হিংসা................ছোট গল্প.
একদিন হরি চাঁদ জঙ্গলে কাঠ কাটতে ছিল । পাঁশেই ছিল একটা জলাশয় । ক্লান্ত হরি চাঁদের হাত থেকে হঠাত কুড়াল টা জলাশয়ে পড়ে যায় । হরি চাঁদ মন কষ্টে হাউ মাউ করে কাদতে থাকে । তার কান্নায় দানব হাজির হয় । বলে-
দানবঃ কীরে বাছা কী হয়েছে তোর কাদিস কেন ।
হরি চাঁদঃ আজ্ঞে আমি বড়ই অসহায় । জঞ্জলে কাঠ কেটে দিনাতিপাত করি । একদিন কাঠ কাটা না হলে পর দিন ঊপুস থাকতে হয় । আমায় আপনি দয়ে করুন । আমার কুড়াল টা এনে দিন ।বলেই আবারো হাউমাউ করে কেঁদে উঠে ।
দানবঃ কি মুস্কিল । অত কান্না কাটি করিস নাতো । (বলেই হাত বের করে জপে ) অঢরং ঢরং পঢরং । অঢরং ঢরং পঢরং । বিসবনু রঙ চিঘাং ধামান ঢড়রং । ফি শাহ । (অলৌকিক হাতের মুঠোয় দুইটা পাথরের টুকরো হাজির )
দানবঃ এই নে বতস্য । তার আগে শুনে রাখ । এই পাথরের টুকরো পরস্পর ঘষলেই আমি এসে তোর কাছে হাজির হব । আর তুই আমার কাছে যা চাবি তাই পাবি । তবে শর্ত হল তুই যা পাবি তোর প্রতিবেশি পাবে তার ডাবল । ক্ষতিটাও অনুরূপ তাই হবে । তোর একটা ক্ষতি হলে প্রতিবেশির ক্কতি হবে দুইটা ।
হরি চাঁদঃ (আগ্রহ ভরে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে পাথরের টুকরো দুটো গ্রহন করে ) বলে আজ্ঞে তাই হবে দানব বাবা । তবে আমার কুড়াল টা ............বলতে না বলতেই সন্মুখ পানে চেয়ে দেখে দানব বাবা আর নেই ।
হরিচাঁদঃ পাথর দুটো পুনঃ ঘষা দেয় । দানব বাবা এসে হাজির ।
দানবঃ কি বতস্য । কি জন্যে তলব করেছিস ।বল ।
হরি চাঁদঃ বাবা আমার কুড়ালটা জলাশয়ে পড়ে গেছে । আমি কুড়ালটা চাই ।
দানবঃ হাত বাড়ায় । বলতে থাকে ( অঢরং ঢরং পঢরং । অঢরং ঢরং পঢরং । বিসবনু রঙ চিঘাং ধামান ঢড়রং । ফি শাহ । (অলৌকিক হাতের মোঠোয় কুড়ালটা চলে আসে )
হরি চাঁদঃ হরি চাদঃ ( হারানো কূড়ালটা দেখে কি যে খুশি হয় তা বলা বাহুল্য ) হরি চাঁদ দানব বাবার হাত থেকে কুড়ালটা নেয় । ধন্যবাদ দিয়ে কুড়ালটায় বার বার চুম্বন করতে থাকে । ধন্যবাদ দেয় দানব বাবাকে বাবা তোমার বহুত......কথা শেষ না করতেই তাকিয়ে দেখে সন্মোখ পানে দানব বাবা নেই ।
হরিচাদ সারা দিন কাঠ কাটে। বিকালে হাটে যায় । অন্য দিনের তুলনায় সেদিন কাঠ কাটা টা একটু বেশি হয় । মনের আনন্দে প্রতিদিনের মত প্রতিবেশী রায় চাঁদের পাঁশে কাঠ সাঁজায় ।
রায় চাঁদঃ কিরে হরি । আজ এতো কম কাঠ ক্যানেরে । হরি প্রথমে বিস্মিত হয় পরে চোখ তোলে তাকিয়ে দেখে সকলের কাঠ যেন তার চেয়ে ডাবল । হরি বুঝতে পারে । রায় চাদের কাছে যায় । দেখে চক চক করছে দুইটি কুড়াল । কোন কথা না বলেই নিজের জায়গায় ফিরে আসে । কাঠ বেচে কোন রকম বাজারটা সেরে কষ্ট আর চরম প্রতি হিংসা মনে বাড়ি ফিরে । ডাকে বউ রোহিনী কে ।
রোহিনীঃ আপনার মনটা এতো বেজার কেন । শরীরটা কি খারাপ নাকি । ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করে । হরি কোন উত্তর দেয় না । লুঙ্গির ভাজে ভাজে পেঁচানো পাথর দুটো বের করে । একটু জোর গলায় বলতে থাকে শালারা আমার টা দিয়ে মুখে হাসি ফালাস , দেখি তোদের হাসি কতক্ষন থাকে । বউ কে সব কথা খোলে বলে । এবং শেষে যে কথাটি বলে তা হল তার হুকুম ছাড়া যেন পাথরে কখনও ঘষা না দেয় । রোহিনী সন্মত হয় । আবার মনে মনে একটু উৎসাহিতও হয় ।
রোহিনীঃ আমারে একটু দেখাও দেখি তোমার জাদুর খেলা । হরি চাঁদ রেগে উঠে । মারতে যায় । বলে খবরদার এইটা খুব বিপদ না হলে কখনই করা যাবে না কারন আমার একটা হলে প্রতিবেশির হবে দুইটা । রোহিনী বলে তাতে সমস্যা কি ?
