somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন এবং আমার গল্পেরা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনিয়মিত হয়ে গেছি ব্লগে। কিছুটা ব্যস্ততা, কিছুটা অলসতা...সব মিলিয়ে হ য ব র ল অবস্থা। মাঝে মাঝে উকি মেরে দেখি নতুন-পুরাতন মুখের সমাহার। তবে পুরাতনদের চেয়ে নতুনদের ভিড়ই যেন বেশী। ভাল লাগে হোমপেজ জুড়ে তাদের লেখনী দেখতে। ভাল লাগে প্রিয় ব্লগারদের পোস্ট পড়তে। অনেক দিন পর ফেসবুকে লেখা নিজের কিছু বিচ্ছিন্ন স্ট্যাটাস নিয়ে পোস্ট ফেদে বসলাম। জানি না সবার কেমন লাগবে।

১.
'একটা কালোর উপর খয়েরী ফুটকি ফুটকি সাপ ফোঁস ফোঁস করে বার বার ছোবল মারছে নিজের তির তির করে কাঁপতে থাকা লেজে। গিলে খেতে চাইছে যেন নিজেকে উন্মত্ত কোন ক্রোধে। ক্ষতবিক্ষত লেজটা এদিক ওদিক ছুটে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে। মোচড়াচ্ছে, কখনো বা গুটিয়ে যাচ্ছে, গুঙিয়ে উঠছে গোঁ গোঁ করে! পাশে দাঁড়িয়ে সাপটির মৃত্যু খেলা দেখছে ওলোকুন নামের লৈঙ্গিগ অনির্দেশ্যতাসম্পন্ন দেবতা যার মুখমন্ডল এমন ভয়ঙ্কর মনে করা হয়ে থাকে যে তা থাকে সবসময় মুখোশের আড়ালে। অ্যামোনিয়ার মতো কটু দুর্গন্ধ বের হয় তার বগলের ঘাম থেকে, ভারী নিশ্বাস চারপাশটা আরো ভারী করে দেয়। হঠাৎ দেবতা আলতো হাতে সাপটিকে টেনে তুলে হা করা মুখের কাছে। মৃত্যুভয় আর আক্রমনে ক্লান্ত সাপ যেন আরো সিঁটিয়ে যায়। দেবতার দাঁতের নিচে পিষ্ট সাপের করুণ কিন্তু অশ্লীল আর্তচিৎকারে কান পাতা দায়। কষ বেয়ে পড়ে কালচে লাল রক্ত। সুরুৎ শব্দে দেবতা চেটে নেয় আপন মনে। দেবতার মুখোশ পরা মুখ হাসে নিঃশব্দে। এরপর?'

অন্যান্য দিনের মতোই আর সহ্য করতে পারেনি অনি। এমন বিদঘুটে স্বপ্ন কেন যে বার বার দেখে বুঝে পায় না! তৃষ্ণায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে, জিভটা শুকিয়ে রাবারের মতো হয়ে গেছে, ঘামছে দর দর করে। বিছানা থেকে মাটিতে পা রাখলো অনি, দৃষ্টি আধখোলা দরজার দিকে। হাঁটার জন্য পা বাড়ালো সামনের দিকে। আফসোস, সে যদি জানতো দরজার ওপাশে সত্যিই বসে আছে স্বপ্নে দেখা সেই কালোর উপর খয়েরী ফুটকি ফুটকি সাপ, ছোবল মারছে নিজের ক্ষতবিক্ষত লেজে....পাশে দেবতার কথা ভাবছেন? জানেনই তো দেবতারা পৃথিবীতে বাস করে না।

