somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারি টাকায় বিদেশ সফরের হিড়িক

২৯ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকারি ও প্রজেক্টের টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পোষ্যদের বিদেশ সফরের হিড়িক পড়েছে। গত এক মাসে অন্তত ৩০টি টিম বিদেশ সফর করেছে। বর্তমানে ১৭টি টিম বিদেশে আছে। আগামী এক মাসে আরও অন্তত ১০টি টিমের বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম শহিদ খানের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় ও এলজিইডির কর্মকর্তা এবং তাদের ফ্যামিলির একটি বিশাল বহর বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছে। সেখান থেকে এ বিশাল বহর যাবে কানাডায়। সেখান থেকে ১০ জুলাই দেশে ফেরার কথা রয়েছে তাদের। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করছেন পিএসসহ পাঁচ কর্মকর্তা। এপিএস রঞ্জিত কুমারের নেতৃত্বে অন্য দল গেছে অস্ট্রেলিয়া, চীন ও সিঙ্গাপুরে। আইন সচিব সহিদুল করিম ও পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস গতকাল রাতে গেলেন আমেরিকা। প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. জাফর আহমেদ খান সফরে আছেন থাইল্যান্ডে। সেখান থেকে যাবেন সিঙ্গাপুরে। বিআরটিএ সচিব আবুল বাসারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গেল দক্ষিণ কোরিয়ায়। শিগগিরই আরও একটি দল যাবে অস্ট্রেলিয়া।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুুল লতিফ সিদ্দিকী এক মাসের জন্য গেছেন কানাডা; মন্ত্রীর বাসার কর্মচারী রুবেলের নেতৃত্বে একটি টিম সফরে আছে চীনে। সচিব আশরাফুল মকবুলের পিএস ফিরোজের নেতৃত্বে আরও একটি দল আছে চীনে। শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর পিএস কবীর আহমেদ সফরে আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ডি এম ফারুকের নেতৃত্বে একটি টিম গেছে মালয়েশিয়া। পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী একেএম রফিক আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ যাচ্ছে ইন্ডিয়া।
গত রোববার রাতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কাউন্সিলের (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৩৮তম বৈঠকে যোগ দিতে কাজাখস্তানে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বৈঠক শেষে লিথুয়ানিয়ায় যাবেন। সেখানকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রুনিয়াস অ্যাজুবালিসের সঙ্গে ভিলনিয়াস শহরে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। এরপর তিনি ৩ জুলাই যুক্তরাজ্যে যাবেন। সেখানে তিনি পূবালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। ৫ জুলাই তিনি ঢাকা ফিরবেন।
এভাবে অন্তত ১৯টি টিম এখন বিদেশে আছে। দীর্ঘদিন বিদেশ সফর শেষে সপ্তাহখানেক আগে দেশে ফিরেছেন শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, জনপ্রশাসন সচিব ইকবাল মাহমুদ ও পরিবেশ সচিব মেজবাহ উল আলম।
শুধু মন্ত্রী-সচিবরাই বিদেশ যাচ্ছেন না, সরকারি ও প্রকল্পের টাকায় বিদেশ সফরে আছেন প্রকল্প পরিচালক, মন্ত্রীদের পিএস-এপিএস, পিও, এমনকি বাসার কর্মচারীও। সূত্র জানায়, জুন মাস এলেই বিদেশ সফরের হিড়িক পড়ে যায়। প্রকল্পের টাকার ব্যয় দেখাতে এবং মন্ত্রী-সচিবকে খুশি করতে এ সময় প্রকল্প পরিচালকরা এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিদেশ সফরে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বহুল আলোচিত জনতার মঞ্চের কর্মকর্তা সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান, জনতার মঞ্চের আরেক নেতা উপ-সচিব আনসার আলী খান, এলজিইডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহেদুজ্জামান, এলজিইডির আরআইআই পি-২ প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুর রহমান ও এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন পরিবারসহ গত শনিবার আমেরিকা ও কানাডা সফরে বের হয়েছেন। আসবেন ১০ জুলাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের এ বিশাল খরচ বহন করছে এলজিইডির আরআইআইপি-২ প্রকল্প থেকে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান যুক্তরাজ্যে সফরে গেছেন ২৫ জুন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে এ ট্যুরে আছেন পিএস সোহরাব হোসেন শেখ, উপ-সচিব আলাউদ্দিন ফকির, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর জোবায়ের আহমদ ও হক অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক শাহ আজিমুল হক। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি এ সফরে গেছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে মন্ত্রী যাবেন দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েই ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশনের শিপইয়ার্ডে উদ্ধারকারী জাহাজের কিল লেইং অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। দেশে ফিরবেন ৩ জুলাই।
