভীতু স্বভাবের, সূর্যের কথা শুনেই বলল ভাই এবারের মত মাফ করে দে। এই কথা শুনে বলল দাদা এক কাজ কর এইটা কাগজে প্রিন্ট করে রাখ এবারের মত মাফ করে দে কথাটি কারন এই নিয়ে সত্তর বার তুই আমাকে এই কথা বললি। সুর্য বলল আচ্ছা এক কাজ কর একশ টাকা দে, দাদা দেখল একশতেই মাফ দেরি না করে একশত টাকা দিয়ে বলল ইন্দ্রের কাছে দোয়া করি তুই সফল হ।
ক্যাম্পাসে সাজ সাজ বর ২৫ মে থেকে অন্তবিভাগ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরু হবে। ফিকচার থেকে সূর্য দেখল ওদের গ্রুপ পর্যায়ের খেলাগুলো ২৬, ২৮ এবং ৩০ মে। প্রতিপক্ষ গনিত, ফরেস্ট্রী ও বায়োটেকনোলোজি। সূর্য এন্ড কোং দেখল জেতার একটাই আশা আর তা হল বায়োটেক এর সাথে। সর্বোচ্চ ভাল খেললেও গনিত বা ফরেস্ট্রীর সাথে জেতার সম্ভাবনা খুব কম। সূর্য ওর পরিকল্পনা হবিটের সাথে শেয়ার করল হবিট সব শুনে উত্তেজনায় কাঁপছে আর বলছে ভাই এসব আপনার মাথায় আসে কি করে। সূর্য হবিট, রাঘু, জিসান ও শোভন কে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় বসল। ওরা কাজ ভাগ করে নিল হবিট থাকবে ছবি আঁকা এবং প্রিন্টিং এর দায়িত্বে। রাঘু ও জিসান খড় ও পাঁচ সেট পুরাতন জামা কাপড় যোগাড় করে আনবে। শোভন ধারাভাষ্যের জন্য সাউন্ড সিস্টেম এর ব্যবস্থা করবে। সুর্য আপাতত কিছু না করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে আর এসব কাজের জন্য হাজার পাঁচেক টাকার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত।
প্রথম খেলায় সূর্য মাঠেই যাইনি ওদের দল হিসাব অনুযায়ী হেরেছে ইতিহাস তৈরি করে মানে সর্বনিন্ম স্কোর করেছে ওরা। ইতিহাসে প্রথমবারের মত চল্লিশের ঘরে রান খোলসা করে বললে ৪৭ রানে অল আউট হয়ে গেছে। অংক বিভাগের ছেলেপুলেরা কোন উইকেট না হারিয়ে ৫ ওভারে জিতে গেল। এমন হারের পরেও যে কিভাবে মানুষ দলে থাকে তা সূর্য ভেবে পেল না। সবাই ম্যানেজার, কোচ এবং খেলোয়াড়দের ধুয়ে দিচ্ছে কিন্তু এমন নাজুক সময়েও সূর্যের কোন দেখা নেই। জ্ঞানী মনে মনে ভাবছে এসময় সূর্য থাকলে দুই কথা কামাল কে শুনিয়ে দিতে পারত। ভিড়ের মধ্যে থেকে শোনা গেল মেয়েলি গলায় বলছে পেলেয়ারদের নুনু-বিচি কিছুই নেই মেয়েদের সাথে খেললেও পারবে না সেই সাথে হাসির রোল পড়ে গেল। এত বড় অপমানকেও গায়ে মাখল না কামালের সাঙ্গোপাঙ্গরা। যাই হোক সূর্য আর হবিট মিলে প্রায় হাজার সাতেক টাকা জোগাড় করে হলে ফিরতেছে ভ্যানে করে আসতে আসতে শুনতে পেল সেই নুনু-বিচি কাদের সাতচল্লিশ রান যাদের কি লজ্জা কি লজ্জা। সূর্য বলল যাক বাবা বড় বাচা বেঁচে গেছি ঐতিহাসিক মুহূর্তে ছিলাম না।
