দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতের হৃৎপিন্ড, এমন একটি শহর যা ঐশ্বর্য, আধুনিকতা এবং সীমাহীন সম্ভাবনার প্রতীক। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা, উন্নত নাগরিক সুবিধা, বিলাসবহুল সব আয়োজন আর সর্বোচ্চ প্রুযক্তির ছোঁয়া মরুভূমি এবং সমুদ্র বেষ্টিত দুবাইকে পৃথিবীর অন্য শহর গুলো থেকে অনেকটাই আলাদা করে রেখেছে।
শ্বাসরুদ্ধকর আকাশচুম্বী অট্টালিকা থেকে শুরু করে সমুদ্র সৈকত, সাংস্কৃতিক বিস্ময় থেকে অসাধারন সব শপিং মল, মরুভূমির সোনালী বালি থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এই প্রাণবন্ত মহানগরকে ঐতিহ্য এবং নতুনত্বের এক অনন্য রূপ প্রদান করেছে। দুবাই শহর পার্সিয়ান গালফ সি কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এটাকে একটা বন্দরনগরীও বলা যায়। সমুদ্র ছাড়া দুবাইয়ের বাকি অংশ মরুভূমি দিয়ে পরিবেষ্টিত। দুবাই সারা বিশ্বের টুরিস্ট এবং ট্রাভেলারদের কাছে অন্যতম গন্তব্য স্থান হিসাবে পরিচিত। দুবাই এমন একটা শহর রাজ্য যেখানে অসম্ভব বলে কোন কিছু নাই! পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যেও দুবাই অন্যতম।
দুবাই মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি রাজ্য, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি রাজতন্ত্রের মধ্যে একটি। নির্বাহী কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের প্রধান হলেন দুবাইয়ের শাসক, শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। দুবাইয়ের শাসক দুবাই আমিরাতের নিরঙ্কুশ রাজা ও সরকারপ্রধান এবং সরকারী বিভাগ স্থাপন, আইন জারি এবং সংশোধন করার জন্য ডিক্রি জারি করার একমাত্র কর্তৃত্বধারী সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এছাড়াও শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম একাধারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধাণমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তবে দুবাই সরকার এবং শাসন পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা আসলে আমার এই সিরিজের উদ্দেশ্য না। দুবাই ট্যুর গাইড লাইন সিরিজে আমি আপনাদেরকে জানাবো বাংলাদেশ থেকে কি ভাবে দুবাই ভ্রমণে যাবেন, ভিসা কি ভাবে সংগ্রহ করবেন, এয়ার টিকেটের দাম কেমন, এয়ারপোর্টে কি কি করতে হবে, ইমিগ্রেশন কি ভাবে ফেস করতে হবে, দুবাইয়ের আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পটের মধ্যে কোনটা কোনটা দেখবেন, কখন দেখতে যাবেন, কি ভাবে টিকেট সংগ্রহ করবেন, দুবাই সিটিতে কি ভাবে কম খরচে ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবেন, হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে কি রকম খরচ হতে পারে,শপিং করার জন্য বেস্ট প্লেস কোন গুলো এসব বিষয় নিয়ে। দুবাই ভ্রমণ নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তারা কম্পিউটার বা ফোনের স্ক্রিনে মনোযোগ দিয়ে পড়তে বসে যান!
দুবাই ট্যুর গাইড লাইন সিরিজের প্রথম পর্বে ভিসা, এয়ার টিকেট, এয়ারপোর্টে করণীয়, ইমিগ্রেশন, ট্রান্সপোর্ট, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে তথ্য পাবেন। তো আসুন শুরু করা যাকঃ
ভিসাঃ দুবাই ভ্রমণের জন্য প্রথমেই আপনার একটি ভ্যালিড টুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। এই টুরিস্ট ভিসাকে ভিজিট ভিসাও বলা হয়। টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ কিছুদিন আগেও সর্বোচ্চ ৩ মাস ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেটা কমিয়ে ২ মাস এবং ১ মাসের জন্য ভিসা ইস্যু করছে। দুবাইয়ের টুরিস্ট ভিসার জন্য আপনাকে তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হবে না। পৃথিবীর যে কোন দেশের তুলনায় দুবাইয়ের টুরিস্ট ভিসা পাওয়া সহজ। এর জন্য আপনাকে পূর্বে অন্য কোন দেশ ভ্রমণের প্রয়োজনও পড়বে না। সরাসরি দুবাই দিয়েই শুরু করতে পারবেন আপনার বিশ্ব ভ্রমণ।
দুবাইয়ের টুরিস্ট ভিসার জন্য আপনাকে দুবাই সরকার অথোরাইজড এজেন্সির মাধ্যমে এপ্লাই করতে হবে। আমাদের বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য্ বেশ কিছু এজেন্সি আছে যারা আপনাকে ৩-১৫ দিনের মধ্যে ভিসা করে দিতে পারবে। এছাড়াও আপনি এয়ারলাইনসের (এমিরেটস এয়ারলাইন, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাইদুবাই) মাধ্যমেও ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ভিসার খরচ এজেন্সি ভেদে কম বেশি হতে পারে। তবে সাধারণ ভাবে টুরিস্ট ভিসার জন্য কত টাকা খরচ করতে হবে তা দেখে নিই আসুনঃ
