somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিংসা................ছোট গল্প.

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিংসা................ছোট গল্প.


একদিন হরি চাঁদ জঙ্গলে কাঠ কাটতে ছিল । পাঁশেই ছিল একটা জলাশয় । ক্লান্ত হরি চাঁদের হাত থেকে হঠাত কুড়াল টা জলাশয়ে পড়ে যায় । হরি চাঁদ মন কষ্টে হাউ মাউ করে কাদতে থাকে । তার কান্নায় দানব হাজির হয় । বলে-
দানবঃ কীরে বাছা কী হয়েছে তোর কাদিস কেন ।
হরি চাঁদঃ আজ্ঞে আমি বড়ই অসহায় । জঞ্জলে কাঠ কেটে দিনাতিপাত করি । একদিন কাঠ কাটা না হলে পর দিন ঊপুস থাকতে হয় । আমায় আপনি দয়ে করুন । আমার কুড়াল টা এনে দিন ।বলেই আবারো হাউমাউ করে কেঁদে উঠে ।
দানবঃ কি মুস্কিল । অত কান্না কাটি করিস নাতো । (বলেই হাত বের করে জপে ) অঢরং ঢরং পঢরং । অঢরং ঢরং পঢরং । বিসবনু রঙ চিঘাং ধামান ঢড়রং । ফি শাহ । (অলৌকিক হাতের মুঠোয় দুইটা পাথরের টুকরো হাজির )
দানবঃ এই নে বতস্য । তার আগে শুনে রাখ । এই পাথরের টুকরো পরস্পর ঘষলেই আমি এসে তোর কাছে হাজির হব । আর তুই আমার কাছে যা চাবি তাই পাবি । তবে শর্ত হল তুই যা পাবি তোর প্রতিবেশি পাবে তার ডাবল । ক্ষতিটাও অনুরূপ তাই হবে । তোর একটা ক্ষতি হলে প্রতিবেশির ক্কতি হবে দুইটা ।
হরি চাঁদঃ (আগ্রহ ভরে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে পাথরের টুকরো দুটো গ্রহন করে ) বলে আজ্ঞে তাই হবে দানব বাবা । তবে আমার কুড়াল টা ............বলতে না বলতেই সন্মুখ পানে চেয়ে দেখে দানব বাবা আর নেই ।
হরিচাঁদঃ পাথর দুটো পুনঃ ঘষা দেয় । দানব বাবা এসে হাজির ।
দানবঃ কি বতস্য । কি জন্যে তলব করেছিস ।বল ।
হরি চাঁদঃ বাবা আমার কুড়ালটা জলাশয়ে পড়ে গেছে । আমি কুড়ালটা চাই ।
দানবঃ হাত বাড়ায় । বলতে থাকে ( অঢরং ঢরং পঢরং । অঢরং ঢরং পঢরং । বিসবনু রঙ চিঘাং ধামান ঢড়রং । ফি শাহ । (অলৌকিক হাতের মোঠোয় কুড়ালটা চলে আসে )
হরি চাঁদঃ হরি চাদঃ ( হারানো কূড়ালটা দেখে কি যে খুশি হয় তা বলা বাহুল্য ) হরি চাঁদ দানব বাবার হাত থেকে কুড়ালটা নেয় । ধন্যবাদ দিয়ে কুড়ালটায় বার বার চুম্বন করতে থাকে । ধন্যবাদ দেয় দানব বাবাকে বাবা তোমার বহুত......কথা শেষ না করতেই তাকিয়ে দেখে সন্মোখ পানে দানব বাবা নেই ।
হরিচাদ সারা দিন কাঠ কাটে। বিকালে হাটে যায় । অন্য দিনের তুলনায় সেদিন কাঠ কাটা টা একটু বেশি হয় । মনের আনন্দে প্রতিদিনের মত প্রতিবেশী রায় চাঁদের পাঁশে কাঠ সাঁজায় ।
রায় চাঁদঃ কিরে হরি । আজ এতো কম কাঠ ক্যানেরে । হরি প্রথমে বিস্মিত হয় পরে চোখ তোলে তাকিয়ে দেখে সকলের কাঠ যেন তার চেয়ে ডাবল । হরি বুঝতে পারে । রায় চাদের কাছে যায় । দেখে চক চক করছে দুইটি কুড়াল । কোন কথা না বলেই নিজের জায়গায় ফিরে আসে । কাঠ বেচে কোন রকম বাজারটা সেরে কষ্ট আর চরম প্রতি হিংসা মনে বাড়ি ফিরে । ডাকে বউ রোহিনী কে ।
রোহিনীঃ আপনার মনটা এতো বেজার কেন । শরীরটা কি খারাপ নাকি । ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করে । হরি কোন উত্তর দেয় না । লুঙ্গির ভাজে ভাজে পেঁচানো পাথর দুটো বের করে । একটু জোর গলায় বলতে থাকে শালারা আমার টা দিয়ে মুখে হাসি ফালাস , দেখি তোদের হাসি কতক্ষন থাকে । বউ কে সব কথা খোলে বলে । এবং শেষে যে কথাটি বলে তা হল তার হুকুম ছাড়া যেন পাথরে কখনও ঘষা না দেয় । রোহিনী সন্মত হয় । আবার মনে মনে একটু উৎসাহিতও হয় ।
রোহিনীঃ আমারে একটু দেখাও দেখি তোমার জাদুর খেলা । হরি চাঁদ রেগে উঠে । মারতে যায় । বলে খবরদার এইটা খুব বিপদ না হলে কখনই করা যাবে না কারন আমার একটা হলে প্রতিবেশির হবে দুইটা । রোহিনী বলে তাতে সমস্যা কি ?
হরি চাঁদঃ ওই কথা রাখ তো এখন । খেতে দে বড়ই পেরেশানিতে আছি বউ ।
রোহিনীঃ যাও কলের পাড় থেকে হাত মুখ ধুয়ে আস । আমি খাবার বাড়তাছি ।

