somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা - শেষ পর্ব

০১ লা এপ্রিল, ২০০৭ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন প্রশ্ন আসে ত্রিশ লক্ষ কি আসলে শহীদ হয়েছিলেন? এই প্রশ্ন অনেকেই উত্থাপন করে বেশ আনন্দ পান আবার কেহ স্বার্থ সিদ্ধির জন্যও এই প্রশ্নটি করেন। প্রশ্নের উত্তর হলো একটাই - হ্যাঁ, অবশ্য সংখ্যাটা বেশীও হতে পারে। যারা নদীর ধারে বাস করতেন - যারা পিতার লাশ সনাক্ত করার জন্যে নদীর স্রোতে ভেসে যাওয়া অগনিত লাশের মিছিল দেখেছে - তাদের কাছে ৩০ লক্ষ সংখ্যাটা অনেক কম মনে হতে পারে।

আরো একটা প্রশ্ন আসে - কেন আমাদের জানতে হবে একটা নিদিষ্ট সংখ্যা। কেন কিছু মানুষ প্রকৃত সংখ্যা জানার জন্য অধীর। যদি আমরা বিস্তর শুমারী বা পরিসংখ্যানের পর জানতে পারি যে - প্রকৃত শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষের থেকে ১ লক্ষ কম বা এক লক্ষ বেশী তাতে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ভিন্ন ভাবে লিখা হবে? শহীদের সংখ্যা কমলে কি দালাল-রাজাকারদের অপকর্মের দায় কমে যাবে, নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের গুরুত্ব কমে যাবে? আসলে শুরুতে যা বলেছিলাম - যে দুই দল এই বিতর্কটা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাদের মধ্যে অগ্রগামী হলো - ১৯৭১ সালের পরাজিত দালাল শ্রেনী এবং তাদের অনুসারীরা । তারা একটা পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই এটা করে। এরা ইদানিং এতোটা সাহসী হয়ে প্রকাশ্য বলার সাহস পায় এই বলে যে, আমাদের পুরোনো কথা ভুলে যেতে হবে। কেন ভুলে যেতে হবে - একদল লুটেরা দালালকে খুশী করার জন্য? প্রকৃত অবস্থা হলো এরা বিভিন্ন ভাবে বিতর্ক তুলে মানুষকে প্রকৃত ঘটনার থেকে আড়ালে নিযে যেতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ যত বেশী স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদের সংখ্যা, দালালদের ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়ে বিতর্ক করে বিভক্তিতে পড়বে - দালাল-রাজাকারদের তত সুবিধা হবে - ততই তারা নিরাপদ অবস্থানে থেকে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করার সুযোগ পাবে।

যেখানে স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর কিছু মহল বিভিন্ন বিতর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে আত্নত্যাগকারীদের অবদানতে হেয় করার প্রয়াস সেখানে পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্যে কিছু অবশ্য করনীয় আছে। যেমন -

১) যারা বিতর্ক সৃষ্টি করে তাদের চিহ্নিত করা। যদি তারা রাজাকারদের মতাদর্শের হয় - ওদের চিহ্নিত সুষ্পষ্ঠ ভাবে করা এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে ওদের সাথে যুদ্ধ শুরু করা। ওদের সাথে কুটতর্কে না জড়িয়ে ওদের পরিচয় মানুষের কাছে পরিষ্কার ভাবে উপস্থাপন করা এবং এদের সামাজিক ভাবে কোনঠাসা করা। আর যদি বিতর্ক সৃষ্টিকারী কোন নতুন প্রজন্মের কোন একজন হয় - তবে ওদের কথা মনযোগ সহকারে শুনতে হবে। চিহ্নিত করতে হবে ওদের বিভ্রান্তির কারন। যুক্তি এবং প্রমানসহ আন্তরিকভাবে ওদের সাথে বিতর্ক এবং আলোচনা করে তাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বুঝতে সাহায্য করা।

২) মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে এবং এর বিকৃতির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার হতে হবে।

৩) আমাদের মনে রাখতে হবে আত্নত্যাগকারী মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন দিয়ে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমাদের জন্যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই মহামূল্যবান সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমরাদের সবার। তাই মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশ নিয়ে যতরকমের বিভ্রান্তিকর প্রচারনা তার বিরুদ্ধে আমাদের সোজা হয়ে দাঁড়ানো কর্তব্য।

আসুন, স্বাধীনতা দিবসে আমাদের শপথ হোক, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের মর্যাদা রক্ষায় সকল বিভ্রান্তিকর প্রচারনার বিরুদ্ধে আমাদের সকল মেধা আর শক্তি দিয়ে সংগ্রামই হবে আমাদের প্রধান কাজ।

(শেষ/ধন্যবাদ)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×