এছাড়াও বর্তমানে নতুন নিয়ম অনুযায়ী টুরিস্ট ভিসার জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিট (রিফান্ডেবল) করতে হয়। যেটা অনেক এজেন্সি নিজেরাই করে থাকে। কিছু কিছু এজেন্সি সিকিউরিটি ডিপোজিটের জন্য টাকা নিতে পারে। সেটার পরিমাণ এজেন্সি ভেদে ৩০-৪৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।
এবার আসুন জেনে নিই টুরিস্ট ভিসা আবেদন করার জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবেঃ
• পাসপোর্টের প্রথম দুই পেইজের স্ক্যান কপি
• ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা থাকতে হবে ।
• পাসপোর্ট এর মেয়াদ থাকতে হবে সর্বনিম্ন ৬ মাসের বেশি ।
• ন্যাশনাল আই ডি কার্ড
• ব্যাংক স্টেটমেন্ট
এখানে বলে রাখি দুবাইয়ের সবকিছুই ১০০% ডিজিটাল সিস্টেমে চলে। আপনার ভিসার আবেদনটিও হবে অনলাইনে। তাই আপনাকে প্রতিটি ডকুমেন্টসের হাই রেজুলেশন পিডিএফ ফাইল এবং ছবির ক্ষেত্রে JPEG/JPG/PNG ফাইল রেডি রাখতে হবে। তবে আমার সর্বশেষ অভিজ্ঞতা অনুযায়ী যতদূর দেখেছি এজেন্সিকে শুধু পাসপোর্টের স্ক্যান কপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি ইমেইল/হোয়াটসঅ্যাপ করলেই ভিসা আবেদন করা যায়।
দুবাইয়ের সকল ভিসা এখন ই-ভিসা। তাই পাসপোর্টে কোন স্টিকার লাগানোর প্রয়োজন পড়ে না বা এম্বাসিতে জমা দিতে হয় না। ভিসার ভ্যালিডিটি চেক করতে চাইলে আপনি নিচের লিংকে ক্লিক করে সহজেই পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে দেখে নিতে পারবেনঃ
দুবাই ভিসা চেক অনলাইন লিংক
এয়ার টিকেটঃ ভিসা হাতে পাওয়ার পর আপনার প্রথম কাজ হলো সুবিধাজনক সময়ে এয়ার টিকেট কনফার্ম করা। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ফ্লাইট দুবাই যাওয়া আসা করে। সরকারী এয়ারলাইনস বিমান থেকে শুরু করে এমিরেটস এয়ারলাইন, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাইদুবাই, ইউএস বাংলা সহ আরও বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
ঢাকা টু দুবাই কিংবা চট্টগ্রাম টু দুবাই ফ্লাইটের টিকেটের দাম আসলে সঠিক করে বলাটা খুব কঠিন। তবে ইকোনমি টিকেটের প্রাইস নিয়ে আপনাদেরকে একটা ধারণা দিতে পারি। সাধারণত ৬০-৯৫ হাজারের মধ্যে রাউন্ড ট্রিপ ইকোনমি ক্লাসের টিকেট পেয়ে যাবেন ডিরেক্ট ফ্লাইট গুলোতে। এছাড়াও ওয়ান স্টপ ফ্লাইটে আরো কম প্রাইসেও টিকেট পেতে পারেন। বিজনেস ক্লাসের রাউন্ড ট্রিপ টিকেটের জন্য ১৮০০০০-২১০০০০ টাকা বা কখনো আরো বেশি প্রাইস হতে পারে। এখানে প্রাইস কমবেশি হওয়ার জন্য সার্ভিস, লাগেজ ক্যারি এমাউন্ট, কত আগে টিকেট কাটছেন সহ আনুষাঙ্গিক বিষয় জড়িত। বিমান টিকেটের লেটেস্ট আপডেট পেতে এজেন্সি কিংবা সরাসরি এয়ারলাইনসের ওয়েবসাইটে চেক করতে পারেন। এছাড়াও বুকিং ডট কম বা এরকম আরো অনেক ট্রাভেল প্লাটফর্মে অনেক সময় বিভিন্ন অফারে বেশ কম প্রাইসে টিকেট পাওয়া যায়। টিকেট করার সময় অবশ্যই আপনাকে রিটার্ন টিকেট করতে হবে।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আপনাদেরকে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশ টু দুবাই রুটে এমিরেটস এয়ারলাইনস আপনাকে সর্বোচ্চ সেবা দিবে। এছাড়াও এমিরেটসে আপনি ৪০ কেজি লাগেজ এবং ৭ কেজি হ্যান্ডব্যাগ ক্যারি করতে পারবেন। তবে আপনারা আপনাদের পচ্ছন্দ মতো বাজেট অনুযায়ী টিকেট করবেন। চেষ্টা করবেন ননস্টপ ফ্লাইটের টিকেট করতে। ওয়ানস্টপ ফ্লাইটের টিকেট অনেক সময় শিডিউল বিপর্যয় জনিত কারনে প্রচন্ড ভোগান্তির সৃষ্টি করে।
এয়ারপোর্টঃ ভিসা পেয়েছেন, এয়ার টিকেট কাটা শেষ এবার যাত্রা করার পালা। আপনার সাথে ক্যারি করা লাগেজের ওজন আগেই মেপে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। লাগেজের ওজন আপনার টিকেটের সাথে বরাদ্দকৃত ওজনের সাথে যেন সামঞ্জস্য থাকে। যদি অতিরিক্ত ওজন প্রয়োজন হয় তাহলে চেষ্টা করবেন টিকেট কাটার সময়ই সেটা কিনে ফেলতে। তা না হলে এয়ারপোর্টে এসে প্রতি কেজি লাগেজের জন্য ৫০ দিরহাম বা প্রায় ১৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এয়ার লাইনস ভেদে এটা কম-বেশি হতে পারে।
এয়ারপোর্টে আসার সময় সাথে করে যে ডকুমেন্টস গুলো অবশ্যই আনবেনঃ
• পাসপোর্ট