স্বপ্ন এবং...
আগস্ট ৬, ২০১৪
ব্যাংক টাউন, সাভার।

২.
- হাতটা ধরবে?
- দাও...।
- না থাক।
- কেন?
- আগে ধরলে না কেন?
- তুমি আগে বলনি তো!
- সব কথা বলে দিতে হবে?
- আসলে....ঠিক তা না! মানে...!
- থাক, আর বানিয়ে বানিয়ে বলতে হবে না।
- আমি তোমাকে ভালবাসি অনি।
- জানি।
- তুমি?
- বলে দিতে হবে? তুমি বোঝ না?
- বুঝি তো, কিন্তু তবুও শুনতে ইচ্ছা করে।
- মন দিয়ে শুনে নাও।
- চেষ্টা তো করি!
- পাও না শুনতে?
- হুম, খুব পাই! সারাক্ষণ কানের কাছে গুন গুন করে!
- তাই?
- হুমম।
- একটু কাছে এসো তো...
- আরো আসবো?
- আমি নিশ্চয় মোমের পুতুল নই যে ছুলেই গলে যাবো!
- একথা বলছো কেন?
- তাহলে যে জড়িয়ে ধরছো না?
- অনি?
- কি?
- না, থাক।
- বলো?
- আমি সব জিনিস এত কম বুঝি কেন?
- সে জন্যই তো তোমাকে এত ভালবাসি।
- সারা জীবন বাসবে?
- তা তো জানি না!
- হুম, আমি কিন্তু সারা জীবনই এমন ভালবাসবো।
- তোমার কথা যেন সত্য হয়।

অতঃপর নীরবে ভালবাসার উত্তাপ আদান প্রদান, অনিশ্চিত ভবিষ্যত, শঙ্কা, আশা। কেউ জানে না এর শেষ কোথায়।

অবুঝ
২০ ভাদ্র, ১৪২১
বাইশটেকী, মিরপুর-১৩, ঢাকা।

৩.
অফিস থেকে ফিরে ফ্ল্যাটের দরজাটা খুলতেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল! ভেতরে বেডরুম থেকে খচমচ আওয়াজ শুনতে পেল হাসান। ফ্ল্যাটের ভেতরটা কেমন যেন হিম হিম ভাব! সেটা অবশ্য মনের ভুলও হতে পারে। রাত বাজে সাড়ে এগারোটা, শিপমেন্টের ঝামেলার কারনে এমনিতেই ফিরতে লেট হয়ে গেছে। ভেবেছিলো বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে হালকা ডিনারের পর সোজা বিছানায় যাবে। কিন্তু তা আর হলো কৈ! অন্ধকার ভালো লাগে না হাসানের। তাই এদিক ওদিক হাতড়ালো মোমবাতির আশায়। পুরা তো পাওয়া যাবে না, হয়তো ভাঙা কোন টুকরা মিলতে পারে। শেষে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে বেডরুমের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেটের প্যাকেট আর ম্যাচ বের করলো। কাঠি বের করে হাতে নিতেই আবার সেই খচমচ শব্দটা কানে আসলো! এবার খুব কাছ থেকে, ঘরের ভেতরেই! মনে হলো কি যেন একটা আছে ওখানে! অন্ধকারে ঘাড় ফিরিয়ে কিছুই চোখে পড়লো না ওর। ধুর্! সারাদিনের খাটনি শেষে কি সব কল্পনা করছে সে! পুরাই ছেলেমানুষী ব্যাপার।

কাঠিটা ঠুকে দিলো ম্যাচবক্সের গায়ে, ফস করে জ্বলে উঠলো শিখা। তবে সাধারণ নয়, নীলচে হলুদ জ্বলজ্বলে! ঘর ভরে উঠলো কাঠ-বারুদের দহনে সৃষ্ট আলোতে। জানালার কাঁচে নিজের আবছা প্রতিবিম্ব দেখছে হাসান।

কিন্তু একি?! প্রতিবিম্ব একটা নয়, দু'টো! পেছনেরটা ডান ঘেসে আসছে সামনেরটার দিকে! স্থির মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে হাসান। ওর ঘাড়ের কাছে টের পেল হিম শীতল ঘন নিঃশ্বাস! নিঃশ্বাসের বোঁটকা দুর্গন্ধে শরীর ঘুলিয়ে আসছে যেন। ক্ষুরধার এক জোড়া দাঁতের ভেতর থেকে লকলক করছে সাপের মতো চেরা জিভ! যে কোন মুহূর্তে দাঁত দুটো নেমে আসতে পারে মাথার পেছনে, ঘাড়ে। এমন সময় হাতে ছ্যাঁকা দিয়ে ম্যাচের কাঠিটা নিভে গেল! আবারো অন্ধকার, কে জানে সেই অন্ধকারে হাসান সেই দ্বিতীয় ছায়ার মালিককে খুঁজে পেয়েছিলো কিনা!