সময় চলছে । হরি চাঁদের কষ্ট যেন দিনে দিনে বেড়েই চলছে ।
বউ রোহিনী মাঝে মধ্যেই হরি চাঁদ কে সারাশ দিয়ে ধরে । পাথরে ঘষা দিলেই তো ভাগ্যের পরিবতন ঘটে। সুন্দরী বউ রোহিনীর সকল কথা ভাল লাগলেও যেন এই একটি কথা তার গলায় বিষের মত বিধে । বউ কে সতর্ক করেই বলে ফের এই কথা বললে কিন্তু আমি পাথর গুলি নদীতে ফেলে দেবো ।
বউ কিছু দিন চুপ থাকে ।
ছনের ঘর । রোদের সময় রোদ বৃষ্টির সময় বৃষ্টি যেন রোহিনীকেই প্রথমেই স্পর্শ করে । এতো কষ্টের জীবন যেন রোহিনীর আর ভাল লাগেনা । স্বামীর অজান্তে এক গাদা গালি গালাজ করে । বলে এমন হিংসুটে মনের স্বামী যেন কারো কপালে না জোটে । আমি দেখে তোর মত খাটাশের ঘর করে গেলাম অন্য কেউ হলে লাঠি মেরে চলে যেত পরক্ষনেই আবার বলে । ছি ছি এ সব কি বলছি । এ সব যে পাপ ।
আষাঢ়ের মাঝামাঝি । মুষুলধারে বৃষ্টি আর বৃষ্টি । স্বামী হরি চাঁদ বেশ ক,দিন বাসায় ফিরে না । তার সহিত যোগাযোগেরও কোন ব্যবস্থা নেই । এক দিকে স্বামীর না ফেরার কষ্ট অন্য দিকে সারা রাত দিন ভেজা শরীরের কষ্ট । মাঝে মধ্যে রোহিনী বেশ কয়েক বার পাথর দুটি হাতে নিয়েছে ঘষা দেবে আবার কি জানি কি ভেবে পরক্ষনিই রেখে দিয়েছে । কিন্তু আজ এই গভির রাতে বৃষ্টি আর বাতাসের নির্মম কষ্টের মুখে রোহিনী স্থির করেছে দানব কে সে আজ ডাকবেই ।
সত্যি তাই হল । কোন রুপ ভাবনার অবকাশ না দিয়ে দুঃসাহসের সহিত পাথরে পাথরে ঘষা দিল আর সঙ্গে সঙ্গে হাজির হল এক ভয়ংকর দানব । বলে ঊঠল-
দানবঃ কি চাই মানবী ।
রোহিনীঃ আমাকে এই ভাঙ্গা ঘরটারে টিনের ঘর করে দাও । দানব সঙ্গে সঙ্গে পড়তে শুরু করল-
দানবঃ-অঢরং ঢরং পঢরং । অঢরং ঢরং পঢরং । বিসবনু রঙ চিঘাং ধামান ঢড়রং । ফি শাহ ।
রোহিনীঃ আকাশের দিকে তাকায় । চকচকে টিন । কোন পানির সাড়া শব্দ নেই । দানব কে ধন্যবাদ দিয়ে বলে দানব বাবা...সত্যি তুমি ভাল ।

হরি চাঁদ এবার বাড়ি ফিরেছে । মেঘলা আকাশ আর আগের মত নেই । মঝে মধ্যে একটু আধটু রোদ জিলিক দেয় । টিনের চালের চিকচিক আলো হরি চাঁদের চোঁখে প্রতিবিম্বিত হয় । থমকে উঠে । বে খেয়ালে তো ভূল করে অন্য পথে আসিনি মনকে জিজ্ঞেস করে, এদিক সেদিক চায় । দেখে গাছ পালা, রাস্তা সবি তো ঠিক আছে । কিন্তু বাড়ি জোড়ে শুধু টিন আর টিনের ঘর ।
বাজারের পর একটা ছোট নদি । ঝারকাটা তার নাম । নদীর কুল ঘেঁষেই গুনারীতলা গ্রাম । ছনের ঘরে যে গ্রাম অত্র মহকুমায় প্রসিদ্ধ হঠাৎ কয় দিনেই বিস্তর পরিবর্তন । প্রথমে অবাক হলেও পরে আর বুঝতে তার বাকি রইলো না ।
অমারম ঘরে ঢুকেই স্ত্রী রীহিনীকে বে দম পিটাল ।
তার পর কাল ক্ষেপণ না করেই আড়ের উপর থেকে পাথর দুটি কে দুই হাতের মুঠোই নিল ।
একটা জোরে দিল সঙ্গে সঙ্গেই দানব হাজির ।
দানবঃ কি চাস বৎস্য ।

হরি চাঁদঃ আমার বাম পাশের চোঁখ টা অন্ধ করে দাও বাবা ।
দানব কোন রুপ দেরি করল না । সঙ্গে সঙ্গে চোঁখ টা তার অন্ধ হয়ে গেল ।
সাথে সাথে অন্ধ হল প্রতিবেশী সকলের দুই চোঁখ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×