• জাতীয় পরিচয় পত্র
• ই-ভিসার কপি
• এয়ার টিকেট
• প্রয়োজনী ডলার, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড
• কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট
• হোটেল বুকিং পেপার
• যে সকল দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে চান তার টিকেট (নিচে আরো বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে)
• চাকুরীজীবি কিংবা ব্যবসায়ী হলে বিজনেস কার্ড, প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড/ট্রেড লাইসেন্স। স্টুডেন্টদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড
• ব্যাংক স্টেটমেন্ট
প্রতিটা ডকুমেন্টসের একাধিক ফটোকপি সাথে রাখবেন। ডকুমেন্টস বিভিন্ন পর্যায়ে সাবমিট করতে হবে। তাই সুবিধাজনক স্থানে রাখবেন যেন বার বার বের করতে সমস্যা না হয়। সাবধানে রাখবেন যেন কোন ভাবেই না হারিয়ে যায়।
বোর্ডিং পাস এবং ইমিগ্রেশনঃ এবার আসি বোর্ডিং পাস এবং ইমিগ্রেশন বিষয়ে। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ফেস করা সবসময় একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আপনার ফ্লাইটের নির্ধারিত দিনে ফ্লাইট টাইমের অন্তত ৩ ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছানো নিশ্চিত করবেন। কারন এয়ারপোর্ট একটা বিচিত্র জায়গা। এখানে কখন কি হয় বলা মুশকিল! বিশেষ করে বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট তো একেবারেই আনপ্রেডিক্টেবল! টিকেটে উল্লেখিত টার্মিনালের গেট দিয়ে এয়ারপোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। টার্মিনাল চিনতে সমস্যা হলে আনসার অথবা এপিবিএন সদস্যদের সহযোগীতা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখবেন, বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট গুলো ছোট হওয়ায় ভেতরে প্রবেশের গেট সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় এয়ারপোর্টে প্রবেশ করার সময়ই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাই যতটা সম্ভব আগে আগে চলে আসবেন।
এয়ারপোর্টে প্রবেশের পর চাইলে আপনার লাগেজ Wrapping করে নিতে পারেন। লাগেজ Wrapping এর জন্য আপনাকে ২০০ টাকা খরচ করতে হবে। Wrapping করা থাকলে লাগেজ পারফেক্ট থাকে, ময়লা হয় না, কোন ভাবে ভিজে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। এছাড়াও অনেক সময় এয়ারপোর্টে কোভিড বা অন্য কোন জরুরী কারনে বিভিন্ন ধরণের নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত এয়ারলাইনস অথবা এজেন্সি গুলোর মাধ্যমে যাত্রীদেরকে এ সম্পর্কে আপডেট দেওয়া হয়। যেমন করোনার সময় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট সত্যায়িত করার জন্য প্রবেশ পথের পাশেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুথ স্থাপন করা হয়েছিল। এরকম কোন নির্দেশনা থাকলে দ্রুত সেটা সেরে ফেলবেন। এরপর আপনার নির্ধারিত এয়ারলাইনসের বুথে যেয়ে যোগাযোগ করবেন। বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করার সময় জেনে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যাবেন।
বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করার জন্য এয়ারলাইনস স্টাফ আপনার কাছে পাসপোর্ট, ভিসার কপি এবং ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট চেয়ে নিবে। এসময় আপনার লাগেজও তারা কার্গোতে নেওয়ার জন্য বুঝে নিবে। আপনাদের সুবিধার জন্য জানিয়ে রাখি, বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় আপনি এয়ারলাইনস স্টাফকে উইন্ডো সিট বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করতে পারেন। যদি এভেইলেবল থাকে তাহলে তারা আপনাকে উইন্ডো সিট দিবে। কিছু কিছু এয়ারলাইনসে অবশ্য টিকেট কাটার সময়ই অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করে উইন্ডো সিট নিশ্চিত করা যায়।
বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করার পর আপনাকে এবার ইমিগ্রেশন ফেস করতে হবে। ইমিগ্রেশনের গেট নাম্বার আপনার বোর্ডিং পাসেই উল্লেখ থাকবে। এছাড়াও এয়ার লাইনসের স্টাফরা বলে দিবে। নির্দিষ্ট গেট দিয়ে প্রবেশ করার পর আপনাকে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। অনেক সময় খুব দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যায়। আবার অনেক সময় অনেক দীর্ঘ লাইন থাকে। সে জন্যই বার বার বলছি, যথেষ্ট সময় নিয়ে এয়ারপোর্টে যাবেন। যেন ভীড় হওয়ার আগে আগেই আপনি আপনার প্রয়োজনীয় স্টেপ গুলো কমপ্লিট করতে পারেন।
