somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এক ভিনদেশীর সাথে কথোপকথন

১৫ ই জুলাই, ২০০৭ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশ ত্যাগ করার পর প্রথম দিকে দেশের জন্যে মনের গভীরে কত কষ্ট জমে তার সম্পর্কে ভুক্তভোগীরাই ভাল জানেন। আমরা ১০জন বংগসন্তান যখন নেদারল্যান্ডে এসে পৌছি -তখন টের পেলাম পূর্বপরিচয় ছাড়াই আমরা একে অপরের গত কাছের মানুষ। যোগসূত্রটা শুধু আমরা বাংলাদেশী - একই ভাষায় কথা বলি আর একই সংম্কৃতি ধারন করি - লালন করি।

তখন ক্লাসের বা ল্যাবের অবসরে আমাদের একমাত্র কাজই ছিল দেশের সর্বশেষ খবর ভাগাভাগি করা। খবরের একমাত্র সূত্র ছিল ইন্টারনেটে নিউজ ফ্রম বাংলাদেশ। সেখান থেকে খবর প্রিন্ট করে একত্রে বসে পড়া আর পর্যালোচনাই ছিল মূল বিনোদন।

কয়েকজন মেয়ে ছিল আমাদের সাথে যারা ছিল স্বভাবতই দেশের বিষয়ে অনেক বেশী আবেগপ্রবন - তবে দলীয় রাজনীতির বিষয়ে ওদের ছিল সীমাহীন অনীহা। পাকিস্থানী ছাত্রদের সাথে যদি কেহ গল্প করতো বা একটা বেশী মাখামাখি দেখলে ওদের রাগ দেখারমতো পর্যায়ে চলে যেত। এটা নিয়ে মোটামুটি সালিশ করে অবশেসে একটেবিরে বসার ব্যবস্থা করতে হতো।

একদিনে ঘটনা বলি। ঠিক মনে নেই কোন মাস। বাইরে হালকা তুষারপাত হচ্ছে। তুষারপাত দেখলেও কেমন যেন মনটা উতলা হয়ে যেত। একটু আনমনে গ্লাসের বাইরে তুষারপাতের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে কাফেটেরিয়ার দিকে যাচ্ছে। কারন একজন না একজন বাঙালী সেখানে পাবোই। একটি গল্প করে আবার ল্যাবে যাবো।

ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে দেখি এককোনার টেবিলে বসে আছে আমাদের সিনিয়র শম্ভুদা, লাইলী আর রুমি। সাথে আছে দুই সিরিয়ান ছাত্র - যারা শম্ভুদার সাথে একই কোর্সের বরে জানতাম। সেখানে শম্ভুদা হাতপা নেড়ে কি যেন একটা বুঝাচ্ছে - আর একটা সিরিয়ান মাথা নেড়ে অস্বীকার করছে। কাছে গিয়ে দেখি লাইলী আর রুমির মুখ লাল হয়ে আছে।

"বিষয়টা কি?" - জিজ্ঞাসা করতেই লাইলী প্রায় কেঁদে ফেলার মতো করে বাংলায় বললো - “হারামজাদারা কি কয় দেখেন। আমরা নাকি পাকিস্থান ভেঙে মুসলিম উম্মাকে দূর্বল করেছি। মুক্তিযুদ্ধ নাকি ভারতের কাছে মুসলমানদের পরাজয়....”।"

এই কথা শুনে মনোযোগ দিলাম শম্ভুদার কথার দিকে। বেচারা চেষ্টা করেই যাচ্ছে এটা বুঝাতে যে বাঙালী জাতি একটা সেকুলার জাতি - আমরা আদিকাল থেকে একটা আলাদা সংস্কৃতির ধারক যা পাকিস্থানের সাথে মিলেনি - এ ছাড়াও অর্থনৈতিক বৈষম্যগুলো বুঝানো চেষ্টা করছিলেন উনি। কিন্তু সিরিয়ান ব্রাদাররা সেটার দিকে না গিয়ে মুসলিম উম্মা এবং ইসলামিক দেশ বিষয়গুলো নিয়ে তর্ক করছিলো। তাদের কথা হলো মুসলমানরা এক থাকলে পৃথিবীতে ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

অবশেষে শম্ভুদাকে থামিয়ে বললাম - "দাদা, কফি খান, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।"

উনি দীর্ঘক্ষন কথা বলছিলেন এবং উত্তেজনায় কফিতে চুমুক দিতে ভুলে গেছেন।

শম্ভুদা কফিতে চুমুক দেবার সুযোগে আমি সিরিয়ান ভাইদের জিজ্ঞাসা করলাম - “ তোমরা কোথাকার?”

প্রশ্নটা করলাম এভাবে যেন আমি ওদের সম্পর্কে জানতে চাইছি।

উত্তর - “সিরিয়া”।

আমি বললাম - “দেখ, ভুগোল আমার সাবজেক্ট না - তাই ভুগোল তেমন ভাল জানি না। জানার জন্যে কি তোমাদের কিছু প্রশ্ন করবো”।"

আমার কথা শুনে রুমি আস্তে আস্তে বললো - “আপনি কি ওদের সাথে খাতিরের আলাপ করতে শুরু করবেন নাকি, ওদের ধরেন”।"

আমি রুমীকে একটু উপেক্ষা করে আবার ওদের কাছে প্রশ্ন করলাম -“ সিরিয়া কি সৌদি আরবের কাছে না?”

ওরা মোটামুটি জর্ডান, ইরাক, সৌদিআরবের ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে একটা নাতিদীর্ঘ বত্তৃতা শেষ করলে আবার প্রশ্ন করলাম -“ মনে হয় তোমাদের ভাষাও এক এবং সংস্কৃতিও প্রায় একই রকমের, ঠিক না?”

ওরা বেশ অহংকারের সাথে আরবী ভাষা এবং সংস্কৃতির উপর নাতিনীর্ঘ বত্তৃতা শেষ করার পর আমার প্রশ্ন - “তাহলে একই ভাষা, সংস্তৃতি এবং একই ধর্মের মানুষ হয়ে তোমরা আলাদা দেশ করে থাকছো কেন? মুসলিম উম্মাকে শক্তিশালী করার জন্যে সমগ্র আরবে একটা দেশ বানিয়ে ফেলা দরকার, কি বলো?”

এবার ব্রাদাররা ধরতে পেরেছে আমার খেঁজুরে আলাপ আর ভুগোল জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য কি। আমি বললাম - “দেখ বাংলাদেশ সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞান এতো কম যে তোমারদের কথা শুনে খুবই কষ্ট লাগলো। তোমরা একই ভাষা, ধর্ম আর সংস্কৃতির মানুষ হয়েও এক থাকতে পারছো না - আর শুধু মাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষের মৃত্যুকে হালকা করে দেখার মানসিকতা কিন্তু সিরিয়ান জাতির সম্পর্কে আমাদের নতুন করে ভাবাবে”।"

আমার কথা শেষ হতেই দু'জন উঠে গেল - বললো পরে কথা হবে এখন ক্লাশ আছে। পরে দীর্ঘদিন এদের আমাদের টেবিলের কাছে আসতে দেখিনি। একদিন তাদের একজন লাঞ্চের সময় আমাদের টেবিলে এসে সেই দিনের ঘটনার জন্যে দু:খ প্রকাশ করে গেল। ও বললো - ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এবং ৭১ সম্পর্কে কিছু জানার পর ওর মনে হয়েছে সেদিনে তর্ক করাটা জানা ভুল ছিল।





১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×