সাত সকালে ঘুম ভেঙ্গে মনটা খারাপ হয়ে গেলো... কেনো যে খারাপ হয়ে গেলো বুঝলাম না। মনখারাপ ভাবটা নিয়েই পেপার খুললাম, শিরোনামেই ট্রলার ডুবে ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর। ইস এই পেপারগুলোও সেইরকম, প্রতিদিনের শিরোনামেই কোনো না কোনো ধ্বংস আর মৃত্যু... যেনো ভালো কিছু হয়ই না, কিংবা ভালো কিছু শিরোনামযোগ্য নয়। আমরা বাংলাদেশীরাও যেনো কেমন অদ্ভুত, কদিন আগে লঞ্চ উল্টে এতো এতো মানুষ মারা গেলো তবুও আমরা কিরকম ভাবলেশহীন। ঈদের ছুটিতে বেড়াটে গিয়ে দুই আত্মীয়কে গল্প করতে শুনলাম -- যাক বাবা এবার অনেক কম দূর্ঘটনা ঘটেছে, এই একটা লঞ্চ না উল্টালে তো বলার মতো তেমন কিছু হয়ই নাই !!!!!
কেমন জানি যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে চারপাশ। শ'খানেক এর নিচে কোনো মৃত্যু আমাদের মনে চাঞ্চল্য আনতে পারে না আর, চারপাশে দু একটা সড়ক দূর্ঘটনা আমাদের দৈনন্দিন বিষয়, লঞ্চ উল্টে গেলো কিংবা ট্রলার ডুবি -- কহাজার টাকা দিলেই তো হলো। ঈদে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি যায়, গরিব দেশে এই এতো মানুষের যাতায়াত এ লাক্সারী কিভাবে আনা যাবে, এভাবেই গরুর মতো গাদাগাদি করে যেতে হবে, এইটাই নিয়তি। এই এতো লঞ্চ, এতো বাস -- দু'একটা তো ডুবতেই পারে, গাছের সাথে বাড়ি খেতেই পারে.... যার যায় কেবল সেই জানে অন্যেরা কি আর বুঝে আপনজন হারাবার মানে....
ঢাকার রাস্তায় তিনটা লেন করে দিলো হটাৎ করে। লেনে উঠতে বললে ড্রাইভাররা হাসে, ট্রাফিকের লাঠি হয়তো মোড় গুলোতে সাময়িক এদের শৃংখলায় বাঁধে, একশো ফিট দূরেই আবার সেই লাউকে কদু আর কদু কে লাউ বলা... খোলা সিগনালে চলন্ত হাজারো গাড়ির মাঝে সাঁই সাঁই করে দৌড়ে যখন রাস্তা পেরোই একবারো মনে হয়না কোনো গাড়ির চাকার তলেই হয়তো আমার নিয়তি লিখে রাখা। রাস্তা গুলোকে পিতৃপ্রদত্ত সম্পদ আর ড্রাইভারগুলোকে বাক্সে বসা ক্লাউন মনে হয়। কখনোই মনে হয় না সিগনালটার জন্য একটু দাঁড়াই, দাঁড়ালে গাড়ি গুলো দাঁড়াবে আমার সময় কোথায়। বাসের চালকের আসনে যে লোকটা বসে থাকে তার মাথায় থাকে স্রেফ কত তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানো যায় সেই চিন্তা, যত তাড়াতাড়ি ততো বেশী ট্রিপ। সামনে থাকা কার টেক্সি কিংবা রিক্সায় তখন আর মানুষ দেখা হয় না, আমি চলবো আমার মতো, আগে পিছে ডানে বামে সবাই রাস্তা ছাড়বে নয় মরবে -- এইটাই অঘোষিত নিয়ম।
চারপাশে সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখি... জীবনকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সময় পাই না, সকালে ঘুম থেকে উঠি, প্যান্টে পা গলিয়ে দৌড়ে দৌড়ে অফিস, সারাদিন চারকোনা একটা বাক্সের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার এই গাড়ি সেই গাড়ির পিছে দৌড়ে বাসায়। দম ফেলবার সময় নেই, বাসায় এসে টুকটাক টিভি দেখতেই রাতের খাবারের আয়োজন এবং ঘুম... কোথাও দু'দন্ড বসে একটুখানি স্বপ্ন দেখবো সেই সময় কে যে কখন কেড়ে নিলো কে জানে....
যান্ত্রিক সভ্যতা আর ভালো লাগে না, কেবল মাটির ঘ্রাঁণ নেবার সাধ জাগে মনে। কংক্রিটের শক্ত দেয়াল ভাঙা হয় না। মন খারাপের বিস্বাদ ঠোঁটে নিয়ে ঘুরপাক খাই.....
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৪৩