শীতল ছায়া
আগস্ট ৭, ২০১৪
ব্যাংক টাউন, সাভার।

৪.
রাজকুমারী এমন মন উতাল করা সুন্দরী ছিল যে তা প্রায় অবাস্তব মনে হতো। ছিপছিপে শরীরে তার সরু নাসিকা, গোলাকৃতি করোটি, বাঁকা একজোড়া চোখ, অক্ষত সমস্ত দাঁত মিলিয়ে তাকে অনেকটা গ্রীক দেবীদের মতো লাগতো। কখনো না কাটা তার চুল খোলা থাকলে তার হাঁটা চলায় অসুবিধা হতো। বেণী করলে সেটা কায়ায় পেঁচিয়ে থাকতো সিংহের লেজের মতো।

কিন্তু কোন এক অজানা অভিশাপে রাজকুমারীর নিটোল সৌন্দর্য ধূলিস্মাত হয়ে গেল। হিংসা আর কুটিলতা তার মনের বিছানায় সঙ্গমরত অবস্থায় ধরা পড়লো। মাত্র গুটিকয় মাসের মধ্যেই হলদে গুটিকা আর নীল ধোঁয়ার তোড়ে পৃথিবী থেকে মুছে গেল সে। প্রলুব্ধকর, লোলুপ, নির্লজ্জ এবং তলপেটে পুরো এক সেনাছাউনিকে তুষ্ট করার মতো ক্ষুধাঅলা তথাকথিত কুলিন রাজবংশ থেকে উদ্ভূত এই তরুণী ছিল পোষ না মানা এক বর্ণসঙ্করী। তার হরিণী চোখের মায়া হারিয়ে গেল এবং তার বুদ্ধি হয়ে গেল ভোঁতা। সে পায়খানা করলো রক্ত, বমি করলো পিত্তরস, তার মোহনীয় দেহবল্লরী সাত দিনের পুরনো লাশের মতো তামাটে আর ঠোঁসা হয়ে উঠলো, এবং গলির লোমওঠা দেশী কুকুরকে হকচকিয়ে দেয়ার মতো গুড়ুম গাড়ুম শব্দে যখন তখন পাদ ছাড়তে লাগলো সে। একমাত্র মুরগী ছাড়া অন্য যে কোন প্রাণী দেখলেই আঁতকে উঠতো। গাঁজলা দিয়ে বেরিয়ে আসা নিজের রক্তে বিষম খেতে খেতে হুপ হুপ করতে করতে প্রচন্ড গতিতে একস্থানে দাঁড়িয়ে ঘুরা অভ্যাসে পরিনত করলো রাজকুমারী।

ভীতিপ্রদ দৃষ্টিভ্রম রোগে ভুগন্ত অবস্থায় ডাইনী সদৃশ রাজকুমারীকে রাজার নির্দেশে পিটিয়ে মেরে ফেলল কৃতদাসীরা। কেউ ধরলো তার চুলের মুঠি, কেউ বা পা তুললো গলায়, কারো হাতের পাকানো কিল পড়লো ওর পিঠে। এখনো বহু বছর পরে গভীর রাতে বাচ্চাদের ভয় দেখানোর জন্য জনপ্রিয় গানের কলি হিসাবে ঐ কাহিনী শোনায় মায়েরা।

রাজকুমারী
আগস্ট ৫, ২০১৪
ধলেশ্বরীর কূল থেকে।


মানুষের মনের প্রতিক্রিয়া জানার অভিপ্রায়ে লেখালেখি করছি ইদানিং। রাগ, ভালবাসা, হিংসা, ঘৃণা, কামনা, লালসা, স্নেহ....প্রত্যেকটা অনুভূতির অলিতে গলিতে বিচরণ করছি। কেমন লাগলো জানালে খুশি হবো। :)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×