নৌপরিবহনমন্ত্রীর এপিএস রঞ্জিত কুমারের নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধি দল গত বুধবার অস্ট্রেলিয়া, চীন ও সিঙ্গাপুর সফরে বের হয়েছে। এ টিমে রয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শহিদুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক জামিলুর রহমান ও সাদিকুল ইসলাম। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নৌ-সহায়ক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করার লক্ষ্যে দুটি কর্মসূচির আওতায় চুক্তি মোতাবেক ঠিকাদার মেসার্স অরুপ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক মেলবোর্ন ও চীনের সাংহাইয়ে অবস্থিত ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের জন্য গেছেন এই পাঁচ কর্মকর্তা। আসার পথে তারা দু’দিন সিঙ্গাপুরে থাকবেন। সূত্র জানায়, এ প্রতিনিধি দলে প্রজেক্ট ডিরেক্টর এমদাদুল হকের নাম থাকলেও নৌমন্ত্রী ওই নাম বাদ দিয়ে তার এপিএসের নাম যোগ করেন। ফলে বাদ পড়ে যান স্বয়ং প্রজেক্ট ডিরেক্টর। অথচ এসব যন্ত্রপাতি ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য পিডির যাওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। এ প্রোগ্রামে মন্ত্রীর এপিএস ও মন্ত্রণালয়ের ডিএসের কাজ কি জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, মন্ত্রী যাদের নাম দিয়েছেন তারাই বিদেশ গেছেন। গত রোববার রাতে বিআরটিএ’র আরও একটি দল গেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ দলে রয়েছেন বিআরটিএ’র সদস্য (প্রকৌশল) ফিরোজ আহমেদ, বিআইডব্লিউটিএ সচিব আবুল বাশার ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার (মেরিন) হাসান মাহমুদ তারেক। মাত্র এক মাস আগে ইন্ডিয়া সফরে গিয়েছিলেন বিআরটিএ’র সদস্য (প্রকৌশল) ফিরোজ আহমেদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শহিদুল ইসলাম এবং বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (ট্রাফিক) সফিকুল হক। মার্চে বিআইডব্লিউটিএ’র আরেকটি প্রতিনিধি দল আমেরিকা সফর করে। এ দলে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া, চিফ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন, ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার নুরজামাত বিশ্বাস, নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ ও পরিচালক (নৌ-সওপ) এমদাদুল হক।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে কানাডা সফরে আছেন। তিনি সেখানে এক মাস থাকবেন বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয সূত্র জানিয়েছে। কানাডা থেকে দেশে ফিরে আসার পরপরই তার স্পেনে যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে। স্পেনে তার সফরসঙ্গী হবেন বিটিএমসি চেয়ারম্যান, বিজেএমসি চেয়ারম্যান, শিল্প ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ (মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা) মকবুল আহমেদ, আইয়ুব নবী খান, উপ-সচিব আজহারুল ইসলামসহ ১২ জন। মন্ত্রীর বাসার কর্মী রুবেলকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। তিনি বিজেএমসি’র অর্থনিয়ন্ত্রক আলতাফ হোসেনের সঙ্গে চীনে গেছেন। সচিবের পিএস ফিরোজ এখন সফরে আছেন চীনে। একটি ওয়ার্কশপে অংশ নিতে তাকে চীনে পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গে সফরে আছেন মন্ত্রীর এপিএস আনিসুর রহমান। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ ওয়ার্কশপ উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিবদের জন্য আয়োজন করলেও পাঠানো হয় সহকারী সচিব পদমর্যাদার এ দুই কর্মকর্তাকে। এর আগে মন্ত্রীর পিও মনিরুজ্জামানকে সরকারি টাকায় পাঠানো হয় ফিলিপাইনে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। কোনো কোনো কর্মকর্তা দেড় বছরে ১৫ বার পর্যন্ত বিদেশ সফর করেছেন। মন্ত্রণালয়ের পিআরও সরকারি টাকায় তিনবার বিদেশ সফর করেছেন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুগ্ম সচিব অরুপ চৌধুরী গত দেড় বছরে ১৫ বার বিদেশ সফর করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কানাডা, জার্মানি (২ বার), শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকো (২ বার), থাইল্যান্ড (২ বার), পানামা, চীন, কোরিয়া, সুইডেন, ভুটান, ইন্ডিয়া ও জাপান। এ দেড় বছরে তিনি ৬৬ দিন বিদেশে ছিলেন। উপ সচিব মঞ্জুরুল হান্নান খান দেড় বছরে ১৪ বার বিদেশ সফর করেছেন। এই দেড় বছরে তিনি ৯১ দিন ছিলেন বিদেশে। সর্বশেষ ১৮ দিন জার্মান সফর শেষে ১৭ জুন তিনি দেশে ফেরেন। এর আগে তিনি সফরে করেন ইউএই, থাইল্যান্ড (২ বার), মালে, সুইজারল্যান্ড, মেক্সিকো (২ বার), কানাডা, উরুগুয়ে, জার্মানি (২ বার), লন্ডন (২ বার)। সচিব মেসবাহ উল আলম ৬ মাসে বিদেশ সফর করেছেন ৬ বার। পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রীর পিএস একেএম রফিক আহমেদ ১৪ মাসে বিদেশে গেছেন ৭ বার। যুগ্ম সচিব শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী গেছেন ৪ বার, সিনিয়র সহকারী সচিব জাহিদ হোসেন মুন্সী ৫ বার। সরকারি টাকায় বিদেশ ট্যুর করেছেন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস, পিআরও পর্যন্ত। এপিএসকে পাঠানো হয়েছে জার্মানি আর পিআরও গেছেন জেনেভা, চীন, দুবাই ও ইন্ডিয়া।