ইমিগ্রেশনে একজন পুলিশ অফিসার আপনার ইন্টারভিউ নিবে। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশের সার্ভিস নিয়ে আসলে অনেক কিছু বলা যায়। কিন্তু সেসব আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গিক নয় তাই এড়িয়ে গেলাম। আপনার যদি এর আগে অন্য কোন দেশ যেমন ইন্ডিয়া, নেপাল, ভুটান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে ইমিগ্রেশন পুলিশ আপনার পাসপোর্ট, ভিসার কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র চেক করে ছেড়ে দিবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টসও দেখতে চাইতে পারে। এর বেশি কিছু না। ডকুমেন্টস চেক করার পর পাসপোর্টে বহির্গমন এক্সিট সিল মেরে ফ্লাইটে বোর্ডিং করার অনুমতি দিয়ে দিবে।
তবে এটাই যদি আপনার প্রথম বিদেশ যাত্রা হয় তাহলে আপনাকে কিছুটা ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রথম কথা হলো আপনি কনফিডেন্ট থাকবেন। কোন ভাবেই ঘাবড়াবেন না। আপনার সকল ডকুমেন্টস হাতের কাছে প্রস্তুত রাখবেন। আপনি যে দুবাই ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন সেটার জন্য প্রয়োজনীয় হোটেল বুকিং, দর্শনীয় স্থানের টিকেট, আপনার বাংলাদেশের কর্মস্থলের পরিচয়পত্র সবকিছু কনফিডেন্টলি দেখাবেন। এখানে একটা কথা না বললেই নয় যে, দুবাই হয়ে অনেকেই অবৈধ ভাবে ইউরোপ-আমেরিকা যেতে চায়, অনেকে দুবাইতে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে যাওয়ার পর অবৈধ ভাবে কাজ শুরু করে। এছাড়াও এই রুট চোরাকারবারীরাও ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ কাজে। তাই নতুন ফাঁকা পাসপোর্টে দুবাই ভ্রমণের সময় ইমিগ্রেশনে কিছুটা টাফ সময় পার করতে হতে পারে আপনাকে।
ইমিগ্রেশন পুলিশ অফিসার যদি আপনার জবাবে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে আপনাকে পার্শ্ববর্তী ইমিগ্রেশন পুলিশের থানায় যোগাযোগ করতে বলতে পারে। আবারও বলছি ঘাবড়াবেন না। এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ স্টেশনে যেয়ে কর্তব্যরত অফিসারকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে বলবেন সবকিছু। এক্ষেত্রে আপনার কনফিডেন্স এবং স্মার্টনেসই আপনাকে ইমিগ্রেশন ক্রস করিয়ে দিবে। আশা করি আর কোন সমস্যা হবে না।
ইমিগ্রেশন প্রসঙ্গে আরেকটা বিষয় বলে রাখি। অনেক এজেন্সি এক্সট্রা টাকার বিণিময়ে ফ্রেশ পাসপোর্টে দুবাই ভ্রমণ করতে চাওয়া লোকদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়। এই বিষয়টা অনেকটা ওপেন সিক্রেটের মতো।
ইমিগ্রেশন ক্রস করার পর প্রথম কাজ হলো ফ্লাইটের বোর্ডিং টাইম জেনে নেওয়া। এসময় আপনি চাইলে হালকা কিছু নাস্তাও করে নিতে পারেন। আশেপাশেই হালকা থেকে ভারী খাবারের অনেক দোকান পাবেন। এরপর ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে সেটাও সেরে নিবেন। কারো ধূমপানের অভ্যাস থাকলে স্মোকিং জোনে যেতে পারেন। এরপর বোর্ডিংয়ের লাইনে যেয়ে দাঁড়াবেন। মনে রাখবেন, একবার বোর্ডিং গেট ক্রস করে ফেললে ফ্লাইটে ওঠার আগে পর্যন্ত আপনি খাবার, পানি বা ওয়াশরুম কোনটাই পাবেন না। বোর্ডিং গেটে আপনাকে পায়ের জুতা/স্যান্ডেল, ঘড়ি, বেল্ট, মোবাইল, পাওয়ারব্যাংক, ল্যাপটপ, চার্জার, পোর্টেবল হার্ডডিস্ক সব আলাদা ট্রেতে রেখে স্ক্যানারে দিতে হবে। এসময় আপনাকে ফাইনাল চেক করা হবে। তারপর অপেক্ষা বিমানে ওঠার।
এয়ারলাইনসের স্টাফরা আপনাকে ফ্লাইটে বোর্ডিং করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবে। সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ফ্লাইটে উঠে হ্যান্ডব্যাগ বক্সে রেখে কেবিন ক্রুর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পন্ন করে ফেলবেন। টেকঅফ করার সময় মোবাইল ফ্লাইটমোডে দিতে ভুলবেন না। সিটবেল্ট বাঁধতে ভুলবেন না। কোন সহযোগীতার দরকার হলে কেবিন ক্রুকে জানাবেন।
এয়ারপোর্ট বিষয়ে একটা তথ্য জানিয়ে রাখি আপনাদের। এয়ারপোর্টে কখনই উজ্জ্বল রঙের জামাকাপড় পরে যাবেন না। যেমনঃ হলুদ, লাল, কমলা। বা এমন কিছু পরবেন না যেটা আপনাকে সাধারণের চেয়ে আলাদা করে ফেলে বা অস্বাভাবিক দেখায়। পৃথিবীর যে কোন এয়ারপোর্টে এই ধরণের মানুষদের রেনডম চেকিংয়ের আন্ডারে ফেলা হয়।