সূর্য এবং ওর সহযোগীরা যা করার তা শেষ ম্যাচেই করবে। সে ওরা ম্যাচ জিতুক বা হারুক তাতে কিছু যাই আসে না। অবশ্য সূর্য ভাল করেই জানে এদল নিয়ে আর যাই হোক জয় এর নৌকায় ওঠা যাবে না। হবিটের ছবি ছাপানোর কাছ অনেক আগেই শেষ হয়েছে সূর্য প্রমান সাইজের ছবি দেখে বলল দারুন কাজ করেছিস তো। ছাপানো ছবির উপরে হাতের কাজ সব মিলে অসাধারণ। রাঘু হলের পাশের গরুর ফার্ম থেকে রাতের আধারে পাঁচ বান্ডিল খড় নিয়ে এসেছে সূর্য বলল সব সময় চুরি করতে হয় না বুঝছিস। রাঘু বলল আচ্ছা খড়ের দাম দিয়ে আসব রাতেই আসলে দেবে না। জিসান কিছু জামা কাপড় পুরাতন মার্কেট থেকে কিনে নিয়ে এসেছে। সূর্য কেরোসিন আর বাঁশের ফ্রেম যোগাড়ে ব্যস্ত। ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে কুশপুত্তলিকা তৈরিতে শিখছে। এদিকে ম্যানেজার সবাইকে নিয়ে হলের একরুমে বসে খুব ভাষন দিচ্ছে জাতীয়তাবাদে উদ্ভুদ্ধ করছে, তিন ঘন্টা মিন্টিং করে এক সিংগাড়া দিয়েছে শালা আসলেই জনমের কিপটা। যাই হোক ২৭ তারিখ বিকালে প্রাকটিসের সময় ম্যানেজার ঘোষনা দিল যে ৫০ করবে তাকে ৫০০ টাকা যে ২ টা উইকেট পাবে তাকেও ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। পরের দিন অর্থাৎ ২৮ মের ম্যাচেও একই ফলাফল কোন রকমে ১০০ পার। হিমাদ্রি একাই সত্তর রান বাকিরা টিউব লাইট ফলাফল যা তাই বিপক্ষ দল আট উইকেটে জয়ী। এদিনও সূর্য নেই সবাই বেশ অবাক যে পুরো টিম খোল নলচে পালটে দিতে চেয়েছিল আজ সে নেই কেন অন্তত স্লেজিং করে বিপক্ষ দল কে ব্যতিব্যস্ত রাখা যেত।
রাতে সূর্য তার দল নিয়ে বসল কুশপুত্তলিকা বানাতে। চারজনের কুশপুত্তলিকা তৈরি হবে। এরা আউট হলেই ল্যাপ অফ অনারের মত করে একজন কুশপুত্তলিকায় আগুন ধরিয়ে মাঠের চারচাশ দিয়ে এক পাক দিয়ে এসে ধারাভাষ্যের পাশে দাঁড়াবে এবং আউট হওয়া ব্যক্তি ফিরে আসলে ফুলের মালা পরিয়ে দিয়ে রসগোল্লা খাইয়ে দেওয়া হবে এবং ছবি তোলা হবে। সারা রাতের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর চারটা ফ্রেম তৈরি হল। সুর্য অবশ্য ভাবছে নিজের বিভাগের বিরুদ্ধে যাবে স্যাররা কি ভাববে বা সাধারন ছেলে মেয়েরা কি ভাববে? বা যাদের বিরুদ্ধে এই কাজ করবে তাদের সাথে সাড়া জীবনের মত একটা গ্যাঞ্জাম হয়ে যেতে পারে। আবার এদের কার্যক্রম এর কথা মাথায় আসতেই সব ভয় ভীতি এক পাশে রেখে ফ্রেমে গড় ভরে সুন্দর করে বেধে কুশপুত্তলিকা বানিয়ে ফেলল। এর উপর প্রিন্ট