ভোররাতের জ্বর নিয়ে দুপুর পর্যন্ত পার করে আর বাসায় বসে থাকতে পারলাম না। ভরদুপুরে চোখে ঘোলা দৃষ্টি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। পেট মোটা ঢাউস আকৃতির বাসে চেপে বসতেই খেয়াল করলাম সামনের সিটে এক সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণী। চুল গুলো বার বার এসে পড়ছে কপালে। ভুরু কুঁচকে বিরক্ত ভঙ্গিতে সরিয়ে দিচ্ছে তরুণী। নীল রঙের জামায় বেশ লাগছে। শিল্প সাহিত্যে এধরণের তরুণীদের নাম সাধারণত নীলা হয়। ধরে নিলাম এর নামও তাই।
ঘাড়ের পেছনে দৃষ্টি অনুভব করে একটু যেন সচেতন এবং ঢঙ্গি হয়ে গেল নীলা! আড়চোখে বেশ কয়েকবার পেছনে দেখারও চেষ্টা করলো। কিন্তু আমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাকে ব্যর্থ করলো। কপাল থেকে চুল সরানোর পরিমাণ বেড়ে গেল, সাথে ওড়নাও টেনেটুনে ঠিক করে নিল। জানালার ঝাপসা গ্লাসে তাকিয়েও দেখার চেষ্টা করলো একবার। বেহুদ্দা আমি সরে গিয়ে সে আশায়ও গুঁড়ে বালি নিক্ষেপ করলাম!
বাস ছুটে চলেছে শহরতলীর শান্ত রাস্তা জুড়ে। আকাশ ভরা ঘন কালো মেঘ টসটস করছে! যে কোন মুহূর্তে নামবে বৃষ্টি। আশেপাশের যাত্রীরা সবাই জানালা বন্ধের তোড়জোড় শুরু করেছে। অবশ্য নীলা আর আমি দুজনেই এ ব্যাপারে উদাসিন। খোলা জানালা দিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে ঝড়ো বাতাস। জ্বরে উত্তপ্ত শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। নীলার মুখে পানিতে ভেজা একরাশ এলোচুল লেপ্টে আছে। হাত আড়াআড়ি করে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে নীলা। ওর ঠোঁটের ডান কোণের তীলটা যেন সৌন্দর্য ভয়ঙ্কর ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। অদ্ভূত লাগছে দেখতে, অদ্ভূত!
এমন সৌন্দর্য বেশীক্ষণ দেখতে নাই। নেমে পড়লাম বাস থেকে এক সিগন্যালে। ততক্ষণে বৃষ্টির ফোঁটা বড় হয়েছে, কেউ লাফ দিয়ে উঠছে বাসে। কেউবা রিকশায় সাদা পলিথিন দিয়ে হুড তুলে যাচ্ছে। আমিও একটা রিকশায় উঠে পড়লাম। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট, হুড খোলা। মনের কষ্ট গুলো হঠাৎ যেন উঁকি মেরে উঠলো গহীন থেকে। গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলাম,
আমি বৃষ্টি দেখেছি
বৃষ্টির ছবি এঁকেছি
আমি রোদে পুড়ে
ঘুরে ঘুরে অনেক কেঁদেছি।
আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার
খেলা থামে নি,
শুধু তুমি চলে যাবে
আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
আমি বৃষ্টি দেখেছি….!
রিকশাওয়ালা গতি কমিয়ে দরদী কন্ঠে বললো, "আহারে, আহারে! ভাইজান, এত দুষ্কু আপ্নার মনে!"
মাগুর রুবায়েত
জুলাই ৩০, ২০১৪
ব্যাংক টাউন, সাভার।