ঢাকা টু দুবাই ফ্লাইট টাইম সাধারণত সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা হয়। এই সময়ে এয়ারলাইনস এবং টিকেটের শ্রেণী অনুযায়ী খাবার, পানি সহ অন্যান্য জিনিস দেয়। অনেক এয়ারলাইনসে আবার খাবার কিনে খেতে হয়। এমিরেটস এয়ারলাইনস সহ বেশ কিছু এয়ারলাইনসে আপনি ফ্রি নামীদামী ব্র্যান্ডের এলকোহলও পান করতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে সতর্কতা হিসাবে বলছি, ফ্রিতে পাচ্ছেন বলেই মাত্রা অতিরিক্ত পান করে বসে থাকবেন না। কারন এটা আপনাকে এয়ারপোর্টে বিপদে ফেলতে পারে। অনেকে আবার অতিরিক্ত পান করে ফ্লাইটের মধ্যেই মাতলামি শুরু করে! যা বিমানের অন্যান্য যাত্রীদের জন্য চরম বিড়ম্বনার কারন হতে পারে। বিমান দুবাই এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পর কেবিন ক্রুর নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে নির্দিষ্ট গেট দিয়ে বের হয়ে যাবেন। এরপর আসবে দুবাই এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনের পালা।
দুবাই এয়ারপোর্ট পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম এয়ারপোর্ট গুলোর মধ্যে একটা। ফ্লাইট থেকে বের হয়ে আপনাকে দীর্ঘপথ হাঁটার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। এই পথের অধিকাংশ জায়গাতেই চলন্ত সিঁড়ি এবং চলন্ত পথ পাবেন। উঠে জাস্ট দাঁড়িয়ে থাকলেই হবে। পথই আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে গন্তব্যে। দুবাই এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন খুবই কম সময়ে সহজে সম্পন্ন করা যায়। যেহেতু আপনি টুরিস্ট এবং এখানে পয়সা খরচ করতে এসেছেন তাই দুবাই এয়ারপোর্ট আপনাকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করবে। বাংলাদেশের মতো এখানে আপনাকে তেমন কোন কিছুই ফেস করতে হবে না। ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আপনার পালা আসলে ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার কাছে জাস্ট পাসপোর্ট চাইবে। এরপর আপনার আই স্ক্যান করে পাসপোর্টে এন্ট্রি স্ট্যাম্প দিয়ে ছেড়ে দিবে। এটা খুবই বিরল ঘটনা যে দুবাই এয়ারপোর্টে আপনার কাছে হোটেল বুকিং, প্রয়োজনীয় ডলার বা অন্যান্য ডকুমেন্টস দেখতে চাইবে। ইমিগ্রেশন ক্রস করে আপনাকে লাগজে সংগ্রহ করতে হবে। দুবাই এয়ারপোর্ট যেহেতু অনেক বড় একটা এয়ারপোর্ট সেহেতু অনেকেই এয়ারপোর্টে কনফিউজড হয়ে যান ইমিগ্রেশন কোন দিকে, লাগেজ কোথায় পাবে, কোন গেট দিয়ে বের হবে। এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করবেন না। পুরা দুবাই এয়ারপোর্টে আপনি অসংখ্য স্টাফ পাবেন যারা একাধিক ভাষায় কথা বলতে পারে। এদেরকে জিজ্ঞেস করলেই আপনাকে তথ্য দিয়ে, পথ দেখিয়ে সহযোগীতা করবে। দুবাই এয়ারপোর্টে আপনি ফ্রি ওয়াইফাই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আপনার দুবাই অভিযান শুরু।
এয়ারপোর্টে সবসময় একটা কথা মনে রাখবেন, কোন ভাবেই অন্য কারো লাগেজ, ব্যাগ, হ্যান্ডব্যাগ, পার্সেল, পানির বোতল বা অন্য যে কোন জিনিস বহন করবেন না বা হাতে নিবেন না।
ট্রান্সপোর্টঃ দুবাইয়ে তো চলেই আসলেন। এবার দুবাই এক্সপ্লোর করার পালা। প্রথমেই আপনি এয়ারপোর্ট থেকে ভার্জিন, ডু বা ইটিসালাটের টুরিস্ট সিমকার্ড সংগ্রহ করে নিবেন। অনেকসময় এ ধরণের সিম ফ্রিতেও পাওয়া যায়। মনে রাখবেন, দুবাইতে মোবাইলের খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। হোক সেটা ভয়েস কল কিংবা ইন্টারনেট। এছাড়াও মানিএক্সচেঞ্জ থেকে অল্প পরিমাণ ডলার এক্সচেঞ্জ করে দিরহাম নিয়ে নিন। অল্প পরিমাণ বললাম কারন এয়ারপোর্টের মানি এক্সচেঞ্জের রেট কখনই ভালো হয় না। তাই ট্রান্সপোর্টের কাজ চালানোর জন্য ১০০ ডলার এক্সচেঞ্জ করাই এনাফ। পরবর্তীতে সুবিধা অনুযায়ী লোকাল এক্সচেঞ্জ গুলো থেকে ডলার থেকে দিরহাম করে নিতে পারবেন।
এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে প্রথমেই চলে আসে ট্রান্সপোর্টের বিষয়। তবে যাদের দুবাইতে পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু আছে তারা যদি আপনাকে গাড়ি নিয়ে রিসিভ করতে আসে তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু যাদের এই সুবিধা নাই তাদের জন্য আছে নানা রকম অপশন। দুবাই এয়ারপোর্টেই আপনি পাবলিক ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন। যেটা তুলনামূলক কম খরচে আপনাকে যে কোন গন্তব্য স্থানে নিয়ে যাবে। আর যারা বিলাস বহুল সার্ভিস চান তারা উবার ইউজ করতে পারেন।
দুবাইতে ট্যাক্সি আপনাকে খুবই সহজলোভ্য এবং এরা আপনার চাহিদা অনুযায়ী যে কোন স্থানে যেতে বাধ্য। তবে কিছু কিছু দুবাই ট্যাক্সি ড্রাইভার আপনাকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ট্যাক্সি ভাড়া বেশি নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে যদি আপনি গন্তব্য না চিনেন। তাই দুবাই ট্যাক্সি ব্যবহার করার সময় গুগল ম্যাপ থেকে লোকেশন বের করে ড্রাইভারকে দেখাবেন যে আপনি এই লোকেশনে যেতে চান। সেই সাথে নিজেও ম্যাপ ফলো করবেন, এটুকুই যথেষ্ট। এখানে সবাই গুগল ম্যাপের সহযোগীতা নিয়ে চলাচল করে। দুবাই ট্যাক্সিতে আপনি ক্যাশ/কার্ড দুইভাবেই পেমেন্ট দিতে পারবেন। এমনকি অ্যাপল পে, গুগল পে কিংবা আলিপেও ব্যবহার করতে পারবেন।
ট্যাক্সি আর ম্যাপের প্যাঁচে যদি না পড়তে চান তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে দারুন হবে Careem, যেটা উবার কিংবা পাঠাওয়ের মতোই ব্যবহার করতে পারবেন। দুবাইতে উবার আর কারিমের মধ্যে পার্থক্য হলো উবার ব্যয়বহুল। উবারে লাক্সারিয়াস সেডান কার থেকে লিমুজিনও সিলেক্ট করতে পারবেন। কিন্তু কারিম থেকে দুবাই ট্যাক্সিও রেন্টে নেওয়া যায়। কারিমে ডেস্টিনেশন এবং পিকআপ লোকেশন সিলেক্ট করে দিলে ড্রাইভার এসে আপনাকে পিক করে গন্তব্যে পৌঁছে দিবে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই। এছাড়াও কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করলে ক্যাশ পে করার মতো কোন ঝামেলাও থাকবে না। কারিম অ্যাপের ডাউনলোড লিংকঃ
• Careem Android
• Careem iOs
আর যদি আপনি দুবাই মেট্রো ব্যবহার করতে চান তাহলে এয়ারপোর্ট সংলগ্ন মেট্রো স্টেশনে যেতে হবে। যেটা এয়ারপোর্ট থেকে পায়ে হেঁটে ২-৫ মিনিটেই যাওয়া যায়। দুবাই মেট্রো আপনাকে সবচেয়ে কম সময়ে কোন রকম ট্রাফিক জ্যাম ছাড়াই দুবাই শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা নিয়ে যাবে। মেট্রো স্টেশনে দুই ধরণের টিকেট ব্যবস্থা আছে। এক হলো আপনি যে গন্তব্যে যাবেন সে গন্তব্যের টিকেট কাটতে পারেন। আরেকটা হলো আপনি ২৫ দিরহাম দিয়ে দুবাই মেট্রো কার্ড নিতে পারেন। যার মধ্যে ১৭ দিরহাম আপনার ব্যবহার যোগ্য। এই RTA Metro Card দুবাইয়ের সকল পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ব্যবহার করতে পারবেন। কার্ড রিচার্জ করার জন্য মেট্রো বা বাস স্টেশন গুলো একাধিক বুথ আছে। এছাড়াও আপনি অনলাইনে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেও রিচার্জ করতে পারবেন।
দুবাই মেট্রোতে দুইটা লাইন, একটা হলো রেড, আরেকট গ্রীন। পুরা দুবাই শহরে দুবাই মেট্রোর ৪৭ টি স্টেশন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আপনি যে কোন মেট্রো স্টেশনের ভেতরেই সকল মেট্রো স্টেশনের ম্যাপ সহ বিস্তারিত পেয়ে যাবেন। রেড লাইন থেকে গ্রীন লাইনের মেট্রোতে চড়ার জন্য আপনাকে ইউনিয়ন স্টেশনে (বুর্জুমান, ইউনিয়ন মেট্রো স্টেশন) যেতে হবে প্রথমে। সেখান থেকে ইন্টারচেঞ্জ করে সহজেই আপনি আপনার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। দুবাই মেট্রো শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে। শুধুমাত্র শুক্রবারে সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে।
এরপরই বলতে হয় দুবাই RTA বাসের কথা। RTA বাস ব্যবহার করে আপনি পুরা দুবাই ঘুরতে পারবেন। চাইলে শারজা কিংবা আজমানের মতো অন্যান্য এমিরেটসেও যেতে পারবেন। RTA বাসে ক্যাশ টাকা বা ব্যাংক কার্ড ইউজ করা যায় না। পূর্বে উল্লেখিত RTA পাস বা কার্ড ব্যবহার করে আপনি সবচেয়ে কম খরচে যে কোন স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন। পুরা দুবাই শহরে RTA বাসের একাধিক রুট আছে। এছাড়াও শহরজুড়ে একাধিক বাস স্টেশন আছে। বাস পাবেন ৫-১০ মিনিট পর। বাসে কোন ভীড় নাই। দুবাই শহরের ৮২% এরিয়া কাভার করে RTA বাস। আপনি গুগল ম্যাপ থেকেই নিকটস্থ RTA বাস স্টেশন খুঁজে নিতে পারবেন। এমনকি ম্যাপে আপনাকে দেখিয়ে দিবে কোন বাস কখন আসবে। এছাড়াও আপনি চাইলে 8009090 নাম্বারে কল দিয়েও বাসের রুট, সময় সহ বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।