হরি চাঁদঃ ওই কথা রাখ তো এখন । খেতে দে বড়ই পেরেশানিতে আছি বউ ।
রোহিনীঃ যাও কলের পাড় থেকে হাত মুখ ধুয়ে আস । আমি খাবার বাড়তাছি ।
সময় চলছে । হরি চাঁদের কষ্ট যেন দিনে দিনে বেড়েই চলছে ।
বউ রোহিনী মাঝে মধ্যেই হরি চাঁদ কে সারাশ দিয়ে ধরে । পাথরে ঘষা দিলেই তো ভাগ্যের পরিবতন ঘটে। সুন্দরী বউ রোহিনীর সকল কথা ভাল লাগলেও যেন এই একটি কথা তার গলায় বিষের মত বিধে । বউ কে সতর্ক করেই বলে ফের এই কথা বললে কিন্তু আমি পাথর গুলি নদীতে ফেলে দেবো ।
বউ কিছু দিন চুপ থাকে ।
ছনের ঘর । রোদের সময় রোদ বৃষ্টির সময় বৃষ্টি যেন রোহিনীকেই প্রথমেই স্পর্শ করে । এতো কষ্টের জীবন যেন রোহিনীর আর ভাল লাগেনা । স্বামীর অজান্তে এক গাদা গালি গালাজ করে । বলে এমন হিংসুটে মনের স্বামী যেন কারো কপালে না জোটে । আমি দেখে তোর মত খাটাশের ঘর করে গেলাম অন্য কেউ হলে লাঠি মেরে চলে যেত পরক্ষনেই আবার বলে । ছি ছি এ সব কি বলছি । এ সব যে পাপ ।
আষাঢ়ের মাঝামাঝি । মুষুলধারে বৃষ্টি আর বৃষ্টি । স্বামী হরি চাঁদ বেশ ক,দিন বাসায় ফিরে না । তার সহিত যোগাযোগেরও কোন ব্যবস্থা নেই । এক দিকে স্বামীর না ফেরার কষ্ট অন্য দিকে সারা রাত দিন ভেজা শরীরের কষ্ট । মাঝে মধ্যে রোহিনী বেশ কয়েক বার পাথর দুটি হাতে নিয়েছে ঘষা দেবে আবার কি জানি কি ভেবে পরক্ষনিই রেখে দিয়েছে । কিন্তু আজ এই গভির রাতে বৃষ্টি আর বাতাসের নির্মম কষ্টের মুখে রোহিনী স্থির করেছে দানব কে সে আজ ডাকবেই ।
সত্যি তাই হল । কোন রুপ ভাবনার অবকাশ না দিয়ে দুঃসাহসের সহিত পাথরে পাথরে ঘষা দিল আর সঙ্গে সঙ্গে হাজির হল এক ভয়ংকর দানব । বলে ঊঠল-
দানবঃ কি চাই মানবী ।
রোহিনীঃ আমাকে এই ভাঙ্গা ঘরটারে টিনের ঘর করে দাও । দানব সঙ্গে সঙ্গে পড়তে শুরু করল-
দানবঃ-অঢরং ঢরং পঢরং । অঢরং ঢরং পঢরং । বিসবনু রঙ চিঘাং ধামান ঢড়রং । ফি শাহ ।
রোহিনীঃ আকাশের দিকে তাকায় । চকচকে টিন । কোন পানির সাড়া শব্দ নেই । দানব কে ধন্যবাদ দিয়ে বলে দানব বাবা...সত্যি তুমি ভাল ।
হরি চাঁদ এবার বাড়ি ফিরেছে । মেঘলা আকাশ আর আগের মত নেই । মঝে মধ্যে একটু আধটু রোদ জিলিক দেয় । টিনের চালের চিকচিক আলো হরি চাঁদের চোঁখে প্রতিবিম্বিত হয় । থমকে উঠে । বে খেয়ালে তো ভূল করে অন্য পথে আসিনি মনকে জিজ্ঞেস করে, এদিক সেদিক চায় । দেখে গাছ পালা, রাস্তা সবি তো ঠিক আছে । কিন্তু বাড়ি জোড়ে শুধু টিন আর টিনের ঘর ।
বাজারের পর একটা ছোট নদি । ঝারকাটা তার নাম । নদীর কুল ঘেঁষেই গুনারীতলা গ্রাম । ছনের ঘরে যে গ্রাম অত্র মহকুমায় প্রসিদ্ধ হঠাৎ কয় দিনেই বিস্তর পরিবর্তন । প্রথমে অবাক হলেও পরে আর বুঝতে তার বাকি রইলো না ।
অমারম ঘরে ঢুকেই স্ত্রী রীহিনীকে বে দম পিটাল ।
তার পর কাল ক্ষেপণ না করেই আড়ের উপর থেকে পাথর দুটি কে দুই হাতের মুঠোই নিল ।
একটা জোরে দিল সঙ্গে সঙ্গেই দানব হাজির ।
দানবঃ কি চাস বৎস্য ।
হরি চাঁদঃ আমার বাম পাশের চোঁখ টা অন্ধ করে দাও বাবা ।
দানব কোন রুপ দেরি করল না । সঙ্গে সঙ্গে চোঁখ টা তার অন্ধ হয়ে গেল ।
সাথে সাথে অন্ধ হল প্রতিবেশী সকলের দুই চোঁখ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৩