সূত্র জানায়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ২৪ কর্মকর্তা গত দেড় বছরে ১০৪ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এ সময় তারা ৫৪৫ দিন ছিলেন বিদেশে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখানকার কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণে নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা করছেন না। যখন সুযোগ পান চলে যান বিদেশে। এ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগে ২ জন যুগ্ম সচিব রয়েছেন। গত ১৫ জুন এ দু’সচিব (মুজিবুর রহমান ও মোহাম্মদ মোস্তফা) একসঙ্গে প্যারিস সফরে যান। দশ দিনের সফর শেষে দেশে ফেরেন রোববার। একনাগারে ১০ দিন দু’জন যুগ্ম সচিব অফিসে না থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এসময় পড়ে থাকে তাদের রুমে।
এর আগে টেকনিক্যাল যন্ত্র পরিদর্শনে নেদারল্যান্ডস যান নৌ মন্ত্রণালয়ের ৫ নন-টেকনিক্যাল কর্মকর্তা। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
জানা যায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তিনটি ড্রেজার মেশিনসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ কেনার জন্য পৃথক দুটি প্রকল্প পরিদর্শনে নেদারল্যান্ডস সফরে যান ১০ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে পাঁচজনেরই কোনো কারিগরি জ্ঞান ছিল না। ‘কারিগরি পরিদর্শন’ নামে এ সফরে যান হুইপ ও নৌ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই আলম চৌধুরী লিটনের সহকারী একান্ত সচিব। ‘দুটি ড্র্রেজার ক্রেনবোট, ক্রু-হাউসবোট ও টাগবোটসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় প্রথম দফায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৬ সদস্য নেদারল্যান্ডস যান। তারা হলেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া, প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আবদুল মতিন, নৌ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শহিদুল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই আলম চৌধুরী লিটনের সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ ওয়াদুদ মিয়া, বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (পরিকল্পনা) মোশারেফ হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আহম্মদ সাঈদ। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া, উপসচিব শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ ওয়াদুদ মিয়া ও মোশাররেফ হোসেনের কোনো কারিগরি জ্ঞান নেই বলে জানা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে এক বছরেই ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। দাফতরিক ভ্রমণ, আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশ নেয়া ও ড্রেজার ক্রয়ে দফায় দফায় বিদেশ আসা-যাওয়ায় জন্য এ খরচ হয়েছে বলে জানায় বিআরডব্লিউটিএ। বিআরডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের এ ভ্রমণ বিলাসিতা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। ওই বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য মঈনউদ্দীন খান বাদল সাংবাদিকদের বলেন, বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা এক বছরেই এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ভ্রমণ বাবদ খরচ করেছেন। কমিটির কাছে তা মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়নি। আমরা তাদের জানিয়েছি, ‘উই আর নট হ্যাপি।’ এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয় দাফতরিক ভ্রমণ, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী পরিদর্শন বা কর্মশালায় অংশগ্রহণ ও ড্রেজারসহ অন্য নৌসামগ্রী ক্রয়ের জন্য দফায় দফায় বিদেশ গমনে এ অর্থ ব্যয় করেছেন তারা। তবু আমরা মনে করি, এ ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত ও বিলাসী। একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে শুধু ভ্রমণ বাবদ এত টাকা খরচ মোটেই সন্তোষজনক নয়।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের নামে গত এক বছরে বিশ্বের ১৮টি দেশে শিক্ষা সফর করেছেন পিএসসি’র কর্মকর্তারা। এতে সময় ব্যয় হয়েছে তিন মাসেরও বেশি।
