somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেইস স্টাডিঃ জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ - পর্ব ১ ( সূচনা ও পিছনের কথা)

২৩ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিংশ শতাব্দীর গনহত্যাগুলির মধ্যে বাংলাদেশের ১৯৭১ এর ধ্বংসলীলার মাধ্যমে সংগঠিত গণহত্যা শতাব্দির সবচেয়ে নিবিড় গনহত্যাগুলো যেমন সোভিয়েট যুদ্ধবন্দী হত্যা (১৯৪১-৪২), ইহুদী হলোকাস্ট (১৯৩৩-৪৫) বা রুয়ান্ডার গণহত্যার (১৯৪৪) মতো বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। এই চার গণহত্যা এই শতাব্দীর সবচেয়ে নৃশংষ ঘটনাগুলোর অন্যতম। ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী শক্তিকে ধ্বংসের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীকে হত্যা করে।


১. পিছনের কথা

জাতি, ধর্ম অনুসারে দেশবিভাগের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধি ও অন্যান্যদের অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বৃটিশ ও তৎকালীন উপমহাদেশের রাজনীতিবিদের কারনে ধর্মের ভিত্তিতে দুইটা দেশ গঠন করা হলে সংখ্যালঘুরা আদি নিবাস ছেড়ে অন্য প্রান্তে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয় আর সেইসাথে শুরু হলো ধর্মগত দাঙ্গা।

পশ্চিম পাকিস্তানীদের পূর্ব পাকিস্তানীদের উপরে জোর জুলুম চালানোর কারনে আস্তে আস্তে অসন্তোষ দানা বাধঁতে শুরু হয়। ভাষা নিয়ে ১৯৫২ সালে সংঘটিত হয় ভাষা আন্দোলন। এরপর ১৯৭০ সালের আগস্টের বন্যায় ত্রানের অপ্রতুলতা ও নানানভাবে প্রতিনিয়ত বঞ্চনা বাঙ্গালিদের মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাবের জাগরণ ঘটায়। ফলশ্রুতিতে ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ট আসনে জয়লাভ করে। সেই সময়ের অন্যতম দাবী ছিল স্বায়ত্বশাসন ও মিলিটারি শাসনের অবসান। এই আন্দোলন আস্তে আস্তে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ২২ এ ফেব্রুয়ারি পাকি জান্তা আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের উপরে একটি ক্র্যাক ডাউনের পরিকল্পনা করে।

সামরিক সরকারের প্রধান ইয়াহিয়া খান ফেব্রুয়ারী ‘৭১ এ একটি কনফারেন্সে ঘোষনা দেয় - “ আমরা ওদের মধ্যে ৩০ লক্ষ শেষ করে দেব আর বাকীরা আমাদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাইবে”। (রবার্ট পাইন, ম্যাসাকার, পৃ. ৫০)।

জেনারেল ইয়াহিয়া খানের এই উক্তি থেকে সুস্পষ্ট ইংগিত পাওয়অ যায় যে, পাকিস্তানী শাসকচক্র তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের দমনের জন্যে একটা গনহত্যার পরিকল্পনা করেছিলো।

অবশেষে ২৫ এ মার্চ শুরু হয় সেই ইতিহাসের নির্মম ঘটনার। পাকি মিলিটারি আক্রমণ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি, ই পি আর ও অন্যান্য এলাকা। মানুষকে পাখির মত গুলি করে মারা শুরু হলো। এক রাতেই ৭০০০ জনের মত হতভাগ্য বাঙ্গালি মারা যায়। সেইটা ছিলো শুধুমাত্র শুরু।

“এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় অর্ধেক অধিবাসী পালিয়ে যায় এবং কমপক্ষে ৩০,০০০ এর মত নিরস্ত্র মানুষ নিহত হয়। চট্রগ্রামও তার অর্ধেক জনসংখ্যা হারায়। সেই সময়ে (এপ্রিলের উপাত্ত অনুযায়ী) ৩০ মিলিয়নের মত মানুষ হতভম্বের মত দিশেহারা হয়ে দেশের ভিতরেই স্থানান্তর হয়ে মিলিটারিকে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করছিলো”
(রবার্ট পাইন, ম্যাসাকার, পৃ. ৪৮)।

অবশেষে ১০ মিলিয়ন বাঙ্গালি ভারতে পালিয়ে শরণার্থী হয়। উল্লেখ্য তখন সেই ভুখন্ডের সর্বমোট জনসংখ্যা ছিলো ৭৫ মিলিয়ন।

অবশেষে এপ্রিলের ১০ তারিখে আওয়ামীলিগের নেতৃত্ববৃন্দ স্বাধীনতা ঘোষনা করে। ধীরে ধীরে মুক্তিবাহিনী সংগঠিত হতে থাকে এবং পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই শুরু করে। প্রাথমিক ভাবে দেশের ভুপ্রকৃতি ও জনগনের সহায়তায় গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম শুরু হলেও পরে জনসমর্থনের কারনে একটা গণযুদ্ধে পরিনত হয়।


মুল রচনা: জেন্ডারোসাইট ওয়াচ

[জোন্টরোসাইট ওয়াচ সাধারন মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যালীলার বিষয়ে গবেষনা করে। তাদের মতে নিরস্ত্র মানুষের উপর সংগঠিত হত্যাকান্ড বা গনহত্যা বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বমানবতার বিরুদ্ধে বড় একটা হুমকী]


(চলবে...)




সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:২৫
১৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×