করা ছবি বসিয়ে দিয়ে দেখল চমৎকার দেখতে হয়েছে। এর পর এতে জামাকাপড় পরিয়ে দিল। ৩০ মে সকাল আটটা বাজে সূর্য আজ খুব খোশ মেজাজে আছে। কামাল কে দেখেই বলল ভাই আজকে কি হ্যাট্টিক হবে নাকি না অন্য কিছু। কামাল কোন কথা না বলে রাগে গরগর করতে করতে গালি দিয়ে চলে গেল। ম্যাচ শুরু হতে ঘন্টা খানেক বাকি পেলেয়ারদের টেন্ট এর পাশে স্কোর বোর্ডের পাশের একটা টেবিল পেতে সূর্য আর তার দল বল এসেছে সাথে প্রায় কেজি দশেক রসোগল্লা, পাঁচটা গাদা ফুলের মালা, একটা মুকুট, রাজকীয় চেয়ার, একটিন কেরোসিন, সাথে কুশপুত্তলিকা ও সাউন্ড সিস্টেম। ম্যাচ শুরু হল সূর্যদের দল বল করবে। মানে সূর্যের অপেক্ষা একটু বাড়ল আর কি সাথে একটু ভালোও হল কারন সকালের দিকে স্যাররা থাকে পরে চলে যায়। ম্যাচ শুরুর সাথে সাথে সূর্য আর হবিট মিলে ধারা ভাষ্য দিতে শুরু করল। এমন অপ্রত্যশিত জিনিস দেখে কামাল বলল সূর্যকে আমিই বলেছিলাম পেলেয়ারদের উৎসাহের জন্য কিছু একটা করতে মানে কিছু একটা থেকে নাম কামানো গেলেই হল আর কি। যা হোক সূর্যের ভাষ্য দিচ্ছে
আসছে যুগসন্ধিক্ষনের শ্রেষ্ট বোলার তানভী হাতের জাদুতে মুখের মধুতে অসাধ্য সাধন করে এবার বলের মাধ্যমেও করে দেখাবে। আসছে দারুন ভংগিতে সোজা বল ছুড়ে দিল বাইশগজের মধ্যে এক্কেবারে ছয়। আবার আসছে সোজা লাইনে না, দারুন একটা ওয়াইড। আসছে তানভী এবার মনে হয় উইকেট পাবে না না তিন রান। এক ওভারে ১৯ রান দিয়ে খেলার সূচনা করল ওদের দল। বোলারদের ইচ্ছাই বায়োটেক ১৭৩ রান করল বিশ ওভারে। প্রতি ওভারে প্রায় নয় করে রান তুলতে হবে যা আসলে ওদের দলের পক্ষে সম্ভব না। যদি প্রত্যেককে দুবার আউট করা হয় তাহলেও হবে না। সূর্যের পরিকল্পনা মূলত ব্যাটিংকে ঘিরে।
ওদের আরেফিন ও তোহা ব্যাটিং এ নামার আগে ও মাইকে বলছে আমাদের সেরা দুই তারকা যারা রান তাড়া করে বিখ্যাত আজ দেখিয়ে দিবে কিভাবে রানের পিছে পড়ে যেতে হয়। আমাদের ম্যানেজার এর সেরা টিম আজ দেখিয়ে দেবে আমরাই সেরা। এসব কথা শুনছে আর সবাই হাসছে। প্রতিপক্ষ স্লেজিং বাদ দিয়ে সূর্যদের কাজ কাম দেখছে। সেম মাঝে সূর্যরা উপস্থিত দর্শকদের এক প্রস্ত রসগোল্লা খাইয়ে দিয়েছে। টাকা আছে আজ দুপুরের গরমের কথা চিন্তা করে সবাইকে ফ্রিতে ৫ টাকার লাল নীল আইসক্রিম দিয়ে যাচ্ছে। কিছু লোক বলছে আসলে এদের ম্যানেজার কে ? সূর্য মাইকে ঘোষনা দিল নামছে এফ পি এল এর বিখ্যাত ওপেনার আরেফিন আর নিজেকে প্রমান করেই ফিরবে অন্তত ৫০ মেরে আসবে। আরেফিন আরেফিন আরেফিন শব্দে চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠল। আরেফিন মাঠে যেয়ে হয় বলে চার মেরে দিল। সূর্য চিৎকার করে বলল হবে আজ চার ছাড়া কিছু মারবে না আরেফিন কিন্তু ও জানে বড় জোর ছয় সাত বল টিকবে শালার পো। সূর্য বলল সবাই রেডি তো তোরা আরেফিন আউট হলেই কিন্তু ল্যাপ অফ অর্নার দিতে হবে। হাল্কা গুড়ি গুড়ি বর্ষা আসছে। সূর্য বলল বরুন দাদা দোহাই আজ ইন্দ্রের সভায় যেয়ে মাল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো না। সূর্য ধারাভাষ্যে বলল চারের মার মেরেছিলেন কিন্তু সরাসরি ফিল্ডারের হাতে কোন রান নয়। এর পর ওভার শেষ হলে তোহা ব্যাটিং করতে লাগল ব্যাটা এক রান নিয়ে আরেফিনকে হিটে পাঠিয়ে দিল। নতুন বোলার দুই এক বল দেখ তারপর মার তা না নতুন বোলারের প্রথম বলেই ছয় মারতে গেল। সূর্য ধারাভাষ্যে বলে চলল সজোরে মেরেছেন বল চলে যাচ্ছে আকাশ ফুটো করে মেঘের দেশে ছয় হয়ে যেতে পারে পারে পারে না আউট আউট আউট।
বিখ্যাত ওপেনার আরেফিন চার রানে আউট হয়ে ফিরছেন ল্যাপ অফ অনার ল্যাপ অফ অনার স্টার্ট স্টার্ট বলে উঠল। ওর ঘোষনায় সবাই হকচকিয়ে উঠল এমনকি আউট হয়ে ফিরতে থাকা আরেফিনও। মাঠের হাজার খানেক দর্শক দেখল হাতে মাঝারি সাইজের একটা কুশপুত্তলিকা নিয়ে আগুন ধরিয়ে দৌড়াচ্ছে রাঘু। ছবির আরেফিন পুড়ছে এই দেখে আরেফিন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না সে দৌড়ে মাঠের বাইরে আসার চেষ্টা শুরু করল। মাঠের বাইরে আসা মাত্রই জিসান বড় একটা গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে দিল সাথে সাথে মাইকে সূর্য বলল জিও আরেফিন জিও পরাজয়ে ডরেনা বীর আমরা তোমাকে নিয়ে গর্বিত। এদিকে রাঘু আধ পোড়া পুত্তলিকা এনে ধারাভাষ্যের পাশে রাখার পর কিছু উৎসাহী লোক এসে দেখতে লাগল কি পুড়ছে। এর পর সানাউল উইকেটে যেয়ে ধ্যান ধরে বসে আছে ওরা বুঝতে পারছে যদি ওরা আউট হয় তাহলে ওদের কপালেও আছে এই জিনিস এজন্য রান বাদ দিয়ে আউট হওয়া ঠেকানোই যেন প্রধান কাজ। এদিকে মাইকে হবিট বলল সানাউল আর তোহা ভাই আজ টি-২০ না আজ টেস্ট খেলতে নেমেছে মনে হচ্ছে। দুনিয়ার ক্লাসি ব্যাটসম্যান তোহা আজ কেন চুপ। তোহা তোহা তোহা বলে মাইকে চিৎকার করতে লাগল সাথে হাজার খানেক দর্শক চিৎকার করছে তোহা তোহা, ছয় মারবে কে তোহা, রান করবে কে তোহা, জিতাবে কে তোহা। এদিকে ওদের কান্ড কারখানার খবর ক্যাম্পাসে চলে গেলে স্রোতের মত মানুষ খেলা দেখতে চলে আসল। এদিকে দশম ওভারে ত্রিশ রান নিয়ে ধুকছে তোহা আর সানাউল। মাথার উপর রানের চাপ, দর্শকের