২০১০ সালে এডিবি’র অর্থায়নে গুড গভর্নেন্স প্রোগ্রামের আওতায় কমিশনের কর্মকর্তারা এ সফর করেন। এতে কী পরিমাণ আর্থিক ব্যয় হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১০’-এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, আধুনিকীকরণ ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে পিএসসি’র চেয়ারম্যান, সদস্য ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ৯টি টিম বিভিন্ন দেশে পৃথকভাবে সর্বমোট ৯৩ দিন এ সফরে অংশ নেন। সফরের মেয়াদ ছিল সর্বোচ্চ ১১ দিন। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কোনো কোনো দেশে একই বছরে একাধিকবার সফর করেছেন টিমের সদস্যরা। সফরকৃত দেশগুলো হচ্ছে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভিয়েতনাম, চীন, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি ও সুইজারল্যান্ড।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি নির্দেশ অমান্য করেই সরকারের দাপুটে আমলারা ঘন ঘন বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। সরকারি কাজে তাদের এই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্টতার চেয়ে দাপট ও প্রভাবকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এতে সরকারের যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি কর্মঘণ্টারও অপচয় হচ্ছে, আর সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাহত।
আমলাদের বিদেশ সফরের জন্য সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই এবং এ কারণেই এসব অনিয়ম ও ক্ষতির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বছর দেড়েক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সরকারি কর্মকর্তা বছরে সর্বাধিক কতবার বিদেশ সফরে যেতে পারবেন, তা নির্ধারণ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না দাপুটে আমলাদের কারণে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবদুল করিম সরকারের শীর্ষস্থানীয ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে চার দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেন। পরিপত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, যুগ্ম সচিব ও সংস্থা প্রধানের একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি সচিবকে বছরে চার বারের বেশি বিদেশ ভ্রমণে যেতে নিষেধ করা হয়। বিদেশের সেমিনার বা ওয়ার্কশপে অন্য দেশের কোন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন, তা জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়। একইসঙ্গে এ ধরনের ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে সচিবদের অংশগ্রহণ পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে ২০০৯ সালের ১৫ জুন সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন। একজন কর্মকর্তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বিদেশ সফরে যেতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ ধরনের নির্দেশনার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব জরুরি ভিত্তিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্যক্তিগত ও দাফতরিক কারণে কারা বিদেশে যেতে পারবেন, তা নির্ধারণ করা হয। জনপ্রশাসন সচিবকে একই বছরের ২১ জুলাই পরিপত্র জারির উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তার এ নির্দেশনা পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নেয়, একাধিক বৈঠকও করে। কিন্তু কোনো পরিপত্র জারি করতে পারেনি।
সূত্র জানায়, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে ব্যস্ত থাকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দাফতরিক কাজ চলছে ঢিমেতালে। বিদ্যমান বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালার ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা নিয়মিত সফর করছেন। দাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা, সভা-সেমিনারে যোগদান কিংবা প্রশিক্ষণের অজুহাতে অহরহ বিদেশ সফর করছেন তারা। যুগ্ম সচিবরাই বেশি বিদেশ সফর করছেন। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের সময় যারা ডিসি ছিলেন এবং যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তারা বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না। যুগ্ম সচিবদের মতো বিদেশ সফরে পিছিয়ে নেই সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারাও, যে কারণে মন্ত্রণালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে না যথাসময়ে। জমে থাকছে জনগুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র। যুগ্ম সচিবরা সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও বিদেশ সফরসংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে সফর করছেন। বিদ্যমান নীতিমালায় বছরে চার বারের বেশি বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোনো কোনো কর্মকর্তা তা আমলে আনছেন না। এক বছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সফর সম্পর্কে কর্মকর্তাদের একাধিকবার সতর্ক করলেও তার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বিদ্যমান নীতিমালায় যুগ্ম সচিবের বিদেশ সফরে ছুটির জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় এই সুযোগ নিচ্ছেন তারা। কোনো কোনো প্রভাবশালী যুগ্ম সচিব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে কৌশলে রাজি করিয়ে বিদেশ সফর অব্যাহত রেখেছেন। খোদ জনপ্রশাসন সচিব এক বছরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেন। তার বিদেশ সফরসংক্রান্ত সঠিক তথ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×