হোটেলঃ এয়ারপোর্ট থেকে আপনার পচ্ছন্দ অনুযায়ী ট্রান্সপোর্ট নির্বাচন করে আপনাকে হোটেলে পৌঁছাতে হবে। এই হোটেল আপনাকে বাংলাদেশ থেকেই ঠিক করে আসতে হবে। হোটেল বুক করার জন্য আপনি এজেন্সির সহযোগীতা নিতে পারেন। অথবা নিজে নিজেই বুকিং ডট কম, আগোডা ডট কম, এয়ারবিএনবি টাইপ প্লাটফর্ম থেকে বুক করে নিতে পারবেন। কম বাজেটের হোটেল গুলো আপনি ১০০ দিরহাম থেকে ২৫০ দিরহামের প্রতি রাতের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। সাধারণ বাজেট হিসাব করলে ২৫০ দিরহাম থেকে শুরু করে ৬০০ দিরহাম প্রতিরাত। এছাড়াও আপনি চাইলে বিলাসবহুল হোটেল নির্বাচন করতে পারেন। দুবাইতে বিশ্বের সবচেয়ে নামীদামী হোটেল চেইনের প্রায় সব গুলোই আছে। এগুলোর বাজেট সাধারণত ৮০০ দিরহাম থেকে শুরু হয় এবং সর্বোচ্চ গুলোর মধ্যে আমি বুর্জ আল আরবের কথা বলতে পারি যেখানে মিনিমাম প্রতিরাতে ৪৮০৫ দিরহাম খরচ হবে। কোন কোন হোটেলে কমপ্লিমেন্টারি হিসাবে সকালের বুফে ব্রেকফাস্ট থাকে। কোথাও আবার থাকে না। এছাড়াও জিম, পুল, ক্লাব সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও হোটেলের বাজেট এবং কোয়ালিটির উপর ডিপেন্ড করে। অনেক হোটেল আবার এয়ারপোর্ট থেকে পিকআপ এবং ড্রপঅফের জন্য ট্যাক্সি সার্ভিসও দিয়ে থাকে।
হোটেল বুক করার সময় কোন এরিয়ায় হোটেলের লোকেশন এটা দেখে নিবেন। কারন দুবাই শহর অনেক বড়। স্বাভাবিক ভাবেই এর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হোটেল গুলোর খরচ বেশি হবে। এলাকাভিত্তিক সুবিধা অনুযায়ী হোটেল বেছে নেওয়ার কথা বললে আমি আপনাকে বলতে পারি প্রথমেই দেইরা দুবাইয়ের কথা।
দেইরা দুবাইয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত। দেইরা মূলত একটি বানিজ্যিক এলাকা। এই এলাকাটি সারাবিশ্বের টুরিস্টদের কাছে শপিংয়ের জন্য খুব জনপ্রিয়। দুবাইয়ের বিখ্যাত গোল্ডসুকও এই এলাকাতেই অবস্থিত। দেইরাতে যেমন বিলাস বহুল হোটেল আছে তেমন স্বল্প খরচের হোটেলের অভাব নাই। দেইরা বানিজ্যিক এলাকা হওয়ার বেশ জনবহুল। এই এলাকায় ট্রাফিক জ্যাম লেগেই থাকে। তাই যারা ভীড় পচ্ছন্দ করেন না, কিছুটা নিরিবিলি থাকতে চান তারা চাইলে দেইরা এভয়েড করতে পারেন।
পুরাতন দুবাইয়ের স্বাদ নিতে চাইলে আপনি নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারেন বার দুবাইয়ে। বার দুবাই আমাদের পুরান ঢাকার মতো। এই এলাকাটি এখনো আগের মতোই আছে। বার দুবাইতে আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী হোটেল বেছে নিতে পারেন।
বিলাসবহুল এবং অভিজাত এলাকায় থাকতে চাইলে দুবাই মেরিনার নাম প্রথমেই চলে আসে। দুবাই মলের আশেপাশেও প্রচুর নামীদামী বিখ্যাত হোটেল আছে। এমনকি বুর্জ খলিফার ভেতরেও হোটেল আছে। চাইলে সেখানেও থাকতে পারেন। বিখ্যাত পাম জুমেইরাহর কথা নিশ্চয় শুনেছেন? আপনি চাইলে পাম জুমেরাতে অবস্থিত বিভিন্ন হোটেল কিংবা রিসোর্টে থাকতে পারেন। এছাড়াও সিলিকন ওয়েসিস, বিজনেস বে, জুমেইরাহ বে আইল্যান্ড, মিরডিফ সহ পুরো দুবাইতে অসংখ্য লাক্সারিয়াস এলাকা আছে যেখানে আপনি আপনার পচ্ছন্দ এবং বাজেট অনুযায়ী হোটেল বেছে নিতে পারবেন।
আরেকটু কম খরচে থাকতে চাইলে এবং কিছুটা ভিন্নতা চাইলে আপনি শারজা কিংবা আজমানেও হোটেল বুক করতে পারেন। শারজা থেকে ২০-৩০ মিনিট এবং আজমান থেকে ৫০-৭০ মিনিট লাগে দুবাই শহরে যেতে। আজমান এবং শারজায় সমুদ্রের তীরে অনেক কম খরচে হোটেল কিংবা রিসোর্টে থাকতে পারবেন।
হোটেল এবং রিসোর্ট বিষয়ে পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত নিয়ে একটা আলাদা পোস্ট লিখবো। তাই আজ আর বেশি লিখলাম না।
রেস্টুরেন্টঃ দুবাই শহরের অন্যতম আকর্ষণ হলো এর রেস্টুরেন্ট গুলো। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জাতির, সকল কালচারের মুখরোচক এবং বৈচিত্র্যময় খাবার পাবেন আপনি দুবাই শহরে। সল্ট বে খ্যাত Nusr-Et Steakhouse থেকে শুরু করে আমাদের দেশের সাধারণ বাঙালী রেস্টুরেন্ট সবই আছে পুরা দুবাই শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। দুবাইয়ের রেস্টুরেন্ট এবং খাবার নিয়ে কয়েকটা পোস্ট লিখলেও সম্ভবত বলে শেষ করা যাবে না।
তবে আমার কথা যদি বলেন, পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই না কেন বাঙালী খাবার পেটে না পড়লে আমার ক্ষুধা মিটে না! আপনার ক্ষেত্রেও যদি এমনটা হয় তাহলে দুবাই শহরে অন্তত চিন্তার কোন কারন নাই। এখানে আপনি প্রচুর বাঙালী রেস্টুরেন্ট পাবেন। যেখানে ভাত, রুটি, পরোটা, ডাল, ভর্তা, ভাজি, সব্জি, রুই মাছ, কাতল মাছ, কাচকি মাছ, ইলিশ মাছ, লইট্টা মাছ, শুটকি মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস, কালা ভূনা, নিহারী, বট থেকে শুরু করে চটপটি, ফুচকা, সিঙ্গাড়া, পুরিও পাবেন। এছাড়াও ইন্ডিয়ান এবং পাকিস্থানী রেস্টুরেন্টও আছে অনেক।