চাপ, সাথে সূর্যের চাপ সব মিলিয়ে ওদের দুজনের অবস্থা ২২ গজের মধ্যে হেগে দেবার মত। এত চাপ সামলে একটা ইয়োর্কার ঠেকিয়ে দৌড় দিছে তোহা সানাউল দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে। দুজন ব্যাটসম্যান এক প্রান্তে কে আউট হবে এটা নিয়ে গোলমাল করছে। সানাউলের ভয়ে অসভ্যের মত তোহাকে বের হয়ে যেতে বলল তোহা বাধ্য হয়ে রান আউটের শিকার হয়ে ফিরছে সাথে সাথে ল্যাপ অফ অনার এ পুড়ছে কুশপুত্তকিলা, মাঠের বাইওরে এলে যথারীতি ফুলের মালা আর রসগোল্লা। কামাল মিয়ার টেনশনে পাদ ও বের হচ্ছে না ঠিকমত। ও শুধু মনে মনে ভাবছে সূর্য ওর জন্য কি প্লান করে রেখেছে। বর্ষা একটু জোরে নেমেছে তের ওভারে সানাউল ব্যাট করছে সাথে হিমাদ্রি। ও আসার পর ব্যাটিং এর গতি বেড়েছে মানে যা খেলার ঐ খেলছে। ১৫ তম ওভারে এসে রান ৫৭ এর মধ্যে আরেফিন ৪, তোহা ৩ সানাউল ১৩ এবং ঝড়ো ব্যাটিং হিমাদ্রি ৩৭ রান তুলে নিয়েছে। সূর্য ঘোষনা দিল হিমাদ্রির জন্য ৫০০ টাকার পুরস্কার দরকার মাত্র ১৩। হিমাদ্রি পরের ওভারে ১৩ রান তুলে নিল। দলীয় রান ৭০ বর্ষা বেশ নেমেছে বেশ ভাল করেই সানাউল ভাবছে আউট হয়ে গেলে আর যাই হোক কুশপুত্তলিকা তো বর্ষায় জ্বলবে না। ওদিকে বর্ষাকে হার মানাতে কুশপুত্তলিকায় অর্ধেক টিন কেরোসিন ঢেলে ভেজানো হয়েছে। ১৭ তম ওভারে এসে সানাউল বোল্ড হয়ে গেল। প্রচন্ড বর্ষা কিন্তু কে শোনে কার কথা কুশপুত্তলিকায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া মাত্র দাও দাও করে ধরে গেল এরপর হবিট সেটা নিয়ে বর্ষার মধ্যেই দৌড়। বর্ষার মধ্যে হেটে আসতে কষ্ট হচ্ছে দেখে সূর্য একটা মালা, মিষ্টি আর ছাতা নিয়ে মাঠের দিকে আগালো। বর্ষা অনেক কমে গেছে ইরান খেলতে যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে শালার পো গুলো আর দুই ওভার শেষ করে আসতে পারল না। এদিকে দলের পরাজয় নিশ্চিত জেনে সূর্য আর জিসান কে বলল এই এদিকে আয় এই নে ৫০০ টাকা জিলাপি কিনে নিয়ে আয় সাথে একটা ভ্যান ভাড়া করে নিয়ে আয়। ইতমধ্যে সূর্যের দলে জনা পঞ্চাশেক ছেলে মেয়ে জুটে গেছে। দাদা ভাব ভাল দেখে ওর দলে যোগ দিয়েছে জ্ঞানী নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে সূর্য জানে ও কোণ পক্ষ নেবে না। এটাকে অবশ্য সূর্য খারাপ চোখে দেখে না কারন কোণ একটা ঘটনা ঘটাতে গেলে সবাইকে জড়াতে নেই কিছু ব্যাক আপ রাখতে হয়। ইরান মাঠে নেমেই কোন মতে এক রান নিয়ে হিমাদ্রিকে দিয়ে দিল। হিমাদ্রি ছয় মেরের পরের বলে রান আউট হয়ে গেল। অরুপ মাঠে নামল সে উইকেটকীপার ব্যাটসম্যান। ক্রিজে এসেই চার মেরে দিল, ইরান কাছে এসে বলে গেল ভাইওরে আমারে দিস না আমি আউট হতে চাই না। বিধিবাম পরের বলেই এক রান নিয়ে ইরান কে দিয়ে বলল ভাই মাত্র অল্প কয়টা বল ঠেকিয়ে দেন। ইরান কিন্তু যা করার করে দিল ক্যাচ তুলে প্যাভেলিয়োনের দিকে হাটা শুরু করল। সূর্য এবার নিজেই কুশপুত্তলিকা নিয়ে মাঠের চারপশে ছুট দিল কিন্তু বর্ষায় ভিজে আগুন ধরতে ধরতে নিভে গেছে। হাস্য কর এক অবস্থা কুশপুত্তলিকায় আগুন নেই কেবল ধোয়া। সূর্য কিন্তু থামছেনা ল্যাপ অফ অনার দিতেই হবে অর্ধেক মাঠ আসার পর ভিতরের কেরোসিনে আগুন লাগা মাত্রই দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল ইরানের কুশপুত্তলিকা সাথে সাথে সহস্র কন্ঠে ভেসে এল ইরান ইরান ইরান। প্যাভেলিয়নে ফেরা মাত্রই রাঘু দুইটা রসগোল্লা দিয়ে বলেছে ভাই খাও মজা করে খাও আর কবে আউট হবা আর খাবা সে তো জানো না। সবার নজর এখন সূর্য আর তার সাংগো পাঙ্গো দের দিকে স্কোর কার্ডের দিকে কোন খেয়াল নেই ২০ তম ওভার শেষ হতেই সূর্য মাইকে বলে উঠল কে কোথায় আছিস মায়নেজার কে আর সিনিয়র পেলেয়ারদের ভ্যানের উপরে তোল বিজয় মিছিল হবে মিষ্টি বিরতন হবে। এই কথা বলা মাত্রই ম্যানেজার কামাল কে ধরে ভ্যানের উপর রাখা চেয়ারে বসিয়ে তোহা, সানাউল, ও আরেফিন কে ভ্যানের উপরে দাড় করিয়ে দেওয়া হল বিপদ বুঝে ইরান দৌড়ে পালাতে যেয়ে গোবরে হোঁচট খেয়ে পিচের রাস্তায় হাত পা মুখ ছিলে কোকাচ্ছে। এই দেখে সূর্য হবিট কে বলল বাদ দে ওরে আর দরকার নেই। ভ্যানের সামনে একগাদা ছেলে মেয়ে নাচছে আর স্লোগান চলছে হেরেছেরে হেরেছে কামালের দল হেরেছে, হারা ম্যানেজার গেল কই হই হই রই রই, আরেফিন ভাই হিরো মারে প্রায় জিরো, আরেফিন ভাই গেল কই কই হই হই রই, জিতেছেরে জিতেছে কামালের দল জিতেছে।
কামাল মিয়া আর ওর দলবল ঘুরছে দপ্তরে দপ্তরে, খেলায় যঘন্য ফলাফল এর কারন দর্শানোর নোটিশের উত্তর আর প্রতিটি টাকার খরচের হিসাব নিয়ে কিন্তু কেউ সন্তুষ্ট হচ্ছে না, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। খেলার মাঠে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপরাধে আর্থিক জরিমানা খেয়ে তা মওকুফের আবেদন লিখতে গলদঘর্ম। এর পর আর কেউ ম্যানেজারের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি, দিনে দিনে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে কিন্তু ম্যানেজার আর আসেনি।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×