আপনি যদি আমার মতো মাছে ভাতে বাঙালী টাইপ হয়ে থাকেন তাহলে হোটেল বুক করার সময় দেখে নিবেন আশেপাশে বাঙালী রেস্টুরেন্ট আছে কি না। এছাড়াও যারা বাজেট ট্যুর করতে চান তাদের জন্য এধরণের রেস্টুরেন্ট বেস্ট হবে। সকাল, দুপুর এবং রাত মিলিয়ে ২৫-৪০ দিরহামের মধ্যেই খেয়ে নিতে পারবেন। মানে বাংলা টাকায় ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা।
আর আপনার বাজেট নিয়ে যদি কোন লিমিট না থাকে তাহলে আরেকটু অপেক্ষা করুন। দুবাই ট্যুর গাইড লাইন সিরিজে পরবর্তীতে আমি আপনাদের জন্য দুবাইয়ের খাদ্য বৈচিত্র্য নিয়ে বিস্তারিত জানাবো। দুবাইরে বিখ্যাত এবং অভিজাত সব রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে সেখানে তথ্য পেয়ে যাবেন আশা করি।
ভিসা, এয়ার টিকেট, এয়ারপোর্ট, ইমিগ্রেশন, ট্রান্সপোর্ট, হোটেল, রেস্টুরেন্টের আলোচনা তো অনেক হলো। এসব ঝক্কি ঝামেলা পার করে আপনি এখন নিশ্চয় ভাবছেন দুবাইয়ের আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পটের মধ্যে কোনটা কোনটা দেখবেন, কখন দেখতে যাবেন, কি ভাবে টিকেট সংগ্রহ করবেন,কয়দিন লাগবে, খরচ কিরকম হবে, শপিং করার জন্য বেস্ট প্লেস কোন গুলো,দুবাই শহরের সাধারণ নাগরিক আইনকানুন এসব বিষয় নিয়ে? তাহলে অপেক্ষা করুন এই সিরিজের পরবর্তী পোস্ট গুলোর জন্য।
পরিশেষে কিছু কথা না বললেই নয়, দুবাই নারী পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সবার জন্যই নিরাপদ একটি শহর। এখানে আপনি দিন রাত ২৪ ঘন্টা যে কোন সময় যে কোন স্থানে চলাচল করতে পারবেন কোন রকম দ্বিধা ছাড়াই। পুলিশ আপনাকে সহযোগীতা করার জন্য সবসময় পাশে আছে। আপনি সলো ট্রাভেলার হতে পারেন, বন্ধুদের সাথে গ্রুপ নিয়ে ঘুরতে পারেন কিংবা পরিবার নিয়েও ঘুরতে পারেন। কেউ আপনাকে কোথাও বিন্দুমাত্র বিরক্ত করবে না। তবে দুবাই শহরে চলাচলের অনেক নিয়ম কানুন আছে। যে গুলো ঠিক মতো মেনে না চললে আপনাকে মোটা দাগে জরিমানা দিতে হতে পারে। এছাড়াও দুবাইতে অনেক জায়গায় স্ক্যামাররা ওঁত পেতে থাকে। আপনি বাংলাদেশে যে ধরণের চিট বাটপারি দেখে অভ্যস্ত তারচেয়ে ভয়াবহ বাটপারি এখানে আছে! তাই যে কোন ধরণের স্ক্যাম থেকে সাবধান থাকবেন। কোন অঘটনের শিকার হলে 999 নাম্বারে যোগাযোগ করবেন। মজার ব্যাপার হলো আপনার ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকলেও 999 নাম্বারে কল যাবে।
দুবাইতে টুরিস্ট ভিসায় আসার অন্যতম শর্ত হলো আপনার দেশে ফেরার রিটার্ন টিকেট থাকতে হবে। তাই ভ্রমণ শেষ হলে নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে দেশে ফিরে যাবেন। টুরিস্ট ভিসায় আসার পর আগে এমপ্লয়মেন্ট ভিসা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও বর্তমানে এই সুবিধা বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনেও আমরাই দায়ী। তাই টুরিস্ট ভিসায় কাজ করার অভিপ্রায় নিয়ে কেউ আসবেন না। অনেকে আবার টুরিস্ট ভিসা নিয়ে দুবাইতে এসে ইউরোপ আমেরিকা পাড়ি জমান অবৈধ ভাবে। এই কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছর এই অবৈধ পথে যাওয়ার ফলে শত শত বাংলাদেশী মানুষ জঙ্গলে, বরফের পাহাড়ে কিংবা সমুদ্রে ডুবে মরছে, নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে কিংবা অপহরণকারীদের পাল্লায় পড়ছে। তাই অনুরোধ রইলো এধরণের পথে পা বাড়াবেন না।
আশা করি আপনাদেরকে দুবাই ট্যুর গাইড লাইন সিরিজের মাধ্যমে দুবাই ভ্রমণ বিষয়ক একটি পরিপূর্ণ ধারণা এবং পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারবো। এছাড়াও দুবাইতে কাজ কিংবা ব্যবসার সুযোগ নিয়েও লেখার আগ্রহ আছে। দুবাই ভ্রমণ নিয়ে প্রথম পর্বে যে বিষয় গুলো আলোচনা করলাম সে বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন। এছাড়াও দুবাই টুরিস্ট রুলস প্রায় সময়ই টুকটাক চেঞ্জ হয়। তাই কারো কাছে নতুন আপডেট থাকলে জানাতে পারেন আমি সংশোধন করে নিবো। আপনার দুবাই ভ্রমণ আনন্দময় হোক, স্মৃতিময় হোক এই শুভকামনা জানিয়ে প্রথম পর্বের এখানেই ইতি টানছি। ভালো থাকবেন।
Habibi, Come to Dubai
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২৩ রাত ৩:১২